সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল্ আযহারী
যে সমস্ত বরকতময় রজনীতে আল্লাহ্পাক তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করে থাকেন, শবে বরাত তারই অন্যতম। তাফসীর-হাদিস ও বিজ্ঞ আলিমদের পরিভাষায় যাকে ليلة النصف من شعبان বা শাবানের মধ্য রজনী নামে অভিহিত করা হয়। যে রাতটি হলো শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সলফে সালেহীনগণ এবং বিজ্ঞ মনীষীগণ এ রাতটিকে অত্যন্ত গুরুত ¡সহকারে পালন করেছেন। অনুরূপভাবে যুগে যুগে মুসলমানগণ এরই ধারাবাহিকতায় এ রাতটি পালন করে আসছেন।
নামকরণ:شب برات (শবে বরাত) ফার্সী শব্দ, شب (শব) মানে রাত আর برات (বরাত) মানে ভাগ্য, অর্থাৎ ভাগ্যরজনী। আর এ পবিত্র রাতের বিভিণœ নাম পাওয়া যায়। ১. ليلة البراء ة (লাইয়লাতুল বরাত বা বণ্টনের রাত, ২. ليلة مباركة (লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকতময় রজনী) ৩. ليلة الرحمة (লাইলাতুর রহমা বা করুণার রজনী) ও ৪. ليلة الصك (লাইলাতুছ্ ছাক বা সনদপ্রাপ্তির রাত।
হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি রচিত গুনিয়াতুত্ ত্বালেবীন এ উল্লেখ করেন:
وقيل: إنما سميت ليلة البراءة لأن فيها براءتين: براءة للأشقياء من الرحمن وبراءة للأولياء من الخذلان.
]غنيه الطالبين: محي الدين عبد القادر الجيلاني. طبعه لاهور،باكستان- مطبع امند- مطبع حسامي سنه ১৩১২هـ -ص ৫১৩[
‘এ রাতকে লাইলাতুল বরাত বলা হয় এ জন্য যে, কেননা এ রাতে দু’ধরনের বরাত হাছিল হয়। একটি হলোঃ হতভাগাদের আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া, অপরটি হলোঃ আল্লাহর প্রিয়জনদের অপমান থেকে মুক্ত ও নিরাপদ থাকা।’’
আল্লামা জমখ্শরী তাঁর ‘কাশ্শাফ’ নামক তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
ثم أن ليلة النصف من شعبان لها أربعة أسماء: الليلة المباركة، وليلة البراءة، وليلة الصك، وليلة الرحمة، وقيل إنما سميت بليلة البراءة، وليلة الصك، لأن البندار إذا استوفى الخراج من أهله كتب لهم البراءة، كذلك الله عزّ وجلّ يكتب لعباده المؤمنين البراءة في هذه الليلة.
(الكشاف: في تفسير قوله تعالى: ( حم، والكتاب المبين، إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين. # و السراج المنير في الإعانة على معرفة بعض معاني كلام ربنا الحكيم الخبير: شمس الدين، محمد بن أحمد الخطيب الشربيني الشافعي (المتوفى: ৯৭৭هـ)الناشر: مطبعة بولاق (الأميرية) – القاهرةعام النشر: ১২৮৫ هـ. عدد الأجزاء: ৪)
‘‘নিশ্চয় শাবানের মধ্য রজনী’র চারটি উল্লেখযোগ্য নাম রয়েছে, আর তা হলো- الليلة المباركة লাইলাতুল মুবারাকা (বরকতময় রজনী) ليلة البراءة লাইলাতুল বরায়া (ভাগ্য রজনী) ليلة الرحمة লাইলার্তু রহমাহ্ (করুণার রজনী) ও ليلة الصك লাইলাতুছ্ ছাক (সনদপ্রাপ্তির রজনী) এ রাতকে বরাত ও ছাক রাত নামে নামকরণের কারণ হিসেবে বলেন- যখন কোন ব্যক্তি তার উপর ধার্যকৃত কর পরিশোধ করেন তখন তাকে কর আদায়কারী ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি দায়মুক্তির সনদ দেয়া হয়, অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা’লা তাঁর প্রিয় বান্দাদের এ রাত্রিতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ প্রদান করে থাকেন।’’ [তাফসীর-ই কাশ্শাফ]
তাছাড়া, ইমাম কুরতবী তাঁর তাফসীরের প্রসিদ্ধ গ্রন্থে পবিত্র ক্বোরআনের ‘সূরা দুখান’ এর আয়াত حم والكتاب المبين… এর ব্যাখ্যায় বলেন,
( حم، والكتاب المبين، إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين- سورة الدخان. آيات: ১-৩)
والليلة المباركة ليلة القدر. ويقال: ليلة النصف من شعبان، ولها أربعة أسماء الليلة المباركة، وليلة البراءة، وليلة الصك، وليلة القدر. ووصفها بالبركة لما ينزل الله فيها على عباده من البركات والخيرات والثواب. وروى قتادة عن واثلة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ( أنزلت صحف إبراهيم في أول ليلة من رمضان وأنزلت التوراة لست مضين من رمضان وأنزلت الزبور لاثنتي عشرة من رمضان وأنزل الإنجيل لثمان عشرة خلت من رمضان وأنزل القرآن لأربع وعشرين مضت من رمضان ) . ثم قيل: أنزل القرآن كله إلى السماء الدنيا في هذه الليلة. ثم أنزل نجما نجما في سائر الأيام على حسب اتفاق الأسباب. وقيل: كان ينزل في كل ليلة القدر ما ينزل في سائر السنة. وقيل: كان ابتداء الإنزال في هذه الليلة. وقال عكرمة: الليلة المباركة ها هنا ليلة النصف من شعبان.
(تفسير القرطبي: في تفسير قوله تعالى: حم، والكتاب المبين، إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين)
আয়াতে ليلة مباركة বা বরকতময় রজনী মানে শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন- তা হলো শাবানের মধ্যরজনী (ليلة النصف من شعبان) কে বুঝানো হয়েছে। এ রাতটির চারটি নাম উল্লেখ রয়েছে। আর তাহলো- লাইলাতুল মুবারাকাহ্ ও লাইলাতুছ্ ছাক। আর এ রাতকে ‘বরকতময় রজনী’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা এ রাতে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর অগণিত বরকত, কল্যাণ ও পূণ্য অবতীর্ণ করে থাকেন।
হযরত ক্বাতাদাহ্(র.) ওয়াছিলাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘রমজানের প্রথম রাতে অবতীর্ণ হয়েছে ছহীফা ইবরাহীম, সপ্তম রাতে তাওরাত, দ্বাদশতম রাতে যাবুর, উনবিংশ রাতে ইন্জীল এবং চব্বিশতম রাত সমাপনান্তে অবতীর্ণ হয় কুরআন করীম।’
অতঃপর বলা হয়, ‘এ রাতেই পবিত্র ক্বোরআন একই সাথে সম্পূর্ণরূপে অবতীর্ণ হয় এবং পরবর্তীতে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে বছর জুড়ে অবতীর্ণ হয়। আরও বলা হয়, যে পরিমাণ ক্বোরআন সারা বছর অবতীর্ণ হয় ঠিক সমপরিমাণ ক্বোরআন শবে কদরের রাতে অবতীর্ণ হয় একত্রে। আবার কেউ কেউ বলেন, ক্বোরআন অবতীর্ণ হওয়া আরম্ভ হয় শবে বরাতের রাতে। ইকরামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, লাইলাতুল মুবারাকাহ্ মানে এখানে ‘শবে বরাত’কে বুঝানো হয়েছে।
হযরত ইকরামা বলেন, এটি হলো শাবানের মধ্য রজনী (শবে বরাত) আগত বছরের বিষয়াদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কারা জীবিত থাকবে এবং কারা মারা যাবে, কারা এ বছর হজ্ব করবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে এতে কেউ কোনরূপ পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে না।
তিনি আরো বলেন:
وقال عكرمة : هي ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وينسخ الأحياء من الأموات ، ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم أحد ولا ينقص منهم أحد . وروى عثمان بن المغيرة قال : قال النبي – صلى الله عليه وسلم – : تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان حتى إن الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه في الموتى .
