কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১.আলোচ্য মাসআলার শিরোনামটি ‘উমরী কাযা’ সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধির নিরিখেই অবলম্বন করা হয়েছে। অন্যথায় এর সঠিক নাম হবে قضاء الفوائت ‘কাযাউল ফাওয়াইত’। এ নামটিই বিষয়বস্তুর অধিক উপযুক্ত । কেননা ‘উমরী কাযা’ নামে কোন কোন অনির্ভরযোগ্য ওযীফার বইয়ে অন্য একটি নামাযের কথা উল্লেখিত হয়েছে। কোন কোন মহলে তা বেশ প্রসিদ্ধও বটে। শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। এ সংক্রান্ত যে হাদীসটি সেসব পুস্তক-পুস্তিকায় উল্লেখিত হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বাতিল। যথা: ‘জুমআতুল ওয়াদা’ বা রমযান মাসের শেষ জুমায় এক নামায পড়ে নিলে তা সত্তর বছরের কাযা নামাযের জন্য যথেষ্ট হবে।’ এ রেওয়ায়াত এবং এ জাতীয় অন্য সকল রেওয়ায়াত মুহাদ্দিসগণের ঐকমত্য অনুসারে ‘মওযূ’। মোল্লা আলী ক্বারী র. মওযূ হাদীস সংক্রান্ত তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাবে লেখেন:
حديث – من قضى صلاة من الفرائض فى آخر جمعة من شهر رمضان كان ذلك جابرا لكل صلاة فائتة فى عمره إلى سبعين سنة- باطل قطعا. لأنه منافض للإجماع على أن شيئا من العبادات لا تقوم مقام فائتة سنوات.
“রমযান মাসের শেষ জুমায় একটি ফরয নামাযের কাযা আদায় করা হলে তা জীবনের সত্তর বছরের কাযা নামাযের জন্য যথেষ্ট হবে” এ রেওয়ায়াতটি নিঃসন্দেহে বাতিল। কেননা এ বিষয়ে উম্মাহর ইজমা রয়েছে যে, কোন ইবাদত কয়েক বছরের ছুটে যাওয়া নামাযের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না।” আল-মওযূআতুল কুবরা ১২৫
অন্যান্য মুহাদ্দিসগণও এব্যাপারে একমত। অতএব এজাতীয় ভিত্তিহীন বর্ণনাসমূহ থেকে প্রতারিত হওয়ার কোন অবকাশ নেই। বরং নামাযের ব্যাপারে পূর্ণ গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। যেভাবে আল্লাহ তাআলা তা ফরজ করেছেন ঠিক সেভাবেই সময় মত আদায় করা জরুরি। যদি অবহেলাবশত কোন নামায কাযা হয়ে যায় তবে যে পরিমাণ নামায কাযা হয়েছে সবই আদায় করতে হবে। এক নামায আদায় করে সকল নামাযই আদায় হয়ে গিয়েছে ; এ ধারণা করা কোন ক্রমেই ঠিক নয়।
২.এখানে এ বিষয়টি উল্লেখ করাও অনুচিত হবে না যে, যারা মনে করেন, ঘুমন্ত অবস্থায় নামায কাযা হয়ে গেলে তাতে কোন অপরাধ নেই। এ জন্য তারা সকাল ৮/৯ টায় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করে নিয়েছেন। ঘুম থেকে ওঠার পর ফজরের নামায পড়েন বা একে কাযা নামাযের ফিরিস্তিতে যোগ করে দেন যে, পরবর্তী সময়ে কাযা করে নেব।
এ জাতীয় কর্মকা- নামাযের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরযের ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়। হাদীস শরীফে অনিচ্ছাকৃতভাবে কখনও ঘুমন্ত অবস্থায় নামায ছুটে গেলে তা কাযা করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হাদীসের কোথাও মানুষকে নিদ্রার ব্যাপারে এতটা স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি যে, সময় মত জাগ্রত হওয়ার কোন ফিকিরই তাকে