পূণ্যময় আ’মালের জন্য সময় নির্ধারণ______
যেকোন পূণ্যময় আমল ও সাদকা-খায়রাতের জন্য আয়োজন কেন্দ্রিক কোন একটি তারিখ নির্ধারণ করে নেয়াও রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের সূন্নাত।
এখন এ প্রশ্ন সৃষ্টি হয় যে, দান-খায়রাততো যেকোন সময়ই করা যেতে পারে। এর জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে কেন?
তাহলে এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভাল যে, নির্ধারণ ২ প্রকারের হয়ে থাকে।
যথা-
✪-১. শারয়ী নির্ধারণ;
✪-২. ব্যক্তিগত-ব্যবস্থাপনাগত নির্ধারণ।
আসুন, এবার দেখা যাক,
✪-১. নির্ধারণ-এর শারয়ী ক্ষেত্রঃ
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রোজা, যাকাত, হাজ্ব ইত্যাদি শারিয়াতের পক্ষ থেকে নির্ধারিত দিন ও নির্দিষ্ট সময় সমূহের সাথে সম্পর্কিত। ঐ সব দিন ও সময় থেকে সরে গিয়ে যদি কেউ আমল করে, তাহলে সেটি গ্রহনযোগ্য হবে না। কেননা ইহা শারিয়াতগত, নির্ধারিত।
✪-২. নির্ধারনের ব্যক্তিগত-ব্যবস্থাপনাগত ক্ষেত্রঃ
এ নির্ধারণ আমাদের নিজেদের সহজতার জন্য, আ’মালের স্থায়িত্ব, ধৈর্য ও স্বত:স্ফূর্ত মনোভাব সৃষ্টির জন্য করা হয়।
ইহা শারীয়া কতৃক নির্ধারিত নয়; কিন্তু শারীয়া ব্যাক্তিকে ইহার ইখতিয়ার দিয়েছে।
আ’মালের স্থায়িত্বের উদ্দেশ্যে এই ব্যক্তিগত নির্ধারণ রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের সূন্নাত।
এবার আসুন, নিচের আলোচনা পর্যবেক্ষণ করা যাক,
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক বৃহস্পতিবার সমাধিস্থলে ফাতিহাখানির জন্য তাশরিফ নিয়ে যেতেন।
এভাবে রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম কতিপয় নাফল (ঐচ্ছিক) আ’মালের জন্য বিভিন্ন সন্ধ্যা ও দিন নির্দিষ্ট করতেন যেন আ’মালের স্থায়িত্ব সৃষ্টি হয়।
❐ অবশ্যিক-পালনীয় আ’মালসমূহ শারিয়া কর্তৃক নির্ধারিত-নির্দিষ্টকৃত।
পক্ষান্তরে,
❐ রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
“(তোমাদের ঐচ্ছিক আ’মালসমূহের) আল্লাহ্’র দরবারে সর্বাধিক প্রিয় আ’মাল হচ্ছে যেটি লাগাতার (স্থায়ীত্বের সাথে) করা হয়; চাই তা কমেই হোক না কেন”।
✒গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুসনাদ আহমাদ ইবনে হাম্বাল; ৬/১২৫।
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র সূন্নাতে ঐচ্ছিক (নাফল) আ’মালের জন্যও সময় নির্ধারনের দৃষ্টিভঙ্গী বিদ্যমান রয়েছে।
❐ এই প্রসঙ্গে নিচে কিছু বর্ননা উপস্থাপন করছি; আশা করি বুঝতে পারবেন।
আসুন, দেখা যাক;
১.✍
মহান আল্লাহ্ পাকের বান্দাগনের অনূসরনীয় আদর্শ রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর সপ্তাহের সোমবার নির্দিষ্ট করত: ঐচ্ছিক (নাফল, তদুপরি সূন্নাত) রোজা পালনঃ
নিচের হাদিস পাক রোজার আ’মালের দ্বারা সপ্তাহে একদিন রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-র “মীলাদ শরীফ”-উদযাপনের প্রমাণ।
বিশুদ্ধ হাদীস শরীফে এসেছে,
ﺱﺀﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺻﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻓﻘﺎﻝ ﻓﻴﻪ ﻭﻟﺪﺕ ﻭﻓﻴﻪ
ﺍﻧﺰﻝ ﻋﻠﻲ ﻭﺣﻲ
অর্থাৎঃ হযরত আবু কাতাদা আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল, তখন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, এইদিন আমি বিলাদত ( ﻭﻟﺪﺕ ) শরীফ লাভ করেছি, আর এদিনই আমার উপর ওহী বা কুরআন শরীফ নাজিল হয়েছে।”
✒গ্রন্থ সূত্র :
*_* সহীহ মুসলিম, হাদীছ শরীফ নং-২৮০৭;
*_* সুনানে আবু দাউদ, হাদীছ শরীফ নং-২৪২৮;
*_* সুনানে বায়হাকী [কুবরা], হাদীছ শরীফ নং-৮২১৭;