قلت : وقد ذكر حديث عائشة مطولا صاحب كتاب العروس ، واختار أن الليلة التي يفرق فيها كل أمر حكيم ليلة النصف من شعبان ، وأنها تسمى ليلة البراءة .. وقال الزمخشري : وقيل يبدأ في استنساخ ذلك من اللوح المحفوظ في ليلة البراءة ويقع الفراغ في ليلة القدر ، فتدفع نسخة الأرزاق إلى ميكائيل ، ونسخة الحروب إلى جبريل ، وكذلك الزلازل والصواعق والخسف ، ونسخة الأعمال إلى إسماعيل – صاحب سماء الدنيا – وهو ملك عظيم ، ونسخة المصائب إلى ملك الموت.
(الجامع لأحكام القرآن(تفسير القرطبي): محمد بن أحمد الأنصاري القرطبي.ط: دار الفكر. سورة الدخان، قوله تعالى: فيها يفرق كل أمر حكيم )
হযরত ওসমান ইবনে মুগিরাহ্ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, শাবান থেকে শাবানের জন্য মানুষের আয়ু নির্ধারণ করা হয়, এমনি মানুষ বিবাহ্ করছে এবং তার সন্তান জন্ম লাভ করছে অথচ তার নাম মৃতদের কাতারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
আমি বলি ‘আল্ আরুস’ নামক কিতাবের লেখক হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত হাদিস শরীফটি সুবিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, যে রাতে সবকিছু বণ্টন করা হয় তা হলো শাবানের মধ্য রজনী বা শবে বরাত। এজন্য এটাকে বরাত রজনী বলা হয়। আল্লামা জমখ্শরী বলেন- ‘লওহে মাহ্ফুজ’ এ লিপিবদ্ধকরণ শুরু হয় শবে বরাতে এবং তার পরিসমাপ্তি ঘটে শবে ক্বদরে। অতঃপর রিজিকের কপি দেয়া হয় হযরত মিকাঈল আলাইহিস্ সালামকে, যুদ্ধের কপি হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালামকে, অনুরূপভাবে ভূমিকম্প, বজ্রপাত ও ভূমিধ্বস বিষয়ক কপিও। আমলনামার কপি প্রথম আসমানের মহান ফিরিশতা হযরত ইসমাঈলকে এবং বিপদাপদের কপি হযরত আজরাঈল তথা মালাকুল মাওতকে সোপর্দ করা হয়।
হযরত ইমাম বগবী এ আয়াতের তাফসীরে বলেন-
حم والكتاب المبين إنا أنزلناه في ليلة مباركة: قال قتادة وابن زيد : هي ليلة القدر أنزل الله القرآن في ليلة القدر من أم الكتاب إلى السماء الدنيا ، ثم نزل به جبريل عن النبي – صلى الله عليه وسلم – نجوما في عشرين سنة . وقال آخرون : هي ليلة النصف من شعبان .
فيها يفرق كل أمر حكيم : وقال عكرمة : هي ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وتنسخ الأحياء من الأموات فلا يزاد فيهم أحد ولا ينقص منهم أحد . وأن رسول الله – صلى الله عليه وسلم – قال : ” تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان ، حتى إن الرجل لينكح ويولد له ولقد أخرج اسمه في الموتى ” . وروى عن ابن عباس – رضي الله عنه – ما : أن الله يقضي الأقضية في ليلة النصف من شعبان ، ويسلمها إلى أربابها في ليلة القدر .
(تفسير البغوي: الحسين بن مسعود البغوي.ط: دار طيبة في تفسير سورة الدخان عن قوله تعالى: حم .والكتاب المبين . إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين . فيها يفرق كل أمر حكيم )ص: ২২৫-২২৭)
‘ইমাম ক্বাতাদাহ্ এবং ইবনে যায়েদ বলেন- এটি হলো ক্বদরের রাত। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নিকট সংরক্ষিত উ¤মূল কিতাব (মূল কিতাব) থেকে ক্বদরের রাতকে পৃথিবীর আকাশে কোরআন নাযিল করেন। অতঃপর হযরত জিব্রাঈল বিশ বছর কাল যাবৎ ধরে ধাপে তা প্রিয় নবীর নিকট নিয়ে আসেন। আর অন্যরা বলেছেন- এটি হলো ‘শাবানের মধ্য রজনী’।
فيها يفرق كل امرحكيم এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, এটি হলো শাবানের মধ্য রজনী, যাতে পূর্ণ বছরের বিষয়াদি নির্ধারণ করা হয়।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ তা‘আলা নানা বিষয়ে ফয়সালা প্রদান করেন শাবানের মধ্য রজনীতে এবং তা এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাদের নিকট সোপর্দ করেন ক্বদরের রাতে।
ইমাম ইবনে কাছীর বলেন:
ومن قال : إنها ليلة النصف من شعبان – كما روي عن عكرمة – فقد أبعد النجعة فإن نص القرآن أنها في رمضان . والحديث : أن رسول الله – صلى الله عليه وسلم – قال : ” تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان ، حتى إن الرجل لينكح ويولد له ، وقد أخرج اسمه في الموتى ” فهو حديث مرسل ، ومثله لا يعارض به النصوص .
