প্রশ্নঃ আমাদের দেশে কিছু বাতিল ফেরকা আছে যাদের নিয়ে সব সময় মিলাদুন্নবী নিয়ে ঝগড়া হয়, অর্থাৎ তারা বলে যে মিলাদুন্নবী করার প্রয়োজন নেই সিরাতুন্নবী করলে হয়। তাই আমি জানতে চাই, মিলাদুন্নবী আর সিরাতুন্নবী এর মধ্যে আসল সমস্যাটা কী� দলিল সহকারে জানালে উপকৃত হব।

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মুহাম্মদ আখতার হুসাইন নেজামী (প্রশ্নকারী)

দক্ষিণ কধুরখীল, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।

✍🏻 উত্তরঃ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত এক সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত অশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত ও অনুষ্ঠান। যা বিশ্বজগতের প্রাণ রহমাতুল্লিল আলামীন হুজূর পুরনূর [ﷺ] এর শুভাগমনকে উপলক্ষ করে উদ্‌যাপন করা হয়। মিলাদুন্নবী উদ্‌যাপন করা পবিত্র কোরআনের নির্দেশ। পাশাপাশি হাদীস, ইজমা, ক্বিয়াস ইত্যাদি দ্বারা প্রমাণিত।

পক্ষান্তরে সিরাতুন্নবী কাকে বলে? এর মৌলিকতা যথার্থতা ইত্যাদি গবেষণা অবশ্যই প্রয়োজন। এ পর্যায়ে সর্বজন সমাদৃত ব্যক্তিত্ব শায়খুল হাদীস ওয়াল ফিকহ ওয়াত্‌ তাফসীর আল্লামা সৈয়দ মুফতী আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বারকাতী [رحمه الله عليه]’র মতে-

السیر جمع سیرۃ وھی الطریقۃ سوآء کانت خیرا او شرا ثم غلب فی الشرع علی طریقۃ المسلمین فی المعاملۃ مع الکافرین والبغاۃ و غیرھما من المستامنین والمرتدین قال ابن ھمام غلب فی عرف الفقھآء علی الطریق المامور فی غزو الکفار وفی الکفایۃ انہ یختص بسیر النبی ﷺ فی المغازی سمیت المغازی مسیرا لان اول امورہ السیر الی الغزو وقال النسفی السیر امور الغزو کالمناسک امور الحج قواعد الفقۃ ص۳۳۱

অর্থাৎ: সীরাত শব্দটি একবচন, তার বহুবচন সিয়র। আভিধানিক অর্থ পদ্ধতি, ভাল হোক কিংবা মন্দ হোক। আর পারিভাষিক অর্থে কাফির, বিদ্রোহী, ধর্মবিরোধী এবং মুরতাদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ বিগ্রহ বা মোকাবেলার নাম সীরাত।

ইমাম ইবনে হুম্মাম বলেন- ফিকহবিদদের পরিভাষায় কাফিরদের সাথে যুদ্ধ জিহাদ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের যে সমস্ত কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তার নামই সীরাত। আল্‌ কিফায়া নামক কিতাবে রয়েছে- সিয়ারুন্নবী বা সীরাতুন্নবী [ﷺ] নবীর যুদ্ধ জীবনের জন্য সীমিত। আর সীয়র শব্দটি এসেছে সা-ইরুন থেকে যার অর্থ সফর করা ভ্রমণ করা ইত্যাদি। সুতরাং যুদ্ধকে সিয়র এ জন্য বলা হয়, যেহেতু যুদ্ধ করার জন্য প্রথমে যুদ্ধের ময়দানে সফর করতে হয়।

ইমাম নাসাফী [رحمه الله عليه] বলেন- জিহাদের কর্মপদ্ধতির নাম হল সীরাত আর হজ্বের কর্মপদ্ধতির নাম মানাসিক।

[কাওয়ায়েদুল ফিকহ, ৩৩১ পৃষ্ঠা, কৃত: মুফতী আমীমুল ইহসান (رحمه الله عليه)]

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সীরাতুন্নবী নবীজির জাহেরী-বাতেনী বিশাল জীবনের সীমিত একটা অংশমাত্র। আর মীলাদুন্নবী হলো ব্যাপক: যাতে নবীজির নূরী জগতের আদি সৃষ্টি হতে শুরু করে নূরানী জগতে লক্ষ লক্ষ বৎসর বিচরণ, দুনিয়ার বুকে শুভাগমন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় আধ্যাত্মিক কর্মময় জীবনের নবুয়তের এলান, দ্বীনের দাওয়াত মুজিযাসহ নবীজির জীবনে বিশাল অঙ্গণ নিয়ে বহুমুখি আলোচনার নামই হলো মিলাদুন্নবী [ﷺ]। সাধারণত: সীরাত শব্দের অর্থ- চরিত্র, অভ্যাস, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। কিন্তু সীরাত শব্দটি যখন নবীর দিকে সম্বোধন করা হয়, তখন নবীজির যুদ্ধ জীবন বা নবুয়ত প্রকাশের পরবর্তী তেইশ বৎসর জীবনের কথাই বুঝানো হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য সম্প্রতি একটি কুচক্রি মহল মিলাদুন্নবীর বিশাল আয়োজন আর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান থেকে সাধারণ মুসলমান তথা নবীপ্রেমিকদের দূরে সরিয়ে রাখার অপকৌশল হিসেবে সীরাতুন্নবী মাহফিল এর অবতারণা করেছে। উদ্দেশ্য কেবল মিলাদুন্নবীর বিরোধিতা করা। তদুপরি মাহে রবিউল আউয়াল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধরা বুকে শুভাগমনের মাস হিসেবে এ মাসে মিলাদুন্নবী [ﷺ] পালন করাটাই যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত। তাই যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে ইসলামী স্কলারগণ বিশেষত পবিত্র রবিউল আউয়ালে মিলাদুন্নবী [ﷺ] উদ্‌যাপন করে আসছেন। যা শরীয়তের আলোকে মুস্তাহাব এবং অনেক অনেক কল্যাণকর।

[আল হাবী লিল ফতোয়া; কৃত- ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়ূতী (رحمه الله عليه) ইত্যাদি]

।।।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী

প্রধান ফকিহ্-জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।

মাসিক তরজুমান-Monthly Tarjuman (প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment