আল্লাহ তা‘য়ালার কী সৃষ্টির মত আকৃতি রয়েছে ?
আল্লাহ আকার আকৃতি হতে মুক্ত-এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা, কেননা আকার আকৃতি থাকলে কেমন তার অবকাশ রাখে। মানুষ বা সৃষ্টি শুনতে কান, দেখতে চোখের প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু স্রষ্টার জন্য মানুষের বা সৃষ্টির মত কোন কিছুই প্রয়োজন পড়ে না। স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা দেয়া কুফুরী। ইমাম তাহাভী (رحمة الله) বলেন-
وَمَنْ وَصَفَ اللَّهَ بِمَعْنًى مِنْ مَعَانِي الْبَشَرِ فَقَدْ كُفر
-‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে মানবীয় গুণাবলী হতে কোন গুণের দ্বারা গুণান্বিত করবে সে কাফির।’’
➤ তাহাবী, আকিদাতুত তাহাভী, ৪১ পৃষ্ঠা, আক্বিদা নং ৩৪, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪১৪হিজরি।
ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) বলেন-
لَا يشبه شَيْئا من الْأَشْيَاء من خلقه وَلَا يُشبههُ شَيْء مِنْ خلقه-
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর সৃষ্টির কোন বস্তুর মত নন, এমনকি তিনি কোনো সৃষ্টির মত নন।’’
➤ ইমাম আবু হানিফা, আল-ফিকহুল আকবার, ১৪ পৃষ্ঠা।
ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) বলেন-
لَا يُشْبِهُ شَيْئًا مِنْ مَخْلُوقَاتِهِ وَلَا يُشْبَّهُ بِهِ
-‘‘সৃষ্টির কিছুই আল্লাহর সাথে সাদৃশ্য নেই, এবং তিনিও কারও সদৃশ নন।’’
➤ ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১৬/৮পৃষ্ঠা, মাকতুবাতুল মিসরিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ- ১৩৮৪হিজরি।
মি‘রাজে আল্লাহ্কে নবিজি দেখেছেন-তা সত্য; কিন্তু তিনি কোন আকৃতির কথা বর্ণনা করেননি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে আকরাম (رحمة الله) ইরশাদ করেন-
رَأَيْت رَبِّي عَزَّوَجَلَّ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ
-‘‘আমি আমার রব আল্লাহ তা‘য়ালাকে দেখেছি, তবে তার সাথে (সৃষ্টির) কোন সদৃশ্য বা তুলনা নেই।’’
➤ দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ২/২৫৪পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩১৮৩।
মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ-
‘‘তাঁর কোন দৃষ্টান্ত তথা উপমা নেই।’’
➤ সুরা আশ-শুরা, আয়াত ১১
ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) বলেন-
فَإِنَّ الَّذِي يَجِبُ عَلَيْنَا وَعَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ أَنْ يَعْلَمَهُ: أَنَّ رَبَّنَا لَيْسَ بِذِي صُورَةٍ وَلَا هَيْئَةٍ، فَإِنَّ الصُّورَةَ تَقْتَضِي الْكَيْفِيَّةَ وَهِيَ عَنِ اللَّهِ وَعَنْ صِفَاتِهِ مَنْفِيَّةٌ
-‘‘নিশ্চয় আমাদের ও সকল মুসলমানের জানা অত্যাবশ্যক যে, আমাদের প্রভু আকৃতি ও অবয়ব বিশিষ্ট নহেন। কেননা, আকৃতি (الْكَيْفِيَّةَ) তথা ‘কেমন’ এর চাহিদা রাখে। অথচ কেমন প্রশ্নটি আল্লাহ ও তাঁর গুণবলীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’’
➤ ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬৬পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৬৪১, মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৩হিজরি।
ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) আরও বলেন-
وَلَا يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ الْبَارِي تَعَالَى مُصَوَّرًا وَلَا أَنْ يَكُونَ لَهُ صُورَةٌ، لِأَنَّ الصُّورَةَ مُخْتَلِفَةٌ
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালার জন্য আকৃতি আছে ধারণা করা বৈধ নয়, কেননা তার কোন আকৃতি নেই। আর তাঁর আকৃতি হলো স্বতন্ত্র।’’
➤ ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬০পৃষ্ঠা, মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৩হিজরি।
ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (رحمة الله) বলেন-
فَلَيْسَ سبحانه بذى لون و لارائحة ولاصورة ولاشكل
-‘‘মহান আল্লাহ রং, গন্ধ, আকৃতি এবং অবয়ব বিশিষ্ট নন।’’
➤ ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম, আল-মুসাইরাত, ২১৮পৃষ্ঠা।
ইমাম আবুল মানসুর মাতুরীদি (رحمة الله) বলেন-
وليس بجسم، ولا شبه، ولا جثة، ولا صورة، ولا لحم، ولا دم، ولا شخص ولا جوهر ولا عرض،…..