تفسير ابن كثير: إسماعيل بن عمر بن كثير القرشي الدمشقي.ط: دار طيبة. سنة النشر: ১৪২২هـ / ২০০২م. في تفسير قوله تعالى:( حم. والكتاب المبين . إنا أنزلناه في ليلة مباركة إنا كنا منذرين .فيها يفرق كل أمر حكيم )
যারা বলেন এটি শাবানের মধ্য রজনী তারা অর্থ থেকে দূরে সরে গিয়েছেন কেননা ক্বোরআন বলছে তা ক্বদর রাত। আর আয়ূ নির্ধারণের হাদিসটি মুরসাল।
https://staticxx.facebook.com/connect/xd_arbiter.php?version=44#channel=f3caac9d27792b4&origin=https%3A%2F%2Fwww.10minutesmadrasah.com
https://www.facebook.com/v3.2/plugins/video.php?app_id=&channel=https%3A%2F%2Fstaticxx.facebook.com%2Fconnect%2Fxd_arbiter.php%3Fversion%3D44%23cb%3Df255e2ea5860604%26domain%3Dwww.10minutesmadrasah.com%26origin%3Dhttps%253A%252F%252Fwww.10minutesmadrasah.com%252Ff3caac9d27792b4%26relation%3Dparent.parent&container_width=353&href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fomairrajvi%2Fvideos%2F1633107496821749%2F&locale=en_US&sdk=joey&width=696
এ মাসকে কেন শাবান মাস নামে নামকরণ করা হয়েছে:
تسمية شهر شعبان: إنما سمي شعبان لأنه يتشعب فيه خير كثير. وجاء في لسان العرب: شعبان اسم للشهر سمي بذلك لتشعبهم فيه … وقال ثعلب قال بعضهم إنما سمي شعبان شعبان لأنه شعب أي ظهر بين شهري رمضان ورجب (لسان العرب لابن منظورج১ ص৫০১)
এ মাসকে শাবান বলা হয়েছে এ জন্যই যে, এতে অফুরন্ত কল্যাণের ভান্ডার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। লিসানুল আরব নামক কিতাবে বলা হয়েছে- শাবানকে এ নামে অভিহিত করার কারণ হলো- কেননা আরবরা এ মাসে কল্যাণের সন্ধানে ছড়িয়ে পড়তো। ছা’লব বলেন- কারো কারো মতে শাবানকে শাবান নামকরণ করা হয়েছে- কেননা এ মাসটি দু’টি বরকতময় মাস তথা রজব ও রমজান মাসের মধ্যবর্তী একটি শাখা।
শাবান মাসের রোজার ফজিলত:
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন:
عن عائشة رضي الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم حتى نقول لا يفطر ويفطر حتى نقول لا يصوم فما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم استكمل صيام شهر إلا رمضان وما رأيته أكثر صياما منه في شعبان.
(صحيح البخاري : كتاب الصوم، باب صوم شعبان. رقم الحديث: ১৮৬৮# صحيح مسلم: كتاب الصيام، باب صيام النبي صلى الله عليه وسلم في غير رمضان واستحباب أن لا يخلي شهرا عن صوم . رقم الحديث: ১১৫৬. واللفظ للبخاري. # وراجع: فتح الباري شرح صحيح البخاري: أحمد بن علي بن حجر العسقلاني . ط: دارالريان للتراث. سنة النشر: ১৪০৭هـ / ১৯৮৬م )
হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বণির্ত, তিনি বলেন- প্রিয় নবী ধারাবাহিকভাবে এতোবেশী রোজা রাখতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হয়তো আর রোজা ছাড়বেন না আবার কখনও এতো বেশী রোজা থেকে বিরত থাকতেন যে, আমরা বলতাম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামহয়তো আর রোজা (নফল) রাখবেন না। তাই আমরা রমজান মাস ছাড়া আর অন্য কোন মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং সবচেয়ে যে মাসে সর্বাধিক নফল রোজা রাখতেন তা হলো শাবান মাসে।
নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে:
عن أسامة بن زيد … قلت ولم أرك تصوم من شهر من الشهور ما تصوم من شعبان قال ذاك شهر يغفل الناس عنه بين رجب ورمضان وهو شهر يرفع فيه الأعمال إلى رب العالمين فأحب أن يرفع عملي وأنا صائم.
(سنن النسائي : كتاب الصيام , صوم النبي صلى الله عليه وسلم بأبي هو وأمي وذكر اختلاف الناقلين للخبر في ذلك. رقم الحديث: ২৩৫৭ وراجع: شرح السيوطي لسنن النسائي: جلال الدين عبد الرحمن بن أبي بكر السيوطي .ط: دار البشائر الإسلاميةسنة النشر: ১৪০৬هـ / ১৯৮৬م # و مسند أحمد : مسند الأنصار رضي الله عنهم . حديث أسامة بن زيد حب رسول الله صلى الله عليه وسلم. رقم الحديث: ২১২৪৬واللفظ لأحمد)
হযরত উসামা বিন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি প্রিয়নবীর দরবারে আরজ করলাম এয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম! শাবান মাসের ন্যায় অন্য কোন মাসে আপনাকে এতোবেশী (নফল) রোজা রাখতে কখনও দেখি না কেন? উত্তরে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, শাবান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস যার সম্পর্কে অনেক মানুষ অনবগত, যেটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস, এটি ওই মহান মাস যে মাসে বান্দার আমলনামা রব্বুল আলামীনের দরবারে সরাসরি পেশ করা হয়। তাই আমি চাই আল্লাহর দরবারে আমার আমলসমূহকে এ অবস্থায় উঠানো হোক যে, আমি রোজাদার।
عن عائشة قالت: كان أكثر صيام رسول الله صلى الله عليه وسلم في شعبان فقلت: يا رسول الله أرى أكثر صيامك في شعبان؟ قال: “إن هذا الشهر يكتب فيه لملك الموت من يقبض فأنا لا أحب أن ينسخ اسمي إلا وأنا صائم”.
‘‘হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবীর অধিকাংশ রোজা ছিল শাবান মাসে। তখন আমি তাঁর দরবারে আরজ করলাম- এয়া রাসূলাল্লাহ্! সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম আমি দেখছি আপনার অধিকাংশ রোজা রাখা হয় শাবান মাসে? হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ মাসে যাদের ইন্তিকাল হবে তাদের নামের তালিকা মালাকুল মাওত এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাই আমি চাইনা আমার নাম লিপিবদ্ধ হোক আমি রোজাদার থাকা ব্যতিরেকে (অর্থাৎ আমার রোজা অবস্থায়ই আমার নাম লিপিবদ্ধ হোক সেটাই আমি কামনা করি)।
হাদীস শরীফের আলোকে শবে বরাত:
পবিত্র শাবান মাস এবং এ মাসে রোজা পালনের উপর বোখারী, মুসলিম ও তিরমিযীসহ অনেক বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থের বর্ণনা আমরা লক্ষ্য করেছি। অনুরূপভাবে এ মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে ছেহাহ্ ছিত্তাহর উল্লেখযোগ্য কিতাবাদিসহ নানা নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে প্রমাণ মেলে।
১। ছহীহ্ ইবনুল হিব্বান-এ হযরত মুয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত:
عن معاذ: إذا كان ليلة النصف من شعبان نادى مناد هل من مستغفر فأغفر له ؟ هل من سائل فأعطيه ؟ فلا يسأل احد شيئا إلا أعطيه إلا زانية بفرجها أو مشركا (ابن حبان في صحيحه من حديث معاذ مرفوعا)
ছহীহ্ ইবনুল হিব্বান-এ হযরত মুয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, ‘যখন শাবানের মধ্য রজনী (শবে বরাত) উপস্থিত হয় তখন এক আহ্বানকারী এ আহবান করতে থাকে, ‘‘কোনও ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো কোন প্রার্থী বা ফরিয়াদী আছো কি? আমি তার প্রার্থনা ও ফরিয়াদ কবুল করব? ফলে যে যা প্রার্থনা করবে তাকে তা দেয়া হবে। একমাত্র যেনাকারী ও মুশরিককে নয়।
২. সুনানে ইবনে মাযা শরীফে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন-
عن عبد الله بن جعفر عن أبيه عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر.
