বিশেষ জ্ঞাতব্য ১ :
রুকু পেলেই রাকাত পাওয়া হয়: এ সম্পর্কে ইবনে রজব হাম্বলী রহ. (মৃত্যু ৭৯৫ হিজরী) তাঁর বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থে লিখেন:
وقد أجاب البخاري في كتاب القراءة عن حديث أبي بكرة بجوابين : أحدهما : أنه ليس فيه تصريح بأنه اعتد بتلك الركعة . والثاني : أن النبي نهاه عن العود إلى ما فعله .
فأما الأول ، فظاهر البطلان ، ولم يكن حرص أبي بكرة على الركوع دون الصف إلا لإدراك الركعة ، وكذلك كل من أمر بالركوع دون الصف من الصحابة ومن بعدهم إنما أمر به لإدراك الركعة ، ولو لم تكن الركعة تدرك به لم يكن فيه فائدة بالكلية ، ولذلك لم يقل منهم أحد : أن من ادركه ساجداً فإنه يسجد حيث أدركته السجدة ، ثم يمشي بعد قيام الإمام حتى يدخل الصف ، ولو كان الركوع دون الصف للمسارعة إلى متابعة الإمام فيما لا يعتد به من الصلاة ، لم يكن فرق بين الركوع والسجود في ذلك .
وهذا أمر يفهمه كل أحد من هذه الأحاديث والآثار الواردة في الركوع خلف الصف ، فقول القائل : لم يصرحوا بالاعتداد بتلك الركعة هو من التعنت والتشكيك في الواضحات ، ومثل هذا إنما يحمل عليه الشذوذ عن جماعة العلماء ، والانفراد عنهم بالمقالات المنكرة عندهم .
فقد أنكر ابن مسعود على من خالف في ذلك ، واتفق الصحابة على موافقته ، ولم يخالف منهم أحدٌ ، إلا ما روي عن أبي هريرة ، وقد روي عنه من وجه أصح منه أنه يعتد بتلك الركعة .
واما الثاني ، فإنما نهى النبي أبا بكرة عن الإسراع إلى الصلاة ، كما قال : لا تأتوها وأنتم تسعون ، كذلك قاله الشافعي وغيره من الأئمة ،
وسيأتي الكلام على ذلك فيما بعد – إن شاء الله تعالى . وكان الحامل للبخاري على ما فعله شدة إنكاره على فقهاء الكوفيين أن سورة الفاتحة تصح الصلاة بدونها في حق كل أحدٍ ، فبالغ في الرد عليهم ومخالفتهم ، حتى التزم ما التزمه مما شذ فيه عن العلماء ، واتبع فيه شيخه ابن المديني ، ولم يكن ابن المديني من فقهاء أهل الحديث ، وإنما كان بارعا في العلل والأسانيد
وقد روي عن النبي ، أن من أدرك الركوع فقد أدرك الركعة ، من حديث أبي هريرة ، وله طرق متعددة عنه . ومن حديث معاذ وعبد الرحمن بن الأزهر وغيرهم . وقد ذكرناها مستوفاة في كتاب شرح الترمذي.(৪/২৩২-২৩৩)
অর্থাৎ ইমাম বুখারী রহ. তাঁর কিতাবুল কিরাআতে হযরত আবু বাকরা রা. বর্ণিত হাদীসটির দুটি জবাব দিয়েছেন:
এক. উক্ত রাকাতকে গণ্য করা হয়েছে এমন কথা এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয় নি।
দুই. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এমন কাজ দ্বিতীয়বার করতে বারণ করেছেন।
প্রথম জবাবটির অসারতা খুবই স্পষ্ট। কাতারের পেছনে আবু বাকরা রা.এর রুকু করাটা রাকাত পাওয়ার লোভেই ছিল। অন্য যেসব সাহাবী বা তাদের পরবর্তীগণ কাতারের পেছনেই রুকু করে নিতে বলেছেন তাঁরাও রাকাত ধরতে পারবেন কেবল এ উদ্দেশ্যেই তা বলেছেন। এতে করে যদি রাকাতই ধর্তব্য না হলো, তবে এত কষ্ট করে লাভ কী? এজন্যই তো এমন কথা কেউ বলেন নি যে, ইমাম সেজদায় গেলে মুকতাদিও কাতারের পেছনে সেজদা করবে, অতঃপর ইমাম উঠে দাঁড়ালে কাতারে গিয়ে শামিল হবে। কাতারের পেছনে রুকু করার উদ্দেশ্য যদি ইমামকে দ্রুত অনুসরণ করাই হতো এবং এতে রাকাত পাওয়ার ব্যাপার না থাকত তবে তো রুকু ও সেজদার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকার কথা ছিল না।
