বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
আরিফ #আজাদকে বলছি।
পোস্টটি একটু বড় হলেও ধৈর্য্য নিয়ে মনোযোগের সাথে পড়ার জন্য অনুরোধ।
সেলফিরা আল্লাহর রাসুলকে অক্ষরজ্ঞানহীন প্রমাণ করায় উঠে পড়ে লেগেছেন।
কুরআনের একটি আয়াত দেখেই খুব লাফাচ্ছেন। আয়াতটি কি আসুন দেখে নেই।
সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়……” (সুরা আরাফ :১৫৭)
এইখানে এসেই অতিরিক্ত পন্ডিতগন উম্মি শব্দের অর্থ করেন অক্ষরজ্ঞানহীন। নবিজী লিখতে পড়তে জানতেন না। বেকুব কোথাকার।
Edward Lanes Lexicon অনুসারে ক্লাসিক আরবী শব্দ “উম্মী”-এর একটি অর্থ “জেন্টাইল” অথবা যে মুসা (আঃ) এর আইন (তওরাত) সম্পর্কে অবগত নয় (Those who are not familiar with the law of Moses)
“জেন্টাইল” শব্দটা ল্যাটিন “Gentilis” থেকে এসেছে যার দ্বারা কোন গোত্রের সাথে সম্পর্ক যুক্ত বোঝায়। এইখানে এটা দ্বারা নন- ইহুদিদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা ইহুদিদের গোত্রের অন্তর্ভুক্ত নয় তারাই জেন্টাইল। অথবা যে ইঞ্জিল যাবুর ও তাওরাত কোন কিতাব পড়েনি এমন।
আরেকটি অর্থ যে লিখতে এবং পড়তে জানেনা অর্থাৎ অক্ষর জ্ঞানহীন।
যে ইহুদী তাওরাত সম্পর্কে জ্ঞান রাখেনা তাকেও কুরআনে উম্মি বলা হয়েছে। অবগত নয় তাকেও উম্মী বলা হয়েছে। যেমন সুরাহ বাক্বারায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন।
এবং তাদের মধ্যে এমন কিছু উম্মি লোকও রয়েছে, যারা কিতাব সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না, কিন্তু মৌখিকভাবে পড়তে জানে মাত্র কিংবা নিজেদের কিছু মনগড়া কথাবার্তা; আর তারা নিরেট কল্পনার মধ্যে রয়েছে ।
এই আয়াত থেকে কি বুঝা গেলো উম্মি লোক দ্বারা বুঝায় যিনি কিতাবের জ্ঞান রাখেন না এমন।
আসুন দেখি কুরআনে এই উম্মি শব্দ আর কোথায় কোথায় ব্যবহার হয়েছে। এবং উম্মি শব্দ দ্বারা অন্যান্য জায়গায় আল্লাহ পাক কি বুঝিয়েছেন।
“যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, “আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।” আর আহলে কিতাবদের এবং উম্মীয়ানাদের বলে দাও যে, তোমরাও কি আত্নসমর্পণ করেছ?………… “(আলে ইমরান :২০)
এই আয়াতে আল্লাহ নবীকে বলছেন পূর্ববর্তী কিতাব প্রাপ্তগনের (ইহুদী এবং খৃষ্টান) এবং “ঊম্মীয়ান” দের কাছে বার্তা পৌছে দিতে। এখন যদি এই (উম্মীয়ানা) এর অর্থ নিরক্ষর করা হয় তবে তবে এর অর্থ ঠিক থাকেনা । কারন তাহলে এই আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় তাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে যারা কিতাব প্রাপ্ত এবং নিরক্ষর। তাহলে যারা কিতাব প্রাপ্ত নয় এবং লিখতে পড়তে জানে, তাদের কে বাদ দেওয়া হল না? তাদের কাছে কি বার্তা পৌছাতে হবে না? আল্লাহ নিশ্চয় এই রকম কথা বলবে না। বরং এর অর্থ হয় যারা কিতাব প্রাপ্ত এবং যারা কিতাব প্রাপ্ত নয় তাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া অর্থাৎ সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এইখানে উম্মী শব্দের অর্থ জেন্টাইল ( মানে যার কিতাব প্রাপ্ত না) বেশি অর্থবোধক।
আল্লাহ বলেন
“তিনিই ঊম্মীয়ান দের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ” (জুমুয়া :২)
