এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয় :
১. বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ তাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন। তার মানে আবূ বকর ইবনে আইয়াশকে কেউ বিশ্বস্ত বলেন নি। অথচ এটা চরম ধোঁকা। আবু বকর থেকে ইমাম বুখারী রহ. তার সহীহ বুখারীতে একাধিক হাদীস প্রমাণস্বরূপ গ্রহণ করেছেন। আবূ বকরের প্রশংসা করেছেন ছাওরী, ইবনুল মুবারক ও ইবনে মাহদী। এছাড়া আহমদ, ইবনে মাঈন, ইবনে সা‘দ, ইজলী, ইবনে হিব্বান, যাহাবী ও ইবনে হাজার প্রমুখ তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইবনে আদী তার সকল হাদীস যাচাই-বাছাইয়ের পর মন্তব্য করেছেন,
وهو فى روايته عن كل من روى عنه لا بأس به وذلك انى لم اجد له حديثا منكرا اذا روى عنه ثقة.
অর্থাৎ সকল উস্তাদ থেকেই তার বর্ণনা সঠিক আছে। কারণ বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা তার সূত্রে যেসকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তাতে আমি কোন আপত্তিকর বর্ণনা পাই নি। এছাড়া ইমাম তিরমিযী তার একাধিক হাদীসকে সহীহ বলেছেন এবং আলবানী সাহেবও টীকায় সেগুলিকে সহীহ বলেছেন সেগুলোর নম্বর যথাক্রমে ২৫৮, ৪৫৩, ৪৫৬, ৫৯৩, ১২০৮, ৩৪৮২।
২. বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন: এটা লেখক কোথায় পেলেন তাও বলেন নি। শুধু টীকায় বরাত দিয়েছেন বায়হাকীর মা‘রিফাতুস সুনানের। বায়হাকীর উক্ত গ্রন্থে এমন কোন কথা নেই। আবার আরবী যে কথাটি উল্লেখ করেছেন (যার অর্থ হলো- আবূ বকরের এ হাদীসটি সম্পর্কে বুখারী ও অন্যান্য হাফেজে হাদীস আপত্তি তুলেছেন) তাতেও আবূ বকরকে ত্রুটিপূর্ণ বলা হয় নি। সমালোচনা করা হয়েছে তার এ বর্ণনাটির। সেটাও করেছেন বুখারী ও বায়হাকীসহ কেউ কেউ। ঢালাওভাবে বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিস বলা প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।
অবশ্য আবূ বকর ইবনে আইয়াশ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন, শেষ জীবনে তার স্মৃতিতে পরিবর্তন এসেছিল। কিন্তু এ ধরনের রাবীদের ব্যাপারে তো মুহাদ্দিসগনের সিদ্ধান্ত হলো: যারা তাদের প্রবীন ছাত্র এবং স্মৃতি পরিবর্তনের পূর্বে যারা তার থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন তাদের হাদীস সঠিক ও সহীহ বলে বিবেচিত হবে। আবূ বকরের প্রবীন ছাত্র হলেন আহমাদ ইবনে ইউনুস। এ কারণে ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে আহমাদ ইবনে ইউনুসের সুত্রে আবূ বকরের হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। সেগুলোর নম্বর যথাক্রমে ১৭২২, ১৯৫৮, ৪৮৮৮, ৬৪৪৬, ৬৬৬৬। আমাদের আলোচ্য হাদীসটিও তাহাবী শরীফে এই সূত্রেই উদ্ধৃত হয়েছে।
এরপর লেখক বলেছেন, কেউ কেউ উক্ত বর্ণনাগুলোর আলোকে বলতে চেয়েছেন, ইবনু উমর (রা.) রাসূল (ছাঃ) এর মৃত্যুর পর রাফউল ইয়াদায়েন করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু উক্ত দাবি সঠিক নয়। কারণ অনেক ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, ইবনু উমর (রা.) আজীবন রাফউল ইয়াদায়েন করে ছালাত আদায় করেছেন। সরাসরি বুখারী ও মুসলিমে সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন- নাফে (রাঃ) বলেন, ইবনু উমর (রা.) যখন ছালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর দিতেন এবং দ্ই হাত উত্তোলন করতেন। যখন রুকু করতেন তখনও দুই হাত উঠাতেন, যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন এবং যখন দুই রাকাতের পর দাঁড়াতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন। ইবনু উমর (রাঃ) এই বিষয়টিকে রাসূল (ছাঃ) এর দিকে সম্বোধন করেছেন।
১. ইবনু উমর আজীবন রফউল ইয়াদায়ন করতেন তার দলীল হিসাবে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে তাতে উক্ত দাবী প্রমাণিত হয় না। যদি “كان” শব্দটির কারণে এমনটি বুঝে থাকেন তাহলে তার জানা থাকা দরকার, হাদীসে এ শব্দটি অনেক ক্ষেত্রে সাময়িকতা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
২. লেখক শেষ বাক্যে যে বলেছেন, ইবনু উমর (রা.) এই বিষয়টিকে রাসূল (ছাঃ) এর দিকে সম্বোধন করেছেন। সহীহ তরজমা হবে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সম্বন্ধ করেছেন।
এরপর লেখক ইবনে উমর রা. আজীবনের আমলের দলিল হিসাবে ইবনে উমর (রা.) কর্তৃক যারা রফয়ে ইয়াদাইন করে না তাদেরকে কংকর ছুড়ে মারার হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
লেখক এখানে পাথর ছুড়ে মারার অর্থ করেছেন যা ঠিক নয়। পাথর ছুড়ে মারলে মুসল্লির শরীর ক্ষতবিক্ষত হবে। এ হাদীসটি নাফে রহ. থেকে একমাত্র যায়দ ইবনে ওয়াকিদ বর্ণনা করেছেন। তিনি অবশ্য বিশ্বস্ত। তার বাড়ি ছিল দামেস্কে। মদীনায় নাফে’র অনেক ছাত্র ছিল, তাদের কারোর বর্ণনায় এটি আসে নি। এতেই অনুমিত হয়, হয়তো কদাচিৎ তিনি এমনটি করেছেন। বেশী বেশী করলে অন্য অনেকে তা বর্ণনা করতেন।
কিন্তু তাঁরও জানা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা এমনটি করতেন না। অনেক সময় ছেড়েও দিয়েছেন। আর সেটাই তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলরূপে বর্ণনা করতেন এবং নিজেও আমল করে প্রকাশ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত জায়গায় রফা করতেন, সে সম্পর্কে অন্য সাহাবীগণের বর্ণনা আমরা তুলে ধরেছি। স্বয়ং ইবনে ইমর রা. থেকেও সাত রকম আমলের হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
১. শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময়। এ হাদীস বায়হাকীর খিলাফিয়াত গ্রন্থের বরাতে একটু পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এরই প্রমাণ হলো ইবনে উমর রা. এর শীর্ষ ছাত্র মুজাহিদ রহ. এর হাদীসটি। যদিও ইবনুল কায়্যিম রহ. বাদায়েউল ফাওয়াইদ গ্রন্থে (৩/৮৮) মুজাহিদের বর্ণনাটি সম্পর্কে ইমাম আহমদের এই মন্তব্য উল্লেখ করেছেন.
هذا خطأ نافع وسالم اعلم بحديث ابن عمر وان كان مجاهد اقدم فنافع اعلم منه.