করতে হবে না। শরীয়তে ইশার পরে গল্পগুজব করতে এজন্যই নিষেধ করা হয়েছে যে, এতে ফজরের নামায কাযা হয়ে যেতে পারে। অনুরূপ কোন ওযরবশত ঘুমুতে বিলম্ব হলে যদি এই আশংকা হয় যে, সময় মত ঘুম ভাঙ্গবে না এবং নামায কাযা হয়ে যেতে পারে তাহলে সামর্থ অনুযায়ী ঘুম থেকে জাগার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জিহাদের সফর থেকে ফেরার পথে এরূপ বিলম্বে ঘুমুতে যাওয়ার সময় হযরত বিলাল রা. কে সময় মত জাগিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সহীহ বুখারী হা.৫৯৫ সহীহ মুসলিম ৬৮০-৬৮১
যারা শোয়ার সময় জাগ্রত হওয়ার ব্যবস্থা রাখা তো দূরের কথা, সঠিক সময়ে জাগার নিয়তও রাখে না এবং নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকার অভ্যাস গড়ে নিয়েছেন তাদের সতর্ক হওয়া উচিত এবং এ জাতীয় মনগড়া বাহানা পরিত্যাগ করে এই মহান ইবাদতটির ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত।
৩.আলোচ্য মাসআলাতে এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে, ‘কাযা’ আল্লাহ তাআলার ঋণ পরিশোধের একটি পন্থা মাত্র । এটা কখনও ‘আদা’র বিকল্প নয়। অতএব পরে কাযা করে নেব এই অজুহাতে কখনও নামাযকে সময়চ্যুত করা যাবে না। যদি ‘কাযা’ নামাযটি ‘আদা’র পূর্ণ বিকল্পও হত তবুও নামাযকে বিলম্বিত করা কোনক্রমেই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হতো না। কেননা কাযা আদায় করা পর্যন্ত বেঁচে থাকারই বা কী নিশ্চয়তা রয়েছে ? যখন নামাযকে নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বিত করাই একটি মারাতœক কবীরা গোনাহ এবং শুধু কাযা করে নিলেই অপরাধ ক্ষমা হয়ে যায় না, তো আগামীতে কাযা করার অনিশ্চিত ধারণার ভিত্তিতে নামাযের ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করা কোন মুমিনের কাজ হতে পারে না।
প্রসিদ্ধ ফিকহী মাযহাবসমূহের কয়েকটি কিতাবের উদ্ধৃতি নীচে উল্লেখ করা হচ্ছে:
প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ আল্লামা ইবনে নুজাইম রহ. বলেন:
فَالْأَصْلُ فِيهِ أَنَّ كُلَّ صَلَاةٍ فَاتَتْ عَنْ الْوَقْتِ بَعْدَ ثُبُوتِ وُجُوبِهَا فِيهِ فَإِنَّهُ يَلْزَمُ قَضَاؤُهَا سَوَاءٌ تَرَكَهَا عَمْدًا أَوْ سَهْوًا أَوْ بِسَبَبِ نَوْمٍ وَسَوَاءٌ كَانَتْ الْفَوَائِتُ كَثِيرَةً أَوْ قَلِيلَةً
যে নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় হয়নি তার কাযা আদায় করা অপরিহার্য, তা ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করা হোক অথবা ভুলে যাওয়ার কারণে বা ঘুমন্ত অবস্থায় কাযা হোক, কাযা নামাযের সংখ্যা বেশি হোক বা কম হোক। (আলবাহরুর রায়েক, ২/৭৯)
ইমাম মালেক রহ. বলেন:
من نسي صلوات كثيرة أو ترك صلوات كثيرة فليصل على قدر طاقته. وليذهب إلى حوائجه، فإذا فرغ من حوائجه صلى أيضا ما بقي عليه حتى يأتي على جميع ما نسي أو ترك
ভুলে যাওয়ার কারণে যার অনেক নামায কাযা হলো বা ইচ্ছাকৃত কাযা করল, সে প্রয়োজনাদি সম্পন্ন করার মাঝে মাঝে সামর্থ্য অনুযায়ী তা আদায় করতে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় কাজ সমাধা হওয়ার পর কাযা হওয়া সকল নামায আদায় করবে। (আলমুদাওয়ানাতুল কুবরা, ১/১২৩)
