আলবানী সাহেবের দাবি : একটু পর্যালোচনা
হযরত আবু হুরায়রা ও ইবনে উমর রা. এর হাঁটুর পূর্বে হাত রাখা সংক্রান্ত হাদীস দুটি সম্পর্কে আলবানী সাহেব বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন। সেগুলোর কারণে অনেকে ধোঁকায় পড়ে যেতে পারেন। তাই সেসব দাবি সম্পর্কে একটু পর্যালোচনা করা হলো।
১. আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীসটি সম্পর্কে তিনি তামামুল মিন্নাহ গ্রন্থে বলেছেন, إسناده جيد كما قال النووي والزرقانيঅর্থাৎ এর সনদ জাইয়্যিদ বা উৎকৃষ্ট, যেমনটি বলেছেন নববী ও যুরকানী। আর সাহীহা গ্রন্থে লিখেছেন, لقد صحح هذا الحديث جمع من الحفاظ منهم عبد الحق الأشبيلي والشيخ النووي অর্থাৎ এক জামাত হাফেযে হাদীস এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল হক ইশবিলী ও শায়খ নববী।
অথচ ইমাম নববী এটাকে সহীহ বলেন নি। জাইয়্যেদ বলেছেন। জাইয়্যেদ আর সহীহ এক কথা নয়।
ইরওয়াউল গালীল ও আসলু সিফাতিস সালাহ গ্রন্থদ্বয়ে তিনি বলেছেন,
وهذا سند صحيح . رجاله كلهم ثقات رجال مسلم ؛ غير محمد بن عبد الله بن الحسن ، وهو المعروف بالنفس الزكية العَلَوي ، وهو ثقة – كما قال النسائي وغيره ، وتبعهم الحافظ في ” التقريب ” – . ولذلك قال النووي في ” المجموع ” (৩/৪২১) ، والزُّرْقاني في ” شرح المواهب ” (৭/৩২০) : ” إسناده جيد ” . ونقل ذلك المُناوي عن بعضهم ، وصححه السيوطي في ” الجامع الصغير ” . وصححه عبد الحق في ” الأحكام الكبرى ” (৫৪/১) . وقال في ” كتاب التهجد ” (১/৫৬): ” إنه أحسن إسناداً من الذي قبله ” . يعني : حديث وائل المعارض له .
অর্থাৎ এ সনদটি সহীহ। এর বর্ণনাকারী সকলে বিশ্বস্ত ও মুসলিমের রাবী। শুধু ব্যতিক্রম হলেন মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান, যিনি আন নাফসুয যাকিয়্যা উপাধিতে খ্যাত, তিনি মুসলিমের রাবী না হলেও বিশ্বস্ত। ইমাম নাসাঈ প্রমুখ তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। তাদের অনুসরণে হাফেজ ইবনে হাজারও তাকরীব গ্রন্থে তাই উল্লেখ করেছেন। এ কারণেই নববী আল মাজমূ গ্রন্থে ও যুরকানী শারহুল মাওয়াহিব গ্রন্থে (৭/৩২০) বলেছেন, এর সনদ জাইয়্যেদ। একই কথা মুনাবীও উল্লেখ করেছেন কারো কারো বরাতে। জামে সগীরে সুয়ূতী এটিকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। আব্দুল হকও আল আহকামুল কুবরা গ্রন্থে (১/৫৪) এটিকে সহীহ বলেছেন। আর কিতাবুত তাহাজ্জুদ গ্রন্থে (১/৫৬) তিনি বলেছেন, পূর্বের হাদীসটির (অর্থাৎ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হযরত ওয়াইল রা.এর হাদীসটির) তুলনায় এর সনদ উত্তম।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয় :
বুখারী ও মুসলিমের রাবীদের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো, তাদের কেউ যদি স্মৃতিদুর্বল হয়, তাহলে তাঁরা তার হাদীস গড়ে গ্রহণ না করে বেছে বেছে সেসব হাদীসই গ্রহণ করেছেন যেগুলোর সমর্থন অন্যান্য সূত্রে পাওয়া গেছে। এ ধরনের রাবীদের যে কোন হাদীস নিয়েও বলা যাবে না, ইনি বুখারী ও মুসলিমের রাবী, তাই তার হাদীসটি সহীহ।
এ কথা যে আলবানী সাহেব জানতেন না তা নয়। কিন্তু নিজের দলিল পেশ করার সময় এসব কথা তার মনে থাকে না।
দেখুন, সুওয়ায়দ ইবনে সাঈদ মুসলিম শরীফের রাবী। সহীহা গ্রন্থে তার একটি হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছেন,