(سنن ابن ماجه: محمد بن يزيد القزويني. ط: المكتبة العلمية. كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها ، باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان, باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان . ورقمه:৪৪৪/ ৪৪৫. رقم الحديث: ১৩৮৮،১৩৮৯،১৩৯০. ص১১৬)
যখন শাবানের মধ্য রজনী উপস্থিত হবে, তখন তোমরা এ রাতটিকে (ইবাদতের মাধ্যমে) উদ্যাপন কর এবং আগত দিনটিকে রোজার মাধ্যমে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা ওই রাতের সূর্যাস্তের পরক্ষণ থেকেই পৃথিবীবাসীর প্রতি বিশেষ করুণার দৃষ্টি প্রদান করেন এবং এ ঘোষণা দেন- আছ কি কেউ ক্ষমা চাওয়ার? তাকে ক্ষমা করবো। আছ কি কেউ রিযিক প্রার্থনা করার? রিযিক দ্বারা ধন্য করবো। আছ কি কেউ অসুস্থ ? তাকে আরোগ্য দান করবো। আছ কি এমন কেউ? আছে কি এমন কেউ? সুবহে সাদেক উদিত হওয়া পর্যন্ত এভাবে বলা হবে।
৩. তিরমিযী শরীফে হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত:
عن عروة عن عائشة قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع رافع رأسه إلى السماء فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نسائك فقال إن الله عز وجل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم كلب
(سنن الترمذي: محمد بن عيسى بن سورة الترمذي. ط: دار الكتب العلمية. كتاب الصوم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان. رقم الحديث: ৭৩৯. ص১১৭# سنن ابن ماجه: محمد بن يزيد القزويني. ط: المكتبة العلمية. كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها ، باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان, باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان . ورقمه:৪৪৪/ ৪৪৫. رقم الحديث: ১৩৮৮،১৩৮৯،১৩৯০. ص১১৬# مسند الإمام أحمد:أحمد بن محمد بن حنبل بن هلال بن أسد. ط: دار إحياء التراث العربي، سنة النشر: ১৪১৪هـ / ১৯৯৩م. مسند المكثرين من الصحابة ، مسند عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله تعالى عنهما. رقم الحديث: ২৫৪৮৭# المصنف: عبد الله بن محمد بن أبي شيبة , دار الفكر, سنة النشر: ১৪১৪هـ/১৯৯৪م . كتاب الدعاء، باب ليله النصف من شعبان وما يغفر فيها من الذنوب، وقمه:১৫০ ، رقم الحديث: ৪৩৩৫)
তিনি বলেন- ‘এক রজনীতে আমি প্রিয়নবীকে বিছানায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ফলে তাঁকে খোজার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখি তিনি জান্নাতুল বক্বীতে আকাশের দিকে দু’হাত তুলে দিয়ে দোয়ারত আছেন। আমাকে দেখে হুযূর করীম বললেন, তুমি কি এ ভয় করছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অন্যায় করবেন? আমি বললাম, এয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন স্ত্রীর গৃহে প্রবেশ করেছেন। তখন হুযূর করীম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা শাবানের মধ্য রজনীতে প্রথমাকাশের দিকে বিশেষ কৃপাদৃষ্টি দান করেন এবং ’কলব’ গোত্রের ছাগলের পশমেরও অধিক পরিমাণ গুনাহগারকে ক্ষমা করেন।
৪. ‘সুনানে ইবনে মাযাতে হযরত আবু মুসা আশয়ারী থেকে বর্ণিত:
عن أبي موسى الأشعري عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن .
(سنن ابن ماجه: محمد بن يزيد القزويني. ط: المكتبة العلمية. كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها ، باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان, باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان . ورقمه:৪৪৪/ ৪৪৫. رقم الحديث: ১৩৮৮،১৩৮৯،১৩৯০. ص১১৬# حلية الأولياء وطبقات الأصفياء: الإمام الحافظ أبو نعيم أحمد بن عبد الله بن أحمد بن إسحاق بن موسى بن مهران الأصبهاني.ط: ىدار الفكر للطباعة والنشر والتوزيع. من الطبقة الأولى من التابعين গ্ধ مكحول الشامي গ্ধ ذكر من أسند عنهم من الصحابة والأحاديث الغريبة المسندة من طريقه# المصنف: عبد الله بن محمد بن أبي شيبة , دار الفكر, سنة النشر: ১৪১৪هـ/১৯৯৪م . كتاب الدعاء، باب ليله النصف من شعبان وما يغفر فيها من الذنوب، وقمه:১৫০ ، رقم الحديث: ৪৩৩৫)
তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা শাবানের মধ্য রজনীতে রহমত ভরা দৃষ্টিতে গুনাহগারদের দিকে তাকান, ফলে সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন, একমাত্র মুশরিক ও অন্য মুসলমান ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিরেকে।
৫. ‘মুসনাদে আহমদ’এ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত-
عن عبد الله بن عمرو أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يطلع الله عز وجل إلى خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لعباده إلا لاثنين مشاحن وقاتل نفس.
( مسند أحمد : باقي مسند الأنصار ، حديث السيدة عائشة رضي الله عنها. رقم الحديث: ৬৬০৪. # مجمع الزاوئد ومنبع الفوائد: نور الدين علي بن أبي بكر الهيثمي.ط: مكتبة القدسي. سنة النشر: ১৪১৪هـ / ১৯৯৪م. كتاب الأدب:৭৪ . باب ما جاء في الشحناء-৩৩ . رقم الحديث: ১২৯৫৭، ১২৯৫৮،১২৯৫৯،১২৯৬০،১২৯৬১.১২৯৬২)
প্রিয় নবী এরশাদ করেন, সাবানের মধ্য রজনীতে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ করুণার দৃষ্টি প্রদান করেন এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন; কিন্তু দুই শ্রেণীর মানুষকে নয়, বিদ্বেষ পোষণকারী ও আত্মহত্যাকারীকে।
৬. ‘মুসনাদে বাজ্জার’ এ হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন-
عن أبي بكر ، قال : قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” إذا كان ليلة النصف من شعبان ينزل الله تبارك وتعالى إلى سماء الدنيا فيغفر لعباده إلا ما كان من مشرك أو مشاحن لأخيه
(البحر الزخار المعروف بمسند البزار: أبو بكر أحمد بن عمرو بن عبد الخالق العتكي البزار.ط: مكتبة العلوم والحكم. سنة النشر: ১৪২৪هـ / ২০০৩م . مسند أبي بكر الصديق رضي الله عنه গ্ধ مسند أبي بكر الصديق رضي الله عنه، ما روى محمد بن أبي بكر عن أبيه أبي بكر. ص২৭০و مسند عوف بن مالك الأشجعي رضي الله عنه, رقم الحديث: ৮০, ص১৫৮)
আল্লাহ্ তাবারক ও তা‘আলা যখন শাবানের মধ্য রজনী উপস্থিত হয় তখন পৃথিবীর আকাশে রহমতের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন এবং সকল শ্রেণীর বান্দাদের ক্ষমা করেন, একমাত্র মুশরিক ও মুসলমান ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষপোষণকারীকে ছাড়া।
৭. ‘লাতায়েফুল মা’রেফ’ নামক কিতাবে কা’ব থেকে বর্ণিত:
وروي عن كعب قال: إن الله تعالى يبعث ليلة النصف من شعبان جبريل عليه السلام إلى الجنة فيأمرها أن تتزين ويقول: إن الله تعالى قد اعتق في ليلتك هذه عدد نجوم السماء وعدد أيام الدنيا ولياليها وعدد ورق الشجر وزنة الجبال وعدد الرمال.