ইমাম ইবনে আব্দুল বার মালেকী রহ. বলেন:
وإذا كان النائم والناسي للصلاة – وهما معذوران – يقضيانها بعد خروج وقتها كان المتعمد لتركها المأثوم في فعله ذلك أولى بالا يسقط عنه فرض الصلاة وأن يحكم عليه بالإتيان بها لأن التوبة من عصيانه في تعمد تركها هي أداؤها وإقامة تركها مع الندم على ما سلف من تركه لها في وقتها وقد شذ بعض أهل الظاهر وأقدم على خلاف جمهور علماء المسلمين وسبيل المؤمنين فقال ليس على المتعمد لترك الصلاة في وقتها أن يأتي بها في غير وقتها… وشذ عن جماعة علماء الأمصار ولم يأت فيما ذهب إليه من ذلك بدليل يصح في العقول
ঘুম বা বিস্মৃতির কারণে যার নামায কাযা হয়েছে, ওযর থাকা সত্ত্বেও যখন তাকে ঐ নামায আদায় করতে হয়, তখন ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ত্যাগ করে যে মহা অপরাধ করেছে তার নামায মাফ হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। তার এই অপরাধের তওবা হল নামাযটি আদায় করে অপরাধের ভার লাঘব করা এবং নির্ধারিত সময়ে আদায় না করার জন্য অনুতপ্ত হওয়া। এ বিষয়ে জনৈক ‘জাহেরী’ মুসলিম উম্মাহর অসংখ্য আলিমের বিরোধিতা করে ‘সাবীলুল মুমিনীন’ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তার বক্তব্য, ইচ্ছাকৃতভাবে নির্ধারিত সময়ে নামায না পড়লে ঐ নামায আর আদায় করতে হবে না। এই মত অবলম্বন করে তিনি সকল মুসলিম জনপদের আলেমগণের জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন এবং তার দাবির সপক্ষে যুক্তিসংগত কোন প্রমাণ পেশ করতে সক্ষম হন নি। (আলইসতিযকার, ১/৩০১)
ইবনে বাত্তালের বক্তব্য
বুখারী শরীফের প্রথম ভাষ্যকার ইবনে বাত্তাল (মৃত্যু ৪৪৯ হিজরি) বলেন,
وفى هذا الحديث رد على جاهل ، انتسب إلى العلم وهو منه برىء ، زعم أنه من ترك الصلاة عامدًا أنه لا يلزمه إعادتها . واحتج بأن الرسول ( صلى الله عليه وسلم ) قال : ( من نام عن صلاة أو نسيها فليصلها إذا ذكرها ) ، ولم يذكر العامد ، فلم يلزمه القضاء ، وإنما يقضيها الناسى والنائم فقط ، وهذا ساقط من القول يئول إلى إسقاط فرض الصلاة عن العباد ، وقد ترك الرسول يوم الخندق صلاة الظهر والعصر قاصدًا لتركها لشغله بقتاله العدو ، ثم أعادها بعد المغرب . ويقال له : لمَّا أوجب النبى ( صلى الله عليه وسلم ) على الناسى النائم الإعادة ، كان العامد أولى بذلك ؛ لأن أقل أحوال الناسى سقوط الإثم عنه ، وهو مأمور بإعادتها ، والعامد لا يسقط عنه الإثم ، فكان أولى أن تلزمه إعادتها ، ولا يوجد فى شىء من مسائل الشريعة مسألة : العامد فيها معذور ، بل الأمر بضد ذلك لقوله عليه السلام : ( إن الله تجاوز لأمتى عن الخطأ والنسيان ) ، فإذا تجاوز الله عن الناسى إثم تضييعه ، وأمر بأداء الفرض ، فكان العامد المنتهك لحدود الله غير ساقط عنه الإثم ، بل الوعيد الشديد متوجه عليه ، كان الفرض أولى ألا يسقط عنه ويلزمه قضاؤه ، وقد أجمعت الأمة على أن من ترك يومًا من شهر رمضان عامدًا من غير عذر أنه يلزمه قضاؤه ، فكذلك الصلاة ، ولا فرق بين ذلك ، والله الموفق . )ابن بطال في شرح البخاري باب قضاء الصلاة الأولى فالأولى)
এ হাদীসে ঐ মূর্খের মত খ-িত হয়েছে, যে নিজেকে ইলমের প্রতি সম্পর্কিত করে, অথচ সে ইলম থেকে সম্পর্কহীন। এ ব্যক্তি (ইবনে হাযমের প্রতি ইংগিত:অনুবাদক) মনে করে ‘ইচ্ছাকৃত যে নামায ত্যাগ করে তার উপর কাযা জরুরি নয়। আর দলিল এই পেশ করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযের সময় ঘুমন্ত রইল, বা নামাযের কথাই ভুলে গেল, সে যেন স্মরণ হতেই নামাযটি আদায় করে নেয়। এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছাকৃত ত্যাগকারীর কথা বলেন নি। তাই তাকে কাযাও করতে হবে না। শুধু ঘুমন্ত ও বিস্মৃত ব্যক্তিই কাযা করে নেবে।
এটা একটা বাজে কথা। এর ফলে বান্দাদের উপর থেকে ফরজ নামায রহিত করা হচ্ছে। অথচ রাসূল সা. খন্দক যুদ্ধের সময় ইচ্ছা করেই জোহর ও আসর নামায ছেড়ে দিয়েছিলেন। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত থাকার কারণেই তিনি তা ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে মাগরিবের পর সেই নামায আদায় করে নিয়েছিলেন।
এ ব্যক্তিকে বলা যায়, নবী সা. যখন বিস্মৃত ও ঘুমন্ত ব্যক্তির উপর নামায পড়ে নেওয়া আবশ্যক করেছেন, তখন তো ইচ্ছাকারীর উপর আরো বেশি আবশ্যক হওয়ার কথা। কেননা বিস্মৃত ব্যক্তির ন্যূনতম অবস্থা হলো, তার উপর থেকে গুনাহ রহিত হয়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে নামায পড়ে নিতে বলা হয়েছে। আর ইচ্ছাকারীর উপর থেকে তো গুনাহও রহিত হয় না। তাহলে তো তার জন্য পড়ে নেওয়া আরো বেশি উচিত হবে। গোটা শরিয়তে এমন কোন মাসআলা নেই, যেখানে ইচ্ছাকৃত কর্মকারীকে মাযুর ধরা হয়েছে। বরং ব্যাপার তার উল্টো। কারণ রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল ও বিস্মৃতি ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ যখন বিস্মৃত ব্যক্তির নামায নষ্ট করার গুনাহ মাফ করে দিয়ে তাকে ফরজটি আদায় করে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন, তাহলে ইচ্ছা করে যে ব্যক্তি নামায তরক করল, এবং আল্লাহর দেওয়া সীমা লঙ্ঘন করে ফেলল, তার উপর থেকে গুনাহর ভারও রহিত হচ্ছে না, বরং তার প্রতি কঠোর হুমকি আরোপিত হচ্ছে, তার উপর থেকে ফরজ রহিত না হওয়াই তো অধিক সঙ্গত, এবং কাযা করা তার উপর আবশ্যক হওয়াই তো অধিক যুক্তিযুক্ত। এদিকে উম্মাহর ঐক্যমতে উযর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে যে ব্যক্তি রমযান মাসের এক দিনের রোযা ছেড়ে দিল, তাকে সেটি অবশ্যই কাযা করতে হবে। নামাযের বেলায়ও তাই। এ দুটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। (অনুচ্ছেদ, নামাযের কাযা ক্রমানুসারে করা।)
ফিকহে শাফেয়ী ও হাম্বলী
ফিকহে শাফেয়ীর অন্যতম কিতাব ‘ফাতহুল জাওয়াদ’-এ বলা হয়েছে:
من فاتته)… (مكتوبة) فأكثر (قضى) ما فاتته بعذر أو غيره نعم غير المعذور يلزمه القضاء فورا. ويظهر أنه يلزمه صرف جميع زمنه للقضاء ما عدا ما يحتاج لصرفه فيما لا بد منه.