*_* সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীছ শরীফ নং-২১১৭;
*_* মুসনাদে আবি আওয়ানা, হাদীছ শরীফ নং-২৯২৬;
*_* মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ শরীফ নং-২২৫৫০।
২.✍
দরুদ (ছলাত ও সালাম) শরীফ পাঠের জন্য সপ্তাহের জুমুঅা’র দিন নির্দিষ্টকরনের ঐচ্ছিক (নাফল, তদুপরি সূন্নাত) আ’মালঃ
❖ হাদিস পাকটি পর্যবেক্ষণ করুন,
হাযরাত আউস বিন আউস রা. থেকে বর্ণিত,
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
“তোমাদের দিবসসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দিবস হল জুমুঅা’র দিবস। এ দিবসে হাযরাত আদম আ.’কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিবসে তাঁর রুহ্ শরীফ কবজ করা হয়েছে। এই দিবসে (পৃথিবী অবসানের জন্য) সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। এ দিবসেই সকলে সঙ্গাহীন হয়ে যাবে। সুতরাং সেই দিবসে (এর তাৎপর্যের কারনে) আমার প্রতি (মহান আল্লাহ্ পাকের সমীপে) অধিকহারে দরুদ (সলাত ও সালাম) শরীফ পেশ কর (দুঅা’ কর); নিশ্চয় তোমাদের এই আ’মাল আমার নিকট পেশ করা হয়”।
✒গ্রন্থ সূত্র :
*_* সূনানে আবু দাউদ, ১/৯৩।
৩.✍
সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার ঐচ্ছিক (নাফল, দতদুপরি সূন্নাত) রোজার জন্য দিবস নির্দিষ্টকরণঃ
উম্মতের জননী আম্মা আয়িশা সিদ্দিকা রা. বলেন,
“রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করতেন”।
✒গ্রন্থ সূত্র :
*_* জামে’ তিরমিযী; ১/৯৩।
৪.✍
ভ্রমনের জন্য দিবস নির্ধারনের ঐচ্ছিক আ’মালঃ
হাযরাত কা’ব বিন মালিক রা. বলেন,
“নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম বৃহস্পতিবার দিবসে তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা হয়েছিলেন এবং তিনি বৃহস্পতিবার ভ্রমনে রওয়ানা হতে পছন্দ করতেন”।
দেখুন, বৃহস্পতিবার শারযী নির্ধারন নয়। এই নির্ধারন ঐচ্ছিক ছিল।
✒গ্রন্থ সূত্র :
*_* সহীহ্ বুখারি, ১/৪১৪।
৫.✍
ঐচ্ছিক (নাফল) ইবাদাতের জন্য দিবস নির্ধারনঃ
হাযরাত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রা. থেকে বর্নিত,
“রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম সপ্তাহের প্রতি শনিবার ‘মাসজিদে কুবা’-তে (তাৎপর্যের কারনে) গমন/রওয়ানা করতেন। তিনি কখনো পায়ে হেঁটে এবং কখনো বাহনে করে গমন/রওয়ানা করতেন। অত:পর দুই রাকা’আত নাফল নামায আদায় করতেন”।
✒গ্রন্থ সূত্র :
*_* সহীহ্ বুখারী; ১/১৫৯।
৫.১.✍
হাযরাত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রা. ও এরুপ করতেন।
✒গ্রন্থ সূত্র :
*_* সহীহ বুখারী; ১/১৫৯।
দেখুন,
না ক্বুরআ’ন সেখানে গিয়ে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে ঐচ্ছিক ইবাদাত-নাফল নামায আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে আর না রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে এটির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কিন্তু,
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর বারকাতময় সূন্নাত মনে করে হাযরাত ইবনে উমার রা. নিজের জন্য এই পূণ্যময় আ’মাল সম্পাদনে “উক্ত মাসজিদ ও উক্ত দিবস” নির্ধারনকে বহাল রাখলেন।
৬.✍
ওয়াজ মাহফিল/বক্তব্য অনুষ্ঠান/নাসিহাত/বৈধ কাজ এর জন্য দিবস নির্ধারনঃ
হাযরাত আবু ওয়ায়েল রা. বলেন,
হাযরাত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রা. সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার জনসম্মুখে বক্তব্য দিতেন”।
✒গ্রন্থ সূত্র :
*_* সহিহুল বুখারী শরীফ; ১/১৬১।