এই অধ্যায়ে ঐ সকল হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে, যে গুলোর সনদ নেই কিন্তু অন্য হাদিস দ্বারা সমর্থিত এবং ইমামগণ এ গুলোকে ‘রেওয়ায়েত বিল মাআনা’ হিসেবে রাসূল ( ﷺ) এর হাদিস বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
নাফ্ছকে চিনলে রবকে চিনা যায়
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ
-“রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল।”(আল্লামা ইমাম ইসমাঈল হাক্কী: তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১ম খন্ড, ২৭১ পৃ: ও ৩০৮ পৃ:, ৫ম খন্ড, ২২৭ পৃ:, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৯৩ পৃ:; ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী: তাফছিরে কবীর শরীফ, ৩০তম খন্ড, ২০১ পৃ: সূরা কিয়ামা’র শুরুতে, ৯ম খন্ড, ১১৭ পৃ:; তাফছিরে ছা’লাবী, ১ম খন্ড, ২৭৯ পৃ:; তাফছিরে ওয়াছিত লিল ওয়াহেদী, ১ম খন্ড, ২১৪ পৃ:; তাফছিরে রাগেব ইস্পাহানী, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃ:; তাফছিরে বাগবী, ১ম খন্ড, ১৬৯ পৃ:; তাফছিরে খাজেন, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃ:; আল লুভাব ফি উলুমিল কিতাব, ২য় খন্ড, ৪৯৮ পৃ:; তাফছিরে নিছাপুরী, ২য় খন্ড, ১৭৫ পৃ:; তাফছিরে সিরাজুম মুনীর, ১ম খন্ড, ৯৪ পৃ:; তাফছিরে আবু সাউদ, ৯ম খন্ড, ১৭৫ পৃ:; তাফছিরে মাজহারী, ১ম খন্ড, ১৩২ পৃ:; ইমাম গাজ্জালী: এহইয়াউল উলুমুদ্দিন, ৩য় খন্ড, ২২৪ পৃ:; গাউছে পাক: ছেররুল আছরার, ৫৯ পৃ:; হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরে মক্কী: যিয়াউল কুলুব, ৭১ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মউজুয়াতুল কবীর, ১২২ পৃ:; ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ২৩৪ পৃ:; তাফছিরে বায়দ্বাবী, ২য় খন্ড, ২৮০ পৃ:;)
লক্ষ্যনীয় যে, এই হাদিসটি দুই রকমে উল্লেখ আছে, প্রথমত:
قال امير المؤمنين على بن ابى طالب رضى الله عنه مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ
অর্থাৎ, হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে, যা তাফছিরে রুহুল বয়ানে, ৬ষ্ঠ খন্ডে ৩৯৩ পৃ: উল্লেখ আছে।
দ্বিতীয়ত: قال عليه السلام مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُঅর্থাৎ, রাসূলে পাক ( ﷺ) হতে, যা তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১ম খন্ডে ও ৫ম, ৬ষ্ঠ খন্ডে উল্লেখ আছে।
ইহার সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত ইমাম আবুল হাছান আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাবিব বাছরী বাগদাদী মাওয়ারদী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৪৫০ হিজরী তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
وَقَدْ قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَتَى يَعْرِفُ الْإِنْسَانُ رَبَّهُ؟ قَالَ: إذَا عَرَفَ نَفْسَهُ
-“অবশ্যই হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষ কখন রব তা’আলাকে চিনতে পারে? রাসূল ( ﷺ) বললেন: যখন সে নিজেকে চিনতে পারে।”(আদাবুদ দুনিয়া ওয়াদ দ্বীন, ১ম খন্ড, ৭৫ পৃ:;)
আল্লামা আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম ছা’লাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৪২৭ হিজরী হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করেছেন,
كما جاء في الخبر: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ
-“যেমন খবরে (হাদিসে) এসেছে ‘যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।” (তাফছিরে ছা’লাবী, ১ম খন্ড, ২৭৯ পৃ:;)
শারিহে বুখারী ইমাম শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ সাফারী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৯৫৬ হিজরী বলেন,
وأما حديث: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ -“আর হাদিস হচ্ছে, ‘যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।”(শরহে বুখারী লিছ সাফারী, ১ম খন্ড, ৪৫৮ পৃ:;)
ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ১০১৪ হিজরী তদীয় কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেন,
وَفِي الْحَدِيثِ: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ -“আর হাদিস শরীফে আছে, ‘যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।” (ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৮২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;)
আল্লামা জয়নুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে মাদউ বি’আব্দির রউফ আল মানাভী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ১০৩১ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন,
