হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী ( রহঃ ) একটি চমৎকার ঘটনা বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন , একবার আমরা দেওবন্দ থেকে কোথাও সফরে যাচ্ছিলাম । সাথে ছিলেন আমাদের উস্তাদ হযরত মাওলানা এ যায আলী ( রাহঃ ) । আমরা ষ্টেশনে পৌঁছে জানতে পারলাম ট্রেন আসতে কিছুটা দেরী হবে । তখন আমাদের উস্তাদ আমাদেরকে একত্রিত করে বললেন- দেখ ! হাদীস শরীফে আছে “ যখন তোমরা কখনো সফরে বের হবে তখন একজনকে আমীর বানিয়ে নিবে । ” তাই আমাদের উচিত আমাদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়া । তাঁর একথা শ্রবণ করে আমরা সকলেই বলে উঠলাম , হযরত ! আমীর বানানোর কি দরকার ? আমীর তো আমাদের আছেই ? তিনি জিজ্ঞেস করলেন- আমীর কে ? আমরা বললাম , আপনি । কারণ আপনি আমাদের উস্তাদ । আমরা আপনার ছাত্র । হযরত বললেন- তাহলে আপনারা আমাকে আমীর বানাতে চান ? আমরা বললাম জ্বী হ্যাঁ । আপনাকে ছাড়া আর কে – ই বা আমীর হবে ? হযরত বললেন , আচ্ছা ঠিক আছে । তবে মনে রাখবে , আমীরের প্রত্যেকটি কথাই কিন্তু মানতে হবে । কারণ আমীর তো তাকেই বলা হয় যার প্রতিটি নির্দেশ মান্য করা হয় । আমরা বললাম , হযরত আমীর যখন বানিয়েছি , তখন ইনশা’আল্লাহ সব কথাই মেনে চলবো । হযরত বললেন , ঠিক আছে আমিই আমীর । তোমরা আমার নির্দেশ মেনে চলবে । তারপর যখন ট্রেন আসলো , তখন তিনি আমাদের কয়েকজনের ছামান কিছু মাথায় ও কিছু হাতে নিয়ে ট্রেন অভিমুখে দিব্যি রওয়ানা দিলেন । আমরা বলতে লাগলাম , হযরত এ – কি সর্বনাশ করছেন আপনি ! সামান পত্র আমাদের কাঁধে দিন । হযরত বললেন , আমি তোমাদের আমীর , তোমরাই আমাকে আমীর হিসেবে নির্বাচন করেছ । তাই আমার আদেশ মেনে চলা তোমাদের কর্তব্য । তোমরা আমাকে বোঝা উঠাতে দাও । অতঃপর সকলের ছামান পত্র নিজেই ট্রেনে উঠালেন । শুধু তাই নয় , পুরো সফরের কঠিন ও কষ্টদায়ক কাজগুলো তিনি নিজ হাতে সম্পন্ন করেছেন । এতে কাউকে অংশ গ্রহণ করতে দেননি । আর আমরা যখনই কিছু বলতে চেয়েছি , তখনই তিনি বলেছেন- দেখ ! তোমরাই তো আমাকে আমীর বানিয়েছ । আমীরের নির্দেশ মামুরদের মেনে চলতে হয় । তাই আমি যা বলি তা – ই শোন । মুফতী শফী ( রহঃ ) বলেন , আমরা তাকে আমীর বানিয়ে যেন কেয়ামত ডেকে আনলাম । প্রকৃত পক্ষে একেই তো বলে আমীর ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , “ কোন কুত্তম বা জাতির নেতা তাদের খাদেম হয়ে থাকে । ” উল্লেখিত ঘটনা ও হাদীসের আলোকে এ কথা স্পষ্টরূপে বুঝা যায় যে , ইসলামে আমীর বা নেতা হওয়ার অর্থ আরাম কেদারা আর শাহী গদীতে বসে নিজের মনমত হুকুম চালানো নয় বরং অধিনস্থদের সাথে মাঝে মধ্যে কাজকর্মে শরীক হওয়াও প্রকৃত আমীরের কাজ ।
প্রকৃত পক্ষে একেই বলে আমীর
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।