কাতারের পেছনে রুকু করা সম্পর্কিত হাদীস ও আছারগুলো থেকে যে কেউ এটা বুঝতে পারবে। সুতরাং ঐ রাকাতকে গণ্য করার কথা তাঁরা স্পষ্ট করে বলেন নি এমন উক্তি বাড়াবাড়ি ও সুস্পষ্ট বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি বৈ নয়। আলেম-শ্রেণী থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং তাঁদের দৃষ্টিতে যা আপত্তিকর এমন বিষয় নিয়ে একলা চলো নীতিই এমন উক্তি করার দুঃসাহস যোগাতে পারে।
এ বিষয়টিতে ভিন্নমত অবলম্বনকারীর উপর আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ঘোর আপত্তি উত্থাপন করেছিলেন। আর সাহাবীগণ সকলে তাঁর সঙ্গে সহমত ব্যক্ত করেছিলেন। একমাত্র আবু হুরায়রা রা. থেকেই এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বর্ণনা রয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকেও তুলনামূলক বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনিও ঐ রাকাতকে গণ্য করতেন।
এমনি ভাবে দ্বিতীয় জবাবটিও ঠিক নয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরং তাঁকে দৌড়ে আসতে নিষেধ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, তোমরা নামাযে দৌঁড়ে এসো না। ইমাম শাফেয়ী রহ. সহ অন্যান্য ইমামগণ হাদীসটির এ অর্থই বুঝেছেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা পরে আসবে ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
আসলে কুফার ফকীহগণ যে বলেছেন, যে কোন ব্যক্তির নামায ফাতেহা ছাড়া সহীহ হয়ে যাবে, এ মতের উপর প্রচ- আপত্তিই বুখারীকে ঐ ফতোয়া দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাদের বিরোধিতায় অতি বাড়াবাড়িই তাঁকে ঐ বিচ্ছিন্ন মত ও পথ অবলম্বনে প্ররোচিত করেছে। এ ক্ষেত্রে তিনি তার উস্তাদ আলী ইবনুল মাদীনী রহ.কে অনুসরণ করেছেন। অথচ ইবনুল মাদীনী রহ. হাদীস বিশারদ ফকীহগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন হাদীসের ইলাল ও সনদ সম্পর্কে সুপ-িত ব্যক্তি।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে একাধিক সনদে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকু পেল সে রাকাতটি পেল। হযরত মুআয রা. ও আব্দুর রহমান ইবনে আযহার রা. প্রমুখ থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। তিরমিযী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেছি। (৪/২৩২, ২৩৩)
ইবনে রজব আরো বলেন:
وذهبت طائفة إلى أنه لا يدرك الركعة بإدراك الركوع مع الإمام ، لأنه فاته مع الإمام القيام وقراءة الفاتحة ، وإلى هذا المذهب ذهب البخاري في كتاب القراءة خلف الإمام ، وذكر فيه عن شيخه علي بن المديني أن الذين قالوا بإدراك الركعة بإدراك الركوع من الصحابة كانوا ممن لا يوجب القراءة خلف الإمام ، فأما من رأى وجوب القراءة خلف الإمام ، فإنه قال : لا يدرك الركعة بذلك ، كأبي هريرة ، فإنه قال : للمأموم : اقرأ بها في نفسك . وقال : لا تدرك الركعة بإدراك الركوع .(وفي نسختنا : لا تعتد به حتى تدرك الإمام قائما) وخرَّج البخاري في كتاب القراءة من طريق ابن إسحاق أخبرني الأعرج ، قال : سمعت أبا هريرة يقول : لا يجزئك إلا أن تدرك الإمام قائماً قبل أن تركع
ثم ذكر أنه رأى ابن المديني يحتج بحديث ابن إسحاق ، ثم أخذ يضعِّف عبد الرحمن بن إسحاق المديني الذي روى عن المقبري ، عن أبي هريرة خلاف رواية ابن إسحاق ، ووهَّن أمره جداً