(الكتاب: لطائف المعارف فيما لمواسم العام من الوظائف. المؤلف: زين الدين عبد الرحمن بن أحمد بن رجب بن الحسن، السَلامي، البغدادي، ثم الدمشقي، الحنبلي (المتوفى: ৭৯৫هـ). الناشر: دار ابن حزم للطبتعة والنشر. الطبعة: الأولى، ১৪২৪هـ/২০০৪م. ص১৩৮)
তিনি বলেন- আল্লাহ্ তা‘আলা শাবানের মধ্য রজনীতে জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালামকে বেহেশতের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে পাঠান যে, বেহেশত যেন নিজেকে নানা সাজে সজ্জিত করে এবং জিব্রাঈল যেন বেহেশতকে উদ্দেশ্য করে এ সুসংবাদ শুনায়: নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমার এ রাত্রিতে মুক্ত করে দিয়েছেন আকাশের তারকারাজির সমপরিমাণ, পৃথিবীর রাত-দিনের সংখ্যা পরিমাণ, বৃক্ষের পত্র-পল্লবের সমপরিমাণ, পাহাড় সমূহের ওজনের সমপরিমাণ এবং বালুরাশির সমপরিমাণ অসংখ্য অগণিত মানুষকে।
৮. ‘মুসনদে বাযযায’ এ হযরত আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত:
عن عطاء بن يسار قال : ” تنسخ في النصف من شعبان الآجال ، حتى إن الرجل ليخرج مسافرا ، وقد نسخ من الأحياء إلى الأموات ، ويتزوج وقد نسخ من الأحياء إلى الأموات ” .(مسند البزار: كتاب الصيام ، باب النصف من شعبان. رقم الحديث: ৭৯২৫
তিনি বলেন- ‘শাবানের মধ্য রজনীতে আয়ূ নির্ধারণ করা হয়। ফলে দেখা যায় কেউ সফরে বের হয়েছে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, আবার কেউ বিয়ে করছে অথচ তার নাম জীবিতের খাতা থেকে মৃতের খাতায় লিখা হয়ে গেছে।
শবে বরাত মানুষের হায়াত-মওত রিযিক ইত্যাদি নির্ধারণ ও বণ্টনের রজনী, এ সম্পর্কে আরও অধিক তথ্যের জন্য নিম্নের রেওয়াতগুলো দ্রষ্টব্য।
أخرج ابن جرير وابن المنذر وابن أبي حاتم من طريق محمد بن سوقة عن عكرمة 🙁 فيها يفرق كل أمر حكيم) قال: في ليلة النصف من شعبان يبرم أمر السنة ، وينسخ الأحياء من الأموات ، ويكتب الحاج ، فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم أحد. وأخرج ابن زنجويه والديلمي عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان ، حتى إن الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه في الموتى.( الشوكاني في “فتح القدير” (৪/৮০১) وأخرج ابن أبي شيبة عن عطاء بن يسار قال: لم يكن رسول الله صلى الله عليه وسلم في شهر أكثر صياما منه في شعبان ، وذلك أنه ينسخ فيه آجال من ينسخ في السنة. وأخرج أبو يعلى عن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يصوم شعبان كله ، فسألته ؟ قال : (إن الله يكتب فيه كل نفس ميتة تلك السنة ، فأحب أن يأتيني أجلي وأنا صائم. (رواه أبو يعلى في “المسند” (৮/৩১১ وأخرج الدينوري في ” المجالسة ” عن راشد بن سعد أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: في ليلة النصف من شعبان يوحي الله إلى ملك الموت بقبض كل نفس يريد قبضها في تلك السنة.(“المجالسة وجواهر العلم” (ص/২০৬) وأخرج ابن جرير والبيهقي في ” شعب الإيمان ” عن الزهري ، عن عثمان بن محمد بن المغيرة بن الأخنس قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : (تقطع الآجال من شعبان إلى شعبان ، حتى إن الرجل ينكح ويولد له وقد خرج اسمه في الموتى. وأخرج ابن أبي الدنيا عن عطاء بن يسار قال : إذا كان ليلة النصف من شعبان دفع إلى ملك الموت صحيفة ، فيقال : اقبض من في هذه الصحيفة . فإن العبد ليفرش الفراش وينكح الأزواج ويبني البنيان وإن اسمه قد نسخ في الموتى. وأخرج الخطيب وابن النجار عن عائشة رضي الله عنها قالت : (كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم شعبان كله حتى يصله برمضان ، ولم يكن يصوم شهرا تاما إلا شعبان ، فقلت : يا رسول الله ! إن شعبان لَمِن أحب الشهور إليك أن تصومه ؟ فقال : ” نعم يا عائشة ! إنه ليس نفس تموت في سنة إلا كتب أجلها في شعبان ، فأحب أن يكتب أجلي وأنا في عبادة ربي وعمل صالح. ولفظ ابن النجار : (يا عائشة ! إنه يكتب فيه ملك الموت من يقبض ، فأحب أن لا ينسخ اسمي إلا وأنا صائم) .رواه الخطيب في “تاريخ بغداد” (৪/৪৩৬و “ميزان الاعتدال” (৪/৫০৭)
৯. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আরা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-
عن ابن عمر قال : ” خمس ليال لا ترد فيهن الدعاء : ليلة الجمعة ، وأول ليلة من رجب ، وليلة النصف من شعبان ، وليلتي العيدين ” (مسند البزار: كتاب الصيام ، باب النصف من شعبان. رقم الحديث: ৭৯২৭)
পাঁচটি রজনীতে দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় নাঃ জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শাবানের মধ্য রজনী এবং দুই ঈদের রাত।
১০. ‘মু’জাম আল কাবীর’ এ হযরত মুয়ায ইবনে জবল থেকে বর্ণিত:
عن معاذ بن جبل ، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ” يطلع الله عز وجل على خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ” .
(المعجم الكبير: باب اللام ألف، لاشومة بن جرثوم أبو ثعلبة الخشني، ما أسند أبو ثعلبة ،مكحول عن أبي ثعلبة, رقم الحديث:২১৫. ص১০৯# المعجم الأوسط: أبو القاسم سليمان بن أحمد المعروف( الطبراني).ط: مكتبة المعارف. سنة النشر: ১৪০৫هـ / ১৯৮৫م. باب الميم গ্ধ من اسمه محمد গ্ধ محمد بن أبي زرعة الدمشقي, ورقم الحديث: ৬৭৭২)
তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ‘আল্লাহতা‘আলা শাবানের মধ্য রজনীতে স্বীয় সৃষ্টির প্রতি বিশেষ করূণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেন এবং সকল সৃষ্টিকেও ক্ষমা করে দেন এবং শুধু মাত্র মুশরিক ও বিদ্বেষীকে ছাড়া।
১১. অনুরূপভাবে ‘মুজাম আল কাবীর’ এ আবু ছা’লাবাহ্ থেকে বর্ণিত:
عن أبي ثعلبة ، أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ” يطلع الله على عباده ليلة النصف من شعبان فيغفر للمؤمنين ويمهل الكافرين، ويدع أهل الحقد بحقدهم حتى يدعوه ” .
