শরীয়তে নারী পুরুষের ইবাদতের মধ্যে কিছু পার্থক্য
নারী পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদী নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন-
●১-পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্ব ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।
●২-ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢেকে রাখা ফরয।
●৩-ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুণ্ডায়। কিন্তু মহিলাদের মাথা মুণ্ডানো নিষেধ।
●৪-হজ্ব পালনকালে পুরুষ উচ্চস্বরে তালবীয়া পাঠ করে, পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য নিচু কণ্ঠস্বরে পড়া জরুরি।
●৫-পুরুষের প্রতি জুমআ পড়া ফরয, মহিলাদের ক্ষেত্রে নয়।
●৬-নামাযে সতর্ক করার মতো কোনো ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য পুরুষের তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার বিধান।
●৭-ইমাম ও খতীব শুধু পুরুষ-ই হতে পারে, কোনো নারী হতে পারেনা।
●৮-আজান শুধু পুরুষ-ই দেবে, কোনো নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।
●৯-পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।
●১০-সতর। পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর পরপুরুষের সামনে নারীদের সতর হল প্রায় পুরো শারীরই ঢেকে রাখা ফরয।
নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদত সমূহের অন্যতম হলো নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমাণ যেহেতু বেশি, তাই যেভাবে তাদের সতর বেশি রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে ক্ষেত্রগুলিতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের ঐতিহ্যগত ধারা তাই প্রমাণ করে। এই বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমে।
প্রথমে আমরা সহীহ হাদিস, তারপর পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীনদের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করছি।
আল-হাদীসের আলোকে নারী পুরুষের নামাজ পদ্ধতি ভিন্ন
❏ হাদিস ১ :
3016 – ﺃﺧﺒﺮﻧﺎﻩ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺃﻧﺒﺄ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍﻟﻔﺴﻮﻱ ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻠﺆﻟﺆﻱ ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﺛﻨﺎ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺩﺍﻭﺩ ﺃﻧﺒﺄ ﺑﻦ ﻭﻫﺐ ﺃﻧﺒﺄ ﺣﻴﻮﺓ ﺑﻦ ﺷﺮﻳﺢ ﻋﻦ ﺳﺎﻟﻢ ﺑﻦ ﻏﻴﻼﻥ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺣﺒﻴﺐ : ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻣﺮ ﻋﻠﻰ ﺍﻣﺮﺃﺗﻴﻦ ﺗﺼﻠﻴﺎﻥ ﻓﻘﺎﻝ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺗﻤﺎ ﻓﻀﻤﺎ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻠﺤﻢ ﺇﻟﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﻴﺴﺖ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ) ﺳﻨﻦ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ ﻟﻠﺒﻴﻬﻘﻰ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺤﻴﺾ، ﺑﺎﺏ ﻣﺎ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﺘﺠﺎﻓﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 3016- )
তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব (رحمة الله) বলেন, একবার রাসূল (ﷺ) দুইজন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে তিনি (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন, “যখন সেজদা করবে, তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নয়।” (সুনানুল বায়হাকী, হাদিস নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদিস নং-৮০)
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খাঁন বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০)’তে লিখেছেন, “উল্লেখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য”।
মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী “সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।
❏ হাদিস ২ :