وقد وافقه على قوله هذا ، وأن من أدرك الركوع لا يدرك به الركعة ، قليل من المتأخرين من أهل الحديث ، منهم : ابن خزيمة وغيره من الظاهرية وغيرهم وصَّنف فيه أبو بكر الصبغي من أصحاب ابن خزيمة مُصنفاً
وهذا شذوذٌ عن أهل العلم ومخالفةٌ لجماعتهم
ثم قال ابن رجب بعد أن أورد روايات الجمهور: والمروي عن أبي هريرة قد اختلف عنه فيه ، وليس عبد الرحمن بن إسحاق المديني عند العلماء بدون ابن إسحاق ، بل الأمر بالعكس ؛ ولهذا ضَّعف ابن عبد البر وغيره رواية ابن إسحاق ، ولم يثبتوها ، وجعلوا رواية عبد الرحمن مقدمة على روايته
قال ابن عبد البر في المروي عن أبي هريرة : في إسناده نظر . قال : ولا نعلم أحداً من فقهاء الأمصار قال به . وقد روي معناه عن أشهب
وعبد الرحمن بن إسحاق هذا يقال له : عباد . وثَّقه ابن معين . وقال أحمد : صالح الحديث . وقال ابن المديني : هو عندنا صالح وسط – : نقله عنه أبو جعفر بن أبي شيبة ، وأنه قال في محمد بن إسحاق كذلك : إنه صالح وسط . وهذا تصريح منه بالتسوية بينهما
ونقل الميموني ، عن يحيى بن معين ، أنه قال في محمد بن إسحاق : ضعيف . وفي عبد الرحمن بن إسحاق الذي يروي عن الزهري : ليس به بأس . فصرح بتقديمه على ابن إسحاق
وقال النسائي : ليس به بأس . وقال أبو داود : محمد بن إسحاق قدري معتزلي ، وعبد الرحمن بن إسحاق قدري ، إلا أنه ثقة
وهذا تصريح من أبي داود بتقديمه على ابن إسحاق، فإنه وثقه دون ابن إسحاق ، ولهذا خرَّج مسلم في صحيحه لعبد الرحمن بن إسحاق ولم يخّرج لمحمد بن إسحاق إلا متابعة
وأيضاً ؛ فأبو هريرة لم يقل : إن من أدرك الركوع فاتته الركعة ؛ لأنه لم يقرأ بفاتحة الكتاب كما يقوله هؤلاء ، إنما قال : لا يجزئك إلا أن تدرك الإمام قائماً قبل أن يركع ، فعلل بفوات لحوق القيام مع الإمام
وهذا يقتضي أنه لوكبر قبل أن يركع الإمام ، ولم يتمكن من القراءة فركع معه كان مدركاً للركعة ، وهذا لا يقوله هؤلاء ، فتبين أن قول هؤلاء محدث لا سلف لهم به . وقد روي عن أبي سعيد وعائشة : لا يركع أحدكم حتى يقرأ بأم القرآن
هذا – إن صح – محمول على من قدر على ذلك وتمكن منه
অর্থাৎ কারো কারো মতে ইমামের সঙ্গে রুকু পেলেও রাকাত পাওয়া হবে না। কারণ ইমামের সঙ্গে তার কেয়াম (দাঁড়ানো) ও ফাতেহা পাঠ ছুটে গেছে। বুখারী রহ. তার আল কিরাআতু খালফাল ইমাম গ্রন্থে এ মতটিই অবলম্বন করেছেন। উক্ত গ্রন্থে তিনি তাঁর উস্তাদ আলী ইবনুল মাদীনী রহ. এর এই বক্তব্য উল্লেখ করেছেন যে, সাহাবীগণের মধ্যে যারা ইমামের পেছনে ফাতেহা পাঠ আবশ্যক মনে করতেন না, তারাই এই ফতোয়া দিতেন যে, রুকু পেলেই রাকাত পাওয়া হবে। পক্ষান্তরে যারা ফাতেহা পাঠ আবশ্যক মনে করতেন তারা বলেছেন, শুধু রুকু পেলেই রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে না। যেমন আবু হুরায়রা রা., তিনি মুকতাদিকে বলেছেন, তুমি চুপে চুপে পাঠ করো। অপরদিকে তিনি বলেছেন, রুকু পাওয়া গেলেই রাকাত পাওয়া ধর্তব্য হবে না। বুখারী রহ. উক্ত গ্রন্থে ইবনে ইসহাকের সূত্রে আ’রাজ রহ. থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা রা. কে বলতে শুনেছি যে, রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দাঁড়ানো অবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত ইমামকে না পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার রাকাত পাওয়া বিবেচিত হবে না।
