মুহাম্মদ সিরাজুম মুনির তানভীর
আমি রেহনুমা, তখন সেভেনে পড়ি, বয়স এগারো/বারো। শিক্ষক ক্লাসে পড়ানোর জন্য বই চাইলেন। আমি আমার বই এগিয়ে দিলাম। তিনি বইয়ের মধ্যে একটা কাগজ পেয়ে শোরগোল শুরু করে দিলেন। কাগজে একটা ছেলের নাম লেখা, তার চারপাশে নানান রঙের চোখের ছবি আঁকা। আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন শিক্ষকদের কক্ষে। স্কুলে না’কি ঐ নামে একটা ছেলে এসেছে, ভারী না’কি হ্যান্ডসাম, অনেক মেয়েই তার জন্য দিওয়ানা। তো আমি কি উদ্দেশ্যে তার নাম লিখে নানান রঙের চোখের ছবি এঁকে নিয়ে এসেছি?
একই স্কুল হলেও ছেলেদের এবং মেয়েদের বিল্ডিং থেকে খেলার মাঠ সবকিছু ছিলো সম্পূর্ন আলাদা। কারো সাথে কারো দেখা হবার উপায়ই ছিলোনা। তদুপরি আমি সবেমাত্র স্কুলে ফিরেছি দু’সপ্তাহ পর। চিকেন পক্স, যা সারতে সাধারণত মানুষের সময় লাগে তিন থেকে সাত দিন, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে আমাকে ভোগালো দুই সপ্তাহ। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে ছোট ভাইটার জন্ম হয়েছে, অথচ ওকে কোলে নিতে পারিনি; আমার পিঠাপিঠি ভাইটাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়ার পরও সে ঐ বাসা থেকে ফিরেছে চিকেন পক্স নিয়ে। আমার জীবনে আমার বাবা ব্যাতীত এই দু’টো ছেলেই ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কার সময় আছে অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার?
https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?client=ca-pub-0587668448492328&output=html&h=320&adk=984510356&adf=1397735559&pi=t.aa~a.590237761~i.5~rp.4&w=384&lmt=1623588572&num_ads=1&rafmt=1&armr=3&sem=mc&pwprc=1796234389&psa=1&ad_type=text_image&format=384×320&url=https%3A%2F%2Fi-onlinemedia.net%2F12341&flash=0&fwr=1&pra=3&rh=295&rw=354&rpe=1&resp_fmts=3&sfro=1&wgl=1&fa=27&uach=WyJBbmRyb2lkIiwiMTAiLCIiLCJTTS1NMDIyRyIsIjkxLjAuNDQ3Mi4xMDEiLFtdXQ..&dt=1623588571745&bpp=30&bdt=3586&idt=-M&shv=r20210607&cbv=%2Fr20190131&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3D0d37d16c2de52844-22ec7c0a63c900d1%3AT%3D1623586456%3ART%3D1623586456%3AS%3DALNI_Mb5lDVGEHXj-dm-R1Dk-ddxUM9e1A&prev_fmts=auto%2C384x400%2C0x0&nras=2&correlator=7030144474118&frm=20&pv=1&ga_vid=1341212219.1623586454&ga_sid=1623588570&ga_hid=729971528&ga_fc=0&u_tz=360&u_his=11&u_java=0&u_h=854&u_w=385&u_ah=854&u_aw=385&u_cd=24&u_nplug=0&u_nmime=0&adx=0&ady=1664&biw=384&bih=726&scr_x=0&scr_y=3&eid=42530671%2C31060004%2C44744016&oid=3&pvsid=3997467140505284&pem=207&ref=https%3A%2F%2Fi-onlinemedia.net%2Fcategory%2Fstory-and-poem%2Four-life%2Fpage%2F5&eae=0&fc=384&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C385%2C0%2C384%2C726%2C384%2C726&vis=1&rsz=%7C%7Cs%7C&abl=NS&fu=128&bc=31&ifi=5&uci=a!5&btvi=2&fsb=1&xpc=bvK0xbNibV&p=https%3A//i-onlinemedia.net&dtd=335
আমি রগচটা মানুষ। সঙ্গত কারণে রেগে গেলে কাউকে পরোয়া করিনা, আল্লাহ ব্যাতীত। তখনো জানতাম না, ‘রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম’ (সুরা ফুরক্কানঃ আয়াত ৬৩)। সুতরাং, ‘আল্লাহ ব্যাতীত’ শর্তটা তখনো প্রযোজ্য ছিলোনা।
শিক্ষককে বললাম, ‘ওটা আমার ছোট ভাইয়ের নাম। একই নাম পৃথিবীতে একাধিক মানুষের থাকতে পারে। কাগজটা আমার ডেস্ক ক্যালেন্ডারের – সেদিন ওর জন্মদিন, তাই ঐ পেজে ওর নাম লেখা ছিলো। আমার যখন পনেরো দিন ধরে চিকেন পক্স, শরীরের যন্ত্রণায় পড়ার মত শক্তিও অবশিষ্ট ছিলোনা, তখন আঁকিবুকি শুরু করি। আমার মাথায় হঠাৎ করেই অনেক অদ্ভুত ভাবনা আসে। ভাবলাম, মানুষের চোখ যদি কেবল কালো, বাদামী, ধূসর, নীল বা সবুজ না হয়ে যেকোন রঙই হতে পারত তাহলে দেখতে কেমন দেখাত। ব্যাস, শুরু করলাম ডেস্ক ক্যালেন্ডার নিয়ে নানান রঙের চোখের ছবি আঁকা। এমন চোখ আঁকা ক্যালেন্ডারের পেজ আমি আপনাকে আরো শ খানেক দিতে পারব। আর যে ছেলের কথা বলছেন তার অস্তিত্ব সম্পর্কে আমার কোন ধারণা বা আগ্রহ নেই। আমি আমার বইপত্র, লেখালেখি, আঁকাআঁকি নিয়ে যথেষ্ট ব্যাস্ত এবং সন্তুষ্ট। সুতরাং, পৃথিবীতে কোন ছেলে না থাকলেও আমার কোন সমস্যা নেই। এরপর আপনার আর কোন সমস্যা থাকলে আমার বাবামাকে ফোন করে জানাতে পারেন’।
শিক্ষকের অনুমতির তোয়াক্কা না করে গটগট করে হেঁটে চলে এলাম ক্লাসরুমে। কিন্তু মনটা খুব খারাপ হোল। ছোটবেলা থেকে সুরা হুজুরাতের ১০-১৩ আয়তগুলো না পড়লেও শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্করঃ
https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?client=ca-pub-0587668448492328&output=html&h=320&adk=984510356&adf=498962387&pi=t.aa~a.590237761~i.11~rp.4&w=384&lmt=1623588572&num_ads=1&rafmt=1&armr=3&sem=mc&pwprc=1796234389&psa=1&ad_type=text_image&format=384×320&url=https%3A%2F%2Fi-onlinemedia.net%2F12341&flash=0&fwr=1&pra=3&rh=295&rw=354&rpe=1&resp_fmts=3&sfro=1&wgl=1&fa=27&uach=WyJBbmRyb2lkIiwiMTAiLCIiLCJTTS1NMDIyRyIsIjkxLjAuNDQ3Mi4xMDEiLFtdXQ..&dt=1623588571745&bpp=23&bdt=3586&idt=-M&shv=r20210607&cbv=%2Fr20190131&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3D0d37d16c2de52844-22ec7c0a63c900d1%3AT%3D1623586456%3ART%3D1623586456%3AS%3DALNI_Mb5lDVGEHXj-dm-R1Dk-ddxUM9e1A&prev_fmts=auto%2C384x400%2C0x0%2C384x320&nras=3&correlator=7030144474118&frm=20&pv=1&ga_vid=1341212219.1623586454&ga_sid=1623588570&ga_hid=729971528&ga_fc=0&u_tz=360&u_his=11&u_java=0&u_h=854&u_w=385&u_ah=854&u_aw=385&u_cd=24&u_nplug=0&u_nmime=0&adx=0&ady=2808&biw=384&bih=726&scr_x=0&scr_y=3&eid=42530671%2C31060004%2C44744016&oid=3&pvsid=3997467140505284&pem=207&ref=https%3A%2F%2Fi-onlinemedia.net%2Fcategory%2Fstory-and-poem%2Four-life%2Fpage%2F5&eae=0&fc=384&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C385%2C0%2C384%2C726%2C384%2C726&vis=1&rsz=%7C%7Cs%7C&abl=NS&fu=128&bc=31&ifi=6&uci=a!6&btvi=3&fsb=1&xpc=sqaGQkMBod&p=https%3A//i-onlinemedia.net&dtd=389
https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?client=ca-pub-0587668448492328&output=html&h=400&slotname=2272579663&adk=3741662770&adf=3921416350&pi=t.ma~as.2272579663&w=384&lmt=1623588570&rafmt=11&psa=1&format=384×400&url=https%3A%2F%2Fi-onlinemedia.net%2F12341&flash=0&fwr=1&wgl=1&uach=WyJBbmRyb2lkIiwiMTAiLCIiLCJTTS1NMDIyRyIsIjkxLjAuNDQ3Mi4xMDEiLFtdXQ..&dt=1623588569752&bpp=19&bdt=1593&idt=325&shv=r20210607&cbv=%2Fr20190131&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3D0d37d16c2de52844-22ec7c0a63c900d1%3AT%3D1623586456%3ART%3D1623586456%3AS%3DALNI_Mb5lDVGEHXj-dm-R1Dk-ddxUM9e1A&prev_fmts=auto&correlator=7030144474118&frm=20&pv=1&ga_vid=1341212219.1623586454&ga_sid=1623588570&ga_hid=729971528&ga_fc=0&rplot=4&u_tz=360&u_his=11&u_java=0&u_h=854&u_w=385&u_ah=854&u_aw=385&u_cd=24&u_nplug=0&u_nmime=0&adx=0&ady=2488&biw=384&bih=726&scr_x=0&scr_y=0&eid=42530671%2C31060004%2C44744016&oid=3&pvsid=3997467140505284&pem=207&ref=https%3A%2F%2Fi-onlinemedia.net%2Fcategory%2Fstory-and-poem%2Four-life%2Fpage%2F5&eae=0&fc=640&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C385%2C0%2C384%2C726%2C384%2C726&vis=1&rsz=%7C%7CoeEbr%7C&abl=CS&pfx=0&fu=128&bc=31&ifi=2&uci=a!2&btvi=1&fsb=1&xpc=vgzohnJnBP&p=https%3A//i-onlinemedia.net&dtd=355
‘মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে – যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর নারীকে উপহাস না করে, কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।
মুমিনগণ, তোমরা অধিকাংশ ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।’
কিন্তু এই আয়াতগুলো আমল করেন এমন মানুষ দুষ্প্রাপ্য। অন্যের ব্যাপারে অনুমান করে হাসাহাসি করা, আজেবাজে কথা বলা, কুৎসা রটনা করা এগুলো যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। এমনকি সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কারো ব্যাপারে বিবেচনা করার ক্ষেত্রেও ব্যাক্তির জ্ঞান, জ্ঞানের প্রতিফলন, আচার আচরণ, লেনদেন ইত্যাদির ওপরে স্থান পায় তার আঞ্চলিকতা, গাত্রবর্ণ, বংশ, প্রভাব প্রতিপত্তি, অর্থের পরিমাণ, পদমর্যাদা এমন বিষয়গুলো। সম্পূর্ন ধারণার ওপর ভিত্তি করে মানুষের জেল, জরিমানা থেকে ফাঁসি পর্যন্ত হয়ে গিয়েছে এমন ঘটনা বিরল নয়। পরবর্তীতে অনেক সময় জানা গিয়েছে তারা বস্তুত অপরাধী নয়। তখন যাকে জেল দেয়া হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমরা মানসিকভাবে দায়মুক্ত হই। কিন্তু সেই বাক্তির জীবনের সে সময়টুকু কে ফিরিয়ে দেবে যা সে পরিবার বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যবঞ্চিত হয়েছে? যে সময় সে জীবনে কিংবা সমাজে ফলাতে পারত সোনালী ফসল? কে তাকে ফিরিয়ে দেবে তার নিষ্পাপ অবস্থান, একটা ভুল অভিযোগ যে তাকে অপরাধীর তকমা লাগিয়ে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে! কে ক্ষমা চাইলো আর কে চাইলোনা তার খবর কি আর সমাজ রাখে? তাদের চোখে সে চিরতরেই অপরাধী বনে গিয়েছে। আর যাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে? তাকে কি কবর থেকে তুলে ‘সরি’ বলে মাফ চাওয়ার উপায় আছে? এজন্যই আমাদের এত জোর দিয়ে বলা হয়েছে কারো ব্যাপারে ধারণা না করতে, ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে, অন্যের ব্যাপারে না জেনে কথা বলাকে তুলনা করা হয়েছে নিজের মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করার সাথে যা কল্পনাতীত। তাতেও মনকে অর্গল দেয়া না গেলে বলা হয়েছে শাস্তির কথা। কিন্তু চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী। আমরা সুযোগ পেলেই পরের ত্রুটি অনুসন্ধানে লিপ্ত হই, পরচর্চায় আনন্দ পাই, পরনিন্দায় মুখরিত হই, অপরকে বিবেচনা করি নিজের মানদন্ডে তার পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝেই।
https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?client=ca-pub-0587668448492328&output=html&h=320&adk=984510356&adf=2842264951&pi=t.aa~a.590237761~i.24~rp.4&w=384&lmt=1623588572&num_ads=1&rafmt=1&armr=3&sem=mc&pwprc=1796234389&psa=1&ad_type=text_image&format=384×320&url=https%3A%2F%2Fi-onlinemedia.net%2F12341&flash=0&fwr=1&pra=3&rh=295&rw=354&rpe=1&resp_fmts=3&sfro=1&wgl=1&fa=27&uach=WyJBbmRyb2lkIiwiMTAiLCIiLCJTTS1NMDIyRyIsIjkxLjAuNDQ3Mi4xMDEiLFtdXQ..&dt=1623588571745&bpp=26&bdt=3586&idt=26&shv=r20210607&cbv=%2Fr20190131&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3D0d37d16c2de52844-22ec7c0a63c900d1%3AT%3D1623586456%3ART%3D1623586456%3AS%3DALNI_Mb5lDVGEHXj-dm-R1Dk-ddxUM9e1A&prev_fmts=auto%2C384x400%2C0x0%2C384x320%2C384x320&nras=4&correlator=7030144474118&frm=20&pv=1&ga_vid=1341212219.1623586454&ga_sid=1623588570&ga_hid=729971528&ga_fc=0&u_tz=360&u_his=11&u_java=0&u_h=854&u_w=385&u_ah=854&u_aw=385&u_cd=24&u_nplug=0&u_nmime=0&adx=0&ady=4660&biw=384&bih=726&scr_x=0&scr_y=3&eid=42530671%2C31060004%2C44744016&oid=3&pvsid=3997467140505284&pem=207&ref=https%3A%2F%2Fi-onlinemedia.net%2Fcategory%2Fstory-and-poem%2Four-life%2Fpage%2F5&eae=0&fc=384&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C385%2C0%2C384%2C726%2C384%2C726&vis=1&rsz=%7C%7Cs%7C&abl=NS&fu=128&bc=31&ifi=7&uci=a!7&btvi=4&fsb=1&xpc=WugjQHJKg4&p=https%3A//i-onlinemedia.net&dtd=423
একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় এই সবগুলো শব্দই ‘পর’ দিয়ে শুরু। সমস্যাটা সেখানেই। আমরা কাউকে আপন ভাবলে আমার কথা বা আচরণের দ্বারা তার মনে কি ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি হবে, সে কিভাবে প্রভাবিত হবে, আমার ব্যাপারে সে কি ধারণা করবে তা সহজেই অনুমান করতে পারতাম বা তা নিয়ে চিন্তিত হতাম, তাই না? কিন্তু আমরা এ’ নিয়ে ভাবিনা কারণ আমরা অপর ব্যাক্তিকে কখনোই আমাদের ভাই বা বোন হিসেবে দেখিনা। দেখলে নিশ্চয়ই তার সাথে অসদাচরন করতে পারতাম না, কিংবা তার পেছনে তাকে ছিড়েখুঁড়ে কুটিকুটি করতে পারতাম না। অথচ আমাদের প্রভূ আমাদের বলেছেন আমরা আদতেই ভাইবোন, এবং আমাদের পরস্পরের ওপর পরস্পরের অধিকারগুলোও তেমনই। এ’ কোন অহেতুক দাবী নয়, নয় কেবল মুখের কথা। বস্তুতই আমরা সবাই আদম এবং হাওয়ার সন্তান এবং সেই সূত্রে পরস্পর ভাইবোন।