-‘‘মহান আল্লাহ দেহ, কোনো সৃষ্টির সাদৃশ্য, দেহ বা শরীর, আকৃতি, মাংসবহুল, রং, বড় দেহ বিশিষ্ট, বস্তু/পদার্থ, প্রার্শ্ব, এমনকি নেই কোন সাদৃশ, আকৃতি গোস্ত, …..এগুলো থেকে পবিত্র।’’
➤ইমাম মাতুরীদি, তাফসীরে মাতুরীদি, ১/১৩৫পৃষ্ঠা,
ইমাম মাতুরীদি (رحمة الله) আরও বলেন-
لا تشبه صفاته صفات المخلوقين، ولا اشتبهت صفات الخلق صفاته
-‘‘মহান আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলীর মধ্যে তাঁর কোন সৃষ্টির গুণাবলীর সাদৃশ্য নেই।’’
➤ইমাম মাতুরীদি, তাফসীরে মাতুরীদি, ৮/২৬৭পৃষ্ঠা,
তাই বুঝা গেল আল্লাহকে কোন আকৃতি দ্বারা ব্যাখ্যা করলে, প্রশ্নের অবকাশ রাখে যে তাহলে তার আকৃতি কীসের মত তাই বলা যাবে না। এ বিষয়ে ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ (رحمة الله) বলেন-
قَالَ الْأَئِمَّةُ -مِنْهُمْ نُعَيْم بْنُ حَمَّادٍ الْخُزَاعِيُّ شَيْخُ الْبُخَارِيِّ -: مَنْ شَبَّهَ اللَّهَ بِخَلْقِهِ فَقَدْ كَفَرَ
-‘‘তিনি বলেন, যে মহান আল্লাহকে তার সৃষ্টির সাথে তুলনা/সাদৃশ্য করবে সে কাফির।’’
➤ইবনে কাসির, তাফসীরে ইবনে কাসির, ৩/৪২৭।
পবিত্র কুরআনে কোন কোন স্থানে মহান রব তার যে অঙ্গ উল্লেখ করেছেন তা মূলত তার গুণবলীকে বুঝানো হয়েছে; তাই তার সরাসরি অর্থ এখানে গ্রহণ করা হবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এবং আক্বায়েদের অন্যতম ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন-
أَنْ تَكُونَ الصُّورَةُ بِمَعْنَى الصِّفَةِ-‘‘কোনো ক্ষেত্রে যদি আকৃতি প্রকাশের কথা আসে তা হবে তাঁর সিফাত বা গুণবলী।’’ ➤ ইমাম বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ওয়াল সিফাত, ২/৬৬পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৬৪১, মাকতুবাতুল সৌদিয়া, জেদ্দা, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৩হিজরি।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
أَنَّ الْمُرَادَ بِالصُّورَةِ الصِّفَةُ وَإِلَيْهِ مَيْلُ الْبَيْهَقِيّ
-‘‘(অনেকের মতে-উপর্যুক্ত হাদিসে) ‘আকার’ দ্বারা ‘সিফাত’ (গুণ)ই উদ্দেশ্য। এ মতের দিকেই ইমাম আবু বকর আল-বাইহাকী (رحمة الله)-এর ঝোঁক রয়েছে।’’
➤ ইমাম ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১৩/৪২৭পৃষ্ঠা,
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
قَالَ الْقُرْطُبِيُّ الْمُرَادُ بِالصُّورَةِ الصِّفَةُ
-‘‘ইমাম কুরতবী (رحمة الله) বলেন, এখানে আল্লাহর আকৃতি বলতে গুণই বুঝানো হবে।’’
➤ ইমাম ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ১১/৪১৩পৃষ্ঠা,
ইমাম নববী (رحمة الله) ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) এর বরাতে উল্লেখ করেন-
لَا يَجُوزُ عَلَيْهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى التَّجَسُّمُ
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালার জন্য দেহাবয়ব আছে ধারণা করা বৈধ নয়।’’
➤ ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, ১৫/২৫পৃষ্ঠা,