দরসে হাদিসঃ (যদি আমি আমার ভাইদেরকে দেখতে পেতাম!
লেখক ও ব্যাখ্যাকারকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
⛔ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“হায়! যদি আমি আমার ভাইদেরকে দেখতে পেতাম! সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন, তোমরা তো আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা, যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি।”
★ সহিহ মুসলিম
★ মিশকাতুল মাসাবিহ
উক্ত হাদিসের ব্যখ্যা ও শিক্ষাঃ
ব্যাখ্যাকারকঃ (মাসুম বিল্লাহ সানি)
১) সুবহানাআল্লাহ এখানে উক্ত সময়ের জন্য (আমাদের মত) অনাগত উম্মতগণের প্রতি রাসুল (ﷺ) এর অপরিসীম ভালবাসা, মায়া-মুহাব্বত ও সাক্ষাতের আকাঙ্খা ব্যক্ত হয়েছে।
২) বিভিন্ন বর্ননায় পাওয়া যায়, আল্লাহ সুবহানু তায়ালা রাসুল (ﷺ) কে “আলমে আরওয়াহ (রুহের জগৎ) তেই সমস্ত উম্মতে মোহাম্মদীকে উপস্থিত করেছেন, দেখিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কে ওনার প্রতি ইমান আনবে আর কে ইমান আনবে না সেসব জ্ঞানও ওনাকে তখনই দেয়া হয়েছে। এই হাদিস হল উম্মতের প্রতি রাসুল (ﷺ) অগাধ ভালবাসার নিদর্শন।
৩) তাছাড়া এর মানে এও নয় যে, রাসুল (ﷺ) আমাদেরকে এখন দেখতে সমর্থ নন (নাউজুবিল্লাহ) যারা তা মনে করে তাদেরকে আল্লাহ হেফাযত করুন।
⛔ শুধু তাই নয় রাসুল (ﷺ) এর নিকট আমাদের আমলগুলো প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবার প্রেরণ করা হয়। তিনি আমাদের আমল সম্পর্কেও অবগত আছেন।
⛔ যে ব্যক্তি ওনার উপর দুরুদ প্রেরণ করেন তার ও তার পিতা-মাতার নামসহ এ কাজে নিযুক্ত ফেরেশতা রাসুল (ﷺ) এর নিকট পৌঁছে দেন। আর আশেকদের সালাত ও সালাম তিনি নিজ কানে শ্রবণ করতে পারেন।
⛔ আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাহ এর আকিদা হল রাসুল (ﷺ) হায়াতুন্নবী। এ ব্যপারে আল-কুরআনেঃ
★ সূরা বাকারা ২ : ১৫৪,
★ সূরা আল-ইমরান ৩:১৬৯ সহ অগণিত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমনঃ
⛔ বিভিন্ন সহীহ হাদিসে বর্ণিত আছেঃ
হযরত আউস ইবনে আউস [رضي الله عنه] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরাম [ﷺ] ইরশাদ করেন,
আল্লাহ তা’আলা ভূমির জন্য সম্মাণিত নবীগণের দেহ মুবারক (ভক্ষণ করা) হারাম করে দিয়েছেন।”
অপর বর্ণনায় আছে যে, হুযূর [ﷺ] বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের দেহকে খেয়ে ফেলা ভূমির উপর হারাম করে দিয়েছেন।
(হাদিসের মানঃ সহিহ)
সূত্রঃ
১|| আবূ দাউদ: আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত, ১/২৭৫, হা-১০৪৭ এবং কিতাবুস সালাত, ২/৮৮, হা-১৫৩১;
২|| নাসাঈ: আস্ সুনান, কিতাবুল জুমু’আ, ৩/৯১, হা-১৩৭৪;
এবং আস্ সুনানুল কুবরা, ১/৫১৯, হা-১৬৬৬;
৩|| ইবনু মাজাহ্: আস্ সুনান, কিতাবু ইকামাতিস সালাত, ১/৩৪৫, হা-১০৮৫;
৪|| দারেমী: আস্ সুনান, ১/৪৪৫, হা-১৫৭২;
৫|| আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ৪/৮, হা-১৬২০৭;
৬|| আবূ শায়বাহ্: আল মুসান্নাফ, ২/২৫৩, হা-৭৬৯৭;
৭|| ইবনে খুজায়মা: আস্ সহীহ, ৩/১১৮, হা-১৭৩৩-১৭৩৪;
৮|| ইবনে হিব্বান: আস্ সহীহ, ৩/১৯০, হা-৯১০;
৯|| হাকেম: আল মুসতাদরাক, ১/৪১৩, হা-১০২৯;
১০|| বাযার: আল মুসনাদ, ৭/৪১১, হা-৩৪৮৫;
১১|| তাবরানী: আল মু’জামুল আওসাত, ৫/৯৭, হা-৪৭৮০;
এবং মু’জামুল কবীর, ১/২৬১, হা-৫৮৯;
১২|| বায়হাকী: আস্ সুনানুস সগীর, ১/৩৭১, হা-৬৩৪; আস্ সুনানুল কুবরা, ৩/২৪৮, হা-৫৭৮৯; শু’আবুল ঈমান, ৩/১০৯, হা-৩০২৯;
১৩|| যাহদ্বামী: ফাদ্বলুস্ সালাতি আলান্ নবী, হা-২২;
১৪|| ওয়াদীয়াশী: তুহফাতুল মুহতাজ, ১/৫২৪, হা-৬৬১;
১৫|| আসকালানী: ফাতহুল বারী, ১১/৩৭০;
১৬|| আযলূনী: কাশফুল খিফা, ১/১৯০, হা-৫০১;
১৭|| ইবনে কাসীর, তাফসীরিল কুরআনিল আযীম, ৩/৫১৫]
⛔ এ বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের জন্য নিম্নের কিতাবগুলো পড়া যেতে পারে।
★ ইমাম ইবনে আবিদ দুন’য়া (রহঃ) [২০৮-২৮১হিঃ] :
মান ‘আশা বা’দাল মওত (মৃত্যর পর জীবিত হলেন যারা)
★ ইমাম বায়হাকী (রহঃ) [৩৮৪-৪৫৮হিঃ] : হায়াতুল আম্বিয়া
★ ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী (রহঃ) [৮৪৯-৯১১হিঃ] : নবীগণ (আলাইহিমুল সালাম) স্বশরীরে জীবিত
৪) এই হাদিস দ্বারা আবার ওনাকে যদি কেউ ভাই বলে সাব্যস্থ করেন তাহলে এটা হবে চরম বেয়াদবী।
প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আম (সাধারণ) ও হাকিকী (প্রকৃত) শব্দের ব্যবহার রয়েছে। এখানে শব্দটি আমভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ তিনি আমাদের আক্বা। আমরা ওনার উম্মত, ওনার হুকুমের আনুগত্যকারী গোলাম (চাকর)। প্রত্যেক হাদিস কিংবা মাসআলার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্নণা ও ব্যখ্যা রয়েছে।
যা সংক্ষেপে এক কথায় বুঝানো সম্ভব নয়। যেমনঃ
⛔ রাসুল (ﷺ) আল্লাহ পাকের হাবিব। রাসুল (ﷺ) এর সম্মানিত অনেক নাম মোবারক রয়েছে। সেইগুলো দ্বারাই ওনাকে সম্বোধন করা আদব।
⛔ রাসুল (ﷺ) সমস্ত রূহের পিতা আর আদম (আ) সমস্ত মানবজাতির দেহের পিতা।
★ জগতবিখ্যাত মুফাসসির ও ইমাম, হাকিমুল উম্মাহ মুফতি ইয়ার খান নঈমী (রহঃ) : (বিশ্বনবী নূরের রবি)
⛔ আবার আল-কোরআনে এও বলা হয়েছে তিনি কোন পুরুষের পিতা ননঃ
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও নবীগণের শেষ সমাপ্তি।”(আহযাবঃ৪০)
(অথচ আমরা জানি ওনার স্বীয় পুত্রের নাম আবুল কাশেম কিন্তু তিনি পুরুষ বয়সে উন্নীত হওয়ার আগেই ইন্তেকাল করেন। এই আয়াত মূলত ওনার এক পালক পুত্রকে উদ্দেশ্য করে। যা হোক এই আয়াতেরও বিশাল ব্যখ্যা রয়েছে। শানে নুযুল রয়েছে। তা বলে আর দীর্ঘায়িত করতে চাই না)
⛔ তিনি (ﷺ) আবার সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষকও বটে। যেমনঃ
“তিনিই, যিনি (আল্লাহ) উম্মী লোকদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেন যেন তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের জ্ঞান দান করেন আর নিশ্চয় নিশ্চয় তারা ইতোপূর্বে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে ছিলো।”
(সূরা জুমুআহ ২)
⛔ তিনি (ﷺ) যদিও মানব রূপে এসেছেন। তিনি যদিও বাশার (মানব) তবুও তিনি আমাদের মত মানুষ নন। তাঁর উপমা তিনি নিজেই। কবির ভাষায়ঃ
তিনি মানুষ তো বটে কিন্তু এমন মানুষ, যেমন পাথরের মধ্যে ইয়াকূত। কারণ ইয়াকূতও পাথর কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ পাথর।
★ আশরাফ আলী থানভী : শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
⛔ যেমনঃ আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেন, তোমরা সওমে বিসাল পালন করবে না। লোকেরা বলল, আপনি যে সওমে বিসাল করেন? তিনি বললেনঃ
“””আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় (অথবা বললেন) আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি। “””
★ সহিহ বুখারী ৭২৪১,
★ মুসলিম ১৩/১১, হাঃ ১১০৪
★ আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৩৪
এ সম্পর্কে অসংখ্য সহিহ হাদিস – সিহাহ সিত্তায় “সওমে বিসাল” নামে Chapter (অনুচ্ছেদ) এ লিপিবদ্ধ হয়েছে।