সাক্ষাৎ হলো দুই শয়তানের। মানুষের মতো তারাও সাধারণত কুশল বিনিময় করছে! একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে, “কি তোমার এই অবস্থা কেন? একদম শুকিয়ে গেলে, দূর্বল হয়ে গেলে এই অবস্থা কেন তোমার?” সাধারণত আমরাও দুই বন্ধু পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলে থাকি এমন কথা।
কি ভাই শুকিয়ে গেছ একদম। তুমি তো মোটা হয়ে গেলে। তো এমনই এক শয়তান আরেক শয়তানকে জিজ্ঞেস করছে। তখন সে বলছে, “আর বলো না! আমি যেই সেক্টরে কাজ করি! মানে যেই লোকটার সাথে থাকি, সে একজন নেককার বান্দা। আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা। যখনই যেই ভালো কাজ করে অর্থাৎ খাওয়া, ঘরে প্রবেশ ইত্যাদি সকল কাজের পূর্বে “বিসমিল্লাহ” বলে। যার ফলে আমি তার কোনো কাজে অংশ নিতে পারি না। তাই আমার এই অবস্থা!”
তখন সে আবার অপর শয়তানটিকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার অবস্থা বলো। তুমি এত মোটাতাজা কিভাবে হলে?” তখন সে উত্তর দিচ্ছে, “আমি থাকি এক অলস ব্যক্তির সাথে। তার “বিসমিল্লাহ” পাঠ করার কথা তো মনেই থাকে না। যার ফলে আমি তার সকল কাজে শরীক হতে পারি। আর এই কারণেই আমার অবস্থা ভালো।” [১]
শয়তানের দূর্বলতাও আমরা যেনে ফেললাম। কিভাবে তাকে নাস্তানাবুদ করতে হয়। তো আর দেরি কিসের! অস্ত্র চালানো শুরু হোক আজ থেকেই। প্রত্যকে ভালো কাজ শুরু হোক রাব্বে কারীমের নামে।
থামুন! শেষ না। আরও কিছু বলি। শুধু কি শয়তানকে শায়েস্তা করতে “বিসমিল্লাহ” পাঠ করবেন? একজন মানুষ যদি আপনাকে একটু সাহায্য করে তাহলে আপনি ধন্যবাদের বন্যা বসিয়ে দেন। তাহলে যেই রব আপনাকে সৃষ্টি করলেন, এতো এহসান করলেন তাঁকে ভুলে যান কিভাবে?
মা তো জন্ম দিয়েছে। তবু তার কৃতজ্ঞ কখনো আদায় করা সম্ভব নয়। তাহলে যে রব সৃষ্টি করেছেন তাঁকে কি করে ভুলে গেলেন। স্মরণ করুন তাঁর এহসানের কথা।
আপনার হাত ছিল, কিন্তু কোনো কিছু ধরতে পারতেন না। তিনি ধরার ক্ষমতা দিয়েছেন। চোখ ছিল দেখতেন কিন্তু কোনো কিছু বুঝতেন না। তিনি বুঝার ক্ষমতা দিয়েছেন। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য দাঁত দিয়েছেন। যখন আরেকটু শক্ত খাবার আপনি খেতে চাইলেন তখন দয়াময় রব সেই দাঁতগুলো উঠিয়ে আরও মজবুত দাঁতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
আজ তাকেই ভুলে যাচ্ছেন! আচ্ছা ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু ভাবুন। আপনি অসুস্থ। ঘরে পরে আছেন। ছেলে মেয়েরা খেদমত করছে। একসময় তারাও বিরক্ত। এখন কাজের লোক দেখাশোনা করে। ছেলেরা বলে আল্লাহ বাবাকে পর্দা দিয়ে দিলে ভালো হতো। আপনি জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেলেন। মরে যাওয়ার আকাঙ্খা করতে লাগলেন।
এখন রব যদি মৃত্যুও না দিতেন তখন কি করতেন? জীবনটাও রবের দয়া, মৃত্যুটাও ওনার দয়া। তারপর মৃত্যুর পর এমনি ফেলে দেন নি। কেন? কুকুর, বিড়ালও তো মরে! ফেলে দেয়া হয় কোনো এক জায়গায়। আপনাকেও যদি ফেলে দিত কি হত এমন? নাহ! রব বলেন আমার বান্দাকে গোসল করাও, সুগন্ধি লাগাও, ৪ জন কাঁধে করে নিয়ে যাও, মধ্যম গতিতে হেঁটে যেও। বেশি জোরে না।
আল্লাহু আকবার! হাজার লোক মৃত্যুর পর দেখতে আসে। ভাবুন এই মুখ কি দেখানের যোগ্য? এত গুণাহ। তারপরও রব মানুষের সামনে আপনাকে অপদস্ত করেন নি। আজ আরাম-আয়েশ করছেন। তাঁর দেয়া রিজক খাচ্ছেন। কিন্তু খাওয়ার আগে “বিসমিল্লাহ” বলতে ভুলে যান? আফসোস! প্রিয় ভাই আসুন না আমাদের রবকেও একটু ধন্যবাদ দিতে শিখি।
খাওয়ার শুরুতে “বিসমিল্লাহ” এবং শেষে “আলহামদুলিল্লাহ” বলার অভ্যাস গড়ে তুলি। ইনশাআল্লাহ বরকত হবে।
নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান, হুযুর পুরনূর ﷺ ইরশাদ করেছেন: “যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ “বিসমিল্লাহ” এর মাধ্যমে আরম্ভ করা হয় না, তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।” [২]
হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আবদুল্লাহ রা. বলেন: যখন “বিসমিল্লাহ” অবতীর্ণ হল তখন মেঘ পূর্বদিকে ছুটে চলল, বাতাস স্তব্দ হয়ে গেল, সমূদ্র উত্তেজনায় এসে পড়ল, চতুষ্পদ জন্তু সমূহ মনােযােগ সহকারে শুনার জন্য নিজেদের কান লাগিয়ে দিল ও শয়তানদেরকে আসমান থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হল।
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করলেন: “আমার সম্মান ও মহত্বের শপথ যে বস্তুর উপর “বিসমিল্লাহ” পাঠ করা হয় আমি তাতে বরকত দান করি।” [৩]
আমরা বরকত থেকে মেহরুম থাকব কেন? আজই আমল শুরু করে দিই এবং রব তায়ালা কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাই। আল্লাহ তৌফিক দিন।
“হাম গুণাহগারো পে তেরি মেহেরবানী চাহিয়ে, সাব গুণাহ ধুল যায়েগি রাহমাত কা পানি চাহিয়ে।”
রেফারেন্সঃ
[১] আসারারুল ফাতিহা, ১৫৫ পৃষ্ঠা।
[২] আল দুররূল মানসুর, ১ম খন্ড ২৬ পৃষ্ঠা।
[৩] হালবী কবির, ৩০৭ পৃষ্ঠা।