এখানেও উম্মী শব্দের অর্থ নিরক্ষর করলে, অর্থ বিকৃতি ঘটে। যদি এই শব্দের অর্থ নিরক্ষর করা হয়, তবে যা অর্থ দাড়য় তা হচ্ছে আল্লাহ বলতে চাচ্ছেন আল্লাহ নিরক্ষর মধ্য থেকে রাসুল প্রেরন করেছেন। আরবরা সবাই নিরক্ষর ছিলনা, এমনকি কোরাইশ বংশের সবাই নিরক্ষর ছিল না। তাহলে আল্লাহ কিভাবে সাধারন ভাবে আরবদেরকে অথবা কোরাইশদেরকে নিরক্ষর বলতে পারে? অথচ অই সময়ে আরবরা সাহিত্যে অনেক ভালো ছিল উনারা লিখতেন চুক্তি করতেন। এখানেও উম্মি দ্বারা যাদের উপর পূর্বে কিতাব নাজিল হয়নি তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা খ্রিস্টান বা ইহুদি না।
“কোন কোন আহলে কিতাব এমনও রয়েছে, তোমরা যদি তাদের কাছে বহু ধন-সম্পদ আমানত রাখ, তাহলেও তা তোমাদের যথারীতি পরিশোধ করবে। আর তোদের মধ্যে অনেক এমনও রয়েছে যারা একটি দীনার গচ্ছিত রাখলেও ফেরত দেবে না-যে পর্যন্ত না তুমি তার মাথার উপর দাঁড়াতে পারবে। এটা এজন্য যে, তারা বলে রেখেছে যে, উম্মীদের অধিকার বিনষ্ট করাতে আমাদের কোন পাপ নেই। আর তারা আল্লাহ সম্পর্কে জেনে শুনেই মিথ্যা বলে।“ (আল ইমরান :৭৫)
এইখানে স্পষ্ট ভাবে উম্মী অর্থ অ-ইহুদী/ কিতাব প্রাপ্ত নয় বোঝানো হয়েছে। এইখানে কোথাও উম্মী শব্দ দ্বারা নিরক্ষর বোঝানো হয় নাই।
যাই হোক কোরআনের আলোকে আমরা দেখেছি যদিও উম্মী শব্দের একটি অর্থ নিরক্ষর তারপরেও কোরআনের প্রেক্ষিতে উম্মী শব্দের অর্থ বুঝায় যারা ইহুদী ও নাছারা নয় তাদেরকে। অর্থাৎ যারা অই তাওরাত ও ইঞ্জিল পাঠ করেনি তারা।
আল্লাহর রাসুল যে তাওরাত ও ইঞ্জল পড়েন নি এটাই যে উম্মি শব্দের মুল অর্থ তা বুঝা যায় নিম্নের আয়াত দ্বারা।
“এমনিভাবে আমি আপনার কাছে এক ফেরেশতা প্রেরণ করেছি আমার আদেশক্রমে। আপনি জানতেন না, কিতাব কি এবং ঈমান কি? কিন্তু আমি একে করেছি নূর, যাদ্দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করি। নিশ্চয় আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন” (৪২:৫২)
এখানে বলা হয়েছে “আপনি জানতেন না, কিতাব কি এবং ঈমান কি?- এর অর্থ পরিষ্কার। অর্থাৎ এর আগে নবী জানত না কিতাব (তওরাত এবং ইঞ্জিল) কি অর্থাৎ পূর্ববর্তী কিতাব গুলোকে নবীজী পড়েন নি। এটাই হচ্ছে উম্মির নিকটবর্তী অর্থ।
এর কারন টা কি আল্লাহ কেন চাচ্ছেন উম্মি বলতে কারন ইহুদি নাসারা কাফিররা যাতে বলতে না পারে যে রাসুলুল্লাহ অই কিতাব গুলো পড়ে কুরআন নিজে বানিয়েছেন। কুরআন কে কাফির রা যেন মনগড়া বলতে না পারে সেজন্য আল্লাহ তার হাবীব কে উম্মি বলেছেন। অর্থাৎ তিনিতো ইঞ্জিল ও যাবুর তাওরাত পাঠ করেন নি।
তার মানে এইনা আল্লাহর রাসুল নিরক্ষর ছিলো নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহর রাসুল লিখতে ও পড়তে জানতেন এ ব্যাপারে বুখারীতে একটি হাদিস রয়েছে।
যিলকদ মাসে নবী ﷺ উমরাহ্’র উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করল। অবশেষে এই শর্তে তাদের সঙ্গে ফয়সালা করলেন যে, তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা (মাওলা আলী রাঃ) লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, ‘আল্লাহ্র রসূল মুহাম্মাদ’ ﷺ। তারা (মুশরিকরা) বলল, ‘আমরা তাঁর রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি জানতাম যে, আপনি আল্লাহ্র রসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, ‘আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মদ।’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহ্র রসূল এবং ‘আবদুল্লাহ্র পুত্র মুহাম্মদ।’
