তৎকালীন মক্কা-মদীনায় কি মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপিত হত?
🖋কৃতঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
👉 প্রখ্যাত মুহাদ্দীস ইবন যাওজী (রহঃ) বলেন,
“সর্বদা মক্কা ও মদিনাবাসী, মিসর, ইয়ামেন, সিরিয়াবাসী এবং আরবের পূর্ব-পশ্চিমের সকলেই মিলাদুন্নবী (ﷺ) অনুষ্ঠান করে থাকেন। রবিউল আউয়াল মাসের নব চন্দ্রের আগমনে আনন্দ উৎসব করেন এবং তারা সকলেই এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদি দ্বারা মহান পুরষ্কার ও সফলতা লাভ করেন”
[ইমাম যাওজী : বয়ানুল মিলাদুন্নবী, পৃঃ ৫৮]
👉 ইমাম মুফাসসির আল নাক্কাস (রহঃ) (২৬৬-৩৫১ হি) বলেন-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে বরকতময় ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন সেটা হল (মক্কার) এমন জায়গা যেখানে সোমবার দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। (যেহেতু সোমবার মিলাদুন্নবী ﷺ)
[ইমাম মুফাসসির আল নাক্কাস : শিফা আল-ঘারাম ১:১৯৯]
👉 ইমাম আল-আযকারী (রহঃ) [৩য় শতাব্দীর ইমাম] মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে বরকতময় ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন, (অধিক তাবাররুক) অনুগ্রহ পাওয়ার উদ্দেশ্যে সে ঘরে নামাজ পড়াকে আলেমেদ্বীনগণ মুস্তাহাব বলেছেন।
[ইমাম আল-আযকারী : আখবার মক্কা ২ : ১৬০]
👉 ইমাম ইবনে জুবাইর (রহঃ) [৫৪০-৬৪০ হি]
তার নিজের কিতাবে লিখেন-
প্রতি বছর মক্কায় মুসলমানগণ মাওলিদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে রবিউল আওয়াল মাসের প্রত্যেক সোমবার, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মস্থানে সবাই একত্রিত হন।
[ইবনে জুবাইর : কিতাবুর রিহাল : ১১৪-১১৫]
👉 ৭ম শতাব্দীর বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু আল আব্বাস আল আযাফী (রহঃ) এবং তার পুত্র আবুল কাশিম আল আযাফী (রহঃ) তাদের বিখ্যাত [আদ-দুরুরুল মুনাজ্জাম] কিতাবে লিখেন,
ধার্মিক ইতিহাসবিদ ও বিখ্যাত পর্যটকগণ এই তথ্য সঠিকভাবে জানিয়েছেন যে, মক্কায় মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন –
– কোন কাজ নেয়া হত না (সকল কাজ বন্ধ করে) লোকজন শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র জন্মস্থান জিয়ারত করতে ব্যস্ত থাকত।
– উক্ত দিন কাবা শরীফের দরজা খুলে দেয়া হত এবং সবাই সেখানে একত্রিত হত।
[আবু আব্বাস আল-আযাফী : আদ-দুরুরুল মুনাজ্জাম]
👉 ৮ম শতাব্দীর বিখ্যাত পর্যটক ও ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা (রহঃ) তার কিতাবে বর্ননা করেন,
বনু শায়বা গোত্রের প্রধান এবং কাবা শরীফের দরজার দায়িত্বরত প্রহরীর মাধ্যমে প্রতি শুক্রবার, জুমুয়ার নামাজের শেষে এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন কাবা শরীফের দরজা খুলে দেয়া হত।
মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন শাফেয়ী মাযহাবের কাজী (মক্কার সুপ্রিম বিচারক) নাজমুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আল ইমাম মহিউদ্দীন আত তাবারী (রহঃ) তিনি আওলাদে রাসুল (ﷺ) এবং মক্কার অন্যান্য সাধারণ জনগণ এর মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করতেন।
[ইতিহাস বীদ ইবনে বতুতা : তার রিহলায় : খন্ড ১ : ৩০৯ এবং ৩৪৭ পৃ]
👉 ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন,
আমি একদা মক্কা মু’আযযামায় বেলাদত শরীফের বরকতময় ঘরে উপস্থিত হয়েছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে হুযুর (ﷺ) এর উপর একত্রে দরুদ শরীফ পাঠ করছিলেন। তার (হুযুরের) শুভাগমনের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও তার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো কি চর্মচক্ষে দেখেছিলাম নাকি অন্তরচক্ষু দ্বারা দেখেছিলাম।
★ ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভীঃ ফয়ূযুল হারামাইন (আরবী-উর্দু), পৃষ্ঠা নং- ৮০-৮১
👉 মুফতি এনায়েত আহমদ (রহঃ) বলেন-
“মক্কা ও মদীনা শারীফ এবং অধিকাংশ ইসলামি রাষ্ট্রে এ কথা প্রচলিত আছে যেপবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর মাহফিল অনুষ্ঠিত করে মুসলমানদেরকে একত্রিত করে মিলাদ মাহফিল শারীফ পাঠ করা হত। ইহা একটি বিরাট বরকতময় কাজ এবং রাসূল (ﷺ) এর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মদীনা ঘুনাওয়ারায় মসজিদে নববীতে এবং মক্কা শারীফে রাসূল (ﷺ) এর জন্মস্থানে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হত।”
তিনি উক্ত কিতাবে আরও বর্ণনা করেন
“সুতরাং মুসলমানদের রাসূল (ﷺ) এর মহব্বত ভালবাসায় এ মাহফিল করা ও তাতে শরীক হওয়া উচিত।”
[তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ, পৃঃ ১২]