দুইটি সুরত হতে পারে। যেমনঃ
এক. পরিবারের লোকই সরাসরি জাদু করে। যেমন, মা করতে পারে সন্তানকে, বোন তার অন্য বোনকে, বাবা করতে পারে তার মেয়েকে ইত্যাদি। প্রশ্ন উঠতে পারে, আসলেই কি এমন হয়? জ্বি, হয়।
দুই. নিজে জাদু করে না বরং কাউকে দিয়ে করায়। এমন তো অভাব নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন হয়ে থাকে। কবিরাজ, বৈদ্য, তান্ত্রিক, হুজুর দিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই কাজ করে থাকে।
এসব ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল, ঘরের লোকই যখন শত্রু হয় তাকে কিছু বলাও যায় না, সহ্য করাও যায় না। আর রুকইয়াহ করে ভাল হলে আবার জাদু করতে পারে যেহেতু জাদু করার জন্য যেসব জিনিস দরকার হয় সেগুলো ঐ জালেমের পক্ষে যোগার করা খুবই সহজ।
কি কি করা যেতে পারে?
প্রথমত, বোঝানো। ভালভাবে বুঝানো। বার বার বুঝানো। উত্তম ভাষায়, সেবা শুশ্রষা করে বোঝানো, হাতে পা ধরে বোঝানো, হাত পা টিপে দিয়ে বোঝানো যে, এইগুলা করো না। এইগুলা কুফুরি কাজ। জাহান্নামীদের কাজ। নিজের ঈমান আমলকে নষ্ট করো না। আল্লাহকে ভয় করো। ফিরে আসো। যদি বুঝে বা ফিরে আসে তাহলেতো আলহামদুলিল্লাহ।
দ্বিতীয়ত, অনেক বোঝাচ্ছেন। কাজ হচ্ছে না। বার বার জাদু করছেই। রুকইয়াহ শক্তভাবে করা। আল্লাহর কাছে দুয়া করতে থাকা। অনেক ক্ষেত্রে এমন হয় যার জাদু তার দিকে ফিরে যায়। আপনি সুস্থ হয়ে উঠেন ঠিকই কিন্তু সে অসুস্থ হয়ে যায়। তখন তাকে আবার বোঝানো, বাঁচতে চাইলে তওবা করে নাও।
তৃতীয়ত, ভয়ভীতি দেখানো। কেমন ভয়ভীতি? যদি এসব বন্ধ না করো তাহলে আমি অনেক দূরে চলে যাব। খুজেও পাবে না। যদি আপনি আসলেই যাওয়ার মত অবস্থানে থাকেন তাহলে এভাবে ভয় দেখাতে পারেন। ফাঁকা বুলি দিয়ে কোনো ফায়দা নেই।
চতুর্থত, অর্থনৈতিক চাপ। এটা অনেক বড় বিষয়। আপনি যদি ফ্যামিলির উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হন তাহলে এদিক থেকে চাপ দিতে পারেন। ঠিক আছে, তোমরা যখন আল্লাহর হুকুম মানবে না, আমাকে/আমার বউ,বাচ্চাকে জাদু করা থামাচ্ছই না তাহলে তোমাদের খরচ আর দিতে পারবো না।
এভাবে চাপ দিতে পারেন। ফ্যামিলিতে কন্ট্রিবিউশন থাকলে ফ্যামিলির লোকজন দাম দেয়। না থাকলে দেয় না। কাজেই ফ্যামিলিতে নিজের দাম বাড়ানোর জন্য কিভাবে কন্ট্রিবিউশন করতে পারেন সেটাও ভাবতে পারেন। এভাবে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক সহায়তা থেকে উক্ত ব্যক্তিকে বঞ্চিত করবেন।
পঞ্চমত, পুরোপুরি সম্পর্ক ত্যাগ করা। জ্বি, শরীয়ত আপনাকে এই অনুমতিও দেয়। এটা এক্সট্রিম পর্যায়। কোনোভাবেই তাদের ক্ষতি থেকে বাচতে না পারলে তাদেরকে পুরোপুরি ত্যাগ করা। এই ব্যাপারে দুটো ফতোয়া লিংক দিলাম। ভাল করে পরে দেখতে পারেন।
ফাতওয়া নং – ১
প্রশ্ন
পরিবারের/আত্মীয়দের মধ্যে যদি কেউ যাদুকর/কবিরাজ থাকে তাহলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে কি?
১। এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে বোন, ভাইকে যাদু করে। বাবা যাদু করে মেয়েকে। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব করে। সম্পর্ক ছিন্ন না করলে তার এসব কর্মকান্ড থেকে বাঁচা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এক যাদু থেকে সুস্থ হবে আবার যাদু করে। এসব ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির সাথে আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে কি?
২। আবার এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে নিজে যাদু করে না কিন্তু যাদুকরের কাছে যায়। উক্ত যাদুকর হতে পারে কোনো তান্ত্রিক, মগা বৈদ্য, কবিরাজ, মুফতি সাহেব ইত্যাদি। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক তাদের কাছে যায় এবং নিজের স্বার্থ হাসিল করে। এসব ক্ষেত্রেও কি সম্পর্কচ্ছেদ করা জায়েজ হবে? কারন টোটালি আলাদা না হওয়া পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র থেকে বাচা কঠিন।
৩। যদি সম্পর্কচ্ছেদ করা জায়েজ না হয় তাহলে তাদের ক্ষতি থেকে বাচতে শরীয়তের নির্দেশনা কি?