(المعجم الكبير : باب اللام ألف ، لاشومة بن جرثوم أبو ثعلبة الخشني ، ما أسند أبو ثعلبة ، حبيب بن المهاصر بن حبيب عن أبي ثعلبة. رقم الحديث: ২২৩. ص৫৯০)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন, আল্লাহস্বীয় বান্দাদের প্রতি শাবানের মধ্য রজনীতে করুণা ভরা হৃদয়ে ক্ষমার দৃষ্টিতে তাকান, ফলে মুমিনদের ক্ষমা করে দেন এবং কাফিরদেরকে ইমান আনার সুযোগ দেন আর হিংসুকদেরকে তাদের হিংসার মাঝে ছেড়ে দেন, যতক্ষণ না তারা তাদের হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে।
১২. হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত:
أبي بكر أن النبي – صلى الله عليه وسلم – قال : إن الله تبارك وتعالى ينزل إلى سماء الدنيا ليلة النصف من شعبان فيغفر فيها لكل بشر ما خلا كافرا أو رجلا في قلبه شحناء .
(شرح أصول اعتقاد أهل السنة والجماعة: أبو القاسم هبة الله ابن الحسن بن منصور الطبري. ط: دار طيبة. سنة النشر: ১৪২৩هـ / ২০০৩م. باب جماع توحيد الله عز وجل وصفاته وأسمائه গ্ধ سياق ما روي عن النبي صلى الله عليه وسلم في نزول الرب تبارك وتعالى, رقم الحديث: ৭৫০)
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন- নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা শবে বরাতের মধ্য রজনীতে পৃথিবীর আকাশে রহমত অবতারণ করেন এবং পৃথিবীর সকল মানুষকে ক্ষমা করে দেন। একমাত্র কাফির এবং যার অন্তরে বিদ্বেষ বিদ্যমান।
ويروى عن نوف البكالي أن عليا خرج ليلة النصف من شعبان فأكثر الخروج فيها ينظر إلى السماء فقال: إن داود عليه السلام خرج ذات ليلة في مثل هذه الساعة فنظر إلى السماء فقال إن هذه الساعة ما دعى الله أحد إلا أجابه ولا استغفره أحد من هذه الليلة إلا غفر له ما لم يكن عشارا أو ساحرا أو شاعرا أو كاهنا أو عريفا أو شرطيا أو جابيا أو صاحب كوبة أو غرطبة قال نوف: الكوبة الطبل والغرطبة: الطنبور اللهم رب داود اغفر لمن دعاك في هذه الليلة ولمن استغفرك فيها.
(الكتاب: لطائف المعارف فيما لمواسم العام من الوظائف. المؤلف: زين الدين عبد الرحمن بن أحمد بن رجب بن الحسن، السَلامي، البغدادي، ثم الدمشقي، الحنبلي (المتوفى: ৭৯৫هـ). الناشر: دار ابن حزم للطبتعة والنشر. الطبعة: الأولى، ১৪২৪هـ/২০০৪م. ص১৩৭)
সালফে ছালেহীনের দৃষ্টিতে শবে বরাত:
১. আল্লামা মুবারকপুরী তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তোহফাতুল আহ্ওয়াজী’তে বলেন-
اعلم أنه قد ورد في فضيلة ليلة النصف من شعبان عدة أحاديث مجموعها يدل على أن لها أصلا… فهذه الأحاديث بمجموعها حجة على من زعم أنه لم يثبت في فضيلة ليلة النصف من شعبان شيء، والله تعالى أعلم . (تحفة الأحوذي: محمد بن عبد الرحمن بن عبد الرحيم المباركفوري , ط: دار الكتب العلمية، كتاب الصوم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان )
জেনে রেখো, শাবানের মধ্যরাতের (শবে বরাতের) ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সব হাদিস একত্রিত করলে প্রমাণিত হয় যে, এ রাতের ফজিলতের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। অনুরূপভাবে এ হাদিসগুলো সম্মিলিতভাবে তাদের বিপক্ষে প্রমাণ বহন করে যারা ধারণা করে যে, শবে বরাতের ফজিলতের ক্ষেত্রে কোন প্রমাণ মেলে না।’’
২. মোল্লা আলী আলক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, মিশকাত শরীফ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ বলেন-
وفي المرقاة شرح المشكاة قال جماعة من السلف : إن المراد في الآية هي ليلة النصف من شعبان ….، ولا نزاع في أن ليلة نصف شعبان يقع فيها فرق كما صرح به الحديث ، وإنما النزاع في أنها المرادة من الآية والصواب أنها ليست مرادة منها ، وحينئذ يستفاد من الحديث والآية وقوع ذلك الفرق في كل من الليلتين إعلاما لمزيد شرفها ، ويحتمل أن يكون الفرق في أحدهما إجمالا وفي الأخرى تفصيلا أو تخص إحداهما بالأمور الدنيوية والأخرى بالأمور الأخروية ، وغير ذلك من الاحتمالات العقلية ، انتهى .
(مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح: علي بن سلطان محمد القاري، دار الفكر, سنة النشر: ১৪২২هـ / ২০০২م গ্ধ كتاب الصلاة গ্ধ باب قيام شهر رمضان )
‘সালফে ছালেহীনদের বড় একটি অংশ বলেন, ‘আয়াত (সূরা দুখান-১-৪) দ্বারা শাবানের মধ্য রাতকে বুঝানো হয়েছে। এতে কোন বিরোধ নেই যে, শবে বরাতের রাত্রিতে বণ্টন কাজ সম্পন্ন হয়। বিরোধ হলো- এ আয়াত দ্বারা এ রাতকে বুঝানো হয়েছে কিনা। যদি তা দ্বারা শবে ক্বদর বুঝানো হয়, তাহলে হাদিস ও আয়াত উভয়ের সমন্বয়ে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, এ বণ্টনটি উভয় রাতে (শবে বরাত ও শবে ক্বদর) সম্পন্ন হয়েছে। যাতে এর গুরূত্ব আরও অধিকভাবে প্রমাণিত হয়। আবার এটাও হতে পারে যে, বণ্টন কাজটি এক রাতে সংক্ষেপে এবং অন্য রাতে বিস্তারিতভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অথবা এক রাতে পার্থিব বিষয়াদি এবং অন্য রাতে পরকালীন বিষয়াদির বণ্টন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও নানা সম্ভাবনাও থাকতে পারে।
৩. ইবনে নুজাইম মিসরী ‘আল আশ্বাহ্ ওয়ান নাজায়ের’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন-
قال بعض الفضلاء : ولو وافق ليلة الجمعة ليلة النصف من شعبان المستحب إحياؤها وهل يندب قيامها نظرا إلى كونها ليلة النصف أو يكره نظرا إلى كراهية إفراد ليلة الجمعة ، فيه تردد ، والمنع خشية من الوقوع في الحرام اللهم إلا أن يقال أن نية مريد العبادة دافعة له حيث حلت ليلة شعبان.
