★ পর্দা করা লজ্জার লক্ষণ, যাদের মধ্যে লজ্জা নাই, তাদের নিকট পর্দার কোন গুরুত্ব নাই।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إن لكل دين خُلُقًا , وخُلُقُ الإسلام الحياء. »
“প্রতিটি দ্বীনের একটি চরিত্র আছে, আর ইসলামের চরিত্র হল, লজ্জা”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
★ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« الحياءُ من الإيمان , والإيمان في الجنة »
“লজ্জা ঈমানের অঙ্গ আর ঈমানের গন্তব্য হল জান্নাত”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
★ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« الحياء والإيمان قُرِنا جميعاً , فإذا رُفِعَ أحدُهما, رُفِعَ الآخرُ »
“লজ্জা ও ঈমান উভয়টি একটি অপরটির সম্পূরক। যদি একটি শূন্য হয়, তখন অপরটিও শূন্য হয়ে যায়”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
★ উম্মুল মুমীনিন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كنت أدخل البيت الذي دُفِنَ فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبي رضي الله عنه واضعةً ثوبي , وأقول: ( إنما هو زوجي وأبي ) , فلما دُفن عمر رضي الله عنه , والله ما دخلته إلا مشدودة عليَّ ثيابي , حياءً من عمر رضي الله عنه.»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমার পিতা আবুবকর রা. কে যে ঘরে দাফন করা হয়েছে, সে ঘরে আমি আমার কাপড় (ওড়না) খুলে প্রবেশ করতাম, আমি মনে মনে বলতাম, এরা আমার স্বামী ও পিতা। এখানে পর্দা করার কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু যখন ওমর রা. কে একই ঘরে দাফন করা হল, তখন ওমর রা. এর লজ্জায় আমি সে ঘরে কাপড়কে শক্ত করে পেঁচিয়ে ও কঠিন পর্দা করে প্রবেশ করতাম। [হাদিসটিকে হাকিম সহীহ আখ্যায়িত করেন এবং হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক]
★ সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অভিশাপ ডেকে আনে এবং আল্লাহর রহমত থেকে মানুষকে দূরে সরায়।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« سيكون في آخر أمتي نساءٌ كاسيات عاريات , على رؤوسهن كأسْنِمَةِ البُخْت , العنوهن , فإنهن ملعونات» [صحيح]
“আমার উম্মতের শেষ যুগে এমন কতক মহিলার আবির্ভাব হবে, তারা কাপড় পরিধান করবে অথচ নগ্ন, তাদের মাথার উপরিভাগ উটের সিনার মত হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ কর, কারণ, তারা অভিশপ্ত”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা জাহান্নামীদের চরিত্র:
★ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صنفان من أهل النارلم أَرَهُمَا : قوم معهم سِياطٌ كأذناب البقر يضربون بها الناس , ونساء كاسيات عاريات , مُمِيلاتٌ مائلات , رؤوسهن كأسنمة البُخْتِ المائلة , لا يدخلن الجنة , ولا يجدن ريحها , وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا» .[ مسلم ]
“দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী হবে, যাদের আমি আমার যুগে দেখতে পাব না। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের লাঠি যদ্বারা তারা মানুষকে পিটাবে। অপর শ্রেণী হল, কাপড় পরিহিতা নারী, অথচ নগ্ন, তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে উটের চোটের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সু-ঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সু-ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে”। [মুসলিম]
★ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خير نسائكم الودود , الولود , المواتية , المواسية , إذا اتقين الله , وشر نسائكم المتبرجات المتخيِّلات , وهن المنافقات , لا يدخلن الجنةَ منهن إلا مثلُ الغراب الأعصم » [صحيح]
তোমাদের মধ্যে উত্তম নারী হল, যারা অধিক মহব্বতকারী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, ..যখন তারা আল্লাহকে ভয় করে। আর তোমাদের মধ্যে খারাপ মহিলা হল, যারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী অহংকারী। মনে রাখবে এ ধরনের মহিলারা মুনাফেক তারা কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একমাত্র লাল বর্ণের ঠোঁট বিশিষ্ট কাকের মত। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
★ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّما امرأةٍ وضعت ثيابها في غير بيت زوجها , فقد هتكت سِتْرَ ما بينها وبين الله عز وجل »
কোন নারী যদি তার স্বামীর ঘরের বাহিরে স্বীয় কাপড় খুলে ফেলে, তাহলে সে তারা মাঝে আল্লাহর মাঝে যে বন্ধন ছিল তা ছিঁড়ে ফেলল। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
সৌন্দর্য প্রদর্শন ও পর্দাহীনতা অশ্লীলতা:
★ অবশ্যই নারীরা হল, সতর। আর সতর খোলা অশ্লীলতা ও নোংরামি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ وَإِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةٗ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَيۡهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَاۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٢٨﴾] سورة الأعراف[28 :
“আর যখন তারা কোন অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, ‘আমরা এতে আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন’। বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলছ, যা তোমরা জান না”?
★ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ لَا يَفۡتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ كَمَآ أَخۡرَجَ أَبَوَيۡكُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ يَنزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوۡءَٰتِهِمَآۚ﴾ ]سورة الأعراف [27 :
হে বনী আদম, শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিচ্ছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জা-স্থান দেখাতে পারে।
★ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«العينان زناهما النظر »
“চোখ দুটির ব্যভিচার হল, দৃষ্টি”। [মুসলিম]
★ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« فاتقوا الدنيا , واتقوا النساء , فإن أول فتنةِ بني إسرائيل كانت في النساء » [مسلم]
“তোমরা দুনিয়াকে ভয় কর এবং নারীকে ভয় কর, কারণ, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল নারীর ফিতনা”। [মুসলিম]
★ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করিমে এরশাদ করে বলেন,
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ﴾ [سورة الأحزاب:33 ]
“তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান কর। এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না”।
★ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« أَيُّما امرأةٍ استعطرت , فَمَرَّتْ على قومٍ ليجدوا ريحها , فهي زانية » [حسن]
“যদি কোন নারী খোশবু ব্যবহার করে কোন পরুষ সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার সুগন্ধ উপলব্ধি করতে পারে। তাহলে সে নারী ব্যভিচারী”।
★ সুফিয়া বিনতে সাইবাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بينما نحن عند عائشة – رضي الله عنها – قالت فَذَكَرْنَ نساءَ قريشٍ وفضلَهن , فقالت عائشة – رضي الله عنها- : ( إن لنساء قريش لفضلاً , وإني والله ما رأيتُ أفضلَ من نساءِ الأنصار: أشَدَّ تصديقًا لكتاب الله , ولا إيمانًا بالتنزيل , لقد أُنزِلَتْ النور: {وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ} (31) سورة النــور فانقلب رجالهن إليهن يتلون عليهن ما أنزل الله إليهم فيها , ويتلو الرجل على امرأته , وابنته , وأخته , وعلى كُلِّ ذِي قَرابته , فما منهن امرأةٌ إلا قامت إلى مِرْطِها المُرَحَّلِ, فاعْتَجَرَتْ, به تصديقًا وإيمانًا بما أنزل الله من كتابه , فأصبحن وراءَ رسولِ الله-صلى الله عليه وسلم – مُعْتَجِراتٍ كأن على رؤوسهن الغربان».
“একদিন আমরা আয়েশা রা. এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন আমরা কুরাইশী নারীদের আলোচনা ও তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে ছিলাম। তখন আয়েশা রা. আমাদের বলল, অবশ্যই কুরাইশ বংশের নারীদের মর্যাদা আছে, যা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তবে আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আনসারী নারীদের মত এত বেশি আল্লাহর কিতাবের উপর বিশ্বাসী ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নকারী আর কোন নারীকে আমি কখনো দেখিনি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন সূরা নূর নাযিল করল, তখন তাদের পুরুষরা তাদের নিকট ফিরে গিয়ে তাদের প্রতি যে কোরআন নাযিল করা হল, তা তিলাওয়াত করল- পুরুষ তার স্ত্রীকে, তার মেয়েকে, বোনকে এবং প্রতিটি নিকটাত্মীয়কে শোনাল। তিলাওয়াত শোনা মাত্রই সাথে সাথে আনসারী নারীরা তাদের নকশী করা কাপড় নিয়ে তাদের দেহকে ডেকে ফেলল। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনর কথার উপর বিশ্বাস করতে এবং তার প্রতি ঈমান আনতে কোন প্রকার বিলম্ব করল না। তাদের অবস্থা এমন হল, তারা সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে তাদের মাথা ও চেহারা ডেকে রাখল, যেন তাদের মাথার উপর কাক”।