এরপর বুখারী রহ. উল্লেখ করেছেন, তিনি আলী ইবনুল মাদীনী রহ.কে দেখেছেন, তিনি ইবনে ইসহাকের হাদীসকে প্রামাণ্য জ্ঞান করতেন। এর পর তিনি (বুখারী রহ.) আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক আল মাদীনীকে দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। এই আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাকই (সাঈদ) আল-মাকবুরীর সূত্রে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে ইবনে ইসহাকের বিপরীত বর্ণনা পেশ করেছেন। এই আব্দুর রহমানকে তিনি চরম যঈফ আখ্যা দিয়েছেন।
রুকু পেলে রাকাত পাওয়া হয় না: বুখারী রহ.এর এই মতের সঙ্গে একমত হয়েছেন পরবর্তীকালের স্বল্প সংখ্যক হাদীসবিদ। তাদের মধ্যে ইবনে খুযায়মাসহ আসহাবে জাওয়াহের আছেন। ইবনে খুযায়মার একজন শিষ্য আবু বকর আস সিবগী এ বিষয়ে একটি গ্রন্থও রচনা করেছেন।
এটা আলেম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মত এবং তাদের বিরোধী পথ বৈ নয়।
অতঃপর ইবনে রজব রহ. রুকু পেলে রাকাত পাওয়ার হাদীসগুলো উল্লেখপূর্বক বলেন,
এ বিষয়ে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে দু’রকম বর্ণনা এসেছে। আর আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক মাদীনী রহ. মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের তুলনায় নি¤œমানের নন। বরং ব্যাপার এর বিপরীত। এ কারণেই ইবনে আব্দুল বার প্রমুখ ইবনে ইসহাকের বর্ণনাকেই বরং দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আব্দুর রহমানের বর্ণনাকে অগ্রগণ্য আখ্যা দিয়েছেন।
ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. থেকে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক যে বর্ণনাটি পেশ করেছেন, তাতে আপত্তি রয়েছে। বিভিন্ন শহরের আলেম ওলামার কেউই ঐ ফতোয়া গ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আশহাব রহ. থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত আছে। আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাককে ইবনে মাঈন বিশ্বস্ত আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম আহমদ রহ. বলেছেন, তিনি صالح الحديث সঠিক হাদীস বর্ণনাকারী।
আলী ইবনুল মাদীনী রহ. মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ও আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক দু’জন সম্পর্কেই বলেছেন,صالح وسط মধ্যম মানের বর্ণনাকারী ছিলেন। এতে বোঝা যায়, দু’জনই তার দৃষ্টিতে সমমানের ছিলেন।
মায়মূনীর বর্ণনামতে, ইয়াহয়া ইবনে মাঈন রহ. মুহাম্মদ ইবনে ইসহাককে যয়ীফ বা দুর্বল বলেছেন, আর আব্দুর রহমান সম্পর্কে বলেছেন, ليس به بأس তার মধ্যে অসুবিধার কিছু নেই। এতে বোঝা যায়, আব্দুর রহমান তার দৃষ্টিতে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের তুলনায় ভাল ছিলেন। ইমাম নাসায়ীও অনুরূপ (ليس به بأس) মন্তব্য করেছেন। ইমাম আবু দাউদ বলেছেন, ইবনে ইসহাক কাদরীয়া ও মুতাযেলা দলভুক্ত ছিলেন। আর আব্দুর রহমান সম্পর্কে বলেছেন, কাদরীয়া হলেও তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন। এতে বোঝা যায়, আব্দুর রহমান তাঁর দৃষ্টিতে অগ্রগণ্য ছিলেন, কারণ তিনি আব্দুর রহমানকে বিশ্বস্ত বলেছেন। কিন্তু মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের ব্যাপারে তা বলেন নি। এসব কারণেই ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে আব্দুর রহমানের বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। কিন্তু মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনা শুধু মুতাবায়া বা অন্যদের বর্ণনার সমর্থকরূপে উদ্ধৃত করেছেন।
তাছাড়া আবু হুরায়রা রা. তো এ বর্ণনায় একথা বলেননি, যে ব্যক্তি রুকু পেল সে যেহেতু ফাতেহা পড়তে পারে নি, তাই তার রাকাত পাওয়া ধর্তব্য হবে না, যেমনটি এরা বলে থাকেন। তিনি বরং বলেছেন: ইমাম রুকু করার পূর্বে দাঁড়ানো থাকাবস্থায় যতক্ষণ তুমি তাকে ধরতে না পারবে ততক্ষণ তোমার রাকাত পাওয়া হবে না। বোঝা গেল, দাঁড়ানো অবস্থায় না পাওয়াকে তিনি রাকাত না পাওয়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এ কথার দাবি হলো, মুকতাদি যদি ইমামের রুকুতে যাওয়ার পূর্বেই তাকবির বলে, কিন্তু ফাতেহা পড়ার সুযোগ না পায় তবে ইমামের সঙ্গে রুকু করলে সে উক্ত রাকাত পেয়ে যাবে। অথচ এরা একথা বলেন না। সুতরাং পরিস্কার হয়ে গেল যে, এদের কথা নব-উদ্ভাবিত। সালাফ বা পূর্বসূরিদের কেউই এ ধরনের কথা বলেন নি। আবু সাঈদ রা.ও আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, ফাতেহা না পড়ে রুকু করবে না। এ কথা যদি সহীহ হয় তবে তা তাদের দৃষ্টিতে ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যে ফাতেহা পড়ার সুযোগ পেল। (৪/২৩০-২৩২)
অধম লেখকের আরজ এই যে, এ দুটি হাদীস সহীহ নয়। কারণ দুটির সনদেই আব্দুল্লাহ ইবনে সালেহ কাতিবুল লায়ছ রয়েছেন। তিনি বিতর্কিত রাবী। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মিযানুল ইতেদাল। তাছাড়া এ দুটিতে মুকতাদির কথা স্পষ্ট বলা হয় নি। সূরা ফাতেহার গুরুত্ব বিবেচনা করে হয়তো তারা একাকী নামায আদায়কারীকে বলেছেন, ফাতেহা না পড়ে রুকু করো না।
আরেকটি কথা, ইবনে রজব রহ. এখানে ইবনে খুযায়মা রহ.কে ইমাম বুখারীর মতের সমর্থক আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তা সঠিক বলে মনে হয় না। কারণ ইবনে খুযায়মা রহ. তাঁর সহীহ গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা রা.এর এ হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, যে ব্যক্তি ইমাম সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বে নামাযের কোন রুকু পেল সে ঐ রাকাত পেয়ে গেল। (১৫৯৫) হাদীসটির উপর তিনি এই শিরোনাম দিয়েছেন:
باب ذكر الوقت الذي يكون فيه المأموم مدركا للركعة إذا ركع إمامه قبل
অর্থাৎ অনুচ্ছেদ: ইমাম যদি আগে রুকুতে চলে যান, তবে মুক্তাদি কখন রুকু করলে রাকাতটি পেয়েছে বলে গণ্য হবে সেই সময়ের বর্ণনা।
এর পর তিনি আরেকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা সেজদায় থাকাবস্থায় যদি তোমরা আস, তবে সেজদায় অংশগ্রহণ করো, তবে সেটাকে হিসাবে ধরো না। কারণ যে ব্যক্তি রুকু পেল সে রাকাত পেল। (১৬২২) এই হাদীসটির উপর তিনি শিরোনাম দিয়েছেন:باب إدراك المأموم الإمام ساجدا و الأمر بالاقتداء به في السجود وأن لا يعتد به إذ المدرك للسجدة إنما يكون بإدراك الركوع قبلهاঅর্থাৎ অনুচ্ছেদ: মুক্তাদি কর্তৃক ইমামকে সেজদা অবস্থায় পাওয়া এবং সেজদার সময় তার প্রতি ইমামকে অনুসরণের ও সেজদাকে হিসাবে গণ্য না করার নির্দেশ, কারণ সেজদা তখনই ধর্তব্য হবে, যখন ইতিপূর্বে রুকু ধরা সম্ভব হবে।