মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো নেক আমল। কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক নেক আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করা যায়। নিম্নে এমন কিছু আমল তুলে ধরা হলো, যেগুলোকে রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময় উত্তম আমল বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
ঈমান আনা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।’ আবার জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ প্রশ্ন করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, ‘যে হজ কবুল হয়।’ মুহাম্মদ ইবনে জাফরের বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমান আনা।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫০)
আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা : আবু জার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ পোষণ করা অতি উত্তম কাজ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৫৯৯)
দীর্ঘ নামাজ : আবদুল্লাহ ইবনে হুবশি আল-খাসআমি (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.)-কে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, ‘নিজ শ্রমে উপার্জিত সামান্য সম্পদ থেকে যে দান করা হয় সেটাই উত্তম।’ তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন হিজরত উত্তম? তিনি বলেন, ‘আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দূরে থাকা।’ জিজ্ঞেস করা হলো কোন জিহাদ উত্তম? তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।’ জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ধরনের মৃত্যু মর্যাদাসম্পন্ন? তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি (যুদ্ধের ময়দানে) নিজের ঘোড়াসহ নিহত হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৪৯)
মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার : ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি (সাহাবি) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে নামাজ আদায় করা, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, অতঃপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫৩৪)
হজ করা : আবদুল্লাহ ইবনে হুবশি খাসআমি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো যে সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বলেন, ‘সংশয়মুক্ত ঈমান, খিয়ানতবিহীন জিহাদ এবং পাপমুক্ত হজ।’ (নাসায়ি, হাদিস : ২৫২৬)
কোরবানি করা : আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘উচ্চ স্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং কোরবানির দিন কোরবানি করা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯২৪)
সার্বক্ষণিক জিকিরে থাকা : আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) বলেন, একবার এক বেদুঈন রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি (সা.) বলেন, ‘সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যে দীর্ঘ হায়াত পেয়েছে এবং যার আমল নেক হয়েছে।
সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল, কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে তখন তোমার মুখে আল্লাহর জিকিররত থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৭৬৯৯)
মানুষের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করা : আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ আমি আবার প্রশ্ন করলাম, কোন ধরনের গোলাম মুক্ত করা উত্তম? তিনি বলেন, ‘ওই গোলাম মুক্ত করা উত্তম, যে মুনিবের কাছে অধিক প্রিয় এবং অধিক মূল্যবান।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমি যদি তা করতে না পারি। তিনি বলেন, ‘তাহলে অন্যের কাজে সাহায্য করবে অথবা কর্মহীনের কাজ করে দেবে।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি এমন কোনো কাজ করতে অক্ষম হই? তিনি বলেন, ‘তোমার মন্দ আচরণ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখবে। এই হলো তোমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি সদকা।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫১)