ﻭَﺍﻵﺧَﺮُ ﺣَﺪِﻳﺚُ ﺃَﺑِﻰ ﻣُﻄِﻴﻊٍ : ﺍﻟْﺤَﻜَﻢِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﺒَﻠْﺨِﻰِّ ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﺫَﺭٍّ ﻋَﻦْ ﻣُﺠَﺎﻫِﺪٍ ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : – » ﺇِﺫَﺍ ﺟَﻠَﺴْﺖِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻓِﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻭَﺿَﻌَﺖْ ﻓَﺨِﺬَﻫَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻓَﺨِﺬِﻫَﺎ ﺍﻷُﺧْﺮَﻯ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺠَﺪْﺕْ ﺃَﻟْﺼَﻘَﺖْ ﺑَﻄْﻨَﻬَﺎ ﻓِﻰ ﻓَﺨِﺬَﻳْﻬَﺎ ﻛَﺄَﺳْﺘَﺮِ ﻣَﺎ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻟَﻬَﺎ ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻳَﻨْﻈُﺮُ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ : ﻳَﺎ ﻣَﻼَﺋِﻜَﺘِﻰ ﺃُﺷْﻬِﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻧِّﻰ ﻗَﺪْ ﻏَﻔَﺮْﺕُ ﻟَﻬَﺎ ) ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﻜﺒﺮﻯ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺤَﺐُّ ﻟِﻠْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﻣِﻦْ ﺗَﺮْﻙِ ﺍﻟﺘَّﺠَﺎﻓِﻰ ﻓِﻰ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ ﻭَﺍﻟﺴُّﺠُﻮﺩِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 3324- )
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর ওপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন, ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাকো। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” (সুনানে বায়হাকী-২/২২৩, হাদিস নং-৩৩২৪)
এই হাদীসটি হাসান।
❏ হাদিস ৩ :
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻀﺮﻣﻲ ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﺘﻨﻲ ﻣﻴﻤﻮﻧﺔ ﺑﻨﺖ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺠﺒﺎﺭ ﺑﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻬﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺠﺒﺎﺭ ﻋﻦ ﻋﻠﻘﻤﺔ ﻋﻤﻬﺎ ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻗﺎﻝ : ﺟﺌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ .………… ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ : ﻳﺎ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺇﺫﺍ ﺻﻠﻴﺖ ﻓﺎﺟﻌﻞ ﻳﺪﻳﻚ ﺣﺬﺍﺀ ﺃﺫﻧﻴﻚ ﻭﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺗﺠﻌﻞ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﺣﺬﺍﺀ ﺛﺪﻳﻴﻬﺎ ) ﺍﻟﻤﻌﺠﻢ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻮﺍﻭ، ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺍﻟﺤﻀﺮﻣﻲ ﺍﻟﻘﻴﻞ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 28- )
হযরত ওয়াইল বিন হুজর (رضي الله عنه) বলেন, আমি নবীজী (ﷺ)-এর দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন, ’হে ওয়াইল বিন হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে, তখন কান বরাবর হাত ওঠাবে। আর মহিলা হাত ওঠাবে বুক বরাবর। (আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২৮)
এই হাদিসটিও হাসান।
উল্লেখিত হাদীসগুলি থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। বিশেষত ২ নং হাদিসটি দ্বারা একথা-ও বুঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটি-ই বিবেচনায় রাখা হয়েছে, যা তার সতর ও পর্দার পক্ষে সর্বাধিক উপযোগী।
উল্লেখ্য যে, এই সব হাদীসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদিস আছে। পক্ষান্তরে এগুলির সাথে বিরোধপূর্ণ এমন একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবেনা, যা’তে বলা হয়েছে যে পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোনো পার্থক্য-ই নেই। বরং উভয়ের নামায-ই এক ও অভিন্ন, একথার পক্ষে একটি হাদীসও নেই।
সাহাবায়ে কেরামের ফতোয়ায় নারী পুরুষের নামাজ পদ্ধতি ভিন্ন
❏ হাদিস ৪ :
5072 – ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻗﺎﻝ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﻠﺘﺤﺘﻔﺰ ﻭﻟﺘﻠﺼﻖ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﺑﺒﻄﻨﻬﺎ ) ﻣﺼﻨﻒ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺗﻜﺒﻴﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺑﻴﺪﻳﻬﺎ ﻭﻗﻴﺎﻡ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻭ ﺭﻛﻮﻋﻬﺎ ﻭﺳﺠﻮﺩﻫﺎ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﻴﺚ 5072- )
হযরত আলী (রা.) বলেছেন, মহিলা যখন সেজদা করে, তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৮, হাদিস নং-৫০৭২, মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২/৩০৮, হাদিস নং-২৭৯৩, সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২)