(الأشباه والنظائر على مذاهب أبي حنيفة النعمان: زين الدين بن إبراهيم بن محمد المعروف بابن نجم. ط: دار الكتب العلمية. سنة النشر: ১৪১৯هـ / ১৯৯৯م. وراجع:غمز عيون البصائر في شرح الأشباه والنظائر: الفن الثالث من الأشباه والنظائر وهو فن الجمع والفرق ، القول في أحكام يوم الجمعة)
কিছু সংখ্যক ওলামা বলেছেন, যদি জুমার রাত ও শাবানের মধ্য রাত একত্রিত হয়ে যায় তাহলে এ রাতটি উদ্যাপন করা মুসতাহাব। হ্যাঁ, তবে যদি এটিকে শুধু শবে বরাতের রাত ধরা হয়, তাহলে উদ্যাপন করা মুসতাহাব হবে, নাকি জুমার রাত হওয়াতে তা মাকরূহ হবে? তা নিয়ে কিছু সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে। আর যারা মাকরূহ বলেছেন তারা হারামে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে। কিন্তু তা হারাম হবে না, কেননা ইবাদতকারীর নিয়ত হলো- শবে বরাত।
৪. মনসুর আল বাহুতী ‘কাশ্শাফুল কান্না’ নামক কিতাবে লিখেন-
وأما ليلة النصف من شعبان ففيها فضل وكان في السلف من يصلي فيها ، ويعضده حديث : من أحيا ليلتي العيدين وليلة النصف من شعبان ، أحيا الله قلبه يوم تموت القلوب } رواه المنذري في تاريخه بسنده عن ابن كردوس عن أبيه قال جماعة وليلة عاشوراء وليلة أول رجب وليلة نصف شعبان .
(كشاف القناع عن متن الإقناع: منصور بن يونس البهوتي. ط: دار الفكر، سنة النشر: ১১৪০২هـ/১৯৮২م. গ্ধ كتاب الصلاة গ্ধ باب صلاة التطوع গ্ধ فصل صلاة الضحى)
‘নিশ্চয় শাবানের মধ্য রাতের অনেক ফজিলত বিদ্যমান। সালফে সালেহীনদের মাঝে অনেকেই এ রাতে নফল নামায আদায় করতেন। প্রিয় নবীর এ হাদিস তাদের সমর্থন করে। প্রিয়নবী এরশাদ করেন: যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত ও শাবানের মধ্য রাত ইবাদতের মাধ্যমে উদ্যাপন করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার ক্বলবকে জীবিত রাখবেন ওই দিনও, যে দিন অনেক ক্বলব মৃত্যুবরণ করবে। (তারীখে মুনজেরীতে তা বর্ণিত হয়েছে)। আরেক দল ওলামা বলেছেন- অনুরূপভাবে আশুরা (মহররম মাসের নয় তারিখ দিবাগত রাত)’র রাতে, রজব মাসের প্রথম রাতে ও শবে বরাতও।
৫. ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘আল্ উম্ম’ নামক কিতাবে বলেন-
قال الشافعي : وبلغنا أنه كان يقال : إن الدعاء يستجاب في خمس ليال في ليلة الجمعة ، وليلة الأضحى ، وليلة الفطر ، وأول ليلة من رجب ، وليلة النصف من شعبان. قال الشافعي : وأنا أستحب كل ما حكيت في هذه الليالي من غير أن يكون فرضا .
(الأم:محمد بن إدريس الشافعي، ط: دار المعرفة, سنة النشر: ১৪১০هـ/১৯৯০م. كتاب الصلاة , كتاب صلاة العيدين গ্ধ العبادة ليلة العيدين)
‘আমাদের নিকট এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, বলা হয়ে থাকে, পাঁচটি রহমতময় রজনীতে দো‘আ কবুল হয়। জুমার রাতে, ঈদুল আযহার রাতে, ঈদুল ফিতরের রাতে, রজব মাসের প্রথম রাতে এবং শাবানের মধ্যরাতে। তিনি (শাফে‘ঈ) আরও বলেন, ‘আমি উপরোক্ত রাতগুলোকে উদ্যাপন করা মুসতাহাব মনে করি, যদি ফরজ মনে করা না হয়,
৬. তিনি আরও বলেন,
قال الشافعي : وبلغنا أنه كان يقال : إن الدعاء يستجاب في خمس ليال : في ليلة الجمعة ، وليلة الأضحى ، وليلة الفطر ، وأول ليلة من رجب ، وليلة النصف من شعبان . قال : وبلغنا أن ابن عمر كان يحيي ليلة جمع . وليلة جمع هي ليلة العيد ؛ لأن في صبحها النحر .
(كتاب السنن الكبرى: أبو بكر أحمد بن الحسين بن علي البيهقي.ط: دار المعرفة. كتاب صلاة العيدين গ্ধ باب عبادة ليلة العيدين)
‘আমাদের নিকট প্রমাণিত যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর জুমার রাত উদ্যাপন করতেন।
وهي : ليلة البراءة ، ولعل وجه تخصيصها ; لأنها ليلة مباركة فيها يفرق كل أمر حكيم ويدبر كل خطب عظيم مما يقع في السنة كلها من الإحياء والإماتة وغيرها ، حتى يكتب الحجاج وغيرهم
(مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح: علي بن سلطان محمد القاري.ط: دار الفكر. سنة النشر: ১৪২২هـ / ২০০২م. كتاب الصلاة . باب قيام شهر رمضان)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়, শবে বরাতের বিষয়ে বর্ণিত হাদিসসমূহ খুবই নির্ভুল এবং গ্রহণযোগ্য। এমনকি সালাফী (ওয়াহাবী) দাবীদারদের গুরু আলবানী সাহেবও এ হাদিসগুলো সহীহ ও নির্ভুল হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এর জন্য দেখুন ঃ
وفى التعليق (১১৪৪) السلسلة الصحيحة (৫১২,৫১১,৫১০,৫০৯) على السنة لابن أبى عاصم
ইবনে তাইমিয়াহ্ : সালাফী ও ওহাবী মতবাদের অনুসারীদের ইমামে আজম! জনাব ইবনে তাইমিয়াহর মতে-
وقد سئل ابن تيمية عن صلاة ليلة النصف من شعبان فأجاب : إذا صلى الإنسان ليلة النصف وحده أو في جماعة خاصة كما كان يفعل طوائف من السلف فهو حسن . , وقال في موضع آخر : “وأما ليلة النصف فقد روي في فضلها أحاديث وآثار ونقل عن طائفة من السلف أنهم كانوا يصلون فيها فصلاة الرجل فيها وحده قد تقدمه فيه سلف وله فيه حجة فلا ينكر مثل هذا ” . انتهى (مجموع فتاوى ابن تيمية ج ৩ / ص১৩১-১৩২)
‘‘ইবনে তাইমিয়াহকে শবে বরাতের রাতে নফল নামায আদায় বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি মানুষ শবে বরাত রাতে একাকী অথবা বিশেষ জামাত সহকারে নফল নামাজ আদায় করে, যেমনিভাবে সালফে ছালেহীনগণের অনেকেই করতেন, তাহলে তা খুবই ভাল কাজ’’। তিনি অন্যত্র বলেন, শবে বরাতের ফজিলতে অনেক হাদিস ও রিওয়ায়েত বিদ্যমান এবং এটাও প্রমাণিত যে, সালফে সালেহীনগণ এ রাতে বিশেষ নফল নামায আদায় করতেন। সুতরাং একাকীভাবে এ রাতে ইবাদতের ক্ষেত্রে সালফে ছালেহীনগণ অগ্রগামী এবং এতে নির্ভরযোগ্য প্রমাণও মিলে। সুতরাং এ ধরনের বিষয়ে অস্বীকার করা যায় না।
ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ’লাতায়েফুল মা’রেফ’ নামক কিতাবে বর্ণনা করেন-
وقال الحافظ ابن رجب الحنبلي رحمه الله تعالى في ” لطائف المعارف” : “وليلة النصف من شعبان كان التابعون من أهل الشام يعظمونها ويجتهدون فيها في العبادة , وكان خالد بن معدان ولقمان بن عامر وغيرهما من تابعي الشام يقومون في المسجد ليلة النصف, ووافقهم الإمام إسحاق ابن راهويه على ذلك , وقال في قيامها في المساجد جماعة : ليس ذلك ببدعة . (انتهى باختصار وتصرف)
(لطائف المعارف فيما لمواسم العام من الوظائف: زين الدين عبد الرحمن بن أحمد بن رجب بن الحسن، السَلامي، البغدادي، ثم الدمشقي، الحنبلي (المتوفى: ৭৯৫هـ). الناشر: دار ابن حزم للطبتعة والنشر. الطبعة: الأولى،১৪২৪هـ/২০০৪م: ص ২৬৩)
শাবানের মধ্যরাতকে শামবাসী তাবেয়ীগণ অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং ইবাদত-বন্দেগীতে রত থাকতেন। খালেদ বিন মা’দান, লোকমান বিন আহমরসহ শামদেশীয় তাবেয়ীগণও মসজিদে গিয়ে শবে বরাত পালন করতেন। এবং ইমাম ইসহাক ইবনে রাহাভীয়াও এতে ঐক্যমত পোষণ করেছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন ‘‘মসজিদে সমবেত হয়ে জামাতসহকারে এ রাত উদ্যাপন করা বিদ‘আত নয়। (বরং সুন্নাত)
তিনি আরো বলেন:
وليلة النصف من شعبان كان التابعون من أهل الشام كخالد بن معدان ومكحول ولقمان بن عامر وغيرهم يعظمونها ويجتهدون فيها في العبادة وعنهم أخذ الناس فضلها وتعظيمها…
‘‘সিরিয়াবাসী তাবেয়ীনদের কাছ থেকে মানুষ এ রাতের ফজিলত এবং মর্যাদার বিষয়টি গুরূত্বসহকারে গ্রহণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন:
ثم قال: أنه يستحب إحياؤها جماعة في المساجد كان خالد بن معدان ولقمان بن عامر وغيرهما يلبسون فيها أحسن ثيابهم ويتبخرون ويكتحلون ويقومون في المسجد ليلتهم تلك ووافقهم إسحاق بن راهوية على ذلك وقال في قيامها في المساجد جماعة: ليس ببدعة نقله عنه حرب الكرماني في مسائله.
এ রাত জামাত সহকারে মসজিদে উদ্যাপন করা মুস্তাহাব। হযরত খালিদ ইবনে মা’দান এবং লোকমান ইবনে আমেরসহ অন্যান্য তাবেয়ীগণ এ রাতে উন্নতমানের পোশাক পরিধান করতেন, খুশবু লাগাতেন, সুরমা দিতেন এবং এ রাতটি সম্পূর্ণরূপে মসজিদে কাটাতেন। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহাভিয়াও এটার সমর্থনে বলেছেন- ‘জমাত সহকারে এ রাতটি মসজিদে উদ্যাপন করা বিদ‘আত নয় (হারব আল কেরমানী তাঁর ‘আল্ মাসায়েল’ নামক কিতাবে তা বর্ণনা করেছেন)
তিনি আরও বলেন:
وقد روي عن عمر بن عبد العزيز أنه كتب إلى عامله إلى البصرة عليك بأربع ليال من السنة فإن الله يفرغ فيهن الرحمة إفراغا أول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة الفطر وليلة الأضحى
‘‘বর্ণিত আছে যে, হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজীয বসরায় নিযুক্ত গভর্ণরের কাছে এ মর্মে চিঠি লিখলেন যে, বছরের চারটি রাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেবে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা এ রাতগুলোতে রহমতের অঢেল প্রবাহ দান করেন। এগুলো হলো- রজবের প্রথম রাত, শাবানের মধ্য রাত এবং উভয় ঈদের দুই রাত।’’
وقال الشافعي رضي الله عنه: بلغنا أن الدعاء يستجاب في خمس ليال: ليلة الجمعة والعيدين وأول رجب ونصف شعبان قال: وأستحب كل ما حكيت في هذه الليالي ولا يعرف للإمام أحمد كلام في ليلة نصف شعبان ويتخرج في استحباب.
হযরত আত্বা ইবনে ইয়াসার বলেন:
وروى سعيد بن منصور حدثنا أبو معشر عن أبي حازم ومحمد بن قيس عن عطاء بن يسار قال: ما من ليلة بعد ليلة القدر أفضل من ليلة النصف من ليلة النصف من شعبان ينزل الله تبارك وتعالى إلى السماء الدنيا فيغفر لعباده كلهم إلا لمشرك أو مشاحن او قاطع رحم
ক্বদরের রাতের পর বরাতের রাতের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ রাত আর কোনটি হতে পারে না। এ রাতে আল্লাহ্ সর্বশ্রেণীর লোকদের ক্ষমা করে দেন। একমাত্র মুশরিক, ঝগড়াটে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীকে ব্যতিরেকে।
তিনি আরও বলেন:
وقال عطاء بن يسار: إذا كان ليلة النصف من شعبان دفع إلى ملك الموت صحيفة فيقال: اقبض من في هذه الصحيفة فإن العبد ليغرس الغراس وينكح الأزواج ويبني البنيان وأن اسمه قد نسخ في الموتى ما ينتظر به ملك الموت إلا أن يؤمر به فيقبضه.
‘‘যখন শাবানের মধ্য রাত উপস্থিত হয়, তখন মালাকুল মাওত এর কাছে একটি রেকর্ডবুক অর্পণ করে এ নির্দেশ দেয়া হয় যে, এ বইয়ে যাদের নাম উল্লেখ রয়েছে তাদের প্রাণ কবজ কর। দেখা যায় মানুষ গাছ লাগাচ্ছে, বিবাহ করছে, ঘর নির্মাণ করছে, অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। আর মালাকুল মাওত একমাত্র নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই জান কবজ করে নেয়।’’
দেখনু: لطاءف المعارف فيما المواسم العام من الوضائف লিখক: ابن رحب الحنبلي (৭৩৬-৭৯০) প্রকাশ: دار الفجر للتراث, القاهرة সন- ………….. পৃ. ১৭৭-২০৩)
উপরিউক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামই সর্বপ্রথম শবে বরাত উদ্যাপন করেন এবং তাঁরই অনুসরণে যুগে যুগে মুসলমানগণ এ রাতকে বরকতময় রজনী হিসেবে পালন করে আসছেন।
বিশেষ করে তাবেয়ীনদের যুগে এ রাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদে সমবেত হয়ে জামাত সহকারে আদায়ের প্রচলন শুরু হয়। আর তাঁরা হলেন خير القرون (সর্বশ্রেষ্ট যুগের মানুষ) এর দলভুক্ত। তাই প্রিয়নবী প্রবর্তিত এ ইবাদতকে বিদ‘আত বলা প্রিয়নবীর বিরোধীতারই শামিল।
( فليحذر الذين يخالفون عن أمره أن تصيبهم فتنة , أو يصيبهم عذاب أليم )) ( النور : ৬৩).