যে ব্যক্তির এক বা একাধিক ওয়াক্তের নামায কাযা হয়েছে, ওযরবশত হোক বা বিনা ওযরে, তাকে সকল নামায আদায় করতে হবে। তবে বিনা ওযরে ত্যাগকারী অনতিবিলম্বে কাযাকৃত সকল নামায আদায় করবে এবং অতি প্রয়োজনীয় কাজকর্ম ছাড়া পূর্ণ সময় এই কাজে ব্যয় করবে। (ফাতহুল জাওয়াদ, ১/২২৩)
সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম নববী রহ. من نسي صلاة فليصها إذا ذكرهاহাদীসটির উপর আলোচনা করতে গিয়ে শরহে মুসলিমে (৫/১৮৩) বলেন,
فِيهِ : وُجُوب قَضَاء الْفَرِيضَة الْفَائِتَة سَوَاء تَرَكَهَا بِعُذْرٍ كَنَوْمٍ وَنِسْيَان أَوْ بِغَيْرِ عُذْر ، وَإِنَّمَا قَيَّدَ فِي الْحَدِيث بِالنِّسْيَانِ لِخُرُوجِهِ عَلَى سَبَب ، لِأَنَّهُ إِذَا وَجَبَ الْقَضَاء عَلَى الْمَعْذُور فَغَيْره أَوْلَى بِالْوُجُوبِ ، وَهُوَ مِنْ بَاب التَّنْبِيه بِالْأَدْنَى عَلَى الْأَعْلَى
অর্থাৎ এ হাদীসে ছুটে যাওয়া ফরয নামায আদায়ের অপরিহার্যতাও প্রমাণিত হয়। নামাযটি কোন ওযরবশত যথা, ঘুম বিস্মৃতি ইত্যাদির কারণে কাযা হোক বা বিনা ওযরে। হাদীস শরীফে শুধু বিস্মৃতির উল্লেখ এজন্য হয়েছে যে, তা একটি ওযর। আর ওযরের কারণে কাযা হওয়া নামায যদি আদায় করা অপরিহার্য হয় তবে বিনা ওযরে কাযা হওয়া নামায যে আদায় করা অপরিহার্য তা তো বলাই বাহুল্য। (শরহে মুসলিম, ৫/১৮৩)
হাম্বলী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ইমাম আল্লামা মারদাভী রহ. বলেন:
قوله: “ومن فاتته صلوات لزمه قضاؤها على الفور”. هذا المذهب نص عليه وعليه جماهير الأصحاب وقطع به كثير منهم… قوله: “لزمه قضاؤها على الفور” مقيد بما إذا لم يتضرر في بدنه أو في معيشة يحتاجها فإن تضرر بسبب ذلك سقطت الفورية
যার অনেক নামায কাযা হয়েছে তার অনতিবিলম্বে আদায় করা অপরিহার্য। এটাই মাযহাব, ইমাম আহমদ রহ. একথা স্পষ্ট বলেছেন। আমাদের হাম্বলী মাযহাবের সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম এমতের উপরেই আছেন এবং তাদের অনেকেই এটা নিশ্চিত করেছেন। তবে অনতিবিলম্বে যে কাযা করার কথা বলা হয়েছে, তা কেবল তখনকার জন্য, যখন সে শারীরিকভাবে বা প্রয়োজনীয় জীবিকা উপার্জনে ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। যদি হয় তাহলে অনতিবিলম্বে আাদায় করা অপরিহার্য থাকবে না। (আল ইনসাফ, ১/৪৪২-৪৪৩