قَالَ عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ
-“আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেন, ‘যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।” (আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ১ম খন্ড, ৪৯৩ পৃ:;)
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৫০৫ হিজরী বলেন:
وقال النبي صلى الله عليه وسلم: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ
-“আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেন, ‘যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।”(ইমাম গাজ্জালী: কিমিয়ায়ে সাদাৎ, ১ম খন্ড, ১২৪ পৃ:;)
এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস, ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
ولذلك رَبَطَ النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ معرفةَ الحقِّ بمعرفة النّفس، فَقَالَ: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ عَرَفَ رَبَّهُ
-“এ কারণেই আল্লাহর নবী ( ﷺ) স্বীয় স্বত্বার পরিচিতির মাধ্যমে হক্বকে চিনেছেন এবং সার্বক্ষনিক চক্ষুষ্মান ধ্যানে থাকতেন। আর তিনি বলেছেন: যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।”(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৪৬তম খন্ড, ৩৭৮ পৃ: ৫৪৯ নং রাবীর ব্যাখ্যায়;)
আল্লামা আবুল হাছান আলী ইবনে আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ওয়াহেদী নিছাপুরী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৪৬৮ হিজরী বলেন:
ما روي فِي الحديث: من عرف نفسه عرف ربه -“হাদিস শরীফে যা রয়েছে: যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।”(তাফছিরে ওয়াছিত লিল ওয়াহেদী, ১ম খন্ড, ২১৪ পৃ:;)
আল্লামা ইমাম রাগেব ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৫০২ হিজরী তদীয় কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেন,
وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ، وقال عليه السلام: أعلمكم بنفسه أعلمكم بربه، وقيل فيما أنزل الله في السفر الأول: من عرف نفسه فقد عرف ربه وإلى نحو ذلك أشار بقوله عز وجل: {وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنْسَاهُمْ} تنبيهاً أنهم لو تفكروا في أنفسهم لما خفي معرفته عليهم.
-“তোমাদের মধ্যেই আমার নিদর্শন রয়েছে তোমরা কেন দেখনা? তোমরা নিজেদেরকে জানতে পারলে রব তা’আলাকে জানতে পারবে। কেউ কেউ বলেন, সফরের প্রথমে যা নাজিল হয়েছে। যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’। অনুরূপ ঈশারা রয়েছে আল্লাহ তা’আলার এই বাণীর মধ্যে, যারা তাদের রবকে ও নিজেদেরকেও ভুলে গেছে তোমরা তাদের অন্তর্ভূক্ত হইওনা।”(তাফছিরে রাগেব ইস্পাহানী, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃ:;)
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৬০৬ হিজরী বলেন,
وَقَوْلُهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ عَرَفَ رَبَّهُ مَعْنَاهُ مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ بِالْحُدُوثِ عَرَفَ رَبَّهُ بِالْقِدَمِ، وَمَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ بِالْإِمْكَانِ عَرَفَ رَبَّهُ بِالْوُجُوبِ، وَمَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ بِالْحَاجَةِ عَرَفَ رَبَّهُ بِالِاسْتِغْنَاءِ،
-“আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) এর কউল হল, যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’ এর অর্থ হল: যারা নশ্বরের মধ্যে নিজেকে চিনবে সে অবিনশ্বর সত্ত¡াকে চিনবে। যে তার নিজেকে স্থান সমূহে চিনবে সে তার রবকে চিরস্থায়ীভাবে চিনবে। যে তার হাজতের মাধ্যমে আল্লাতে চিনবে সে সাহায্য পাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলাকে চিনবে।”(ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী: তাফছিরে কবীর, ৯ম খন্ড, ৪৬০ পৃ:;)
আল্লামা আলাউদ্দিন আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম ইবনে উমর আল মারুফ খাজেন ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৭৪১ হিজরী বলেন,
وقد جاء من عرف نفسه فقد عرف ربه ومعناه: أن يعرف نفسه بالذل والعجز والضعف والفناء، ويعرف ربه بالعز والقدرة والقوة والبقاء
-“অবশ্যই (হাদিসে) এসেছে, যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’। এর অর্থ হল: নিশ্চয় যে ব্যক্তি তার নিজের অচল অবস্থা, দুর্বলতা ও ক্ষণস্থায়িত্বতাকে চিনবে সে কুদরত, শক্তি ও চিরস্থায়ী রব তা’আলাকে চিনবে।”(তাফছিরে খাজেন, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃ:;)
আল্লামা নিজামুদ্দিন হাছান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হুছাইন নিছাপুরী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৮৫০ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন:
قال صلى الله عليه وسلم مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ
-“আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।”(তাফছিরে নিছাপুরী, ২য় খন্ড, ১৭৫ পৃ:;)
আল্লামা শামছুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল খতিব শাফেয়ী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৯৭৭ হিজরী বলেন, روي: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ
-“বর্ণিত আছে, যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’।”(তাফছিরে সিরাজুম মুনীর, ৩য় খন্ড, ২০৫ পৃ:;)
ইমাম আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম ইবনে আলী ইবনে আছেম ইস্পাহানী মাশহুর ইবনে মুকরী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৩৮১ হিজরী একটি সনদসহ আছার উল্লেখ করেন:
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ قَالَ: سَمِعْتُ إِبْرَاهِيمَ بْنَ سَعِيدٍ الْجَوْهَرِيَّ قَالَ: سَمِعْتُ سُفْيَانَ بْنَ عُيَيْنَةَ يَقُولُ: قَالَتِ الْعُلَمَاءُ: لَا يَضُرُّ الْمَدْحُ مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ
-“ইব্রাহিম ইবনে সাঈদ আল জাওহারী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা ( رَحْمَةُ الله عليه) কে বলতে শুনেছি, উলামায়ে কেরাম বলেন: যে তার নিজকে চিনল সে আনন্দকে প্রত্যাহার করবেনা।”(মু’জামে ইবনে মুকরী, হাদিস নং ৪০৬; ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৭ম খন্ড, ৩০২ পৃ:;)
ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৪৩০ হিজরী উল্লেখ করেন,
وَسُئِلَ سَهْلٌ عَنْ قَوْلِهِ: مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ، قَالَ: مَنْ عَرَّفَ نَفْسَهُ لِرَبِّهِ عَرَّفَ رَبَّهُ لِنَفْسِهِ
-“হযরত সাহল (رضي الله عنه) কে এই হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে ‘যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’ তিনি বলেন: যে তার রবের জন্য নিজকে চিনবে সে তার নিজের জন্য রব তা’আলাকে চিনবে।”(ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ১০ম খন্ড, ২০৮ পৃ:;)
পূর্বসূরী আইম্মায়ে কেরামের অনেকেই ইহাকে হাদিসে রাসূল হিসেবে স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন। একদিকে ইহা রেওয়ায়েত বিল মায়ানা হিসেবে ‘হাদিসে রাসূল’ ও অন্যদিকে ইহা হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কউল হিসেবে ‘হাদিস’।
অপরদিকে হযরত সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা ( رَحْمَةُ الله عليه) এর কউল, যা রেওয়ায়েত আকারে প্রমাণিত। কেউ কেউ এই হাদিসটুকুকে ইমাম নিছাপুরী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর ‘কউল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।(দেখুন: আল্লামা ফুলতলী ছাহেব: আনওয়ারুছ ছালিকীন, ১৭ পৃ:;)
এই হাদিস সম্পর্কে হিজরী ১১শ শতাব্দির মোজাদ্দেদ, হানাফী মাজহাবের উজ্জল নক্ষত্র, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় কিতাবে লিখেন:
وَقَالَ النَّوَوِيُّ إِنَّهُ لَيْسَ بِثَابِتٍ يَعْنِي عَنِ النَّبِيِّ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ وَإِلَّا فَمَعْنَاهُ ثَابِتٌ
-“ইমাম নববী (رضي الله عنه) বলেন: এই হাদিসের ‘মাআনা’ বা ভাবার্থ ছাবিত রয়েছে।” (ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মউজুয়াতুল কবীর, ১২২ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী: আসরারুল মারফুয়া, ২৩৮ পৃ:;)
এই হাদিস সম্পর্কে হিজরী ৯ম শতাব্দির মুজাদ্দেদ, হাফিজুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) বলেন,
وللحافظ السيوطي فيه تأليف لطيف سماه القول الأشبه في حديث
-“হাফিজ জালালুদ্দিন ছিয়তী (رضي الله عنه) এই হাদিস সম্পর্কে সূক্ষ বিশ্লেষণ করে ইহার নাম রেখেছেন হাদিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ‘কউল’।”(ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ২য় খন্ড, ২৩৪ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: আল হাবী লিল ফাতওয়া, ২য় খন্ড, ২৮৮ পৃ:;)
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা ইমাম ইসমাঈল আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় কিতাবে লিখেছেন,
أن الشيخ محي الدين قال هذا الحديث وإن لم يصح من طريق الرواية فقد صح عندنا من طريق الكشف.
