১. রোজা ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ: ইব্ন ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,
بنُيَ الإسْلامُ على خمَسْ:ٍ شهَادةِ أنَّ لا إلَه إلَّا اللهُ وأنَّ مُحمَّداً رَسُولُ الله، وإِقَامِ الصَّلاةِ، وإيتَاءِ الزَّكَاة،والحجِّ وَصَومِ رَمَضَانَ
ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বস্তুর ওপর রাখা হয়েছে, সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, হজ সম্পাদন করা ও রমযানের রোজা পালন করা। (বুখারি: ৮ মুসলিম: ১৬)
২. রোজার ফযিলত: আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,
كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِى وَأَنَا أَجْزِى بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِى لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ. وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ
আদম সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের জন্য ১০ থেকে ৭শ গুণ পর্যন্ত সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ বলেন, রোজা এর ব্যতিক্রম। সে একমাত্র আমার জন্যই রোজা রেখেছে এবং আমিই নিজ হাতে এর পুরষ্কার দেবো। সে আমার জন্যই যৌন-বাসনা ও খানা-পিনা ত্যাগ করেছে। রোজাদারের রয়েছে দুইটা আনন্দ। একটা হচ্ছে ইফতারের সময় এবং অন্যটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ মেশক-আম্বরের সুঘ্রাণের চাইতেও উত্তম। (মুসলিম: ১১৫১)
৩. রোজা না রাখার শাস্তি: আবু উমামা বাহেলি রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি,
بينَا أنَا نَائِمٌ إذْ أَتَاني رَجُلانِ فأخَذَا بضَبْعِي -أي: عَضُدِي- فَأَتَيَا بي جَبَلاً وَعْراً فَقَالَا لي: اصْعَدْ، فقلت: إني لا أُطِيقُه، فقَالَ: إنا سَنُسَهِّلُه لك،فَصَعَدتُ حتى إذا كُنتُ في سَواءِ الجَبَل إذا أنا بِأصْواتٍ شدِيدَةٍ،فَقُلْتُ: مَا هَذهِ الأَصْواتُ؟ قَالَوا: هَذا عِوى أَهْلِ النَّارِ، ثمَّ انْطُلِقَ بي فَإِذا أَنا بِقَومٍ مُعَلَّقِين بِعَرَاقِيبهِم، مُشَقَّقَةٍ أَشْدَاقُهُم تَسِيلُ أشْداقُهُم دَماً، قَالَ: قُلتُ: مَن هَؤُلاءِ؟ قَالَ: هؤُلاءِ الَّذين يُفطِرُون قَبلَ تَحِلَّة صَوْمِهِم
একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, সহসা দু’জন লোক এসে আমার বাহু ধরে আমাকেসহ তারা এক দুর্গম পাহাড়ে আগমন করল। তারা আমাকে বলল, আরোহণ কর। আমি বললাম, আমি আরোহণ করতে পারি না। তারা বলল, আমরা তোমাকে সাহায্য করব। আমি ওপরে আরোহণ করলাম। যখন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছলাম, বিভিন্ন বিকট শব্দের সম্মুখীন হলাম। আমি বললাম, এ আওয়াজ কিসের? তারা বলল, এগুলো জাহান্নামীদের ঘেউ ঘেউ আর্তনাদ। অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে রওনা করল, আমি এমন লোকদের সম্মুখীন হলাম, যাদেরকে হাঁটুতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের চোয়াল ক্ষতবিক্ষত, অবিরত রক্ত ঝরছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা হচ্ছে সেসব লোক, যারা রোজা পূর্ণ হওয়ার আগে ভেঙ্গে ফেলত। (নাসায়ি ফিল কুবরা: ৩২৮৬, তাবরানি ফিল কাবির: ৭৬৬৭)
৪. কী ধরনের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে উপরে বর্ণিত অফুরন্ত ফযিলত হাসিল করা যাবে? এমর্মে আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেছেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ، فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি: ১৮০৪)
৫. বে-নামাযীর রোজা: বে-নামাযীর রোজা, হজ্জ ইত্যাদি কোনো আমলই কবুল হয় না। এমর্মে বুরাইদা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺবলেছেন,
مَنْ تَرَكَ صَلاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ
যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যায়।(বুখারি: ৫২০)
৬. রোজার নিয়ত: রোযার নিয়ত করা ফরয। নিয়ত অর্থ সংকল্প। যেমন মনে মনে এ সংকল্প করবে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আগামী কালের রোযা রাখছি। মুখে বলা জরুরি নয়। হাদীস শরীফে আছে, إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। (বুখারি: ১/২)
৭. রোজার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য: আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোজার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। (সূরা বাকারা: ১৮৩) আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকল প্রকার নাফরমানী কাজ থেকে দূরে থাকার নামই তাকওয়া। হাদীস শরিফে এসেছে, আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,
الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَلا يَرْفُثْ وَلا يَجْهَلْ وَإِنْ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي صَائِمٌ، إِنِّي صَائِمٌ রোজা ঢাল, সুতরাং তোমাদের কেউ রোজা অবস্থায় হলে সে যেন অশ্লীলতা ও মুর্খতা পরিহার করে, যদি কেউ তাকে গালি দেয়, সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার। (বুখারি: ১৭৯৫ মুসলিম: ১১৫১)
৮. সাহরির ফযিলত: আবু সায়িদ খুদরি রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
السَّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ فَلا تَدَعُوهُ وَلَو أَنْ يَجرَعَ أحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ ومَلائِكتَهُ يُصَلُّونَ عَلى المُتسَحِّرينَ
সাহরি বরকতময় খানা, তোমরা তা ত্যাগ কর না, যদিও তোমাদের কেউ একঢোক পানি গলাধঃকরণ করে, কারণ আল্লাহ সেহির ভক্ষণকারীদের ওপর রহমত প্রেরণ করেন ও ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ইস্তেগফার করেন।(আহমদ: ৩/১২, জামে সগির: ৪৮০১)
৯. সূর্যাস্তের পর দ্রুত ইফতার করার ফযিলত:ইব্ন মাজার এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺবলেছেন,
لا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الفِطرَ، عَجِّلُوا الفِطرَ فَإِنَّ اليَهودَ يُؤَخِّرُونَ
লোকেরা কল্যাণে অবস্থান করবে, যাবত তারা দ্রুত ইফতার করবে। তোমরা দ্রুত ইফতার কর, কারণ ইহুদিরা বিলম্ব করে।(সুনানে ইব্ন মাজাহ: ১৬৯৮)
১০. শিশুদেরকে রোজার অভ্যাস করানো:বড়দের উচিত শিশুদেরকেও রোজার ফযিলত শুনিয়ে উদ্ধুদ্ধ করা। সাহরির সময় একটু কষ্ট করে হলেও তাদেরকে জাগিয়ে দেওয়া। এটা অবশ্যই তাদের প্রতি কল্যাণকামনা।
দেখুন সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে শিশুদেরকে রোজা রাখাতেন। এক হাদীসে আছে,
ونصوم صبياننا، ونجعل لهم اللعبة من العهن، فإذا بكى أحدهم على الطعام أعطيناه ذاك حتى يكون عند الإفطار
আমরা আমাদের শিশুদেরকে রোযা রাখাতাম এবং তাদের জন্য উনের খেলনা বানিয়ে দিতাম। যখন তারা খাদ্যের জন্য কাঁদত তাদের সেই খেলনা দিতাম। এভাবে ইফতারের সময় হয়ে যেত। (বুখারি: ১৯৬০)
আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।