অতঃপর তিনি আলী (রাঃ)–কে বললেন, আল্লাহ্র রসূল (রাসূলুল্লাহ) শব্দটি মুছে দাও। তিনি (আলী রা.) বললেন, ‘না। আল্লাহ্র কসম, আমি আপনাকে কখনো মুছব না।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন (এবং নিজ হাতে তা মুছে দিলেন [১]) এবং #লিখলেন, ‘এ সন্ধিপত্র মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ সম্পন্ন করেন- খাপবদ্ধ অস্ত্র ব্যতীত আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে দিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দিবেন না।’[২]
[১] সহিহ বুখারী ২৬৯৮, [২] সহিহ বুখারী ২৬৯৯
এ ছাড়া আল্লাহর রাসুলের লিখার কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না এরও কারন আছে। আল্লাহর রাসুল লিখতে পড়তে জানলেও উনি লিখতেন না এর জবাব আল্লাহই দিয়েছেন সুরা আনকাবুতে
এবং এর পূর্বে আপনি কোন কিতাব পাঠ করতেন না এবং না আপন হাতে কিছু লিখতেন। যদি এমন হতো তাহলে বাতিল সম্প্রদায় অবশ্য সন্দেহ করতো। (৪৮)
এরপরেও আল্লাহর রাসুলকে নিরক্ষর বলা জাহালত ও মুর্খতা। যারা আল্লাহর রাসুলের সম্মানকে এইভাবে নিরক্ষর বলে প্রমাণ করতে চান তারা নিজেরাই মুর্খ।
অন্যান্য ব্যাখ্যাঃ
উম্মি শব্দটি আরবী উম্ম থেকে এসেছে এর অর্থ মা বা উৎস। রাসুলুল্লাহ কে সমস্ত সৃষ্টির উৎস হিসেবেও এর অর্থ হতে পারে। অথবা রহমতের উৎস হিসেবে।
উম্মির অর্থ হলো মা ওয়ালা। মানে মায়ের গর্ভে থেকে যেমন তেমন থাকা। মানে কেউ যদি মায়ের গর্ভ থেকেই নবী হন তবে তিনি উম্মি নবী। কেউ যদি মায়ের গর্ভে অলি হন তবে গর্ভে থাকা অবস্থায়ই উম্মি অলি । মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় কেউ যদি হাফিজ হন তাহলে উম্মি হাফিজ। আর মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই যিনি লিখতে পড়তে জানতেন তিনিই উম্মি। উম্মি শব্দের মুল অর্থও এমনি যেমন মায়ের গর্ভ থেকে কেউ শিখে আসলে তাকে আর দুনিয়াবী কোন উস্তাদ থেকে শিখতে হয় না এমন। মানে স্বয়ং আল্লাহ যার শিক্ষক৷ দুনিয়ার যার কোন শিক্ষক নেই। একদম মায়ের গর্ভ থেকে শিখে আসলে যেমন পিউর তেমন পবিত্র কারো হাত লাগেনি এমন।
আরিফ আজাদকে বলবো দুই তিনটা তাফসিরের রেফারেন্স যে তুমি দিছো এর চেয়ে চারগুন সংখ্যক তাফসির থেকে তোমার ব্যাখ্যা যে ভুয়া তা প্রমাণ করতে পারবো ইংশাআল্লাহ। আরে কুরআন থেকে দলিল শেষ হলে তাফসিরে যাবো। পারলে কুরআন থেকে আগে জবাব দিও।
বুখারীর হাদিসকে অস্বীকার করে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বই লিখো। আগে শিখো। এ ব্যাপারে যে কোন আলোচনা করতে চাইলে আমি অধম রাজি আছি এনিটাইম।
আরেকটা কথা মনে রেখো আরিফ আজাদ ক্ববরে গেলে আল্লাহর রাসুলকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলতে তুমি বলবে আমি আজীবন নবিজীকে অক্ষরজ্ঞান হীন লিখতে পড়তে জানেনা প্রমাণে ব্যস্ত ছিলাম।
আর আমরা কি বলবো তা পোস্টেই আছে।
ওয়াসসালাম।
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম।