অর্থনীতি, ইকোনোমিক্স। ভার্সিটির একটি সাবজেক্ট। অর্থনীতি ও মানুষ অবিচ্ছেদ্য। ফ্যাল কড়ি মাখ তেলের মত। কড়ি বা অর্থ নেই, তেলও নেই। ১৯৪০ থেকে অর্থনীতিকে একটি বিষয় বিবেচনা করা হল। এর আগে সভ্যতা জানতও না। অথচ, ১৯১২ সালে অর্থনীতির বই লিখেন ইমাম আ’লা হযরত। অর্থনীতিকে স্বতন্ত্র সংজ্ঞায়িত করেন। পশ্চিমাদেরও ২৮ বছর আগে। প্রবর্তন করেন যুগান্তকারী পলিসি।
অবশ্য, এডাম স্মিথ অনেক আগেই একটা বই লিখেন। ‘ওয়েলথ অভ নেশন’ নামে। সেটা মুক্তবাজার অর্থনীতির ওপর। যা খুলে দিয়েছিল পুঁজিবাদ ও সম্রাজ্যবাদীদের দরজা। মানুষের রক্তচোষা অধ্যায়। ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’, ফ্রিম্যাসন, ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ এবং ইজরাইল একসূতোয় গাঁথা। যার ঘোরতর বিরোধী আ’লা হযরত। একমাত্রও বলা যায়। সে এক বিশাল অধ্যায়। আরেকদিন বলব।
আ’লা হযরত চারটি সূত্র উপস্থাপন করেন।
(i) সঞ্চয় বা সেভিংস।
(ii) ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রণয়ন।
(iii) মুসলিম-মুসলিম বাণিজ্য।
(iv) ইসলামী বিজ্ঞানের প্রয়োগ।
সঞ্চয় বা সেভিংস :
ধরুন একশ টাকা আছে। ৮৫ টাকা খরচ করলেন। বাকি ১৫ টাকা জমাবেন। যা ধীরে ধীরে বড় হবে। কিস্তির পর কিস্তিতে। এক সময় সে অর্থ আপনি বিনিয়োগ করবেন। আপনার আর্থিক অবস্থা বদলাবে। কথাটা খুব সাধারণ মনে হয়। কিন্তু শত বছর আগের কথা ভাবুন। মানুষ তো অর্থনীতিকেই চিনত না। সেভিংস তো দূর কি বাত। আজকের গরিব দেশগুলোর সঞ্চয় ৫-৮%। আর উন্নত দেশের ১৫% বা বেশি। তাহলে বুঝুন সঞ্চয় কিভাবে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।
১৯৩৬ সাল। ইংল্যাণ্ডের লর্ড জে. এম কায়নেয ‘থিওরি ওভ সেভিংস এণ্ড ইনভেস্টমেন্ট’ প্রকাশ করে। যা হুবহু আ’লা হযরতের থিওরি। এজন্য বৃটিশরা তাকে ‘লর্ড’ উপাধিও দেয়। সম্মানিত করে।
এবার ভাবুন। কার বিয়ে কে পরে মালা! কার আবিষ্কার কে পায় পুরষ্কার।
আরেকটা কথা, আ’লা হযরত নাকি বৃটিশদের দালাল! যদি তাই হয়, তবে বৃটিশরা আ’লা হযরত কে কেন পুরষ্কৃত করল না? কেন এমন অবিচার? আফসোস! শত্রুরা মুসলিমের জ্ঞান কাজে লাগায়। আর আমরা তাঁকে চিনলামও না এখনো (আল্লাহ ন্যায় বিচারক)।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রণয়ন :
সে যুগে ব্যাংক ছিল হাতেগোনা। এর সাথে সাধারণ মানুষের পরিচয় ছিল না। আ’লা হযরত মুসলিমদের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। প্রথম সূত্র ছিল সঞ্চয়। এখন ব্যাংক না থাকলে মানুষ জমাবে কোথায়? বলে রাখি, বর্তমান ব্যাংক আর আ’লা হযরত এর ব্যাংকের ব্যাপক তফাত। যা সুদহীন। শরীয়া সমৃদ্ধ। অনেকটা নিরাপদ সিন্দুকের মত। মানুষ জমাবে, ব্যাংকে বেতন দিবে অর্থ রক্ষার জন্য।