❏ হাদিস ৫ :
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻘْﺮِﺉ ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺃَﻳُّﻮﺏَ ، ﻋَﻦْ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﺒِﻴﺐٍ ، ﻋَﻦْ ﺑُﻜَﻴْﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﺍﻷَﺷَﺞِّ ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ؛ ﺃَﻧَّﻪُ ﺳُﺌِﻞَ ﻋَﻦْ ﺻَﻼَﺓِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺗَﺠْﺘَﻤِﻊُ ﻭَﺗَﺤْﺘَﻔِﺰ.ُ ) ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﺔ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻛَﻴْﻒَ ﺗَﺠْﻠِﺲُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2794- )
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, মহিলারা কীভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন, “খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৪)
ওপরে মহিলাদের নামায সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হলো, আমাদের জানা মতে কোনো হাদীসগ্রন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
রাসূল (ﷺ) হতে সাহাবায়ে কিরাম যে দ্বীন শিখেছেন, তাঁদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীনগণ। তাঁদের ফাতওয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে,”মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। নিম্নে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফাতওয়া উল্লেখ করা হলো:
তাবেয়ীনগণের ফতোয়ায় নারী পুরুষের নামাজ পদ্ধতি ভিন্ন
❏ হাদিস ৬ :
2486- ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻫﺸﻴﻢ ، ﻗﺎﻝ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺷﻴﺦ ﻟﻨﺎ ، ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﻋﻄﺎﺀ ؛ ﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻛﻴﻒ ﺗﺮﻓﻊ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺣﺬﻭ ﺛﺪﻳﻴﻬﺎ) ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﻪ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺘﻢ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﻭﻻ ﻳﻨﻘﺼﻪ ﻓﻲ ﻛﻞ ﺭﻓﻊ ﻭﺧﻔﺾ،)
হযরত আতা বিন আবী রাবাহ’কে জিজ্ঞেস করা হলো, “নামাযে মহিলারা কতোটুকু হাত ওঠাবে?” তিনি বললেন, “বুক বরাবর।” (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৬)
❏ হাদিস ৭ :
2489- ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺑﻜﺮ ، ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﺟﺮﻳﺞ ، ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ ﻟﻌﻄﺎﺀ : ﺗﺸﻴﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺑﻴﺪﻳﻬﺎ ﺑﺎﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﺑﺬﻟﻚ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ، ﻭﺃﺷﺎﺭ ﻓﺨﻔﺾ ﻳﺪﻳﻪ ﺟﺪﺍ ، ﻭﺟﻤﻌﻬﻤﺎ ﺇﻟﻴﻪ ﺟﺪﺍ ، ﻭﻗﺎﻝ : ﺇﻥ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻫﻴﺌﺔ ﻟﻴﺴﺖ ﻟﻠﺮﺟﻞ ، ﻭﺇﻥ ﺗﺮﻛﺖ ﺫﻟﻚ ﻓﻼ ﺣﺮﺝ.
হযরত ইবনে জুরাইজ (رحمة الله) বলেন, আমি আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম, “মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে কি?” তিনি বললেন, “মহিলা পুরুষের মতো হাত তুলবেনা। এরপর তিনি তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথে খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস নং-৫০৬৬,৬২৫১)
❏ হাদিস ৮ :
2796- ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺟﺮﻳﺮ ، ﻋﻦ ﻟﻴﺚ ، ﻋﻦ ﻣﺠﺎﻫﺪ ؛ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻜﺮﻩ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺑﻄﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻪ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪ ﻛﻤﺎ ﺗﺼﻨﻊ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ.
হযরত মুজাহিদ বিন জাবর (رحمة الله) থেকে বর্ণিত; তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৮৯৬)
❏ হাদিস ৯ :
2487- ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺭﻭﺍﺩ ﺑﻦ ﺟﺮﺍﺡ ، ﻋﻦ ﺍﻷﻭﺯﺍﻋﻲ ، ﻋﻦ ﺍﻟﺰﻫﺮﻱ ، ﻗﺎﻝ : ﺗﺮﻓﻊ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﺣﺬﻭ ﻣﻨﻜﺒﻴﻬﺎ.