-“নিশ্চয় শায়খ মহিউদ্দিন ইবুল আরাবী (رضي الله عنه) বলেন: ইহা হাদিস, তবে ইহা সনদের রেওয়ায়েত দ্বারা ছহীহ্ প্রমাণিত নয় কিন্তু কাশফের ত্বরিকা দ্বারা বিশুদ্ধ প্রমাণিত।”(ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ২য় খন্ড, ২৩৪ পৃ:;)
হাফিজ ইবনে তাইমিয়া সনদান ইহাকেموضوع বললেও অন্য কিতাবে তিনি ইহাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ بِالْعُبُودِيَّةِ عَرَفَ رَبَّهُ بِالرُّبُوبِيَّةِ وَمَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ بِالْفَقْرِ عَرَفَ رَبَّهُ بِالْغِنَى وَمَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ بِالْعَجْزِ عَرَفَ رَبَّهُ بِالْقُدْرَةِ وَمَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ بِالْجَهْلِ عَرَفَ رَبَّهُ بِالْعِلْمِ
-“যে ব্যক্তি তার নিজেকে ইবাদতের দ্বারা চিনবে সে রবের রবুবিয়্যাতের মাধ্যমে রবকে চিনবে। যে তার নিজেকে দরিদ্রতার দ্বারা চিনবে সে রবকে ধনী হিসেবে চিনবে। যে তার নিজেকে অসহায়ত্ব দ্বারা চিনবে সে তার রবকে কুদরত দ্বারা চিনবে। যে তার নিজেকে অজ্ঞতা দ্বারা চিনবে সে তার রবকে জ্ঞানী হিসেবে চিনবে।”(হাফিজ ইবনে তাইমিয়া: মাজমুয়ায়ে ফাতওয়া, ৯ম খন্ড, ২৯৭ পৃ:;)
হাফিজ ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র হাফিজ ইবনে কাইউম জাওযিয়া তদীয় কিতাবে বলেন:
مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ عَرَفَ رَبَّهُ وَلَيْسَ هَذَا حَدِيثًا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِنَّمَا هُوَ أَثَرٌ
-“যে নিজকে নিজে চিনল সে রবকে চিনিল’ ইহা রাসূল ( ﷺ) থেকে কোন হাদিস নয়, নিশ্চয় ইহা ‘আছার’।”(মাদারেজুস সালেকীন, ১ম খন্ড, ৪২৬ পৃ)
সুতরাং ইহা স্পষ্ট হল যে, ইহা “রেওয়ায়েত বিল মাআনা” হিসেবে হাদিস। এ ব্যাপারে ইমাম নববী ( رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه), ইমাম আজলুনী ( رَحْمَةُ الله عليه) ও ইমাম মহিউদ্দিন ইবনুল আরবী ( رَحْمَةُ الله عليه), ইবনে কাইউম জাওযী সহ সকলেই একমত। তাই যা আইম্মায়ে কেরাম “রেওয়ায়েত বিল মাআনা” হিসেবে গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে কটাক্য করা চরম মূর্খতা বৈ কিছু নয়।
সর্বোপরি এই হাদিসের মাআনাটি পবিত্র কোরআন দ্বারাও প্রমাণিত। যেমন মহান আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
سَنُرِيهِمْ آياتِنا فِي الْآفاقِ وَفِي أَنْفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
-“আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করব পৃথিবীর দিঘন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ঠ নয়? (সূরা হামীম সেজদা, আয়াত নং ৫৩)
অর্থাৎ, সৃষ্টিজগতের যেকোন বস্তুর দিকে দৃষ্টিপাত করলে তা আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্ব, কুদরত ও তাঁর একত্যবাদের সাক্ষী দেয়। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন,
وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ -“তোমাদের নিজেদের মধ্যেই আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে, তোমরা কি দেখনা (অনুধাবন করবেনা)? (সূরা জারিয়াত: আয়াত নং ২১)
অর্থাৎ, তোমরা নিজেকে নিয়ে চিন্তা করলেই আল্লাহ তা’আলার নির্দশন পাবে তথা আল্লাহ তা’আলার সন্ধান পাবে।