এই ধরণের আচরণ এবং কথাবার্তা পরস্পরের প্রতি ক্ষোভ এবং বেদনার জন্ম দেয়। ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় পারস্পরিক সম্মানবোধ ও বিশ্বাসের অভাব, বিভেদ এবং অনেক সময় প্রতিহিংসা। অথচ আল্লাহ বার বার আমাদের স্মরন করিয়ে দিয়েছেন নিজেদের মাঝে বিভেদ রচনা না করতে এবং সেই লক্ষ্যেই এই আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং এর মত আরো অনেক আয়াত। তবু আমরা নিজের পছন্দ মতই চলতে পছন্দ করি -পরস্পরকে উপহাস করি, দোষারোপ করি, মন্দ নামে ডাকি যা তাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক। অথচ সেই একই কাজটি যদি কেউ আমাদের সাথে করত, আমরা তা পছন্দ করতাম না। আমরা মানুষকে যেসব কষ্টদায়ক কথা বলি তার অধিকাংশই ধারণাপ্রসূত, যার বাস্তবে কোন ভিত্তি নেই!
যদি আমরা বাস্তবিক কোন ব্যাক্তির মাঝে কোন ত্রুটি লক্ষ্য করি, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে তা জানানোর মাঝে কল্যাণ রয়েছে যদি তা তার সহজাত (সুতরাং সংশোধনাতীত) না হয়ে থাকে। লক্ষ্য করুন, ‘তাকে’ তা জানানোর মাঝে কল্যাণ রয়েছে, অন্যকে নয়। তাকে একান্তে ডেকে নিয়ে, ভাই বা বোনসদৃশ স্নেহমায়া দিয়ে বুঝানোর মাধ্যমে প্রথমত, আমি নিজে পরচর্চার মত ব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকতে পারি; দ্বিতীয়ত, আমার ভাই বা বোনের একটি উপকার করার মাধ্যমে আমার প্রভূর সামনে নিজেকে উত্তমরূপে প্রতিভাত করতে পারি; তৃতীয়ত, ঐ ব্যাক্তিকে হয়ত একটি ত্রুটি হতে উত্তরণ করতে সাহায্য করার মাধ্যমে আমার সৃষ্টিকর্তাকে আমার হাজারখানা ত্রুটির মাঝে শ’খানেক থেকে উত্তরণ করার সামর্থ্য দেয়ার অনুরোধ করতে পারি। সেটাই কি তার এবং আমার জন্য অধিক সম্মানজনক এবং উপকারী নয়? তবু আমরা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়াই বেশি পছন্দ করি।
ভাবছেন সে যদি আমার কথা আমলে না নেয়? নো চিন্তা, আমি তারপরেও আমার সবক’টি ফায়দা পেয়ে যাব। সে কেবল তার নিজের ফায়দা থেকেই বঞ্চিত হবে। তবে আন্তরিকতা সচরাচর ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। আমরা যখন কারো পেছনে কিছু বলি, তা গোপন থাকেনা, বরং ঐ ব্যাক্তি তা শুনলে কষ্ট পায় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা ব্যাক্তিকে জেদী করে তোলে, এমনকি সে ঐ ত্রুটির ওপরেই দন্ডায়মান থাকতে এমনকি তা বর্ধিত করতে বদ্ধপরিকর হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমরা যদি আন্তরিকতাসহকারে প্রমাণ করতে পারি যে ব্যাক্তির প্রতি কোনপ্রকার হিংসা বিদ্বেষ কিংবা অপচিকীর্ষা হতে নয় বরং সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য, সম্পর্ক দৃঢ় করার সঙ্কল্পে এবং আন্তরিক উপচিকীর্ষার অনুভূতি থেকেই কথাগুলো বলা, সেক্ষেত্রে ব্যাক্তি অবশ্যই কথাগুলো আমলে নেবে, তা বিবেচনা করে দেখবে, নিজেকে পরিবর্তন করতে সচেষ্ট হবে এবং অনেকসময় এই প্রক্রিয়াতেই পাওয়া যেতে পারে একজন উত্তম বন্ধু!
পৃথিবীর সবাই যদি দেখতে একরকম হত, একই রকম খাবার খেত, একই ভাষায় কথা বলত, একইভাবে পোশাক পরত, একইরকম ধ্যান ধারণা পোষণ করত তবে পৃথিবীতে কোন বৈচিত্র থাকতনা। আজকের গ্লোবালাইজেশনের যুগে এটা যতটা স্পষ্ট তেমন বোধ করি আর কখনো ছিলোনা। শক্তিশালী মিডিয়ার বলে সারা পৃথিবীতে সবাইকে একইভাবে চলতে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক ঐতিহ্য। সবাইকে দেখতে একরকম লাগে, মনে হয় যেন রোবটের দল! এর ফলে কিন্তু সৃজনশীলতা, সহনশীলতা, কোমলতা, সহানুভূতি, সাহচর্য, সহযোগিতার মনোভাব বাড়েনি বরং যে নিজেকে ছাঁচে ফেলতে আগ্রহী নয়, যে একটু অন্য রকম তার প্রতি সৃষ্টি হচ্ছে বিদ্বেষ এবং অসন্তোষ।
মানবচরিত্র যুগে যুগে অপরিবর্তনীয়। সেজন্যই আদি যুগের বানী এবং জ্ঞানের ফসলগুলো এখনো একইভাবে প্রযোজ্য। তবু যারা নিজেদের মধ্যে বিভেদে লিপ্ত হয়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি কেননা তাদের কারণে তাদের ভাইবোন যন্ত্রণার শিকার হয়েছে, আল্লাহর বান্দাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি এবং দুরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে আমাদের প্রভূকে কোনভাবেই কঠোর বলার উপায় নেই। আমাদের সন্তানদের মাঝে যে সন্তানটি ভাইবোনদের সাথে মিলেমিশে চলতে পারেনা তাকে আমরাও শাস্তি দিয়ে থাকি কেননা সে পারিবারিক সম্প্রীতির প্রতি হুমকিস্বরূপ। আমরা তো আসলে সবাই এক বিশাল পরিবারেরই সদস্য!
‘The Arrow and the Song’ কবিতাটার কথা মনে আছে? আমরা যা অন্যের সাথে করে থাকি, তাই আমরা ফিরে পাই। সুতরাং, যদিও আমরা ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী না হই, শাস্তির ব্যাপারে ভীত না হই, অন্যের ব্যাপারে পরোয়া না করি – অন্তত নিজে ভালো থাকার কথা ভেবে, চলুন, আমরা অন্যের সাথে তেমন আচরণ করার সিদ্ধান্ত নেই যেমন ব্যাবহার আমরা নিজেরা পেতে ইচ্ছুক। হয়ত আমরা এর মাধ্যমে বিভেদ এবং বিদ্বেষের দেয়াল হটিয়ে নিজেদের মাঝে গড়ে তুলতে পারব এক উৎকৃষ্ট এবং অনাবিল ভালোবাসার সম্পর্ক।