হযরত যুহরী রহ. বলেন-“মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীস নং-২৪৮৭)
❏ হাদিস ১০ :
5068 – ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﻣﻌﻤﺮ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﻗﺘﺎﺩﺓ ﻗﺎﻻ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺗﻨﻀﻢ ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻄﺎﻋﺖ ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻰ ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ
হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা (رحمة الله) বলেন, “মহিলা যখন সেজদা করবে, তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দেবেনা যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে”। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩)
❏ হাদিস ১১ :
2795- ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻷَﺣْﻮَﺹِِ ، ﻋَﻦْ ﻣُﻐِﻴﺮَﺓَ ، ﻋَﻦْ ﺇﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺇﺫَﺍ ﺳَﺠَﺪَﺕِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻓَﻠْﺘَﻀُﻢَّ ﻓَﺨِﺬَﻳْﻬَﺎ ، ﻭَﻟْﺘَﻀَﻊْ ﺑَﻄْﻨَﻬَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ . ) ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﺔ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻛَﻴْﻒَ ﺗَﺠْﻠِﺲُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2795- )
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী (رحمة الله) বলেন, মহিলা যখন সেজদা করবে, তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫)
❏ হাদিস ১২ :
5071 – ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﻋﻦ ﻣﻌﻤﺮ ﻭﺍﻟﺜﻮﺭﻱ ﻋﻦ ﻣﻨﺼﻮﺭ ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺆﻣﺮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺃﻥ ﺗﻀﻊ ﺫﺭﺍﻋﻬﺎ ﻭﺑﻄﻨﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻓﺨﺬﻳﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺳﺠﺪﺕ ﻭﻻ ﺗﺘﺠﺎﻓﻰ ﻛﻤﺎ ﻳﺘﺠﺎﻓﻰ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻜﻲ ﻻ ﺗﺮﻓﻊ ﻋﺠﻴﺰﺗﻬﺎ
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী (রহ.) আরো বলেন, “মহিলাদের আদেশ করা হতো তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমর উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১)
❏ হাদিস ১৩ :
2799- ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞُ ﺍﺑْﻦُ ﻋُﻠَﻴَّﺔَ ، ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ، ﻋَﻦْ ﺯُﺭْﻋَﺔَ ﺑْﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ، ﻋَﻦ ﺧَﺎﻟِﺪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﻠَّﺠْﻼَﺝِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛُﻦَّ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀُ ﻳُﺆْﻣَﺮْﻥَ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﺮَﺑَّﻌْﻦَ ﺇﺫَﺍ ﺟَﻠَﺴْﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ، ﻭَﻻَ ﻳَﺠْﻠِﺴْﻦَ ﺟُﻠُﻮﺱَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻭْﺭَﺍﻛِﻬِﻦَّ ، ﻳُﺘَّﻘﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ، ﻣَﺨَﺎﻓَﺔَ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺍﻟﺸَّﻲﺀُ.
হযরত খালেদ বিন লাজ্জাজ (رحمة الله) বলেন, “মহিলাদেরকে আদেশ করা হতো যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের ওপর বসে। পুরুষদের মতো যেন না বসে। আবরণযোগ্য কোনো কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩, হাদিস নং-২৭৯৯)
উল্লেখিত বর্ণনাগুলো ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে, যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে, একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নয়।
চার ইমামের ফিক্বহের আলোকে নারী পুরুষের নামাজ পদ্ধতি ভিন্ন
ফিক্বহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত। যথা-
১-ফিক্বহে হানাফী
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
৩-ফিক্বহে মালেকী
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
এবার দেখুন এই চার ফিক্বহের ইমামদের মতামত।
১-ফ্বিকহে হানাফী
ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻴﻨﺎ ﺍﻥ ﺗﺠﻤﻊ ﺭﺟﻠﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺟﺎﻧﺐ ﻭﻻ ﺗﻨﺘﺼﺐ ﺍﻧﺘﺼﺎﺏ ﺍﻟﺮﺟﻞ، ) ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻵﺛﺎﺭ – 1/609 )
ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله)-এর অন্যতম সাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) বলেন, “আমাদের নিকট পছন্দনীয় হলো, মহিলারা নামাযে উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষের মতো এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা। {কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ-১/৬০৯}
ﺭﻭﻯ ﺍﻣﺎﻣﻨﺎ ﺍﻷﻋﻈﻢ ﻋﻦ ﻧﺎﻓﻊ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻧﻪ ﺳﺌﻞ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻳﺼﻠﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ؟ ﻗﺎﻝ ﻛﻦ ﻳﺘﺮﺑﻌﻦ ﺃﻣﺮﻥ ﺃﻥ ﻳﺤﺘﻔﺰﻥ،
ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﺑﻮ ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﺤﺎﺭﺛﻰ ﻭﺍﻷﺷﻨﺎﻧﻰ ﻭﺍﺑﻦ ﺧﺴﺮﻭ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻘﻪ ﻋﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺍﻟﺜﻮﺭﻯ ﻋﻨﻪ، ﺭﺍﺟﻊ ﺟﺎﻣﻊ ﺍﻟﻤﺎﺳﺎﻧﻴﺪ – 1/400 ، ﻭﻫﺬﺍ ﺃﻗﻮﻯ ﻭﺍﺣﺴﻦ ﻣﺎ ﺭﻭﻯ ﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ، ﻭﻟﺬﺍ ﺍﺣﺘﺞ ﺑﻪ ﺍﻣﺎﻣﻨﺎ ﻭﺟﻌﻠﻪ ﻣﺬﻫﺒﻪ ﻭﺃﺧﺬ ﺑﻪ،
আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা (رحمة الله) নাফে (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, “রাসূল (ﷺ)-এর যুগে মহিলারা কীভাবে নামায পড়তেন?” তিনি বললেন, “আগে তারা চার জানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”। {জামেউল মাসানিদ-১/৪০০}
উক্ত হাদিসটি এ বিষয়ে বর্ণিত সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ অনুযায়ী আমল করেছেন; এবং এটিকে নিজের মাযহাব বানিয়েছেন। {কিতাবুল আসার-এর টীকা-১/৬০৭}
মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্থক্যের বর্ণনা হানাফী ফিক্বহের কিতাবে দেখুন –
১-বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬
২-হেদায়া-১/১০০-১১০
৩-আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬
৪-ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪
৫-ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
( ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ( ﻭﻗﺪ ﺃﺩﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺑﺎﻻﺳﺘﺘﺎﺭ ﻭﺃﺩﺑﻬﻦ ﺑﺬﻟﻚ ﺭﺳﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﺣﺐ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﺃﻥ ﺗﻀﻢ ﺑﻌﻀﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺑﻌﺾ ﻭﺗﻠﺼﻖ ﺑﻄﻨﻬﺎ ﺑﻔﺨﺬﻳﻬﺎ ﻭﺗﺴﺠﺪ ﻛﺄﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻬﺎ ﻭﻫﻜﺬﺍ ﺃﺣﺐ ﻟﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺠﻠﻮﺱ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺃﻥ ﺗﻜﻮﻥ ﻓﻴﻬﺎ ﻛﺄﺳﺘﺮ ﻣﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻬﺎ ) ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﻡ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺬﻛﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻮﺩ )
ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, “আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল (ﷺ) সেরকম শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হলেঅ, সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে, যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে, যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। {কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮)
৩-ফিক্বহে মালেকী
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী (رحمة الله) ইমাম মালিক (رحمة الله)-এর অভিমত উল্লেখ করেন –
ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺴﺎﻭﺍﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻓﻔﻲ ﺍﻟﻨﻮﺍﺩﺭ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺗﻀﻊ ﻓﺨﺬﻫﺎ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻭﺗﻨﻀﻢ ﻗﺪﺭ ﻃﺎﻗﺘﻬﺎ ﻭﻻ ﺗﻔﺮﺝ ﻓﻲ ﺭﻛﻮﻉ ﻭﻻ ﺳﺠﻮﺩ ﻭﻻ ﺟﻠﻮﺱ ﺑﺨﻼﻑ ﺍﻟﺮﺟﻞ
নামাযে মহিলা পুরুষের মতো কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক (رحمة الله) থেকে বর্ণিত: মহিলা ডান উরু বাম উরুর ওপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা ও বৈঠকে কোনো সময়-ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে, পুরুষের পদ্ধতি হলো ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর ফাতওয়ার উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা (রহ)-এর আল-মুগীনী কিতাবে;