قلت : والإسناد الأول ضعيف فإن سويد بن سعيد مع كونه من شيوخ مسلم فقد ضعف
অর্থাৎ প্রথম সনদটি জয়ীফ বা দুর্বল। কারণ সুওয়ায়দ ইবনে সাঈদ যদিও মুসলিম রহ.এর উস্তাদ, কিন্তু তাকে জয়ীফ আখ্যায়িত করা হয়েছে।
যদিও এ গ্রন্থের ৫০০ নং হাদীসে তিনি উল্টো কথা বলেছেন,
ومثل طريق سويد بن سعيد في الحديث فإنه ثقة من شيوخ مسلم ولكنه اختلط
অর্থাৎ হাদীসে সুওয়ায়দ ইবনে সাঈদের সনদটি যেমন। তিনি তো বিশ্বস্ত ও মুসলিমের উস্তাদ, তবে তার হাদীস উল্টাপাল্টা হয়ে গিয়েছিল।
আবার জয়ীফা গ্রন্থে ৫২৫৫ নং হাদীসটি সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছেন,
ورجاله ثقات رجال الشيخين ؛ غير سويد ؛ فإنه – مع كونه من شيوخ مسلم – فقد ضعفوه. ومن هنا يظهر لك تساهل البوصيري في “الزوائد” (২৭৯/ ২) ؛ حيث قال :”هذا إسناد حسن ؛ سويد مختلف فيه ، ولعله تبع المنذري في تحسينه ،
অর্থাৎ এর রাবীগণ সকলে বিশ্বস্ত ও বুখারী-মুসলিমের রাবী। অবশ্য সুওয়ায়দ ব্যতিক্রম। কেননা তিনি মুসলিমের উস্তাদ হলেও মুহাদ্দিসগণ তাকে জয়ীফ বলেছেন। এখান থেকেই যাওয়াইদ গ্রন্থে বূসীরীর শৈথিল্য ধরা পড়ে। কারণ তিনি বলেছেন, ‘এ সনদটি হাসান, সুওয়ায়দ বিতর্কিত’। হাসান বলার ক্ষেত্রে তিনি হয়ত মুনযিরির অনুসরণ করেছেন।
এতদসত্ত্বেও ইরওয়া গ্রন্থে তিনি সুওয়ায়দ বর্ণিত একটি হাদীসকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। হাদীসটি ইবনে মাজায় উদ্ধৃত হয়েছে (নং ৪৪৩)। ইরওয়ায় এটি ৮৪ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে। হাফেজ ইবনে হাজার আন নুকাত গ্রন্থে সুওয়ায়দের কারণে হাদীসটিকে জয়ীফ আখ্যা দিয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে, আলবানী সাহেব একই রাবী ও তার হাদীস সম্পর্কে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে আমরা আলোচনায় যাচ্ছি না। কারণ তার লেখায় এমন স্ববিরোধিতা বিস্তর। এ নিয়ে তানাকুযাতুল আলবানী (আলবানীর স্ববিরোধী বক্তব্য) নামে আরবী ভাষায় স্বতন্ত্র বৃহৎ গ্রন্থ রচিত হয়েছে।
আমরা যে বিষয়ে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি তা হলো, সুওয়ায়দ মুসলিম শরীফের রাবী। ইমাম মুসলিম তার সেই সময়কার হাদীস নিয়েছেন যখন তার স্মৃতিশক্তি ভাল ছিল। অথবা বেছে বেছে তার সেসব বর্ণনা নিয়েছেন, যেগুলোর ব্যাপারে তার আস্থা অর্জিত হয়েছিল। সুতরাং এ ধরনের রাবীর যে কোন হাদীস নিয়েই বলা যাবে না, ইনি মুসলিম শরীফের রাবী, তাই হাদীসটি সহীহ।
এবারে আমাদের আলোচ্য হাদীসগুলোতে আসা যাক। এর একজন রাবী মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান। তার হাদীসের সঠিকতা নিয়ে ইমাম বুখারীর আপত্তি রয়েছে। বুখারী মুসলিমের কেউই তার হাদীস গ্রহণ করেন নি। ইবনে সাদ বলেছেন, وكان قليل الحديث অর্থাৎ তার বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বুখারী বলেছেন, لا يتابع عليه অর্থাৎ তার এ হাদীসটির সমর্থন পাওয়া যায় না। তাহলে এ ধরনের রাবীর স্মৃতি যে দুর্বল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাছাড়া এ রাবীর নির্ণয়ন নিয়েও ঝামেলা আছে। ইবনে রজব হাম্বলী তার বুখারী শরীফের ভাষ্য ফাতহুল বারীতে লিখেছেন,
ومحمد راويه ، ذكره البخاري في الضعفاء ، وقال : يقال : ابن حسن فكأنه توقف في كونه محمد بن عبد الله بن حسين بن حسن الذي خرج بالمدينة على المنصور ، ثم قتله المنصور بها .