অর্থাৎ এটা ভুল। নাফি‘ও সালিম রহ. ইবনে উমর রা. এর হাদীস সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখতেন। যদিও মুজাহিদ তাদের তুলনায় প্রবীন। কিন্তু নাফি‘ অধিক জ্ঞাত।
কিন্তু যদি সমন্বয়ের পথ ধরে এভাবে বলা যায় যে, ইবনে উমর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও বিভিন্নভাবে আমল করতে দেখেছেন, তাই নিজেও বিভিন্নরূপে আমল করতেন, তাহলে মুজাহিদের চাক্ষুস দেখাকে ভুল বলার প্রয়োজন হয় না। মুজাহিদ শুধু একা নন। মুয়াত্তা মুহাম্মদে ভিন্ন সনদেও এটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মদ বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবনে আবান ইবনে সালিহ থেকে, তিনি আব্দুল আযীয ইবনে হাকীম রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
رأيت ابن عمر يرفع يديه حذاء اذنيه فى اول تكبيرة افتتاح الصلاة ولم يرفعهما فيما سوى ذلك
আমি ইবনে উমর রা. কে নামাযের শুরুতে প্রথম তাকবীরের সময় কান বরাবর হাত তুলতে দেখেছি । এরপর আর কোথাও তিনি হাত তোলেন নি।
এ বর্ণনার একজন রাবী মুহাম্মদ ইবনে আবানকে মুহাদ্দিসগণ যঈফ আখ্যা দিয়েছেন। তবে ইমাম আহমাদ বলেছেন, তিনি মিথ্যা বলতেন না। আবূ হাতেম রাযী বলেছেন, তিনি মজবুত নন। তার হাদীস লেখা যাবে তবে প্রমান স্বরূপ পেশ করা যাবে না । ইবনে আদী আল কামিলে তার কিছু বর্ণনা তুলে ধরে বলেছেন,
وله غير ماذكرت من الحديث وفى بعض ما يرويه نكرة لا يتابع عليه ومع ضعفه يكتب حديثه
অর্থাৎ আমি যা উল্লেখ করলাম, এ ছাড়াও তার অনেক হাদীস রয়েছে। তার বর্ণিত কিছু কিছু হাদীস সম্পর্কে সামান্য আপত্তি রয়েছে. তবে দুর্বলতা সত্ত্বেও তার হাদীস লিপিবদ্ধ করা যাবে।
এ ধরনের দুর্বল রাবীর বর্ণনা অন্য আরেকটি বর্ণনার সমর্থকরূপে গ্রহণ করা মুহাদ্দিসগনের স্বীকৃত নীতি। দারাকুতনী রহ. দুই জায়গায় তার বর্ণনাকে সমর্থকরূপে উদ্ধৃত করেছেন। এর একটি সামনে হযরত আলী রা. এর হাদীসে আসছে। অপরটি সুনানে দারাকুতনীতে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর তাশাহহুদ সংক্রান্ত হাদীসের আলোচনায় উদ্ধৃত হয়েছে। (১/৩৫২)
সুতরাং পূর্বের মজবুত ও সহীহ সনদের হাদীসটির সঙ্গে এ বর্ণনাটিকে মেলালে ইবনে উমর রা. এর আমলটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তাই এটাকে ভুল বলার সুযোগ নেই।
২. দ্বিতীয় হাদীসটি ইমাম মালেক রাহ. তার মুয়াত্তা গ্রন্থে সরাসরি সালিমের সূত্রে তদীয় পিতা ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। এতে মাত্র দু’বার রফা করার কথা এসেছে। হাদীসটি এইঃ
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان اذا افتتح الصلاة رفع يديه حذو منكبيه واذا رفع رأسه من الركوع رفعهما كذلك ايضا وقال : سمع الله لمن حمده ربنا لك الحمد
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত হাত উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকু থেকে উঠতেন তখনো অনুরূপভাবে হাত তুলতেন এবং বলতেন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ, রব্বানা লাকাল হামদ। (মুয়াত্তা মালেক, ১৬; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২৫১৭)
আমরা হারামাইন শরীফাইনে অনেককে এভাবে আমল করতে দেখেছি।
৩. তৃতীয় হাদীসটিতে তিন জায়গায় রফার কথা এসেছে। প্রথম তাকবীরের সময়, রুকুতে যাওয়ার সময় ও রুকু থেকে ওঠার সময়। এটা প্রসিদ্ধ সব হাদীসের কিতাবেই উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ এটাকেই সুন্নত বলেছেন।
৪. চতুর্থ হাদীসটিতে চার জায়গায় রফার কথা এসেছে। উপরের হাদীসের তিন জায়গা, আর চতুর্থ জায়গা হলো দুই রাকাত পড়ে ওঠার পর। এটা তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযের ক্ষেত্রে। এ হাদীসটি নাফি’ রহ. ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে এটি সম্পর্কিত করেছেন। (বুখারী ৭৩৯, আব্দুর রাযযাক, ৭৪৩) এছাড়া মুহারিব ইবনে দিছার (নাসাঈ কুবরা, ১১০৬) ও সালিম রহ. (মুশকিলুল আছার ৫৮৩০) ইবনে উমর রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৫. পঞ্চম হাদীসটি থেকে পাওয়া যায়, সেজদায় যাওয়ার সময়ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফা করতেন। সে হিসাবে পাঁচ জায়গায় রফা করা প্রমাণিত হয়। এ হাদীসটি ইবনে উমর থেকে তাবারানী তার আওসাত গ্রন্থে এই শব্দে উল্লেখ করেছেন, وعند التكبير حين يهوى ساجدا অর্থাৎ যখন তিনি সিজদায় যাওয়ার জন্য তাকবীর দিতেন, তখনও রফা করতেন। হায়ছামী মাজমাউয যাওয়াইদে এটি উল্লেখ করে বলেছেন, واسناده صحيح এর সনদ সহীহ। (২/১০২) তাছাড়া ইমাম বুখারী রহ. তার জুযউ রাফইল ইয়াদাইনে নাফি’র সূত্রে ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
عن النبى صلى لله عليه وسلم انه كان يرفع يديه اذا ركع واذا سجد.
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু করতেন ও সেজদা করতেন তখন রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। (পৃ.২৬)
৬. ছয় নম্বর হাদীসটি বর্ণনা করেেছন আব্দুল আ‘লা রাহ. উবায়দুল্লাহ থেকে তিনি নাফি’র সূত্রে ইবনে উমর রা. থেকে,
انه كان يرفع يديه فى كل خفض ورفع وركوع وسجود وقيام وقعود وبين السجدتين ويزعم ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يفعل ذلك
অর্থাৎ ইবনে উমর (নামাযে) প্রত্যেক ওঠা-নামার সময়, রুকু ও সেজদার সময়, দাঁড়ানোর সময় ও দুই সেজদার মাঝে বসার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করতেন এবং বলতেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এমনটি করতেন। তাহাবী, মুশকিলুল আছার (৫৮৩১)
উল্লেখ্য এ হাদীসটির সনদ সহীহ। শুআয়ব আরনাউত বলেছেন, رجاله ثقات رجال الشيخين এর রাবীগন বিশ্বস্ত , বুখারী ও মুসলিম শরীফের রাবী। তবে এরপর শুআয়ব যে বলেছেনلكن هذه الرواية شاذة كما سيذكر المؤلف তবে এটি শায বা বিচ্ছিন্ন বর্ণনা, যেমনটি একটু পরেই গ্রন্থকার বলেছেন। এটি আসলে শুআয়বের ভুল বুঝাবুঝি। ইমাম তাহাবী আসলে বলেছেন وكان هذا الحديث من رواية نافع شادّا لما رواه عبيد الله অর্থাৎ নাফি’র এ বর্ণনাটি উবায়দুল্লাহর পূর্বোক্ত বর্ণনাকে আরো শক্তিশালী করে। এই شادا শব্দটি (দাল অক্ষরে) শুআয়বের সম্পাদনায় মুদ্রিত কপিতে”شاذا” (যাল অক্ষরে) ছাপা হয়েছে। পূর্বাপর বক্তব্য চিন্তা করলে এ ভুলটি পরিস্কার ধরা পড়ে।
ইবনে উমর রা. এর এই শেষোক্ত বর্ণনাটিকে ইবনে হাযম জাহিরীও সহীহ বলেছেন। আলবানী সাহেবও এসব জায়গায় রফা করাকে সুন্নাত সাব্যস্ত করেছেন এবং এই বর্ণনাকে সহীহও আখ্যা দিয়েছেন। (দ্র. সিফাতুস সালাহ, পৃ. ১৫১, ১৫৪) সুতরাং যারা তিন বা চার জায়গায় রফা করাকে সুন্নত বলেন, এসব সহীহ হাদীস তাদের বিপক্ষে যায় কি না সেটা তাদেরকে ভাবতেই হবে।