ﻓﺄﻣﺎ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻓﺬﻛﺮ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻓﻴﻬﺎ ﺭﻭﺍﻳﺘﻴﻦ ﻋﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺇﺣﺪﺍﻫﻤﺎ ﺗﺮﻓﻊ ﻟﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﺍﻟﺨﻼﻝ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩﻩ ﻋﻦ ﺃﻡ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻭﺣﻔﺼﺔ ﺑﻨﺖ ﺳﻴﺮﻳﻦ ﺃﻧﻬﻤﺎ ﻛﺎﻧﺘﺎ ﺗﺮﻓﻌﺎﻥ ﺃﻳﺪﻳﻬﻤﺎ ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﻃﺎﻭﺱ ﻭﻷﻥ ﻣﻦ ﺷﺮﻉ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﺷﺮﻉ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﻛﺎﻟﺮﺟﻞ ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺗﺮﻓﻊ ﻗﻠﻴﻼ ﻗﺎﻝ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﻓﻊ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﻭﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻻ ﻳﺸﺮﻉ ﻷﻧﻪ ﻓﻲ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺘﺠﺎﻓﻲ ﻭﻻ ﻳﺸﺮﻉ ﺫﻟﻚ ﻟﻬﺎ ﺑﻞ ﺗﺠﻊ ﻧﻔﺴﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﺻﻼﺗﻬﺎ
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত ওঠাবে কি ওঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (رحمة الله) থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হলো, হাত ওঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু, যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত ওঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ (رحمة الله) বলেন, “তুলনামূলক কম উঠাবে”।
দ্বিতীয় মত হলো,“মহিলাদের জন্য হাত ওঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোনো না কোনো অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হলো, রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। {আল মুগনী-২/১৩৯}
আলোচনার এই পর্যায়ে হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন ও চার মাযহাবের ইমামদের ঐকমত্যের প্রমাণ পেশ করার পর আমরা দেখবো আমাদের যে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা মহিলাদের নামাযের ভিন্ন বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন এবং পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেন, তাদের আলেমবর্গ এ বিষয়ে কী বলেন? আর তারা কী-ই বা ফাতওয়া দিয়েছেন এই বিষয়ে?
গায়রে মুকাল্লিদ আলেমগণের ফাতওয়া
মহিলাদের নামাযের পদ্ধতিতে ইতিপূর্বে যা কিছু উল্লেখ করা হয়েছে তথা হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীনদের ইজমা, এবং চার ইমামের ঐকমত্যের আলোকে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় যেই পার্থক্যের আমল তথা অনুশীলন চলে আসছে, সেটাকে গায়রে মুকাল্লিদদের নেতৃস্থানীয় আলেমগণও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সেই আলোকে ফাতওয়া দিয়েছেন।
# মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবীর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবীকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় – “মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত?” জবাবে তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেন, “এর ওপর-ই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যের মাঝে আমল চলে আসছে”।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লিখেন, “মোটকথা মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বীকারকারী ব্যক্তি হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতে মুসলিমার সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ।” (ফাতওয়ায়ে গযনবীয়্যা-২৭-২৮, ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস—৩/১৪৮-১৪৯, মাযমুয়ায়ে রাসায়েল-মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর-১-৩১০-৩১১)
মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ সাহেব “ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস” পুস্তকে এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। (মাজমুয়ায়ে রাসায়েল-১/৩০৫)
আলবানী’র অসার বক্তব্য
আশ্চর্যের কথা হলো, উপরোল্লিখিত দলীলসমূহ এবং উম্মতের মাঝে নববী যুগ থেকে পর্যায়ক্রমে চলে আসা এই সর্বসম্মত আমলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নাসিরুদ্দীন আলবানী তার “সিফাতুস সালাতে” পুস্তকে ঘোষণা করেন যে “পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক-ই।”
কিন্তু এই দাবির পক্ষে তিনি না কোনো আয়াত পেশ করেছেন, না কোনো হাদিস; আর না কোনো সাহাবী বা তাবেয়ীর ফাতওয়া। এহেন বক্তব্যের ভিত্তি তিনি শুধু এটাকেই বানিয়েছেন যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্যের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস নাই। অথচ তার এই দাবি প্রমাণ করার জন্য উচিত ছিল উপরোল্লিখিত দলিল সমূহ বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তিনি তা না করে কেবল পার্থক্য সম্বলিত একটি হাদীসকে {যা বক্ষ্যমান নিবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে} শুধু এ কথা বলে যয়ীফ বলে আখ্যা দিয়েছেন যে হাদীসটি ‘মুরসাল’। আর মুরসাল হওয়ায় এটি দুর্বল। এ ছাড়া অন্য কোনো আলোচনাই তিনি দলীল সম্পর্কে করেননি।
