বিকাশ’ তো চিনেন। টাকা জমায়-উঠায়। টাকা উঠাতে খরচ লাগে। হাজারে প্রায় বিশ টাকা। এখন এই বিশ টাকা কি সুদ? যেহেতু বাড়তি লাগছে। এটা কি হালাল? হালাল হলেও কিভাবে?
এ সমস্যা আজকের না। সোয়া একশ বছর আগের। ১৮৯৪ সাল। তখনো টাকা পাঠানো হত। তখন বিকাশ ছিল না। মানি-অর্ডার ছিল। ডাকযোগে টাকা আসত-যেত। তখন প্রথম চালু হয়েছে এসব। চিন্তার বিষয়। টাকা পাঠালেই বাড়তি লাগে। সুদ নাকি আবার!
তখন ফতওয়া এল ‘ভূতনগর’ থেকে {দেও : দৈত্য/ভূত, বন্দ : স্থান/নগর}। তারা বলল : এটা সুদ। তোমরা বাড়তি টাকা দিও না।
তৎকালিন ভারতে আরো এক ব্যক্তি ছিলেন। বিশাল বিদ্বান পুরুষ। তিনি বললেন : না এটা সুদ না। গাড়িতে চড়লে ভাড়া লাগে। টাকা পাঠাতেও ভাড়া লাগে। বাড়তি টাকাটা সেই ভাড়া।
এখন প্রশ্ন, আপনি কোনটি মানছেন? ভূতনগরের ফতওয়া। নাকি সেই ব্যক্তির সমাধান। ভূতনগরকে মানলে আজকের বিকাশ সেবাই পেতেন না।
১৯০৫ সাল। ভূতনগরের আরেক ফতওয়া। নোট অর্থনীতির অংশ নয়। নোট মানে কাগজের টাকা। একশ, পাঁচশ, হাজার টাকার নোট।
সেই ব্যক্তি বললেন, না! নোট মুদ্রার আরেক রূপ। এটি অর্থনীতির অংশ। নোট ব্যবহার করুন।
আজ কোনটা মানছি? নোট কি ব্যবহার করছি? নাকি কয়েন নিয়ে ঘুরছি?
অনেক অর্থনৈতিক আলাপ করলাম। এবার আসুন সংস্কৃতির বিষয়ে। খাওয়া-দাওয়া সংস্কৃতির অংশ। সেটা দিয়েই শুরু করি।
১৯০২ সাল। ভূতনগরীরা বলল কাউয়া (কাক) খাওয়া জায়েজ, বৈধ, হালাল। সে ব্যক্তি বললেন, না এটা হারাম।
কোনটা মানছি? কাউয়া কি খাচ্ছি? খেলে খেতে পারেন। কাউয়া চাষ শুরু করুন। বয়লার মুরগীর চাপ কমবে।
কুরবানি ঈদ। গরু কোরবানি করি। ভূতনগরীরা বলল, গাই (মেয়ে গরু) কোরবানি করা যাবে না। ১৮৮৪ সালে। হায়রে, এখানেও লিঙ্গ বৈষম্য। ভাগ্যিস নারীবাদী গরু-সমাজ নেই।
যাকগে, তিনি বললেন : না আপনার গাই কুরবানী করুন। এটা বৈধ। এখনো সমাজে তার সিদ্ধান্তই বলবৎ।
ঈদের নামায শেষে কোলাকোলি তো করেন। ১৮৯৫ সাল। ভূতনগরীরা কহিল, ইহা হারাম। কিন্তু তিনি বললেন, বৈধ। এ অবধি আমরা কোলাকোলি করছি। তারটাই মানছি।
এবার আসুন রাজনৈতিক বিষয়ে। ১৯০৯ সাল। ভূতনগরীরা ভারতকে ‘দারুল হরব’ ঘোষণা করল। এখন ‘দারুল হরব’ বিষয়টি বুঝতে হবে।
‘দারুল হরব’ মানে ‘নিষিদ্ধ দেশ’। যে দেশে ইসলাম পালন করা অসম্ভব। সে দেশকেই ‘দারুল হরব’ বলে। তখন হয় দেশ ত্যাগ করো, না হলে যুদ্ধ করো।
কিন্তু তিনি বললেন, না। ভারত দারুল হরব না। ভারত দারুল ইসলাম। এ দেশ ত্যাগ করতে হবে না। মুসলিমদের নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মজার বিষয় হচ্ছে, তারা ‘দারুল হরব’ ঘোষণা করল। কিন্তু তারা কেউই বেরোলো না। আজ পর্যন্ত এ দেশেই আছে। নিজের ফতওয়া নিজেই মানে না। তাদের উচিৎ মঙ্গলগ্রহে চলে যাওয়া। রকেট ভাড়া আমরা চান্দা করে উঠিয়ে দিব।
এখন তারা বলবে, সেই ব্যক্তি বৃটিশদের দালাল। তাই ‘দারুল হরব’ মানে নি।
অথচ, তিনি ঘোরতর বৃটিশ বিরোধী ছিলেন। তিনি বৃটিশদের কোর্ট-কাচারিতে কখনো যান নি। বৃটিশদের রক্তচোষা বলেছেন।
একটা ঘটনা বলি। তাহলে স্পষ্ট হবে। সে সময়ে ডাক টিকিট ছিল। চিঠির গায়ে লাগাতে হয়। সেটা ছাড়া চিঠি যায় না। সেই ডাক টিকিটে ছিল রাণী ভিক্টোরিয়ার ছবি। সে ব্যক্তিও চিঠি পাঠাতেন। ডাকটিকিট তাকেও লাগাতে হত। উপায় ছিল না। তিনি কি করতেন, রাণীর ছবি উল্টে দিতেন। মাথা নিচে, ঘাড় উপরে করতেন। (জ্ঞানীর জন্য ইশারাই যথেষ্ট)।
মোট কথা, ১৮০০ সালের পর থেকেই সে ব্যক্তির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করেছে আমাদের অনেক কিছুই। ইতিহাসের মূখ্য অংশ।
——
অনেক বললাম। নিশ্চই বুঝেছেন তিনি কে। জ্বী, তিনি আমার আ’লা হযরত। ইমাম আহমাদ রেযা খান।
আজকের এই দিনে তিনি ধরাধামে তাশরিফ আনেন। আজ তাঁর জন্মদিন।
কি লিখব! মাথায় কুলায় না। একটি কথা দিয়ে শেষ করছি।
বায়ু, দেখা যায় না। অনুভব করা যায়। জগতের সমস্ত বাতাসকে এক করুন। ঠাণ্ডা করুন। জমবে। আকৃতি পাবে।
ঠিক একই ভাবে সৃষ্টির সমস্ত মদিনাপ্রেম একত্রিত করুন। হুব্বে মুস্তাফা (দ) একত্রিত করুন। সে একত্রিত প্রেমের মানবীয় রূপটাই হচ্ছে : আ’লা হযরত ইমাম আহমাদ রেযা খান।