এ আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, ইবনে উমর রা. যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন স্থানে রফা করার হাদীস বর্ণনা করেছেন। নিজে আমলও করেছেন তদনুরূপ। তাই একবার রফা করার হাদীসকে ফেলে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বুখারী শরীফসহ অনেক হাদীস গ্রন্থে ইবনে উমর রা.এর উক্তি বর্ণিত হয়েছে যে,ولا يرفع بين السجدتين অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুুই সেজদার মাঝে রফা করতেন না। কিন্তু এত জোর দিয়ে বলা কথাও দুর্বল বলে প্রমাণিত হয়ে গেছে। কারণ ইবনে উমর নিজে ও তার ছাত্র নাফি’ রহ. দুই সেজদার মাঝে রফা করতেন। একইভাবে আনাস রা., ইবনে সীরীন, তাউস, হাসান বসরী ও আইয়ূব সাখতিয়ানী প্রমুখও দুই সেজদার মাঝে রফা করতেন বলে মুসান্নাফে ইবনে আবূ শায়বায় সহীহ সনদে উদ্ধৃত হয়েছে। আছরম স্বীয় উস্তাদ ইমাম আহমাদেরও অনুরূপ আমলের উল্লেখ করেছেন। আলবানী সাহেবও এসবের বিশুদ্ধতাকে মেনে নিয়েছেন। তদুপরি মালেক ইবনুল হুওয়ায়রিছ রা. এর হাদীস তো নাসাঈ শরীফে সহীহ সনদে এসেছে, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দুই সেজদার মাঝে রফা করতেন সেকথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং একবার রফা করার হাদীসগুলোর উপর যারা আমল করে তাদের উপর এত ক্ষিপ্ত হওয়ার কী আছে।
এরপর লেখক ৮ নং থেকে ১১ নং পর্যন্ত কিছু জাল হাদীস উল্লেখ করেছেন, আমাদের জানামতে কোন হানাফী আলেম এগুলো দলিল হিসাবে পেশ করে না । লেখক হয়ত হানাফীদের উপর আরোপিত জাল হাদীসের ফিরিস্তি দীর্ঘ করার মতলবে এগুলো উল্লেখ করে দিয়েছেন। কিন্তু টোকাইয়ের মতো রাস্তা-ঘাট থেকে এমন জাল হাদীস একত্রিত করলে আমরাও তাদের অনেক জাল হাদীস জমা করতে পারবো। তারা চাইলে ভবিষ্যতে এগুলো জমা করার ইচ্ছা রইলো।
১২ নম্বরে তিনি ইমাম আবূ হানীফার মুসনাদ এর বরাত দিয়ে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি ইমাম আবূ হানীফা বর্ণনা করেছেন হাম্মাদের সূত্রে ইবরাহীম নাখাঈ থেকে, তিনি আসওয়াদের সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সম্পর্কে বলেছেন, তিনি প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন। অতঃপর আর হাত তুলতেন না। তিনি এ আমলটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলেও উল্লেখ করতেন।
এরপর লেখক মন্তব্য লিখেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) এর বর্ণনা সম্পর্কে আমরা পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করেছি। সুতরাং এই বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া এই বর্ণনা অনেক ত্রুটিপূর্ণ। কারণ ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) এর নামে যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে, মুহাদ্দিসগন সেগুলোর ব্যাপারে অনেক আপত্তি তুলেছেন।
এ সম্পর্কে আমরাও পিছনে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং প্রমাণ করেছি যে, হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। এ বর্ণনাটির দ্বারা তা আরো অধিক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।
ইমাম আবূ হানীফার বর্ণনাগুলির ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের যদি অনেক আপত্তি থাকে তবে সেগুলি কি? লেখক টীকায় আলবানী সাহেবের ইরওয়া গ্রন্থের বরাত দিয়েছেন। সেখানে যা আছে তার সারাংশ হলো অনেক মুহাদ্দিস ইমাম আবূ হানীফাকে বা তার হাদীসকে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু এটা তো একটি আপত্তি, অনেক আপত্তি কোথায়?
ইমাম আবূ হানীফা রহ.কে কোন কোন মুহাদ্দিস যঈফ বলেছেন? কেন বলেছেন? সে প্রসঙ্গ যেহেতু লেখক চাপা দিয়ে গেছেন, তাই সে প্রসঙ্গ নিয়ে এখানে আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। শুধু এতটুকু বলবো, যারা যঈফ বলেছেন তাদের চেয়ে ঢের বেশী সংখ্যক হাদীসের ইমাম তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।
এরপর জ্ঞাতব্য শিরোনামে ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আওযায়ীর একটি বিতর্ক (রফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে): উল্লেখ করে লেখক বলেছেন, এটা চরম মিথ্যাচার। এরপর লা-মাযহাবী আলেম উবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন যে, তিনিও বলেছেন, এটি একটি বানোয়াট গল্প ও অভিনব মিথ্যাচার।
কি আশ্চর্য! এটি একটি ঘটনা, যা মুসনাদে ইমাম আবূ হানীফায় হারিছী উল্লেখ করেছেন। এটি চরম মিথ্যাচার হলো কিভাবে? মুসনাদটির সংকলক হারিছী সম্পর্কে যাহাবী তার সিয়ার গ্রন্থে বলেছেন,
الشيخ الامام الفقيه العلامة عالم ماوراء النهر ابو محمد الاستاذ
অর্থাৎ আশ শায়খ আল ইমাম আল ফাকীহ আল আল্লামা, মা ওয়াউন নাহার এলাকার আলেম আবূ মুহাম্মদ আল উসতায।
তার বিশ্বস্ততা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে, তবে যাহাবী রহ. বলেছেন, وكان ابن منده يحسن القول فيه. অর্থাৎ (মুহাদ্দিস) ইবনে মানদাহ রহ. তার ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করতেন।
এ ঘটনাটি তিনি সনদ ও সূত্রসহ উল্লেখ করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে যিয়াদ থেকে। দারাকুতনী, হাকেম আবু আহমাদ প্রমুখ তাকে যঈফ আখ্যা দিয়েছেন। যাহাবী তার তারীখুল ইসলামে (নং ১২৩) ও ইবনে হাজার তার লিসানে দারাকুতনীর বরাতে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি হাদীস জাল করতেন। কিন্তু দারাকুতনীর কোন গ্রন্থে আমরা একথা পাই নি। এর সত্যতা সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। এদিকে বড় বড় মুহাদ্দিস তার হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন বা নিজেদের কিতাবে তার হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। কিন্তু তার সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য করেন নি। ইমাম তাহাবী মুশকিলুল আছার গ্রন্থে (নং ৫৮৪৬) তার হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। তাম্মাম তার ফাওয়াইদ গ্রন্থে (নং ৮০০, ৮০১, ৯৩০, ১১৩৪, ১১৯২) তার হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। আবু নুআইম ইসপাহানী তার হাদীস প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছেন তার আত তিব্বুন নাবাবী গ্রন্থে (নং ১৪৭) ও তাছবীতুল ইমামাহ ওয়া তারতীবুল খিলাফাহ গ্রন্থে (নং ৮৮)। এছাড়াও তিনি তার হিলয়াতুল আউলিয়া ও ফাযাইলুল খুলাফা আর রাশিদীন গ্রন্থদ্বয়ের একাধিক স্থানে, সিফাতুল জান্নাহ গ্রন্থে এক স্থানে ও আল মুসনাদুল মুসতাখরাজ আলা সহীহ মুসলিম গ্রন্থে (নং ৩১৩৫) তার হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। শিহাব কুযাঈ রহ.