কিন্তু তার এই কথাটি একগুঁয়েমি ছাড়া কিছু নয়। কারণ মুহাদ্দীসীনে কিরামের নিকট হাদিস মুরসাল হলেই তা অগ্রহণীয় হয়ে যায় না। কেননা প্রথমত আয়িম্মায়ে দ্বীনের অধিকাংশের মতে বিশেষত স্বর্ণযুগের ইমামগণের নিকট যদি প্রয়োজনীয় শর্তাবলী উপস্থিত থাকে, তাহলে মুরসাল হাদিসও সহীহ হাদিসের মতো গ্রহণযোগ্য।
দ্বিতীয়তঃ যে ইমামগণের নিকট ‘মুরসাল” হাদীসকে সহীহ বলার ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে, তারাও মূলত কিছু শর্তের সাথে মুরসাল হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করার উপযোগী মনে করেন। প্রবন্ধের শুরুতে বর্ণিত মুরসাল বর্ণনাটিতেও সেসব শর্ত বিদ্যমান; যার কারণে গায়রে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান “আউনুল বারী”-(১/৫২০ দারুর রাশীদ, হালাব সিরিয়া) তে লিখেছেন-“এই মুরসাল হাদীসটি সকল ইমামের উসূল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলীল হওয়ার যোগ্য”। তার পূর্ণ বক্তব্যটি দেখুন আওনুল বারী-২/১৫৯।
পুরুষ মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন, তা খুবই গর্হিত। সেটা হলো, তিনি ইবরাহীম নাখয়ী (رحمة الله)-কে নাকি বলেছেন, “মহিলা পুরুষের মতোই নামায আদায় করবে”। এই কথাটি নাকি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে। অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নাই। আল্লাহ-ই ভালো জানেন তিনি কি করে এই কথা বলতে পারলেন!!
অথচ ইতিপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখয়ী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, যেখানে ইবরাহীম নাখয়ী (رحمة الله) স্পষ্ট-ই মহিলা পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।
আলবানী সাহেব তার নিজের দাবি প্রমাণ করার জন্য তৃতীয় আরেকটি কাজ করেছেন। সেটা হলো, ইমাম বুখারী (رحمة الله)-এর রিজালশাস্ত্রের একটি কিতাব “তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি তিনি পেশ করেছেন –
ﻋﻦ ﺍﻡ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﺍﻧﻬﺎ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺠﻠﺲ ﻓﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺟﻠﺴﺔ ﺍﻟﺮﺟﻞ-
“উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মতো বসতেন।”
আলবানী সাহেব খেয়াল করতে পারেননি যে, এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়, এক হওয়া নয়। যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হতো, তাহলে “পুরুষের মতো বসা” কথাটির কোনো অর্থ থাকতো না। তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মতো মহিলারা বসতো না। কিন্তু তিনি যেহেতু ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, উম্মে দারদা হলেন একজন তাবেয়ী। তিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাবেয়ীর বক্তব্য দ্বারা আলবানী সাহেব দলীল পেশ করেন। অথচ তিনিই আমাদের বর্ণিত প্রথম হাদীসটি মুরসাল বলে প্রত্যাখ্যান করেন। আশ্চর্য ব্যাপার!!
সুতরাং যদি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাবেয়ীর আমল দলীল হয়ে থাকে (আসলে কথা এটাই, অর্থাৎ তাবেয়ীর কথা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য) তাহলে ইতঃপূর্বে বিখ্যাত একাধিক তাবেয়ী ইমামগণের উদ্ধৃতিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতির ভিন্নতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে; আর একথা-ও প্রমাণিত হয়েছে যে, আয়িম্মায়ে তাবেয়ীদের তালীম ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু, সেজদা, ও বৈঠকসহ অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের নামায পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এক্ষেত্রে শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করাটা কিছুতেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। বিশেষ করে যখন যখন ঠিক এই বর্ণনাটির মাঝেই সুষ্পষ্ট একথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে এ মহিলা অন্য সাহাবী ও তাবেয়ী মহিলা থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
সুতরাং বোঝা গেল যে নামাযের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা; এটাই দলীল দ্বারা প্রমাণিত। গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের বক্তব্যটির কোনো দলিল নেই। আল্লাহ তায়ালা সত্যকে সত্য হিসেবে মেনে নেবার তৌফিক আমাদের দান করুন, আমীন!