এই ব্যাংকি ব্যবস্থার কারণে মানুষ সঞ্চয়মুখি হবে। বাড়বে অর্থের প্রবৃদ্ধি। অল্প পরিসরে বুঝানো কষ্টকর। মালিক আমাদের অনুমানের শক্তি দিক।
মুসলিম-মুসলিম বাণিজ্য :
এখানে বলা হয়, একজন মুসলিম শুধু মাত্র মুসলিমের সাথেই ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। এতে মুসলিমের অর্থ মুসলিমের কাছেই থাকবে।
এখন ভাবতে পারেন, আ’লা হযরত সংকীর্ণমনা। তিনি বাকিদের ঘৃণা করতেন।
থামুন! গভীরে যান, ডুব দিন। মুসলিমদের শোচনীয় অবস্থা তখন। উসমানীয়দের পতন হচ্ছে। ভারতে বৃটিশ লুটছে। ত্রাহি-ত্রাহি অবস্থা। প্রশ্নটা ছিল মুসলিমদের অস্তিত্বের। বেঁচে থাকার। একটা উদাহরণ দেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। ইউরোপে ভয়াবহ অবস্থা। মানুষ না খেয়ে মরে। তারা তখন ‘ইউরোপীয় কমন মার্কেট’ (ECM) বানায়। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যেই ব্যবসা করত। বাকিদের সুযোগ ছিল না।
আজকে তাদের অবস্থা কোথায়? বিশ্বে সবচে উন্নত অঞ্চল। আফসোস! আ’লা হযরত এর থিওরি তারা ব্যবহার করে। আর আমরা তাঁকে ইংরেজপ্রেমী বানাই।
এছাড়াও আ’লা হযরত কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল, দেশ, রাষ্ট্রের কথা বলেন নি। সারাবিশ্বেই মুসলিম আছে। তাই তার থিওরি সারা বিশ্বেই প্রযোজ্য।
আর অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা বন্ধ হলে মাদক ও অন্যান্য হারাম বস্তুও আসা বন্ধ হবে। সুরক্ষিত থাকবে মুসলিম উম্মাহ। কি চমৎকার পন্থা। ‘ফেড্রিক লিস্ট’ একজন প্রখ্যাত জার্মান অর্থনীতিবিদ। তিনিও আ’লা হযরত এঁর এই নীতিকে স্বীকার করেছেন।
ইসলামী বিজ্ঞানের প্রয়োগ:
এ পয়েন্টা ভিন্ন। ভাবছেন অর্থনীতির সাথে এসবের কি সম্পর্ক। এখানে আ’লা হযরত এঁর অনন্যতা। যেখানে আমাদের চিন্তা শেষ। সেখানে তাঁর শুরু।
আ’লা হযরত চাইছিল মুসলিমরা শিক্ষিত হোক। যাতে আমরা সভ্যতার সাথে এগুতে পারি। শিক্ষার অনগ্রসর আমাদের ডুবাচ্ছিল।
যাকগে, মূল কথা এটা না। আ’লা হযরত এঁর ব্যাখ্যা ভিন্ন। আ’লা হযরত চাইছিলেন, অর্থনীতি বিষয়টি যেন ইসলামের মৌলিক একটি শাখায় পরিণত হয়। ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞান যেন এতে সর্বোচ্চ প্রভাব রাখে। ফলে মুসলিমরা হবে অর্থনৈতিক সচেতন।
আজ কষ্ট হয়। সভ্যতা আজ পশ্চিমাদের। তারা যাই বকে, আমরা শিখি। নিজের ইতিহাসও আমরা জানি না।
এই ইতিহাসের এক অদেখা অধ্যায়ের নাম আ’লা হযরত ইমাম আহমাদ রেযা খান। তিনি ডাকছেন দু’হাত বাড়িয়ে। বলছেন তাঁকে আবিষ্কার করতে।