উত্তর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
ইসলামে মৌলিকভাবে আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা বৈধ নয়। বরং বারবার আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও রাসূলুল্লাহ সাঃ আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এই নির্দেশ পালন করার। প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত হচ্ছে পরিবারের লোকদেরকে কোরআন হাদিসের আলোকে বোঝানোর চেষ্টা করা এবং নিজে যাদু টোনা,বান ইত্যাদি থেকে সুরক্ষার জন্য কোরআন মাজীদ থেকে এ সংক্রান্ত আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা। পৃথিবীর সকল যাদু ও যাদুকর কোরআনের আয়াতের সামনে নিতান্তই অসহায়।
যাদু থেকে হেফাজতের আমল ও যাদুগ্রস্থ ব্যক্তির সুস্থতার আমল জানতে Ruqyahbd.org এ অথবা কোন অভিজ্ঞ রাক্বীর সাথে যোগাযোগ করুন।
উল্লেখ্য, অধিকাংশ যাদুই কুফুরী নির্ভর। প্রথম প্রশ্নে উল্লিখিত অবস্থায় যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পরিবারের কোন সদস্য কুফুরীর ব্যাপারে জেনেশুনেও নিজেই সরাসরি কুফুরী যাদু করছে তাহলে তাকে বোঝানোর পরে তওবা না করলে শোধরানো বা নিজের সুরক্ষার প্রত্যক্ষ প্রয়োজনে সম্পর্ক ছিন্ন করা যেতে পারে। (স্পেসিফিকভাবে পুরো পরিস্থিতির বিস্তারিত বিবরন জানিয়ে কোন মুফতীর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নেবেন, নিজে একা সিদ্ধান্ত নেবেননা)
আর দ্বিতীয় প্রশ্নে উল্লিখিত অবস্থায় পরিবারের যাদু সংশ্লিষ্ট লোকজন (যারা অন্যকে দিয়ে যাদু করায় নিজেরা করেনা) যদি যাদুকে বৈধ মনে করে তাহলেও একই সিদ্ধান্ত।
এছাড়া অন্যান্য পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার বিধানই প্রযোজ্য। তবে বিশেষ কোন ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরী হলে এবং সম্পর্ক ছিন্ন করে দূরে চলে যাওয়া ছাড়া একান্তভাবেই আর কোন উপায় না থাকলে পূর্ণ পরিস্থিতির বিবরণ জানিয়ে বিজ্ঞ মুফতীদের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহন সাপেক্ষে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার অবকাশ আছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরামের মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ ও সর্বজনস্বীকৃত মূলনীতি হলো:
ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﺤﻈﻮﺭﺍﺕ
অনুবাদ: প্রয়োজন অনেক নিষিদ্ধ জিনিষকে বৈধ করে দেয়।
সূত্র- আল আশবাহ ওয়ান নাযাইর-ইবনু নুজাইম আল হানাফী ১/২৭৫
মোটকথা, সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে সমাধান সম্ভব হলে সেটাই করতে হবে। কোন আত্মীয়ের ক্ষেত্রে একান্ত অপারগ না হলে, ক্ষতি হওয়ার নিশ্চিত আশঙ্কা বা বিশ্বাসের কাছাকাছি প্রবল ধারনা না হলে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবেনা। এবং সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত কোন অভিজ্ঞ মুফতীর পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে হতে হবে।
الله أعلم بالصواب.
উত্তর দিয়েছেনঃ
শাইখ Affan Bin Sharfuddin
হানাফি ফিকহ গ্রুপ
ফাতওয়া নং – ২
প্রশ্ন
পরিবারের/আত্মীয়দের মধ্যে যদি কেউ যাদুকর/কবিরাজ থাকে তাহলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে কি?
১। এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে বোন, ভাইকে যাদু করে। বাবা যাদু করে মেয়েকে। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব করে। সম্পর্ক ছিন্ন না করলে তার এসব কর্মকান্ড থেকে বাঁচা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এক যাদু থেকে সুস্থ হবে আবার যাদু করে। এসব ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির সাথে আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে কি?
২। আবার এমন অনেক পরিবার আছে যেখানে নিজে যাদু করে না কিন্তু যাদুকরের কাছে যায়। উক্ত যাদুকর হতে পারে কোনো তান্ত্রিক, মগা বৈদ্য, কবিরাজ, মুফতি সাহেব ইত্যাদি। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক তাদের কাছে যায় এবং নিজের স্বার্থ হাসিল করে। এসব ক্ষেত্রেও কি সম্পর্কচ্ছেদ করা জায়েজ হবে? কারন টোটালি আলাদা না হওয়া পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র থেকে বাচা কঠিন।
৩। যদি সম্পর্কচ্ছেদ করা জায়েজ না হয় তাহলে তাদের ক্ষতি থেকে বাচতে শরীয়তের নির্দেশনা কি?
পুরো রেফারেন্স সহ উত্তর দিলে ভাল হয়। এই ফতোয়া যাদুগ্রস্থদের রুকইয়াহ করায় এমন গ্রুপের শেয়ার করা হবে ইন শা আল্লাহ।
উত্তর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
জাদুর প্রভাব থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দু’আ গুলো পড়া হবে।যদি এ সম্পর্কচ্ছেদ ছাড়া আর কোনো রাস্তা না থাকে,তাহলে প্রয়োজন পর্যন্ত হেকমতের সাথে অনুমোদনযোগ্য হতে পারে।
ফুকাহায়ে কিরামগণের মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হল
(১) ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﺤﻈﻮﺭﺍﺕ
(প্রয়োজন অনেক নিষিদ্ধ জিনিষকে বৈধ করে দেয়)
এটা একাটা নীতিসিদ্ধ মৌলিক ফিকহী ক্বায়দা বা ধারা যা কোরআন এবং হাদিসের থেকে চয়ন করা হয়েছে।
(আল আসবাহ ওয়ান নাযাইর-ইবনে নুজাইম ১/২৭৫)
(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
——————————–
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)