অর্থাৎ ইমাম বুখারী তার জুয়াফা (দুর্বল রাবীদের জীবনচরিত) গ্রন্থে বলেছেন, বলা হয় ইনি ইবনে হাসান। তিনি যেন এ নিয়ে দ্বিধান্বিত যে, ইনিই সেই মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান কি না। যিনি খলীফা মনসূরের বিরুদ্ধে মদীনায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। পরে মনসূর তাকে সেখানেই হত্যা করেছিল। (ফাতহুল বারী, ৭/২১৮)
আরেকজন রাবী হলেন দারাওয়ার্দী। তার সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের মন্তব্য পেছনে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। আলবানী সাহেবেরও সেগুলো জানা। একারণে দারাওয়ার্দীর হাদীসকে তিনি কখনো বলেছেন সহীহ, কখনো হাসান কখনো জয়ীফ। কখনো তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন, কখনো সাদূক বা সত্যনিষ্ঠ (মধ্যম মান বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত পরিভাষা), কখনো তার হাদীসকে জয়ীফ বলে মুহাদ্দিসগণের মন্তব্যগুলো এমনভাবে উল্লেখ করেছেন, যাতে প্রতীয়মান হয় যে, দারাওয়ার্দী তার নিকটও জয়ীফ। এখানে কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ না করে পারছি না।
১. ইরওয়া গ্রন্থে ২৩২২ নং হাদীসের আলোচনায় নুআয়ম ইবনে হাযযালের বর্ণনাটি সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছেন,
أخرجه أبو داود وابن أبي شيبة وأحمد إسناده حسن ورجاله رجال مسلم
অর্থাৎ আবু দাউদ, ইবনে আবী শায়বা ও আহমদ এটি উদ্ধৃত করেছেন। এর সনদ হাসান। এর রাবীগণ মুসলিমের রাবী।
উল্লেখ্য, এর সনদে দারাওয়ার্দী আছেন। কিন্তু সকলে মুসলিমের রাবী হওয়া সত্ত্বেও কেন সনদটি হাসান হলো তা তিনি ব্যাখ্যা করেন নি।
২. সহীহা গ্রন্থে ২২১৮ নং হাদীসের আলোচনায় এই দারাওয়ার্দী সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন,
و هو ثقة عند ابن حبان و غيره ، فيه ضعف يسير من قبل حفظه ، فحديثه لا ينزل عن مرتبة الحسن ، و قد احتج به مسلم .
অর্থাৎ তিনি ইবনে হিব্বান প্রমুখের নিকট বিশ্বস্ত, স্মৃতিশক্তির দিক থেকে তার মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। তাই তার হাদীস হাসান মানের চেয়ে নিম্নের হবে না। মুসলিম রহ. তাকে (তার হাদীসকে) প্রমাণস্বরূপ উদ্ধৃত করেছেন।
৩. ‘তাসহীহু হাদীসি ইফতারিস সাইম’ গ্রন্থে দারাওয়ার্দির একটি হাদীসকে মুনকার (আপত্তিকর) ও শায (দলবিচ্ছিন্ন) আখ্যা দিয়ে আলবানী সাহেব মন্তব্য করেছেন,
لأنه مختلف فيه وقد وصفه أبو زرعة وغيره بأنه سيئ الحفظ فلا جرم أن البخاري لم يحتج به.
অর্থাৎ কেননা তিনি বিতর্কিত, আবু যুরআ প্রমুখ তাকে স্মৃতি-দুর্বলতার শিকার আখ্যা দিয়েছেন। এ কারণেই বুখারী রহ. তার হাদীস দিয়ে প্রমাণ পেশ করেন নি।
৪. ইরওয়া গ্রন্থে ৫৬৪ নং হাদীসের আলোচনায় তিনি মন্তব্য করেছেন,
لكن الظاهر أن الدراوردي كان يضطرب في إسناده وهو صدوق احتج به مسلم إلا أنه كان يحدث من كتب غيره فيخطئ
অর্থাৎ এটাই স্পষ্ট যে, দারাওয়ার্দী এ হাদীসটির সনদ একেক বার একেক রকম বলেছেন। তিনি সাদূক। ইমাম মুসলিম তাকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছেন। তবে তিনি (দারাওয়ার্দী) অন্যের কিতাব থেকে হাদীস বর্ণনা করতে যেয়ে ভুল করতেন।
৫. ইরওয়া গ্রন্থেই ২৪২১ নং হাদীসটিকে আলবানী সাহেব জয়ীফ আখ্যা দিয়েছেন। হাদীসটি দারাওয়ার্দী বর্ণিত এবং অন্যান্য রাবীগণও মুসলিমের মানোত্তীর্ণ। যেমনটি বলেছেন হাকেম, আর সমর্থন করেছেন যাহাবী ও শেষে আলবানী সাহেব নিজেও। এ হাদীসটির সকল রাবী বিশ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও আলবানী সাহেব এটিকে জয়ীফ বলেছেন শুধু এ কারণে যে, সুফিয়ান ছাওরী, ইবনে ইসহাক ও ইবনে জুরায়জ হাদীসটি মুরসাল (সূত্রবিচ্ছিন্ন)রূপে বর্ণনা করেছেন। এরপর আলবানী সাহেব মন্তব্য লিখেছেন,
وإنَّ وَصْلَه وَهمٌ من الدراوردي فإنه وإن كان ثقة في نفسه ففي حفظه شيئ قال الحافظ صدوق يخطئ كان يحدث من كتب غيره فيخطئ وقال النسائي : حديثه عن عبيد الله العمري منكر وقال الذهبي في الميزان : صدوق غيره أقوى وقال أحمد : إذا حدث من حفظه يهم ليس هو بشيء وإذا حدث من كتابه فنعم ، وإذا حدث من حفظه جاء بالبواطيل وأما ابن المديني فقال : ثقة ثبت وقال أبو حاتم : لا يحتج به.