ও তার মুসনাদে (নং ৪৬) তার হাদীস প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছেন। একইভাবে বায়হাকী রহ. সুনানে কুবরা গ্রন্থে (নং ১৪৪৯২), তাঁর আল ইতিকাদ গ্রন্থে (১/৩৬৮) ও শুআবুল ঈমান গ্রন্থে (নং ৪০৪৮, ৪৬৫৬) তার হাদীস প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছেন। ইবনে আব্দুল বার রহ. তার জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী গ্রন্থে (নং ১৯৯৮) তার হাদীস প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছেন। তাবারানী রহ. তার মুজামে কাবীরে দুটি হাদীস (নং ১১৯৫২, ১৩৮৬৩) ও মুজামে সাগীরে একটি হাদীস (নং ৯৭৫) ও আওসাত গ্রন্থে বারটি হাদীস (নং ৬৮৭৫-৬৮৮৮) উদ্ধৃত করেছেন। আওসাতে তিনি বর্ণনাকারীদের বিভিন্নজন সম্পর্কে কথা বললেও কোথাও এই রাবী সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেন নি। এছাড়া হাকেম রহ. তার মুসতাদরাকে (নং ২৩১৮) ও জাওযাকানী তার আল আবাতীল ওয়াল মানাকীর ওয়াস সিহাহ ওয়াল মাশাহীর গ্রন্থে (৩৪৪) তর হাদীসকে সমর্থক ও সাক্ষী বর্ণনারূপে পেশ করেছেন। সুতরাং তার হাদীসকে জাল বা বানোয়াট বলা মুশকিল।
তার উস্তাদ সুলায়মান ইবনে দাউদ শাযাকুনী। তার বিশ্বস্ততা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে ইবনে আদী তার সম্পর্কে লিখেছেন,
وللشاذكوني حديث كثير مستقيم ، وَهو من الحفاظ المعدودين من حفاظ البصرة ، وَهو أحد من يضم إلى يَحْيى وأحمد وعلي وأنكر ما رأيت هذه الأحاديث التي ذكرتها بعضها مناكير وبعضها سرقة وما أشبه صورة أمره بما قال عبدان إنه ذهبت كتبه فكان يحدث حفظا فيغلظ وإنما أتى من هناك يشتبه عليه فلجرأته واقتداره على الحفظ يمر على الحديث لا أنه يتعمده
অর্থাৎ শাযাকুনীর অনেক সঠিক বর্ণনা রয়েছে। তিনি বসরায় হাদীসের হাফেজদের একজন। তাকে ইয়াহয়া ইবনে মাঈন, আহমদ ইবনে হাম্বল ও আলী ইবনুল মাদীনীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। তার সবচেয়ে আপত্তিকর বর্ণনাসমূহ এগুলোই যা আমি তুলে ধরলাম। এর মধ্যে কিছু আছে আপত্তিকর, আর কিছু আছে অন্যদের হাদীস নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া। তার অবস্থার সবচেয়ে সুন্দর বিবরণ দিয়েছেন আবদান রহ. যে, তার কিতাব বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে স্মৃতির উপর নির্ভর করে তিনি হাদীস বর্ণনা করতেন, আর এতেই তার ভুল হতো। এভাবে কোন হাদীস নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলেও তিনি তার দুঃসাহসিকতা ও স্মৃতিশক্তির জোরে সেটি বর্ণনা করেই যেতেন। তিনি যে মিথ্যা বলতেন তা নয়।
আর যাহাবী রহ. সিয়ার গ্রন্থে (১৭৮৮) বলেছেন, ومع ضعفه لم يكد يوجد له حديث ساقط بخلاف ابن حميد فإنه ذو مناكير
অর্থাৎ তিনি দুর্বল হলেও তার ফেলে দেওয়ার মতো কোন হাদীস পাওয়া যায় নি বললেই চলে। পক্ষান্তরে (মুহাম্মদ) ইবনে হুমায়দ, তার অনেক আপত্তিকর বর্ণনা রয়েছে।
এই শাযাকুনী ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না রহ. থেকে। তিনি তো প্রসিদ্ধ ও বিশ্বস্ত। সকলেরই সেটা জানা। সুতরাং ঘটনাটিকে খুব বেশি হলে যঈফ বলা যেতে পারে। লেখক কেন চরম মিথ্যাচার বলে মনের খেদ ঝাড়লেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তাছাড়া বর্ণিত ঘটনাটি ইতিহাস সংক্রান্ত একটি বিষয়। আর ইতিহাসের ক্ষেত্রে হাদীসবিদগণ কড়াকড়ি না করে ছাড় দিয়েছেন। (দ্র. হাকেম, আল মুসতাদরাক, হা. ১৮০১) সুতরাং হাদীসের রাবীদের ক্ষেত্রে অবলম্বিত কড়াকড়ি এখানে কাম্য নয়।
১৩ নম্বরে লেখক হযরত আলী রা. এর আমল সম্পর্কে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাদীসটির সারমর্ম হলো তিনি প্রথম তাকবীরের সময় শুধু হাত তুলতেন। পরে আর তুলতেন না।
এরপর লেখক মন্তব্য করেছেন, বর্ণনাটি নিতান্তই দুর্বল। মুহাদ্দিস উছমান দারেমী বলেন, আলী রা.এর নামে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বায়হাকী বলেন, আলী সম্পর্কে এই ধারণা সঠিক নয় যে, তিনি রাসূল সা. এর কর্মের উপর নিজের কর্ম প্রাধান্য দিয়েছেন। বরং এর রাবী আবু বকর নাহশালীই দুর্বল। কারণ সে এমন রাবী নয় যে, যার দ্বারা দলিল গ্রহণ করা যায় এবং কোন সুন্নাত সাব্যস্ত হয়। ইমাম শাফেঈ রহ. বলেন, আলী, ইবনে মাসউদ এবং তাদের থেকে যারা হাদীস বর্ণনা করেছেন, তারা ছালাতের শুরুতে ছাড়া রাফউল ইয়াদায়ন করতেন না মর্মে যে কথা বর্ণিত হয়েছে তা সঠিক নয়।
এ হলো লেখকের অন্ধ অনুকরণের আরেক দৃষ্টান্ত। এ হাদীসটির বর্ণনাকারী সকলেই মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে বিশ্বস্ত। আবু বকর নাহশালীকেও প্রায় সকল মুহাদ্দিস বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম মুসলিম তার হাদীস প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছেন। আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী বলেছেন,من ثقات مشيخة الكوفة কুফার বিশ্বস্ত শায়েখদের একজন। ইবনে মাঈন, আহমদ, আবু দাউদ, ইজলী, ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান ও দারাকুতনী সকলেই তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইবনে হিব্বান মাজরুহীন গ্রন্থে তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করলে যাহাবী রহ. তার তারীখুল ইসলাম গ্রন্থে বলেছেন, دع عنك الخطابة فالرجل حجة قد وثقه إماما الفن واحتج به مسلم অর্থাৎ আপনার লেকচার ছাড়–ন, এই রাবী প্রমাণযোগ্য, তাকে শাস্ত্রের দুই ইমাম (ইবনে মাঈন ও আহমদ) বিশ্বস্ত বলেছেন, এবং ইমাম মুসলিম তার হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। (নং ৪৬১) কাশিফ গ্রন্থেও যাহাবী তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। আলবানী সাহেব বহু জায়গায় তার হাদীসকে সহীহ বলেছেন। ইরওয়া গ্রন্থে (হাদীস ১৬৩৭) বলেছেন, নাহশালী বিশ্বস্ত, মুসলিমের রাবী।
লেখক বায়হাকীর বরাতে তাকে যে দুর্বল বলেছেন সেটা আসলে বায়হাকীর নয়। উছমান দারিমীরই বক্তব্য। বায়হাকী তার সুনানে কুবরায় নাহশালীর একাধিক হাদীস সম্পর্কে বলেছেন, ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন। সুতরাং বায়হাকী নাহশালীকে দুর্বল বলতে পারেন না।
আরেকটি কথা, নাহশালী থেকে এ হাদীস তার এক ছাত্র আব্দুর রহীম ইবনে সুলায়মান মারফূরূপে অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে সম্পর্কিত করে বর্ণনা করেছেন। তার উপর মন্তব্য করে দারাকুতনী রহ. তার ইলাল গ্রন্থে (নং ৪৫৭) লিখেছেন,
وَوَهِم فِي رَفعِهِ. وَخالَفَهُ جَماعَةٌ مِن الثِّقاتِ ، مِنهُم : عَبد الرَّحمَنِ بن مَهدِيٍّ ، ومُوسَى بن داؤد ، وأَحمَد بن يُونُس ، وغَيرُهُم ، عَن عاصِمٍ ، فَرَوُوهُ عَن أَبِي بَكرٍ النَّهشَلِيِّ مَوقُوفًا عَلَى عَلِيٍّ ، وهُو الصَّوابُ. وَكَذَلِك رَواهُ مُحَمد بن أَبان ، عَن عاصِمٍ مَوقُوفًا.
অর্থাৎ মারফূ (রাসূল সা. এর দিকে সম্পর্কিত) রূপে বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি (আব্দুর রহীম) ভুলের শিকার হয়েছেন। বিশ্বস্তদের এক জামাত তার বিরোধিতা করেছেন। তন্মধ্যে আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী, মূসা ইবনে দাউদ, আহমদ ইবনে ইউনুস প্রমুখ রয়েছেন, তারা আবু বকর নাহশালী থেকে আসিমের সূত্রেই এটি হযরত আলী রা. থেকে মাওকুফরূপে (অর্থাৎ তাঁরই আমলরূপে) বর্ণনা করেছেন। আর এটিই সঠিক বর্ণনা। একইভাবে মুহাম্মদ ইবনে আবানও আসেম থেকে মাওকুফরূপে এটি বর্ণনা করেছেন।
দেখুন, দারাকুতনী রহ. তো হযরত আলী রা.এর আমল হিসাবে এ বর্ণনাকে সঠিক ও সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। আর আমাদের লা-মাযহাবী ভাইয়েরা বলেন, এটা আলী রা. এর নামে মিথ্যাচার!!
উল্লেখ্য, দারাকুতনী শেষ বাক্যে মুহাম্মদ ইবনে আবানের বর্ণনাটিকে সমর্থক ও সাক্ষী বর্ণনারূপে পেশ করেছেন। এটি ইমাম মুহাম্মদ তার মুয়াত্তা গ্রন্থে পেশ করেছেন। মূল বক্তব্যে উভয় বর্ণনা এক ও অভিন্ন। সুতরাং উছমান দারিমীর একথাও আর টিকল না যে, নাহশালী একাই এভাবে বর্ণনা করেছেন।
বাকি রইল উছমান দারিমীর একথা যে, আলী রা. সম্পর্কে এ ধারণা সঠিক নয় যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মের উপর নিজের কর্মকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
এটা একটা খোঁড়া যুক্তি। কারণ সহীহ সনদে আলী রা.এর উক্ত আমল প্রমাণিত থাকাই নির্দেশ করে যে, তিনি ও অন্যান্য অনেক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একাধিক স্থানে রফয়ে ইয়াদাইনের যে কথা বর্ণনা করেছেন সেটা হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো করেছেন। অথবা প্রথম জীবনে করলেও শেষ দিকে ছেড়ে দিয়েছেন। এ সমন্বয়ের দিকে ঝুঁকেই ইবনে দাকীকুল ঈদ রহ. তার আল ইমাম গ্রন্থে দারিমীর বক্তব্যকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। (দ্র. নায়লুল ফারকাদাইন, পৃ. ১৩০) আর ইমাম শাফিঈ রহ. যা বলেছেন এটা তার নিজস্ব বক্তব্য ও তাহকীক। সবাইকে তা মেনে নিতে হবে বিষয়টি এমন নয়। তার চেয়ে বড়দের থেকে তো এর বিপরীত বক্তব্যও রয়েছে।
এরপর লেখকের মন্তব্য হলো, উক্ত বর্ণনাও মুনকার। কারণ ইবনু মাসউদ রা. এর পক্ষে কিছু বর্ণনা পাওয়া গেলেও আলী রা. সম্পর্কে রাফউল ইয়াদায়েন করার স্পষ্ট ছহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং উপরের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এ যেন লেখকের মুখস্থ কথা। এ নম্বরে তিনি উক্ত দুই সাহাবীর সাথীদের কথা লিখেছেন। তাহলে সাথীদের আমলের দায় তাদের উপর বর্তাবে কেন? আসলে এখানে সাথীরা অর্থই ভুল। সহীহ হবে শিষ্যরা। আর শিষ্যদের আমল দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, ইবনে মাসউদ ও আলী রা.এর আমলও ছিল তদনুরূপ। কারণ ঐ যুগের শিষ্যরা উস্তাদের টু-কপি ছিল।
লেখক যে বলেছেন, আলী রা. সম্পর্কে রাফউল ইয়াদায়ন করার স্পষ্ট সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, কথাটি এভাবে বলা ঠিক হয়নি। এতে পাঠক মনে করবে আলী রা. এর নিজস্ব আমল সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে। অথচ ব্যাপার আসলে তা নয়। বরং বলা উচিৎ ছিল, আলী রা. রাসূল সা. থেকে রাফউল ইয়াদায়ন করার হাদীস বর্ণনা করেছেন যা সহীহ সনদে উদ্ধৃত হয়েছে। আর এ হাদীস ও তার জবাব পূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি।
এরপর লেখক বলেছেন, যারা উক্ত মিথ্যা বর্ণনার পক্ষে উকালতি করেন, তারা কি আলী রা.কে রাসূল (ছা.)এর অবাধ্য প্রমাণ করতে চান?
বুঝতে পারলাম না, মিথ্যা বর্ণনা কোনটি? লেখক মনে হয় আলী রা.এর আমল সম্পর্কিত পূর্বের হাদীসটির কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানে বলেছেন, নিতান্তই দুর্বল। আর এক পৃষ্ঠা পার না হতেই সেটা মিথ্যা হয়ে গেল!
হযরত আলী রা. সম্পর্কে কোন মুসলমানই তো রাসূল সা. এর অবাধ্য হওয়ার কল্পনা করতে পারে না। লেখকের মাথায় এটা ঢুকল কি করে?
আমরা যে সুন্দর বিশ্লেষণ পেশ করেছি সেটা গ্রহণ করুন, দেখবেন তিনি রাসূল সা. এর অবাধ্য হওয়া প্রমাণিত হবে না।
এরপর লেখক ১৫ নম্বর হাদীস এভাবে উল্লেখ করেছেন, আসওয়াদ (রা:) বলেন, আমি উমর রা.কে একবার দুই হাত উত্তোলন করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি আর করতেন না। উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে উমর রা.এর নামে আরো কিছু বর্ণনা এসেছে।
এ বর্ণনাটি সম্পর্কে লেখক মন্তব্য করেন যে, উক্ত বর্ণনা যঈফ। ইমাম হাকেম বলেন, বর্ণনাটি অপরিচিত। এর দ্বারা দলিল সাব্যস্ত করা যাবে না। যদিও ইমাম তাহাবী তাকে বিশুদ্ধ বলতে চেয়েছেন। কিন্তু ইবনুল জাওযী তার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মূলত উমর রা.এর নামে এ সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করাই মিথ্যাচার, কারণ উমর রা. রাফউল ইয়াদায়ন করতেন মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ইবনু উমর রা. বলেন, উমর রা. রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রাফউল ইয়াদায়েন করতেন।
হাদীসটির অনুবাদ এভাবে হলে সুন্দর হতো, আসওয়াদ রহ. বলেন, আমি উমর রা.কে দেখেছি, তিনি প্রথম তাকবীরের সময় হাত ওঠাতেন। পরে আর ওঠাতেন না। লেখক এ বর্ণনাটির সনদ যাচাই না করেই মুখস্থ বলে দিয়েছেন এটি যঈফ। পরে হাকেম ও ইবনুল জাওযীর বক্তব্য পেশ করার পর মনের খেদ ঝেড়েছেন মিথ্যাচার বলে।
অথচ এই বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেছেন ইবনে আবী শায়বা তার মুসান্নাফ গ্রন্থে (হাদীস নং ২৪৫৪), ইমাম তাহাবী তার মুশকিলুল আছার (১৫/৫০) ও তাহাবী শরীফে (হাদীস নং ১৩৬৪) ও ইবনুল মুনযির তার আল আওসাত গ্রন্থে (হাদীস নং ১৩৯১)। তিনজনই একই সূত্রে এটি উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ইয়াহয়া ইবনে আদম এটি বর্ণনা করেছেন হাসান ইবনে আইয়াশ থেকে, তিনি আব্দুল মালেক ইবনে আবজার থেকে, তিনি যুবায়র ইবনে আদী থেকে, তিনি ইবরাহীম (নাখাঈ) থেকে, তিনি আওয়াদ রহ. থেকে। এই ছয়জন বর্ণনাকারীর মধ্যে ইয়াহয়া ইবনে আদম, যুবায়র ইবনে আদী, ইবরাহীম ও আসওয়াদ চারজনই সহীহ বুখারী ও মুসলিমের রাবী। আর হাসান ইবনে আইয়াশ ও আব্দুল মালেক ইবন আবজার (তার পুরো নাম আব্দুল মালেক ইবনে সাঈদ ইবনে হাইয়ান ইবনে আবজার) দুজনই সহীহ মুসলিমের রাবী। তাদের বিশ্বস্ততা নিয়েও কোন প্রশ্ন নেই। হাসান ইবনে আইয়াশকে ইবনে মাঈন, নাসায়ী, ইজলী, তাহাবী ও ইবনে মাকুলা প্রমুখ বিশ্বস্ত বলেছেন। আর ইবনে হিব্বান, ইবনে শাহীন ও ইবনে খালফূন তাদের ছিকাত (বিশ্বস্ত রাবীচরিত) গ্রন্থে তাকে উল্লেখ করেছেন। এমনিভাবে আব্দুল মালেক ইবনে আবজারকে ইমাম আহমদ, ইবনে মাঈন, নাসায়ী, ইজলী, ইয়াকূব ইবনে সুফিয়ান ও যাহাবী প্রমুখ বিশ্বস্ত বলেছেন। আবু যুরআ ও আবু হাতেম তাকে ইসরাঈল ইবনে ইউনুস (বুখারী ও মুসলিমের রাবী) এর উপর অগ্রগণ্য আখ্যা দিয়েছেন। এছাড়া ইবনে হিব্বান, ইবনে শাহীন ও ইবনে খালফূনও তাকে ছিকাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইবনে হাজারও তাকরীব গ্রন্থে তাকে বিশ্বস্ত আখ্যা দিয়েছেন। এখন লেখক বলুক, এদের মধ্যে কে মিথ্যুক। কে বা মিথ্যাচার করেছেন? হাদীসের সংকলকগণ, না এর কোন রাবী?
আর তিনি যে বলেছেন, উমর রা. রাফউল ইয়াদায়েন করতেন মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। এরপর বলেছেন, ইবনে উমর (রা:) বলেন, উমর (রা:) রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রাফউল ইয়াদায়েন করতেন।
লেখক এর বরাত দিয়েছেন, বায়হাকীর মা’রিফাতুস সুনান (লেখকের এখানে মাআরিফুস সুনান ছাপা হয়েছে, যা ভুল) ২/৪৭০ সনদ সহীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৯৫।
এখানে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলছি, লেখক কর্তৃক বায়হাকীর উক্ত গ্রন্থের বরাত উল্লেখ করা একটি প্রতারণা বৈ নয়। বায়হাকীর উক্ত গ্রন্থে এমন কথা নেই। আর তুহফাতুল আহওয়াযী গ্রন্থেও বায়হাকীর গ্রন্থের বরাত নেই। এটি বরং হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা যায়লাঈর নাসবুর রায়াহ থেকে তারা নিয়েছেন। কিন্তু সেটির বরাত তুহফাতুল আহওয়াযীতে দেওয়া হলেও লেখক তা এড়িয়ে গেছেন। আর নাসবুর রায়াহ গ্রন্থেও হাকেম বা বায়হাকীর কোন গ্রন্থের বরাত দেওয়া হয় নি।
আসলে হাকেমের বরাত দিয়ে যায়লাঈ কথাটি এভাবে উল্লেখ করেছেন,
واعترضه الحاكم : بأن هذه رواية شاذة لا تقوم بها حجة ولا تعارض بها الأخبار الصحيحة عن طاوس بن كيسان عن ابن عمر أن عمر كان يرفع يديه في ا لركوع وعند الرفع منه.
অর্থাৎ হাকেম রহ. এর উপর আপত্তি তুলে বলেছেন, এ বর্ণনাটি শায বা দলবিচ্ছিন্ন। এর দ্বারা প্রমাণ পেশ করা যায় না। এবং সহীহ হাদীসসমূহের বিপরীতে এটা পেশও করা যায় না। তাউস ইবনে কায়সান হযরত ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উমর রা. রুকুর সময় ও রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। (নাসবুর রায়াহ, ১/৪০৫)
নাসবুর রায়াহ গ্রন্থে যেহেতু মূল গ্রন্থের বরাত নেই, তাই এ বক্তব্যটি মিলিয়ে দেখাও সম্ভব হয় নি। এর সনদ যাচাই করারও সুযোগ হয় নি। এ বক্তব্য ইবনুল মুলাক্কিনও তার আল বাদরুল মুনীর গ্রন্থে হাকেমের বরাত দিয়ে আরো গোলমেলে করে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনিও হাকেম বা বায়হাকীর কোন গ্রন্থের বরাত দেন নি। (দ্র. ৩/৫০০) এদিকে নাসবুর রায়ার সংক্ষিপ্ত রূপ আদ দিরায়া গ্রন্থে হাফেজ ইবনে হাজার হাকেমের এই বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন,ويعارضه رواية طاوس عن ابن عمر كان يرفع يديه في التكبير وفي الركوع وعند الرفع منه অর্থাৎ এর বিপরীতে তাউস হযরত ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রুকুর সময় ও রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। (১/১৫২) একইভাবে ইবনুল হুমামও ফাতহুল কাদীর গ্রন্থে বলেছেন, وعارضه الحاكم برواية طاوس بن كيسان عن ابن عمر كان يرفع يديه في الركوع وعند الرفع منه অর্থাৎ এর বিপরীতে হাকেম রহ. ইবনে উমর রা. থেকে তাউস ইবনে কায়সানের বর্ণনাটি পেশ করেছেন যে, তিনি রুকুর সময় ও রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। (১/৩১১)
এ দুটি উদ্ধৃতিতে উমর রা. এর উল্লেখ নেই। তাই অনুমিত হয়, নাসবুর রায়া’র সংস্করণে ভুল আছে। উমর রা. নয়, ইবনে উমরের আমল দ্বারা হাকেম রহ. এটি খ-ন করতে চেয়েছেন। এ অনুমানটি আরো জোরদার হয় নীমাবী রহ.এর বক্তব্য দ্বারা। তিনি আছারুস সুনান গ্রন্থে বলেছেন, আমি নিজে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থাগারে নাসবুর রায়া’র বিশুদ্ধ কপিতে বক্তব্যটি এভাবে দেখেছি : عن ابن عمر أنه كان يرفع يديه في الركوع وعند الرفع منه অর্থাৎ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, তিনি রুকুর সময় ও রুকু থেকে ওঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করতেন। (পৃ. ১৩৬)
যদি ধরেও নিই, উমর রা. সম্পর্কেই হাকেম কথাটি বলেছেন, তথাপি এর সহীহ হওয়ার গ্যারান্টি কি? সনদ বা সূত্র যাচাইয়ের তো কোন উপায় নেই। হাকেম যে বলেছেন, ‘সহীহ হাদীস সমূহের’ এতটুকু কথায় কি এর সনদকে সহীহ বলা ঠিক হবে? হাকেম রহ. তার মুসতাদরাক গ্রন্থে বহু হাদীসকে সহীহ বলেছেন, অথচ যাহাবীসহ অনেকে সেগুলোকে জাল আখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং শুধু হাকেমের কথার উপর নির্ভর করে এত জোর দেওয়া বিলকুল ঠিক নয়। পক্ষান্তরে আমরা উমর রা. এর যে আমলের কথা উল্লেখ করলাম সেটি একাধিক হাদীসগ্রন্থে সনদসহ বিদ্যমান আছে। আমরা এর সম্পর্কে রাবীদের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য হওয়ার বলিষ্ট প্রমাণ পেশ করেছি। সেই সঙ্গে মূল দলিলের আলোচনায় কোন কোন মুহাদ্দিস ঐ হাদীসকে বিশুদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন তাও উল্লেখ করে দিয়েছি। এতে যে কেউ বুঝতে পারবেন হাদীসটি সহীহ।
আসলে হযরত উমর রা.এর মতো এমন মহান খলীফাতুল মুসলিমীন থেকে রফয়ে ইয়াদায়ন না করাটা প্রমাণিত হবে, এটা যেন লা-মাযহাবী বন্ধুদের কাছে বড্ড খারাপ লাগে। কিন্তু যতই খারাপ লাগুক, এটা সহীহ সনদে সন্দেহাতীতভাবে তার থেকে প্রমাণিত। দেখুন, বুখারী শরীফের প্রথম ভাষ্যকার ইবনে বাত্তাল রহ. (মৃত্যু ৪৪৯ হিজরী) তার ভাষ্যগ্রন্থে বলেছেন,
غير أنه يرجح القول بفعل الخليفتين بعد النبى ، عليه السلام ، عمر ، وعلى بن أبى طالب ، وإن كان قد اختلف فيه عن على ، فلم يختلف فيه عن عمر ،
