“ছেরাজুছ্-ছালেকীন” – আব্দুল খালেক এম এ
নিয়তঃ
কাজের প্রথমে বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা আবশ্যক। প্রত্যেক কাজের নিয়ত, খালেছ আল্লাহর ওয়াস্তে করিবে। হজরত ফরমাইয়াছেন: অবশ্যই আমল নিয়ত অনুযায়ী হইয়া থাকে (অর্থাৎ প্রত্যেক কাজের প্রতিফল নিয়ত অনুযায়ী হইয়া থাকে) এবং যে যেরূপ নিয়ত করিবে তাহার ফলও তদ্রূপ হইবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁহার রাসুলের (সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে হিজরত (গমন) করে তাহার হিজরত আল্লাহ্ ও রাসুলের দিকে, আর যে ব্যক্তি দুনিয়া প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে হিজরত করে অথবা কোন মেয়েলোক কে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হিজরত করে তাহার হিজরত উহার প্রতি হইবে যাহার উদ্দেশ্যে সে হিজরত করিয়াছে অর্থাৎ প্রত্যেক কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী হইবে। যদি কাজ আল্লাহর রেজামন্দি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয় তবে ছওয়াব মিলিবে, আর নফছের তৃপ্তি লাভের উদ্দেশ্যে করিলে কোন ছওয়াব নাই। এতদ্ব্যতীত একটি কাজের মধ্যে যত বেশি সংখ্যক নিয়ত করিবে ততোধিক ছওয়াব মিলিবে: যথা: – মসজিদে যাওয়া একটি কাজ, কিন্তু নিয়তের বিভিন্নতার দরুণ এই একটি মাত্র কাজ হইতে বহু ছওয়াব হাছেল করা যাইতে পারে। যথা: মসজিদে প্রবেশ করিয়া যদি সে নিয়ত করে যে আমি আল্লাহর ঘর- জেয়ারতের জন্য আসিয়াছি তবে আর একটি ছওয়াব মিলিবে। তৎসঙ্গে জমাতে নামাজ পড়ার নিয়ত করিলে আর একটি ছওয়াব বাড়িবে। যতক্ষণ মসজিদে থাকিবে ততক্ষণ এ’তেকাফের নিয়ত করিলে (এ’তেকাফের অল্প সময় এক ঘন্টা) উক্ত সময় হাত, পা, চোখ, কান ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে গোনাহ হইতে বিরত রাখার নিয়ত করিলে, দরূদ শরীফ এছতেগ্ফার পড়ার নিয়ত করিলে, সালাম করার নিয়ত করিলে, সুন্নাতের নিয়তে খোশবু ব্যবহার করিলে, মোরাকাবার নিয়ত করিলে ছওয়াব ক্রমশঃ বাড়িতে থাকিবে। মোট কথা, এক নিয়তে বহু কাজ করিলে বা বহু নিয়তে একটি নেক কাজ করিলে ছওয়াবের মাত্রা বাড়ান যাইতে পারে।
যদি কেহ কুফরস্থান হইতে দারুল ইসলামে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বাসনায় হিজরত করে তবে ইহার ছওয়াব প্রাপ্ত হইবে, আর যদি কোন প্রকার দুনিয়া প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে হয়, তবে কিছুই ছওয়াব মিলিবে না। দুনিয়া তলব করা, বিবাহ করা যদি আল্লাহর রেজামন্দির বাসনায় হয় তার ছওয়াব মিলিবে নতুবা কিছুই মিলিবে না বরং স্থান বিশেষে আজাবও হইতে পারে। হাদীছে আছেঃ আল্লাহ কোবলমাত্র তোমাদের রূপ ও বাহ্য ভাব দর্শন করেন না, এবং তোমাদের হৃদয় ও মনের ভাবও দর্শন করেন।
যে যে এবাদত মুখ্য উদ্দেশ্য যথা – নামাজ, রোজা, হজ্ব ও জাকাত এইগুলিতে নিয়ত না থাকিলে কিছুই হইবে না। আর যে যে এবাদত মূখ্য উদ্দেশ্য নয় যথা – অজু, গোছল ইত্যাদি এইগুলিতে নিয়ত জরুরী নয় বরং সুন্নত। নিয়ত ব্যতীত অজু ও গোছল হইয়া যাইবে কিন্তু ছওয়াব হইতে বঞ্চিত হইবে। রোজা ও তাইয়াম্মুমের নিয়ত করা ফরজ।
নিয়ত অর্থ দিলের ইচ্ছা, মুখে কিছু বলা শর্ত নয়। প্রত্যেক প্রকার এবাদত যদি শুধু মুখে নিয়ত করে আর দিলে একেবারে গাফেল থাকে তবে এই প্রকার নিয়তের কোন মানে নাই, যথা- গোনাহ করিয়া শুধু মুখে এস্তেগফার পড়িলে তওবা হইবে না, তাহার সঙ্গে আন্তরিক অনুতাপ ও পুনরায় উক্ত গোনাহ, না করার সংকল্প থাকা দরকার। মোটের উপর প্রত্যেক প্রকার এবাদতে নিয়ত থাকা জরুরী। হারাম কাজের নিয়তে গোনাহ্ হয়। মোবাহ কাজে এবাদতের নিয়ত থাকিলে ছওয়াব মিলিবে নতুবা কিছুই মিলিবে না, পানাহার, শয়ন, হালাল উপায়ে ধনোপার্জন কর্মক্ষেত্রে পরিশ্রম, ব্যবসা বাণিজ্য প্রভৃতি মোবাহ কাজ নেকীর নিয়তে করিলে তাহা এবাদতের মধ্যে পরিগণিত হইবে। যদি কেহ নফ্ছের খাহেশে অত্যধিক পেট ভরিয়া খায় তবে উহা মকরূহ হইবে, কিন্তু রোজা রাখার উদ্দেশ্যে বা মেহমানের খাতিরে অতিরিক্ত আহার করিলে উহা মোবাহ বা মোস্তাহাব হইবে।
নিয়ত সম্পর্কে কয়েকটি শর্ত আছে। যথাঃ- ১) মুসলমান হওয়া, ২)এবাদতের জ্ঞান থাকা, ৩) যাহা করিবে তাহার এলেম থাকা ৪) নিয়তের বিপরীতে কোন কাজ না করা। যদি কোন ব্যক্তি মুসলমান হইয়া এবাদত করার পরে মোরতেদ বা কাফের হইয়া যায় তবে তাহার সব এবাদত বাতিল হইয়া যাইবে।
মোটের উপর প্রত্যেক কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে। নিয়ত নেক হইলে ছওয়াব, আর নিয়ত বদ হইলে গোনাহ্। যদি কেহ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত করিয়া শয়ন করে কিন্তু নিদ্রাভঙ্গ না হয় তথাপি তাহাজ্জুদ নামাজের ছওয়াব মিলিবে। যদি কেহ হজ্ব করিবার নিয়তে ঘর হইতে বাহির হইয়া পথে মারা যায় তবে তাহার হজ্বের ছওয়াব মিলিবে। আর যদি কেহ কোন মেয়েলোকের সঙ্গে জ্বেনা করিবার, অথবা কাহাকে খুন করিবার নিয়তে শয়ন করে, কিন্তু এই অবস্থায় তাহার মৌত হয়, তাহার নাম জ্বেনাকার বা খুনীর দপ্তরে লেখা হইবে।