একটি উদ্ধৃতি প্রসঙ্গে :
লা-মাযহাবী বন্ধুরা কাযী আবু ইয়ালা রহ. এর তাবাকাতুল হানাবেলা গ্রন্থ থেকে ইমাম আহমদের একটি উক্তি সম্ভবত হানাফীদেরকে কটাক্ষ করেই উদ্ধৃত করে থাকেন। উক্তিটি হলো, তুমি যদি (বাগদাদের) একশত মসজিদেও ছালাত আদায় কর, তবুও তুমি কোন মসজিদে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের ছালাত দেখতে পাবে না।
এ উক্তিটি তারা যেভাবে উপস্থাপন করেন, তাতে অনুমিত হয় যে, ইমাম আহমদ হানাফীদের উদ্দেশ্যেই উক্তিটি করেছিলেন। তারা ইমাম আহমদের মূল আলোচ্য বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন করে শুধু তাঁর এ উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন। মূলত তিনি কোন এক মসজিদে নামায আদায়কালে লক্ষ করেছিলেন, অনেক মুসল্লি ইমামের পূর্বেই রুকু ও সেজদা করে। ফলে তাদের নামায ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গেই তিনি ঐ উক্তিটি করেছিলেন। কিন্তু এ কথা বলাও এখানে আমার উদ্দেশ্য নয়। তাদের উদ্ধৃতি খুঁজতে গিয়ে সেই জায়গায়ই: আল হামদু লিল্লাহ: ইমাম আহমদের নিম্নোক্ত বক্তব্যটি পেয়ে গেছি, যাতে তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন,
خصلةٌ ، قد غلب عليها الناس في صلاتهم ـ إلا من شاء الله ـ من غير علة ، وقد يفعلها شبابهم وأهل القوّة والجلد منهم : ينحطّ أحدهم من قيامه للسّجود ، ويضع يديه على الأرض قبل ركبتيه ، وإذا نهض من سجوده ، أو بعدما يفرغ من التّشهّد : يرفع ركبتيه من الأرض قبل يديه ، وهذا خطأ ، وخلاف ما جاء عن الفقهاء ، وإنّما ينبغي له إذا انحطّ من قيامه للسّجود : أن يضع ركبتيه على الأرض ، ثم يديه ، ثم جبهته ، وإذا نهض : رفع رأسه ، ثم يديه ، ثم ركبتيه ، بذلك جاء الأثر عن النّبيّ – صلى الله عليه وسلم فأمروا بذلك ، وانهوا عنه من رأيتم يفعل خلاف ذلك ، وأمروه أن ينهض – إذا نهض – على صدور قدميه ،
অর্থাৎ কোন রকম ওযর ছাড়া একটি অভ্যাস নামাযে মানুষের উপর: কিছু ব্যতিক্রম লোক ছাড়া: প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের যুবক শ্রেণী ও শক্তিমান ও বলবানরাও এটি করে থাকে। তারা যখন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সেজদায় যায়, তখন মাটিতে হাত রাখে হাঁটু রাখার পূর্বে। আর যখন সেজদা থেকে উঠে কিংবা তাশাহহুদ শেষ করে ওঠে, তখন হাত ওঠানোর পূর্বে মাটি থেকে হাঁটু উত্তোলন করে। এটা একটি ভুল পদ্ধতি। ফকীহগণের কাছ থেকে যা পাওয়া গেছে এটা তার বিপরীত। তার জন্য উচিৎ হলো, সেজদায় যাওয়ার সময় আগে মাটিতে হাঁটু রাখা, পরে হাত, পরে চেহারা। আর যখন উঠবে, তখন প্রথমে মাথা, পরে হাত, পরে হাঁটু উঠাবে। নবী সা. থেকে এভাবেই হাদীস এসেছে। তাই তোমরা এভাবেই করার নির্দেশ দাও এবং যাদেরকে এর ব্যতিক্রম করতে দেখ তাদেরকে ঐ কাজ থেকে নিষেধ কর। তাদেরকে বল, যেন পায়ের উপর ভর দিয়েই উঠে পড়ে। (তাবাকাতুল হানাবিলা, ১/৩৬৩)
এখন দেখুন, এরা কি বলে, আর ইমাম আহমদ কি বলেন? মানুষ কোনটা মানবে? ইমাম আহমদের কথা, না এদের মতো মানুষের কথা, যাদের বক্তব্য স্ববিরোধিতা ও ভুলে ভরা?
ইমাম আহমদের মতো ইসহাক রহ.ও এ মাসআলায় একই মত অবলম্বন করেছেন।
ইমাম ইবনুল মুনযিরও (মৃত্যু ৩১৯ হিজরী) তার আল ইকনা’ গ্রন্থে তার নিজের মত এভাবে ব্যক্ত করেছেন,
ثم خر ساجدا تكبر مع انحطاطك وأنت تهوي للسجود ولتقع ركبتاك على الأرض قبل يديك ويداك قبل وجهك.
অর্থাৎ অতঃপর তুমি সেজদা করো, এবং সেজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বল। মাটিতে হাত পড়ার পূর্বে যেন তোমার হাঁটু পড়ে এবং চেহারা পড়ার পূর্বে যেন হাত পড়ে। (১/৯৪)
অসম দুঃসাহসিকতা
পূর্বেই বলেছি, সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহ ও মুহাদ্দিস হাতের পূর্বে হাঁটু দিয়েই সেজদায় যাওয়ার পক্ষে। ইমাম দারিমী অবশ্য বলেছেন, আগে হাত দিক বা হাঁটু, উভয়টিই ভাল কাজ। ইমাম মালেক রহ. থেকেও এমন একটি বর্ণনা রয়েছে যে, বিষয়টি মুসল্লির এখতিয়ারাধীন। ইমাম ইবনে তায়মিয়াও এ মতটি অবলম্বন করেছেন। তবে ইমাম মালেকের প্রসিদ্ধ মত হলো, হাত আগে দেবে, পরে হাঁটু। এমনটি করা তার নিকট মুস্তাহাব। মালেকী মাযহাবের কিতাবসমূহে নামাযে মুস্তাহাব আমলের তালিকায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে। (দ্র. আহমাদ আদ দারদের, আশ শারহুল কাবীর, ১/২৫০) এসব থেকে স্পষ্ট যে, উম্মতের কেউই এটাকে ফরজ বলেন নি। হিজরী পঞ্চম শতকে সর্বপ্রথম ইবনে হাযম জাহিরী (মৃত্যু ৪৫৬) আগে হাত দিয়ে সেজদায় যাওয়াকে ফরজ বলে উম্মত থেকে বিচ্ছিন্ন মত পোষণ করেছেন। দীর্ঘ শতাব্দী পর আলবানী সাহেব (মৃত্যু ১৪২০ হিজরী) সেই বিচ্ছিন্ন মতটিকে বেছে নিয়ে অসম দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। (দ্র. আসলু সিফাতিস সালাহ) তার ভক্তরা সকলে এ বিষয়ে তার সঙ্গে একমত হতে পারে নি। ড. আসাদুল্লাহ গালিব তার ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) গ্রন্থে নামাযের সুন্নত আমলগুলোর মধ্যে এটিকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (দ্র. পৃ. ৫২)