অর্থাৎ তবে প্রথম মতটি (রফয়ে ইয়াদায়ন না করা) অগ্রগণ্যতা লাভ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে তাঁর দুই খলীফা উমর ও আলী ইবনে আবু তালিবের আমল দ্বারা। এ ব্যাপারে আলী রা. থেকে দুরকম বর্ণনা পাওয়া গেলেও উমর রা. থেকে ভিন্ন কোন বর্ণনা নেই। (২/৩৫৫)
১৬ নং দলিলে ইবনে আব্বাস রা. বর্ণিত বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর শুধু প্রথম তাকবীরের সময় হাত তুলতেন মর্মে একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।
লেখকের মন্তব্য হলো, বর্ণনাটি জাল। আলাউদ্দীন আল কাসানী (মৃত্যু ৫৮৮ হি.) তার বাদাইউছ ছানায়ে এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী ছহীহ বুখারী ও আবু দাউদের ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেউই কোন সূত্র উল্লেখ করেন নি। মূলত উক্ত বর্ণনা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
আমাদের বক্তব্য হলো, কেউই যখন এর কোন সূত্র উল্লেখ করেন নি, তখন সূত্র না জানা পর্যন্ত কিসের ভিত্তিতে এটিকে জাল বলা হবে? সূত্র ছাড়াও যদি একটি হাদীসকে (বড় কোন হাদীসবিশেষজ্ঞের মন্তব্য ছাড়া) জাল ও বানোয়াট আখ্যা দেওয়া যায়, তবে হাকেম যে বলেছেন, বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন থেকে রফা করার হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সেটি কেন জাল হবে না? তারও তো কোন সূত্র নেই। তাহলে কি লেখকের জাল হাদীস ধরার জালটি এমন যেখানে শুধু রফয়ে ইয়াদাইন না করার হাদীস ধরা পড়ে?
এরপর লেখক বলেছেন, ড. তাকীউদ্দীন বলেন, ولا عبرة بهذا الأثر ما لم يوجد سنده عند مهرة الفن مع ثبوت خلافه في كتب الحديث এই সনদে কোন উপদেশ নেই। কারণ এই বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের নিকটেই এই সনদের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তাছাড়া হাদীসের গ্রন্থসমূহে এর বিরোধী দলিলই বিদ্যমান। লেখক নীচে ৭২১ নম্বর দিয়ে টীকা লিখেছেন, মুওয়াত্ত্ব মালেক, তাহক্বীক, পৃ. ১৭৯।
এ হলো লেখকের ত্রুটিপূর্ণ গবেষণা ও অনুবাদের আরেক চিত্র। উদ্ধৃত বক্তব্যটুকু ড. সাহেবের নয়। বরং আব্দুল হক দেহলবী’র, যা তিনি সিফরুস সা’আদা গ্রন্থের ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন। উক্ত ভাষ্যগ্রন্থের বরাতে আত তা’লীকুল মুমাজ্জাদ নামে মুয়াত্তা মুহাম্মাদের ভাষ্যগ্রন্থে আব্দুল হাই লক্ষেèাবী বক্তব্যটি উদ্ধৃত করেছেন। ড. সাহেব এই মুয়াত্তা মুহাম্মদ আরব থেকে ছেপেছেন তার নিজের সম্পাদনায়। তবে তিনি এর নাম দিয়েছেন মুয়াত্তা মালেক বি রিওয়াইতিল ইমাম মুহাম্মাদ।
এতো গেল এক প্রসঙ্গ। উদ্ধৃত অংশের অনুবাদে লেখক যে ভুল করেছেন তা বোঝাবার জন্য সঠিক অনুবাদ পেশ করাই বোধ করি সচেতন মহলের জন্য যথেষ্ট হবে। সঠিক অনুবাদ হলো, হাদীসশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের নিকট যতক্ষণ পর্যন্ত এর সনদ বা সূত্র পাওয়া না যাবে ততক্ষণ এ আছারটি গ্রহণযোগ্য হবে না। অধিকন্তু হাদীসগ্রন্থসমূহে এর বিপরীত তথ্যই প্রমাণিত রয়েছে।
এরপর লেখক ১৭ নং দলিল হিসাবে একটি হাদীস এনেছেন। হাদীসটি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত। নবী সা. বলেছেন, সাতটি স্থানেই হাত উত্তোলন করা হয়, যখন সালাত শুরু করবে, যখন মসজিদে হারামে প্রবেশ করে কাবাঘর দেখবে, যখন সাফা ও মারওয়ার পাহাড়ে উঠবে। সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মানুষের সঙ্গে যখন আরাফায় উকূফ করবে, মুজদালিফার ময়দানে এবং যখন পাথর মারবে দুই স্থানে (অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় জামরায়)।
লেখক হাদীসটির উপর মন্তব্য করেছেন, বর্ণনাটি মিথ্যা ও বাতিল। এমনকি হিদায়ার ভাষ্যকার ইবনুল হুমামও তার বিরোধিতা করেছেন। যেমন,
لم يسمع الحكم من مقسم إلا أربعة أحاديث وليس هذا منها فهو مرسل وغير محفوظ ، قال أيضا : فهم يعني أصحابنا خالفوا هذا الحديث في تكبيرات العيدين وتكبيرة القنوت
হাকাম মাকসাম থেকে মাত্র চার হাদীস শুনেছে। সেগুলোর মধ্যেও এটি নেই। সুতরাং তা মুরসাল ও অরক্ষিত। তাছাড়া আমাদের মাযহাবের লোকেরা ঈদ ও জানাযার তাকবীরের ব্যাপারে বিরোধিতা করেছে।
এখানে লেখক অনেকগুলো ভুল করেছেন।
এক. হাদীসটিকে মিথ্যা ও বাতিল বলেছেন। যা ইতিপূর্বে কেউ বলেন নি। হাদীসটি ইমাম শাফেঈ তার মুসনাদে (৮৭৫ বা ৯৫০ নং), ইবনে আবী শায়বা তার মুসান্নাফে (২৪৫০, ১৫৭৪৮, ১৫৭৫২), বুখারী তার জুযউ রাফউল ইয়াদাইনে (৮১), বাযযার তার মুসনাদে (দ্র. কাশফুল আসতার, নং ৫১৯), ইবনে খুযায়মা তার সহীহ গ্রন্থে (নং ২৭০৩), তূসী তার মুখতাসারুল আহকাম গ্রন্থে (৭৮৬) তাহাবী তার শারহু মাআনিল আছারে (৩৮২১, ৩৮২২) তাবারানী তার মুজামে কাবীরে (১২০৭২) বায়হাকী তার সুনানে কুবরায় (৯২১০) ও যিয়া তার আল মুখতারা গ্রন্থে (নং ৩১০) উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম শাফেঈ রহ. এর দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন বায়তুল্লাহ দেখার সময় হাত তোলার মাসআলায়। তূসী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আর হায়ছামী (৫৪৬১) বলেছেন, এর সনদে মুহাম্মদ ইবনে আবু লায়লা আছেন, وحديثه حسن إن شاء الله ইনশাআল্লাহ, তার হাদীস হাসান। যিয়া তার মুখতারা গ্রন্থে উল্লেখ করাও প্রমাণ করে, হাদীসটি তার নিকটও গ্রহণযোগ্য।
হাদীসটি মূলত ইবনে আব্বাস রা. থেকে দুইভাবে বর্ণিত আছে। ক. মারফু বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী হিসেবে, খ. মাওকুফ বা ইবনে আব্বাস রা. এর বক্তব্য হিসেবে। অনেক মুহাদ্দিসের মতে এটা মারফূ নয়, মাওকূফ হওয়াই সহীহ। বাযযার, ইবনুল জাওযী, ইবনে আব্দুল হাদী ও ইবনুল মুলাক্কিন প্রমুখের মত এটাই। মোল্লা আলী কারী তার আসরারুল মারফুআহ গ্রন্থে বলেছেন,
قلت: على تقدير عدم صحة رفعه تكفينا صحة وقفه لا سيما هو في حكم المرفوع إذ لا يقال مثل هذا من قبل الرأي
অর্থাৎ আমি বলব, যদি ধরেও নিই, এটির মারফু হওয়া সহীহ নয়, তবুও এর মাওকুফ হওয়া সহীহ হওয়াটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। বিশেষত এ কারণে যে, এটি মারফু হাদীসের মর্যাদা ও বিধানভুক্ত। কারণ এ ধরনের বক্তব্য নিজের মতামত থেকে দেওয়া যায় না।
দুই, উদ্ধৃত আরবী অংশটির অনুবাদের শুরুতে বলা হয়েছে, ‘হাকাম মাকসাম থেকে’। মাকসাম নয়, মিকসাম।
তিন. উদ্ধৃত অংশটুকু ইবনুল হুমামের নয়, বরং ইমাম বুখারীর, যা ইবনুল হুমাম উদ্ধৃত করেছেন। লেখক না বুঝে এ অংশটি ইবনুল হুমামের মনে করে অনুবাদেও ভুল করেছেন। ‘অরক্ষিত’ এর পরের বাক্যটির সঠিক অনুবাদ হবে: ‘তিনি (ইমাম বুখারী) আরো বলেছেন, তাছাড়া তারা: এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য হলো আমাদের ইমামগণ: দুই ঈদের তাকবীরসমূহে ও কুনুতের তাকবীরে এ হাদীসের বিপরীত করেছেন।
বাকি রইল ইমাম বুখারীর বক্তব্য যে, শোবা রহ. বলেছেন, হাকাম রহ. মিকসাম থেকে চারটি হাদীস শুনেছেন। এ হাদীসটি সেই চারের মধ্যে নেই। সুতরাং এটি মুরসাল বা সূত্রবিচ্ছিন্ন ও বেঠিক বর্ণনা।
এর জবাবে বলব, শোবা রহ. হয়তো বোঝাতে চাননি মাত্র চারটি হাদীসই শুনেছেন। আমরা যেমন দু’চারটি বলে স্বল্পতা বুঝিয়ে থাকি, তিনিও হয়তো তাই বুঝিয়েছেন। একথা এজন্যই বলছি, শো’বার অনুরূপ আরেকটি উক্তি আছে, কাতাদা রহ. আবুল আলিয়া রহ. থেকে তিনটি হাদীস শুনেছেন। (তিরমিযী, হাদীস ১৪৩) আবু দাউদের বর্ণনায় চারটি হাদীসের কথা এসেছে। (হাদীস ২০২) অথচ বুখারী-মুসলিমেই আবুল আলিয়া থেকে কাতাদার আরো একাধিক হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে। সেখানে যে জবাব এখানেও সেই একই জবাব।
হাকাম রহ. মিকসাম থেকে কতটি হাদীস শুনেছেন সে ব্যাপারে শোবার বক্তব্যেও বিভিন্নতা রয়েছে। এখানে চারটির কথা বলা হয়েছে। তিরমিযী (নং ২৫৭) ও মুসনাদে ইবনুল জাদ (নং ৩১৭)এ বলা হয়েছে পাঁচটির কথা। আর ইবনে আবু হাতিম তার আল জারহু ওয়াত তাদীলে বলেছেন, ছয়টির কথা। এর বাইরে আর যেসব বর্ণনা রয়েছে শোবার মতে সেগুলো হাকাম কিতাব (অর্থাৎ মিকসামের কিতাব) থেকে বর্ণনা করেছেন। (দ্র. মুসনাদে ইবনুল জাদ (হাদীস ৩১৭)
ব্যাপারটি যদি এমনই হয় যে বাকি হাদীসগুলো হাকাম কিতাব থেকে বর্ণনা করেছেন। আবার তিনি সকলের নিকট অতি বিশ্বস্তও বটেন। তবে এসব হাদীসকে ঢালাওভাবে বর্জন করার কোন যুক্তি থাকে না। এ কারণেই ঐ ৫/৬টি হাদীসের বাইরে এই সনদের অনেক হাদীসকে মুহাদ্দিসগণ সহীহ বা হাসান আখ্যা দিয়েছেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখুন: তিরমিযী শরীফের ৮৮০ নং হাদীসটিকে আলবানী সাহেব সহীহ বলেছেন। ৮৯৩ ও ৮৯৫ নং হাদীস দুটিকে ইমাম তিরমিযী ও আলবানী সাহেব উভয়ে সহীহ বলেছেন। একইভাবে হাকেম তার মুসতাদরাক গ্রন্থে ১৬৪২, ১৬৯৪ ও ১৭০৩ নং হাদীসকে সহীহ বলেছেন। ইবনে খুযায়মা রহ.ও তার সহীহ গ্রন্থে এসব উদ্ধৃত করেছেন। এর নম্বরগুলো যথাক্রমে ২৫৯৬, ২৭৯৯, ২৮৪৪। সহীহ ইবনে খুযায়মার টীকায় ড. মুস্তফা আজমী স্পষ্টভাবে এ তিনটি হাদীসকে সহীহ বলেছেন। তবে আলোচ্য হাদীসটির সনদে যেহেতু ইবনে আবু লায়লা রয়েছেন, সেকারণে এটিকে সহীহ বলা না গেলেও হাসান অবশ্যই বলা যাবে। তাছাড়া এর ভিন্ন আরো দুটি সনদ রয়েছে। একটি সনদ রয়েছে মুসনাদে শাফিঈতে: أخبرنا سعيد بن سالم عن ابن جريج قال حدثت عن مقسم عن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه وسلم … অর্থাৎ আমাদের নিকট সাঈদ ইবনে সালেম বর্ণনা করেছেন, ইবনে জুরায়জ থেকে, তিনি বলেছেন, মিকসাম থেকে আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে ইবনে আব্বাস রা. এর সূত্রে নবী সা. থেকে। এ সনদে ইমাম বায়হাকীও হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন, এবং বলেছেন, এটি মুনকাতি বা সূত্রবিচ্ছিন্ন। অর্থাৎ ইবনে জুরায়জ রহ. সরাসরি এটি মিকসাম থেকে শোনেন নি।
অপর সনদটি তাবারানী রহ. উল্লেখ করেছেন,
حدثنا أحمد بن شعيب النسائي أخبرنا عمرو بن يزيد أبو بُريد الجرمي نا سيف بن عبيد الله نا ورقاء عن عطاء بن السائب عن سعيد بن جبير عن ابن عباس عن النبي صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ আমাদের নিকট আহমদ ইবনে শুআইব (ইমাম নাসায়ী) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমাদের নিকট আমর ইবনে ইয়াযীদ আবু বুরায়দ আল জারমী বর্ণনা করেছেন, সাইফ ইবনে উবায়দুল্লাহ থেকে, তিনি বলেছেন, আমাদের নিকট ওয়ারাকা বর্ণনা করেছেন আতা ইবনুস সাইব থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস রা. এর সূত্রে নবী স. থেকে। (হাদীস নং ১২২৮২) এই দ্বিতীয় সনদে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন আবু আলী হাসান ইবনে আলী আত তূসী রহ. (মৃত্যু ৩১২ হি.) তার মুখতাসারুল আহকাম বা মুসতাখরাজুত তূসী আলা জামিইত তিরমিযী গ্রন্থে (হাদীস নং ৪৪-৭৮৬) এবংবলেছেন, هذا حديث حسن এ হাদীসটি হাসান। আর এই সনদেই যিয়া রহ. তার আল মুখতারা গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন। অথচ এই বর্ণনাটি নিয়ে লেখক হিদায়া গ্রন্থকারের উপর কতই না বিষোদগার করেছেন