এ হাদীসটি অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করা দারাওয়ার্দীর একটি ভুল। তিনি মূলত বিশ্বস্ত হলেও তার স্মৃতিশক্তিতে সমস্যা ছিল। হাফেজ (ইবনে হাজার) বলেছেন, তিনি সাদূক বা সত্যনিষ্ঠ, তবে ভুল করতেন। অন্যদের কিতাব থেকে তিনি হাদীস বর্ণনার সময় ভুল করতেন। নাসাঈ বলেছেন, উবায়দুল্লাহ থেকে তার বর্ণনা আপত্তিকর। যাহাবী মীযান গ্রন্থে বলেছেন, তিনি সাদূক, তবে অন্যরা তার চেয়ে মজবুত। ইমাম আহমদ বলেছেন, তিনি যখন স্মৃতি থেকে বর্ণনা করতেন তখন ভুল করতেন, আর যখন কিতাব থেকে বর্ণনা করতেন, তখন ঠিক ঠিক বর্ণনা করতেন। তিনি আরো বলেছেন, যখন তিনি স্মৃতি থেকে বর্ণনা করতেন তখন বাতিল হাদীস বর্ণনা করতেন। ইবনুল মাদীনী অবশ্য বলেছেন, তিনি বিশ্বস্ত ও সুদৃঢ় ছিলেন। আবু হাতেম রাযী বলেছেন, তার (হাদীস) দ্বারা প্রমাণ পেশ করা যাবে না।
এ হলো আলবানী সাহেবের বক্তব্য। মুহাদ্দিসগণের এসব মন্তব্যের কারণেই তো আমরা বলেছি, দারাওয়ার্দীর আলোচ্য হাদীসকে (সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটুর পূর্বে হাত রাখা) সহীহ বলা মুশকিল। ইমাম তিরমিযী ও হাযেমী এ হাদীসকে গরীব বলে এর দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। হামযা আল কিনানী বলেছেন, মুনকার বা আপত্তিকর। ইবনে রজব বলেছেন, لا يثبت এটি প্রমাণিত নয়। এছাড়া বুখারী ও দারাকুতনীও এটিকে মালূল বা দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আলবানী সাহেবও দারাওয়ার্দীকে কখনো বিশ্বস্ত (ছিকাহ), কখনো সাদূক বলেছেন। তার হাদীসকে কখনো সহীহ, কখনো হাসান এবং কখনো জয়ীফ আখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং এ হাদীসকে এত জোর দিয়ে সহীহ বলা পক্ষপাতমূলক দুষ্টতা বৈ নয়।
খ. নববী ও যুরকানী এর সনদকে উৎকৃষ্ট বলেছেন ঠিক আছে, কিন্তু তারা তো শরীকের বর্ণনাকেও জাইয়্যেদ বা উৎকৃষ্ট মনে করতেন। সেটা গ্রহণ করা হলো না কেন?
তাছাড়া ইমাম নববী তার রওযাতুত তালিবীন গ্রন্থে স্পষ্ট লিখেছেন,
فالسنة أن يكون أول ما يقع على الأرض من الساجد ركبتيه ثم يديه ثم أنفه وجبهته
অর্থাৎ সুন্নত হলো সিজদাকারীর হাঁটু সর্বপ্রথম মাটিতে লাগবে, তারপর হাত, তারপর নাক ও কপাল। (১/২৫৮)
ইমাম নববীর একথা কি আপনি মানেন?
গ. আলবানী সাহেব বলেছেন, মুনাবীও কারো কারো বরাতে একথা উল্লেখ করেছেন। এখানে আলবানী সাহেব রীতিমতো সত্য গোপন করেছেন। মুনাবী তার ফায়যুল কাদীর গ্রন্থে লিখেছেন,
رمز المؤلف لصحته اغترارا بقول بعضهم سنده جيد وكأنه لم يطلع على قول ابن القيم وقع فيه وهم من بعض الرواة الخ
অর্থাৎ গ্রন্থকার (সুয়ূতী) এটি সহীহ হওয়ার সংকেত ব্যবহার করেছেন। কেউ কেউ যে বলেছেন, এর সনদ জাইয়্যেদ বা উৎকৃষ্ট, তিনি হয়তো সে কারণে ধোঁকার শিকার হয়েছেন। তিনি মনে হয় ইবনুল কায়্যিমের বক্তব্য সম্বন্ধে অবগত ছিলেন না যে, এ হাদীসে জনৈক রাবীর তরফ থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে। (১/৩৭৩)
একইভাবে আত তায়সীর গ্রন্থে মুনাবী বলেছেন,
رمز المؤلف لصحته وليس كما قال
অর্থাৎ গ্রন্থকার (সুয়ূতী) এটি সহীহ হওয়ার সংকেত ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তিনি যেমনটি বলেছেন ব্যাপারটি তেমন নয়। (১/১০৪)
লক্ষ করুন, মুনাবী কি বলেছেন, আর আলবানী সাহেবের উদ্ধৃতি থেকে কি বোঝা যায়।।
ঘ. জামে সগীরে সুয়ূতীও এটিকে সহীহ বলেছেন একথা ঠিক আছে। কিন্তু পাঠক একটু পূর্বে এই কিতাবের ভাষ্যকার মুনাবীর মন্তব্য অবহিত হয়েছেন। আসলে সহীহ বলার ক্ষেত্রে সুয়ূতী ছিলেন শিথিল মনোভাবাপন্ন। এই কিতাবটি সম্পর্কে ভূমিকায় তিনি বলেছিলেন, এতে কোন জাল হাদীস আনবেন না। কিন্তু তারপরও এতে অনেক অনেক জাল হাদীস এসে গেছে। সুতরাং জামে সাগীরে সহীহ বলার কথা বলে লাভ নেই।
ঙ. আলবানী সাহেব লিখেছেন, আব্দুল হক (আল ইশবিলী) তার আল আহকামুল কুবরা গ্রন্থে (১/৫৪) এটিকে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
এ বরাতটি ভুল বলে মনে হয়। আহকামুল কুবরা গ্রন্থে এ কথা নেই। সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠায়ও নেই, অন্য কোথাও নেই। অনেক অনুসন্ধান করেও আমরা এর হদিস পাই নি। হ্যাঁ, কিতাবুত তাহাজ্জুদে তিনি যে أحسن إسنادا বলেছেন, সেটি পাওয়া গেছে।
এরপর আলবানী সাহেব লিখেছেন,
وقد أعله بعضهم بثلاث علل :الأولى : تفرد الدراوردي به عن محمد بن عبد الله . والثانية : تفرد محمد هذا عن أبي الزناد . والثالثة : قول البخاري : ” لا أدري أسمع محمد بن عبد الله بن حسن من أبي الزناد أم لا ” .
অর্থাৎ কেউ কেউ এ হাদীসটির তিনটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথম, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে দারাওয়ার্দী একাকী এটি বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয়, মুহাম্মদও একাকী আবুয যিনাদ থেকে বর্ণনা করেছেন। তৃতীয়, ইমাম বুখারীর বক্তব্য, জানি না আবুয যিনাদ থেকে তিনি (মুহাম্মদ) শুনেছেন কি না।
প্রথমত, এখানে আলবানী সাহেব ‘কেউ কেউ … উল্লেখ করেছেন’ বলে ব্যাপারটিকে হালকা করেছেন। বড় বড়দের নাম উল্লেখ করলে পাঠক সেদিকেই ঝুঁকে পড়েন কি না সেজন্যই কারো নাম উল্লেখ না করে শুধু কেউ কেউ বলেই চালিয়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, ইমাম বুখারীর কথা তিনি অর্ধেক নকল করেছেন। কারণ এ অর্ধেকের জবাব দেওয়া সহজ। বাকি অর্ধেকের জবাব দেওয়া অত সহজ নয়। সে অর্ধেকে বুখারী রহ. বলেছেন, لا يتابع عليه এ হাদীসটির ক্ষেত্রে তার কোন সমর্থন পাওয়া যায় না। তাছাড়া এই মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ কে: তা নিয়েও ইমাম বুখারী দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। পেছনে ইবনে রজব হাম্বলীর বরাতে এ কথা তুলে ধরা হয়েছে।
এরপর আলবানী সাহেব বলেন,
وهذه العلل ليست بشيء :أما الأولى والثانية ؛ فلأن الدراوردي وشيخه محمداً هذا ثقتان – كما تقدم – ؛ فلا يضر تفردهما بهذا الحديث ، وليس من شرط الحديث الصحيح أن لا ينفرد بعض رواته به ، وإلا ؛ لما سلم لنا كثير من الأحاديث الصحيحة ،
অর্থাৎ এগুলো কোন ত্রুটি নয়। প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগের উত্তরে বলা যায়, দারাওয়ার্দী ও তার উস্তাদ এই মুহাম্মদ দুজনই যখন বিশ্বস্ত, তখন এই হাদীস বর্ণনায় তাদের নিঃসঙ্গতা কোন অসুবিধা সৃষ্টি করবে না। সহীহ হাদীসের জন্য এমন কোন শর্ত নেই যে, তার কোন বর্ণনাকারী নিঃসঙ্গ হতে পারবে না। অন্যথায় অনেক সহীহ হাদীসই নিখাদ থাকবে না।
সেই ঘুরে ফিরে একই কথা। তাদের বিশ্বস্ততাই তো প্রশ্নবিদ্ধ। স্বয়ং আপনার কাছেও। সুতরাং বারবার একই কথা বলে পাঠককে ধোঁকা দেওয়ার কি অর্থ? আমরা কি ইমাম বুখারী, তিরমিযী, হামযা কিনানী, আবু বকর হাযিমী ও ইবনে রজব হাম্বলী প্রমুখের কথা মানব, না আপনার কথা? এমনিভাবে ইমাম আহমদ, আবু যুরআ রাযী, আবু হাতেম রাযী সহ যারা দারাওয়ার্দীর স্মৃতিশক্তি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন তাদের কথা গ্রহণ করব, না আপনার কথা? দারাওয়ার্দীর স্মৃতিদুর্বলতার কথা তো আপনিও মেনে নিয়েছেন। তাহলে তার বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত থাকে কীভাবে?
আর আপনি যে বলেছেন, ‘সহীহ হাদীসের জন্য এমন কোন শর্ত নেই যে, তার কোন বর্ণনাকারী নিঃসঙ্গ হতে পারবে না’ এটি আংশিক সত্য। কারণ কোন রাবীর স্মৃতি যদি দুর্বল হয় তবে তার হাদীস ত্রুটি মুক্ত হলে হাসান স্তরের হবে। একাধিক সনদ ও সূত্রে বর্ণিত হলেই কেবল সেটি সহীহ’র মানে উত্তীর্ণ হতে পারবে।
এত গেল যদি তার বর্ণনা অন্য কোন হাদীসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। যদি সাংঘর্ষিক হয়, তবে তো হাসান হওয়াও মুশকিল।
আলবানী সাহেব নিজেও একথা বলেছেন। ‘আছ ছামারুল মুসতাতাব ফী ফিকহিস সুন্নাতি ওয়াল কিতাব’ গ্রন্থে মসজিদে প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সংক্রান্ত একটি হাদীসের আলোচনায় দারাওয়ার্দীর দুটি ভুল চিহ্নিত করে মন্তব্য করেছেন,
هو وإن كان ثقة ففيه شيء فلا يحتج به أيضا إذا خالف الثقات
অর্থাৎ তিনি বিশ্বস্ত হলেও তার মধ্যে কিছু সমস্যা ছিল। সুতরাং তিনি অন্যান্য বিশ্বস্ত রাবীদের বিপরীত বর্ণনা করলে সেটা দিয়ে প্রমাণ পেশ করা যাবে না।
আলোচ্য বিষয়ে দারাওয়ার্দীর বর্ণনাটি যেমন শরীকের বর্ণনার বিপরীত, তেমনি হযরত উমর ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.এর মতো প্রবীন সাহাবীগণের আমলেরও বিপরীত। সুতরাং এটা কি করে প্রামাণ্য হবে?
চ. আলবানী সাহেব জয়ীফাগ্রন্থে (৯২৯) হাঁটুর পূর্বে হাত রাখার প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে বলেছেন,
لما ثبت في أحاديث كثيرة من النهي عن بروك كبروك الجمل
অর্থাৎ কেননা বহু হাদীসে উটের মতো করে বসতে নিষেধ করা হয়েছে।
আমাদের বক্তব্য হলো এটা অতিশয়োক্তি মাত্র। আমাদের অনুসন্ধানমতে হযরত আবু হুরায়রা রা.এর হাদীসটি ছাড়া এ মর্মে দ্বিতীয় কোন হাদীস নেই। আলবানী-ভক্তদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন আরেকটি হাদীস বের করে দেখান। অন্যথায় এর দ্বারা মানুষ প্রতারিত হতে পারে।
জ. আরেকটি কথা আলবানী সাহেব ও তার ভক্তরা উদ্ধৃত করে থাকেন হাফেজ ইবনে হাজার রহ. এর বুলূগুল মারাম থেকে। তিনি আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখপূর্বক সেখানে (২৯২, ২৯৩) লিখেছেন,
وَهُوَ أَقْوَى مِنْ حَدِيثِ وَائِلٍ فَإِنْ لِلْأَوَّلِ شَاهِدًا مِنْ حَدِيثِ : اِبْنِ عُمَرَ – رضي الله عنه – صَحَّحَهُ اِبْنُ خُزَيْمَةَ , وَذَكَرَهُ اَلْبُخَارِيُّ مُعَلَّقًا مَوْقُوفًا .
অর্থাৎ এ হাদীসটি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বর্ণিত হাদীসের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। কেননা এর সমর্থক ও সাক্ষী রয়েছে ইবনে উমর রা.এর হাদীসটি। ইবনে খুযায়মা এটিকে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারী তালীক (সূত্রের উল্লেখ ছাড়া)রূপে ও মাওকুফ (ইবনে উমরের নিজস্ব আমল) রূপে এটি উদ্ধৃত করেছেন।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয় ;
১. ইবনে হাজার রহ. এর চেয়ে অনেক বড় বড় মুহাদ্দিস ওয়াইল রা. বর্ণিত হাদীসটিকে সহীহ বা হাসান বলেছেন এবং তাদের অনেকেই এটিকে আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীসের উপর অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করেছেন। পেছনে সে কথা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
২. ইবনে হাজার আসকালানীর কথাটি আপনারা পুরোপুরি মানেন না। কারণ তার বক্তব্য থেকে পরিস্কার বোঝা যায়, হযরত ওয়াইল রা. এর হাদীসটিও শক্তিশালী। কিন্তু আপনারা সেটিকে জয়ীফ বলেছেন। একইভাবে ইবনে সাইয়্যেদুন্নাস রহ. ও আব্দুল হক ইশবেলীর কথাও আপনারা মানছেন না। ইবনে সাইয়্যেদুন্নাস তো স্পষ্টভাবে হযরত ওয়াইল রা. বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আর আব্দুল হক ইশবিলীর কথা থেকেও তাই বুঝে আসে। কারণ তিনি যখন আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসটিকে অধিক হাসান বলছেন, তাতেই তো বোঝা যায় ওয়াইল রা. এর হাদীসটিও তার দৃষ্টিতে হাসান। অথচ আপনারা বলছেন জয়ীফ!!
৩. ইবনে হাজার রহ. যে সমর্থক ও সাক্ষী বর্ণনার কারণে আবু হুরায়রা রা.এর হাদীসটিকে অধিক শক্তিশালী আখ্যা দিয়েছেন, সেই হাদীসটি দুর্বল হওয়ার কারণে তার দাবিও সঠিক বলে বিবেচিত হচ্ছে না। পূর্বেই বলেছি, মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে উবায়দুল্লাহ উমারী থেকে দারাওয়ার্দীর বর্ণনা মুনকার আপত্তিকর ও জয়ীফ। আর ইবনে উমর রা. এর হাদীসটি একমাত্র ঐ সূত্রেই বর্ণিত। খোদ আলবানী সাহেব এই সূত্রে বর্ণিত অন্য একটি হাদীসকে জয়ীফ সাব্যস্ত করে বলেছেন,
وأنا أرى أن التردد المذكور إنما هو من شيخ إسحاق وهو عبد العزيز بن محمد الدراوردي ، فإنه وإن كان ثقة ومن رجال مسلم ، ففي حفظه شيء أشار إليه الحافظ بقوله فيه في ” التقريب ” : ” صدوق كان يحدث من كتب غيره فيخطئ ، قال النسائي : حديثه عن عبيد الله العمري منكر ” .
قلت : وهذا من روايته عن عبيد الله كما ترى فهو منكر مرفوعا ، والمحفوظ موقوف على ابن عمر ، كذلك رواه جمع من الثقات عن نافع .(الضعيفة ৭১৭)
অর্থাৎ আমি মনে করি এই দোদুল্যমানতা ইসহাকের উস্তাদ দারাওয়ার্দী থেকে ঘটেছে। কেননা তিনি যদিও বিশ্বস্ত ও মুসলিম শরীফের রাবী, তথাপি তার স্মৃতিশক্তিতে কিছু সমস্যা ছিল। হাফেজ (ইবনে হাজার) এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন তার এই মন্তব্যে: তিনি সাদূক, তবে ভুল করতেন। অন্যদের কিতাব থেকে তিনি হাদীস বর্ণনা করতেন আর ভুলের শিকার হতেন। আর ইমাম নাসাঈ বলেছেন, উবায়দুল্লাহ থেকে তার বর্ণনা আপত্তিকর। আমি (আলবানী সাহেব) বলব, এ বর্ণনাটি তিনি উবায়দুল্লাহ থেকেই করেছেন। যেমনটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। সুতরাং এটি মারফূরূপে আপত্তিকর। সঠিক হবে এটি ইবনে উমর রা.এর নিজস্ব বক্তব্য। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নয়।) একাধিক বিশ্বস্ত রাবী নাফে’র সূত্রে ইবনে উমর রা.এর বক্তব্য হিসেবেই এটি বর্ণনা করেছেন। (যয়ীফা, ৭১৭)
সুতরাং একথা বুঝতে আর বাকি নেই যে, উবায়দুল্লাহ থেকে দারাওয়ার্দীর বর্ণনা স্বয়ং আলবানীর কাছেও আপত্তিকর। আর এটি আপত্তিকর ও জয়ীফ হলে এর উপর ভিত্তি করে যে হাদীসকে অধিক শক্তিশালী বলা হলো সেটাও আর সঠিকতা পাবে না।
৪. হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসটির যেমন বলা হয় সমর্থক ও সাক্ষী হিসাবে ইবনে উমর রা.এর বর্ণনা রয়েছে, যদিও সেটি দুর্বল। তেমনি শরীকের বর্ণনাটিরও তো সাক্ষী ও সমর্থক বর্ণনা রয়েছে হযরত আনাস রা.এর হাদীসটি। আমীর আল ইয়ামানী রহ. বুলূগুল মারাম গ্রন্থের ভাষ্য সুবুলুস সালামে কতই না সুন্দর বলেছেন:
وقول المصنف إن لحديث أبي هريرة شاهدا يقوى به معارض بأن لحديث وائل أيضا شاهدا قد قدمناه وقال الحاكم إنه على شرطهما وغايته وإن لم يتم كلام الحاكم فهو مثل شاهد أبي هريرة الذي تفرد به شريك فقد اتفق حديث وائل وحديث أبي هريرة في القوة وعلى تحقيق ابن القيم فحديث أبي هريرة عائد إلى حديث وائل وإنما وقع فيه قلب ولا ينكر ذلك فقد وقع القلب في ألفاظ الحديث
অর্থাৎ গ্রন্থকার যে বলেছেন, আবু হুরায়রা রা.এর হাদীসের সমর্থক ও সাক্ষী বর্ণনা রয়েছে, যেটির দ্বারা এটি শক্তিশালী হয়। এর বিপরীতে বলা যায় ওয়াইল রা.এর হাদীসেরও সমর্থক ও সাক্ষী রয়েছে, যেমনটি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। হাকেম রহ. বলেছেন, সেটি বুখারী ও মুসলিম উভয়ের শর্ত মোতাবেক (সহীহ)। হাকেমের মন্তব্য যদি পুরোপুরি সঠিক না-ও হয়, তবুও এতটুকু তো নিশ্চিত যে, আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসটির সমর্থক ও সাক্ষীর মতো এটি ঐ হাদীসের সমর্থক ও সাক্ষী, যেটি এককভাবে শরীক বর্ণনা করেছেন।
আর ইবনুল কায়্যিমের গবেষণা অনুযায়ী তো আবু হুরায়রা রা.এর হাদীসটি ওয়াইল রা.এর হাদীসের সমার্থক হয়ে যায়। আবু হুরায়রা রা.এর হাদীস (বর্ণনাকারীর কারণে) ওলটপালট হয়ে গেছে। এটা অস্বীকার করার জো নেই। কেননা হাদীসের একাধিক শব্দে ও বাক্যে ওলটপালট সংঘটিত হয়েছে। (সুবুলুস সালাম, ১/২৮১)
আরেকটি কথা, পেছনে তিরমিযী, খাত্তাবী ও ইমাম মুহিয়্যুস সুন্নাহ বাগাবী’র বরাতে উল্লেখ করেছি যে, আগে হাঁটু রাখা সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমগণের মত। একই কথা উল্লেখ করেছেন আমীর ইয়ামানী, শাওকানী ও আযীমাবাদী প্রমুখ। এ সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে সাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ, তিন মুজতাহিদ ইমাম ও মুহাদ্দিস-ফকীহ সকলে আছেন। আলবানী সাহেব নিজের পক্ষের একটি দলিল পেশ করতে গিয়ে একটি হাদীস সম্পর্কে কত সুন্দর বলেছেন,
ممن صححه الترمذي وابن العربي والضياء وابن القيم ويمكن أن يضم إليهم الإمام أحمد وإسحاق ، فإنهما أخذا بالحديث وعملا به باعتراف العراقي نفسه وذلك دليل إن شاء الله تعالى على أن الحديث ثابت عندهما وهو المطلوب (تصحيح حديث إفطار الصائم قبل سفره بعد الفجر)
অর্থাৎ তিরমিযী, ইবনুল আরাবী, আয যিয়া ও ইবনুল কায়্যিম এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। তাদের সঙ্গে ইমাম আহমদ ও ইসহাককেও যুক্ত করা যেতে পারে। কারণ তারা দুজনই এ হাদীসটি গ্রহণ করেছেন এবং এতদনুসারে আমল করেছেন। যেমনটি স্বয়ং ইরাকী রহ. স্বীকার করে নিয়েছেন। এতে ইনশাআল্লাহু তায়ালা এ কথার দলিল রয়েছে যে, হাদীসটি তাদের দুজনের কাছেই প্রমাণিত। আর এটাই বলা এখানে উদ্দেশ্য। (তাসহীহু হাদীসে ইফতার …,পৃ. ২২)
পাঠক, লক্ষ করুন, এ বক্তব্য কি আমাদের এ মাসআলায় খাটে না? এখানে যে সংখ্যাগরিষ্ঠরা ওয়াইল রা. এর হাদীসটি গ্রহণ করলেন এবং তদনুযায়ী আমল করলেন, এতে কি প্রমাণিত হয় না: হাদীসটি তাদের নিকট প্রমাণিত? বিশেষ করে এই সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে যখন উল্লিখিত দুজন মনীষী ইমাম আহমদ ও ইসহাকও রয়েছেন? তাহলে আলবানী সাহেব, ড. আসাদুল্লাহ গালিব (তার ছালাতুর রাসূল ছাঃ গ্রন্থে) ও মুযাফফর বিন মুহসিন (তার জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লাহ ছাঃ এর ছালাত গ্রন্থে) কেন এ হাদীসকে দুর্বল আখ্যা দিচ্ছেন?