প্রশ্নঃ এক শ্রেণীর মৌলভী বলে থাকে, ইসলামে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ছাড়া তৃতীয় কোন ঈদের অস্তিত্ব নেই। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] পালন করার মধ্য দিয়ে তৃতীয় ঈদের অনুপ্রবেশ ঘটানো ইসলাম বিরোধী। কটাক্ষ করে বলে- এটা কোন ঈদ� এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জানালে ধন্য হব।

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন (প্রশ্নকারী)

ছাত্র, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া, চট্টগ্রাম।

📖 উত্তরঃ ইসলাম ও মুসলমানদের ঈদ হিসেবে শুধু ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাকে সীমাবদ্ধ করা অজ্ঞতা ও জেহালত। কারণ এ দু’ঈদ ছাড়াও মুসলমানদের আরো ঈদ উদ্যাপনের বিষয়টি ইসলামী শরীয়তে প্রমাণিত। যেমন- আরাফাহ্ দিবস ও জুমার দিবস ‘ঈদ’ হওয়া পবিত্র হাদীসে পাক দ্বারা প্রমাণিত।

যেমন বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে যে,

قَالت الیہود لعمر انکم تقرؤن ایۃ لونزلت فینا لاتخذنا یومہا عیدًا فقال عمرانی لاعلم حبیث انزلت واین انزلت واین رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم حین انزلت یوم العرفۃ وانا واللہ بعرفۃ [الصحیح للبخاری ۶۶۲/۲]

অর্থাৎ জনৈক ইহুদি হযরত ওমর [رضي الله عنه]’কে বলে, এমন একটি আয়াত যা আপনারা তিলাওয়াত করে থাকেন যদি এ আয়াতটি আমাদের ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর নাযিল হতো, তাহলে আয়াত নাযিল হওয়ার দিনটিকে আমরা ‘ঈদ’ হিসেবে উদ্যাপন করতাম। আর তাহলো- ‘‘আল ইয়াওমা আক্মালতু লাকুম দীনাকুম।”

অর্থাৎ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করে দিলাম আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। হযরত ওমর [رضي الله عنه] উত্তরে বললেন- আমি নিশ্চয় জানি আয়াতটি কোন দিন, কখন এবং কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর সেদিন ছিল আরাফাতের দিন। [সহীহ্ বুখারী ২য় খণ্ড, ১৮পারা, ৬৬২পৃষ্ঠা]

অনুরূপভাবে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস [رضي الله عنه] ‘‘আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম্….আয়াতটি জনৈক ইয়াহুদির সামনে তিলাওয়াত করলে সে বলল-

لوانزلت ہذہ الایۃ علینا لاتتخذنا یومہا عیدًا فقال ابن عباس رضی اللہ عنہ فانہا نزلت فی یوم عیدین فی یوم الجمعۃ ویوم عرفۃ [الجامع الترمذی ۱۳۴:۲]

অর্থাৎ- যদি এ আয়াত আমাদের ব্যাপারে নাযিল হতো তাহলে আমরা সে দিন ঈদ উদ্যাপন করতাম। উত্তরে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস [رضي الله عنه] বলেন- আয়াতটি তো এমন দিন নাযিল হয়েছে, যেদিন দু’টি ঈদই উদ্যাপিত হচ্ছিল। একটা হল জুমার, অপরটি হল আরাফাহর ঈদ। [জামে তিরমিযী, ২য় খণ্ড, ১৩৪ পৃষ্ঠা]

হযরত ওমর ও হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস [رضى الله عنهما] আরাফাহ্ ও জুমার দিনের কথা উল্লেখ করে উক্ত ইয়াহুদীকে বলেন যে, আয়াতটি ঈদের দিনেই নাযিল হয়েছে। এ দ্বারা প্রমাণিত হল যে- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আয্হা ছাড়াও ইসলামে জুমা ও আরাফাহ্ দিবসকেও ‘ঈদ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অতএব, দু’ ঈদ ছাড়া ইসলামে তৃতীয় কোন ঈদ নেই যারা বলে কোরআন-হাদীস সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতাই প্রমাণ করে।

তাই যুগশ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ, ফেকাহ্বিদ ও প্রখ্যাত ইমামগণ আপন আপন নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে ধরা বুকে প্রিয়নবী [ﷺ]’র শুভাগমনের সময় মাস ও মুহুূর্তকে সমগ্র জগতবাসীর জন্য বিশেষত মুমিন নর-নারীর জন্য ঈদ ও পবিত্র খুশীর দিন ও মুহুর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে পূর্বে তরজুমানে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ]’র বিশেষ সংখ্যাসমূহে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। ওই সংখ্যাগুলো দেখার অনুরোধ রইল।

[আলমাওয়াহেবুল লাদুনিয়া কৃত. ইমাম আহমদ কছতালানী রহ. এবং আননেমাতুল কোবরা আলাল আলম ফি মওলদে সাইয়্যিদে উলফে আদম কৃত. ইমাম ইবনে হাজর মক্কি রহ. ইত্যাদি]

।।।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী

অধ্যক্ষ-জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।

মাসিক তরজুমান-Monthly Tarjuman (প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ)

সফর, ১৪৩৯ হিজরী সংখ্যা

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment