তিরমিজি তে বর্ণিত ‘হুযায়ফা ইবন ইয়ামান’ এর মিরাজের হাদীসটি দূর্বল না হবার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণঃ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

তিরমিযীর সনদ বিশ্লেষণ:

حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ (بْنُ عُيَيْنَةَ)، عَنْ مِسْعَرٍ(بن كدام)، عَنْ عَاصِمِ بْنِ أَبِي النَّجُودِ، عَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ قَالَ قُلْتُ لِحُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ

……………

ইবনে আবি উমর→সুফিয়ান বিন উ’য়াইনা→মিসআর→আসেম ইবনে আবি নাজুদ→যির ইবনু হুবাইশ→সৈয়্যদুনা হুযাইফা ইবনু ইয়ামান رضي الله عنهما

এই হলো তিরমিজির পূর্ণ সনদ।আমরা সনদের পূর্ণ পর্যালোচনা করবো ইনশাআল্লাহ! 

➤➤রাবী ১:

ইবনে আবী ওমর (ابْنُ أَبِي عُمَرَ) সম্পর্কে আমাদের কাছে এই মর্মে অভিযোগ পৌছেছে যে,উনার বিশ্বস্ততার সাক্ষ্য কেউ প্রদান করেন নি।চলুন দেখে নিই সত্য কতোটুকু। 

ইমাম বুখারী তারিখে কাবীরের প্রথম খন্ডে উল্লেখ করেন—

٨٤٧ ـ محمد بن يحيى ابو عبد الله هو ابن ابي عمر العدني سكن مكة مات لاحدى عشرة بقيت من ذي الحجة آخر سنـة ثلاث واربعين، سمع ابن عيينة قاله لى محمد بن سريج

—«অর্থাৎ,মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া যার কুনিয়াত আবু আব্দুল্লাহ,তিনিই হলেন ইবনে আবি ওমার আল-আদনী।মক্কার অধিবাসী ছিলেন।২৪৩ হিজরীর জিলহজ্জ মাসের ১১দিন বাকী থাকতে উনি মারা যান।সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা হতে হাদীস শ্রবণ করেছেন।এবং এসংবাদটি আমরা মুহাম্মাদ ইবনু সারীজ হতে পেয়েছি।»

লক্ষ্য করুন,ইমাম বুখারীর সাক্ষ্যতেই প্রমাণ হয়ে গেল ইবনে আবি উমর সুফিয়ান বিন উয়াইনা হতে হাদীসের সম্পর্কে যুক্ত ছিলেন,এবং ইবনে আবী উমরের সুফিয়ান বিন উয়াইনা হতে ‘তাসরিহুস সামা’ বা সুস্পষ্ট শ্রবণ প্রমাণিত হল।

আমাদেরকে ইমাম ইবনে আবি হাতিম এর ‘জরহে ওয়াত্তাদীল’ এর —

«وكان به غفلة ورأيت عنده حديثا موضوعا حدث به

ইবনে আবি ওমার বর্ণনাকালে গাফিলতি করতেন এমনকি জাল বর্ণনাও করতেন।»

—বাক্যটি দ্বারা বিভ্রম করা হয়েছে।অথচ এর আগের বাক্যেই আছে,

نا عبد الرحمن قال سألت أبي عنه قال: كان رجلا صالحا

—(যে ব্যক্তি সমালোচনা করেছেন তিনিই বলেন) আব্দির রাহমান বলেন, আমি আমার পিতাকে (ইবনে আবী ওমর এর ব্যাপারে) জিজ্ঞেস করেছিলেন।তখন তিনি বললেন, (ইবনে আবী ওমর হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে) ‘সালিহ’/ভালো ছিলেন।

এবং এর নিচেই আছে—

عن ابن عيينة، وهو صدوق

—ইমাম সুফিয়ান ইবন উয়াইনা বলেন, তিনি সত্যবাদী ছিলেন।

বেশি লম্বা-চওড়া প্রসঙ্গে যাবো না,কেবল এতটুকু দেখাই যে সহিহ মুসলিমের রাবী। 

✔ইমাম মুসলিম স্বীয় উস্তাদ ইবনে আবী ওমর হতে মরফু সূত্রে ‘ঈমান’ এর অধ্যায়ে হাদীস বর্ণণা করেছেন—

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ أَبِي عُمَرَ الْمَكِّيُّ، وَبِشْرُ بْنُ الْحَكَمِ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، – وَهُوَ ابْنُ مُحَمَّدٍ – الدَّرَاوَرْدِيُّ عَنْ يَزِيدَ بْنِ الْهَادِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ

[بَاب الدَّلِيلِ عَلَى أَنَّ مَنْ رَضِيَ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَإِنْ ارْتَكَبَ الْمَعَاصِيَ الْكَبَائِرَ]

✔’কিতাবুল জিহাদ’— সুফিয়ান বিন উয়াইনা হতে সরাসরি হাদীস বর্ণনা করেছেন—

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ أَبِي عُمَرَ الْمَكِّيُّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ….…….

[باب قَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَا فَهُوَ صَدَقَةٌ”‏]

✔এভাবে আল্লামা ইবনে খাল্ফূন(৬৩৬ হি) তার বুখারী মুসলিমের শায়খগণের উপর কিতাব ‘আল মুআল্লিম’ এ বলেন

روى عنه في كتاب: الإيمان، والطهارة، والصلاة، والجنائز، والصدقة، والحج، والنكاح، والرضاع، والبيوع، والرؤيا، وغير ذلك

ইমাম মুসলিম তার সহিহ মুসলিমে ইবনে আবি ওমর হতে  কিতাবুল ইমান,ত্বাহারাত,সালাত,জানাইয/জানাযা, হজ্জ, বিবাহ,রিদা’,বুয়ূ’অ,স্বপ্ন অধ্যায় সহ আরো অন্যান্য অধ্যায়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

সুতরাঙ এটা বুঝা গেলো,’মুতাকাদ্দিমিন দের মধ্যে কেউই তাকে (ইবনে আবী ওমর) তাওসিক করেন নি একথাটি ভিত্তিহীন।বরং ইমাম মুসলিমের হাদীস নেওয়াটা এবং বারংবার নেয়াটা ঐ রাবীর পক্ষে যাবতীয় সমর্থনের সপক্ষে জবাব।

➤➤রাবি ২ এবং ৩:

আপত্তিকারক ‘মিসআর বিন কাদাম’ এর উপর আঙ্গুল তোলেননি,তাই আপাতত ব্যাখ্যা করছিনা,তবে জানিয়ে রাখি তিনিও বুখারী মুসলিমের রাবীদের একজন।আপত্তি হলো বিশ্ববিখ্যাত হাদীসবেত্তা ‘সুফিয়ান বিন উয়াইনা’ নাকি ‘আন’/عن শব্দ সহকারে হাদীস বর্ণনা করেছেন,তাই আপত্তিকার এখানে ‘তাদলীস’ বা শব্দবাদ পড়ার (Generally) অভিযোগ তুলেছেন।

এখন আমরা দেখাচ্ছি এমন কিছু সনদ যার উপর আঙ্গুল তোলাটা উচিত হবে কিনা পাঠক বিচার করবেন—

وحَدَّثَنَا عَلِيٌّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ مِسْعَرٍ عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ أَبِيْ سَلَمَةَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِهِ

[বুখারী,৩৪৭১ নং হাদীস,সুফিয়ান বিন উয়াইনা ‘আন’ শব্দে মিসআর হতে → মিসআর ‘আন’ শব্দে সাদ বিন ইবরাহীম হতে→তিনি ‘আন’ শব্দে আবি সালামান হতে→তিনি ‘আন’ শব্দে আবী হুরাইরা হতে→আবী হুরাইরা স্বয়ং ‘আন’ শব্দে নবীজী হতে হাদীস বর্ণনা করছেন]

✔আরেকটি বিখ্যাত হাদীস, যেটা থেকে আমরা ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল দিই,সূরা মায়েদার আয়াত নাযিল বিষয়ে ইহুদীর সাথে সৈয়্যদুনা ফারুকে আযম এর কথোপকথন এর সনদ—

عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ مِسْعَرٍ وَغَيْرِهِ عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ مِنْ الْيَهُودِ لِعُمَرَ

……….. 

[সহিহ বুখারী,৭২৬৮,সুফিয়ান বিন উয়াইনা ‘আন’ শব্দে মিসআর হতে বর্ণনা করছেন]

➤➤➤সহিহাইনে সুফিয়ান বিন উয়ায়নার ‘আন’ শব্দে বর্ণিত আরো কয়েকটি হাদীসের সনদ—

১➤

حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ

…..

[বুখারী,কিতাবুল হাজ্জ,بَاب مِنْ أَيْنَ يَخْرُجُ مِنْ مَكَّةَ]

২➤

قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ قَالَ حَدَّثَنِيْ سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ عَمْرِو بْنِ دِيْنَارٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ إِنَّ نَوْفًا الْبَكَالِيَّ يَزْعُمُ

……..

[বুখারী,কিতাবুত তাফসির,৪৭২৭]

৩➤

حَجَّاجُ بْنُ مِنْهَالٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ عَمْرٍو عَنْ عَطَاءٍ عَنْ صَفْوَانَ بْنِ يَعْلَى عَنْ أَبِيْهِ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ عَلَى الْمِنْبَرِ…………

[বুখারী,কিতাবুত তাফসির,

بَاب قَوْلُهُ :{وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ قَالَ إِنَّكُمْ مَاكِثُوْنَ}]

৪➤

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَعَمْرٌو النَّاقِدُ، – وَاللَّفْظُ لِيَحْيَى قَالَ عَمْرٌو حَدَّثَنَا وَقَالَ يَحْيَى – أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنِ ابْنِ أَبِي نَجِيحٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَثِيرٍ عَنْ أَبِي الْمِنْهَالِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ

………

[সহিহ মুসলিম,কিতাবুল মুসাকাহ,باب السَّلَمِ ‏‏ ]

৫➤

حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ، حَدَّثَنَا بِهِ، سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يُحَدِّثُ وَيَقُولُ اسْمَعِي

………….

[মুসলিম,কিতাবুয যুহদি ওয়ার রক্বায়িক্ব,

باب التَّثَبُّتِ فِي الْحَدِيثِ وَحُكْمِ كِتَابَةِ الْعِلْمِ]

৬➤

وَحَدَّثَنَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَابْنُ، بَشَّارٍ قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ مِسْعَرٍ، كِلاَهُمَا عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ.‏

……

[মিসআর হতে ‘আন’ শব্দে সুফিয়ান বিন উয়াইনার বর্ণনা।মুসলিম,কিতাবু ফাযায়েলুস সাহাবা,

باب مِنْ فَضَائِلِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رضى الله عنه]

এরকম আরো হাদীস দেয়া যাবে যেগুলো সুফিয়ান বিন উয়াইনা ‘আন’ শব্দে বর্ণনা করেছেন।অতএব, বোঝা গেলো সুফিয়ান বিন উয়াইনার কেবল ‘আন’ শব্দে হাদীস বর্ণনার কারণে হাদীসের ত্রুটি অন্বেষণ করাটা অবান্তর একটা কনসেপ্ট।

সুফিয়ান বিন উয়াইনার মু’আন-আন রেওয়ায়তের বিপরীতে তাসরিহু সামার প্রমাণ:

লাগাতার ‘আন’/عن শব্দের হাদীস বর্ণনা কে মু’আনআন বলে।তিরমিযীর হাদীসটি মুআন-আন হওয়ায় আপত্তিকারক ‘তাসরিহুস সামা’ না সুস্পষ্ট শ্রবণের দলিল খুজেছেন।

সেক্ষেত্রে আমরা বোখারী থেকেই দলিল দিবো।

حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا مِسْعَرٌ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَوْفَى عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ

[বুখারী,ক্রীতদাস আযাদ অধ্যায়,

بَاب الْخَطَإِ وَالنِّسْيَانِ فِي الْعَتَاقَةِ وَالطَّلاَقِ وَنَحْوِهِ وَلاَ عَتَاقَةَ إِلاَّ لِوَجْهِ اللهِ]

✔আবার ইমাম বুখারীর উস্তাদ হুমাইদী স্বীয় মুসনাদের ১ম হাদীসের সহিহ সনদেই আনেন এভাবে—

حدثنا سفيان بن عيينة أبو محمد حدثنا مسعر بن كدام عن عثمان بن المغيرة الثقفى عن على بن ربيعة الوالبى عن أسماء بن الحكم الفزارى قال سمعت على بن أبى طالب رضى الله عنه

 ………

[মুসনাদু হুমাইদী+

মুসনাদু আবি ইয়ালা মৌসুলী,১১,১২,১৩,১৪,১৫নং হাদীস]

সুতরাঙ বুঝা গেলো,তিরমীযির মু’আনআন বর্ণনা তাদলীস এর দলিল নয়,কেননা হাদ্দাছানা শব্দের ব্যবহার মিসআর হতে সুফিয়ানের ‘তাসরিহুস সামা’ এর দলিল।

সুতরাং ইবনে আবি ওমর হয়ে সুফিয়ান বিন উয়াইনা এবং মিসআর বিন কাদাম পর্যন্ত সনদ শক্তিশালী হয়ে গেলো।বাকী রইলো আসেম ইবনে আবি নাজুদ।

আবি নাজুদ সম্পর্কে আপত্তিকারক কেবল উলোটপালোট কিছু ক্বওল বলে গেলেন,আমাদের যাচাইয়ে এসব ক্বওলের রেফারেন্সের কোনোটা আবার ঠিকঠাক মিলেও নি।

আবি নাজুদ এর ব্যাপারে একটা বড় জামাত দূর্বল হিফজ হওয়া,মুদ্বতারিব হওয়া ইত্যাদি অভি্যোগ করেছেন।তবে তিনি সিকাহ হওয়া এবং ইমামুল আহলুল হাদিসদের কাছে তার ‘বিশ্বস্ততা’ বিদ্যমান এবং সর্বশেষ তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আমরা তুলে ধরবো।

➤১.

وقال عبد الله بن أحمد بن حنبل: سألت أبي عنه، فقال: كان رجلا صالحا قارئا للقرآن، وأهل الكوفة يختارون قراءته وأنا أختار قراءته، وكان خيرا ثقة

— ইমাম আব্দুল্লাহ বলেন আমি আমার পিতা ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলকে (আসেম এর ব্যাপারে) জানতে চাইলাম।তিনি বলেন,লোকটি কুরআনের ক্বেরা’আতের বেলায় ‘সালিহ’/খুব ভালো,কুফার অধিবাসী,তারা তার ক্বেরাআত পছন্দ করে,আমিও তা সমর্থন করি।সে ভালো লোক, এবং সিকাহ বা বিশ্বস্ত।

[তাহযিবুল কামাল, ১৩/৪৭৬,ইমাম জামালুদ্দিন মিয্যি]

➤২

ইমাম আব্দুল্লাহ আরো বলেন—

عن يحيى بن معين: لا بأس به

—ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন বলেন,(তার ব্যাপারে) কোনো অসুবিধা নেই। 

(তাহযিবুত তাহযিব,৫/৩৯)

আপত্তিকারী ‘তাহযিবুল কামাল’ এর হাশিয়া হতে ইমাম ইবনে মুঈন এর 

ليس بالقوي في الحديث (تاريخ دمشق: ١١)

—”তিনি(আসেম) হাদীসের ক্ষেত্রে শক্তপোক্ত নন।”

এটা বর্ণনা করেছেন।কিন্তু পরের ইবারত গুলো উল্লেখ করেননি।সেখানে আছে—

وقال ابن طهمان عن يحيى: ثقة لا بأس به، وهو من نظراء الأعمش، والأعمش أثبت منه (سؤالاته: الترجمة ١٥٧).

ইমাম ইবনে ত্বাহমান ইমাম ইয়াহইয়া হতে বলেন যে, «(আসেম) সিকাহ বা বিশ্বস্ত,কোনো সমস্যা নেই।সে আমার কাছে আ’মাশ এর মতই,অবশ্য আ’মাশ তার চেয়ে কিছুটা এগিয়ে।(সাওয়ালাতুহু,১৫৭নং জীবনী)।»

وقال ابن أبي مريم عن يحيى: ثقة(تاريخ دمشق: ٢٢)

 —ইবনে আবী মারইয়াম ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন হতে বর্ণনা করেন,(তিনি আসেমের ব্যাপারে বলেন) সিকাহ বা বিশ্বস্ত। 

[তাহযিবুল কামাল, ১৩/৪৭৭,এর ৪৭৭ পৃষ্ঠার হাশিয়া,ইমাম জামালুদ্দিন মিয্যি]

➤৩.

ইমাম আহমাদ বিন আব্দিল্লাহ আল-ঈজলী বলেন—

عاصم صاحب سنة وقراءة للقرآن، وكان ثقة

—আসেম হলেন সুন্নতের পাবন্দ লোক।কুরআনে ক্বারীদের মধ্যে অন্যতম,এবং বিশ্বস্ত।

[তাহযিবুল কামাল, ১৩/৪৭৭,ইমাম জামালুদ্দিন মিয্যি]

➤৪.

ইমাম ইয়াকুব বিন সুফিয়ান বলেন—

في حديثه اضطراب، وهو ثقة

—তার হাদীসে ‘ইদ্বতিরাব’/পারস্পরিক বৈসাদৃশ্য আছে।তবে তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।

➤৫.

ইমাম ইবনে আবী হাতেমের মতামত,

وقال عبد الرحمان بن أبي حاتم : سألت أبي عنه فقال: صالح

—ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে আবী হাতেম বলেন,আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করি,তিনি বলেন,(আসেম হাদীস বর্ণনায়) সালিহ/খুব ভালো লোক ছিলেন

[প্রাগুক্ত,৪৭৭পৃষ্ঠা]

➤৬.

ইমাম আবি যুরআ তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।[প্রাগুক্ত,৪৭৭পৃষ্ঠা]

[মিযানুল ইতিদাল,৪০৬৮,ইমাম যাহাবী

➤৭.ইমাম নাসায়ী বলেন—

ليس به بأس

—তার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা নেই।[প্রাগুক্ত,প্রাগুক্ত,৪৭৭পৃষ্ঠা]

➤৮.

ইমাম বুখারী বলেন—

سمع ذر

— আসেম হযরত যির হতে হাদীস সামা/শ্রবণ করেছেন

[তারিখে কাবীর,৬/৩৮৭,ইমাম বুখারী]

➤৯.ইমাম ইবনে হিব্বান তার ‘সিকাত’ এর অন্তর্গত করেছেন।

[কিতাবুস সিকাত,৭/২৫৬]

➤১০.

ইমাম ইবনে সা’দ এর মতামত —

قال ابن سعد كان ثقة إلا أنه كان كثير الخطأ في حديثه 

—ইমাম ইবনে সা’দ বলেন,তিনি বিশ্বস্ত রাবী ছিলেন।তবে তিনি হাদীস বর্ণনায় প্রচুর ভুল করতেন।

[তাহযিবুত তাহযিব,৫/৩৯,ইমাম ইবন হাজার]

➤১১.আল্লামা ইবনুল কাইয়্যাল বলেন—

وقال الحافظ في التهذيب: قال ابن قانع قال حماد بن سلمة خلط عاصم في آخر عمره وذكره ابن حبان وابن شاهين في الثقات

—’তাহযীব’ গ্রন্থে ইমাম ইবনে হাজার বলেন,ইমাম ইবনুল ক্বানী হযরত হাম্মাদ বিন সালামাহ হতে বর্ণনা করেন,আসেম বিন আবি নাজুদ শেষ বয়সে এসে হাদীস বর্ণনায় ওলোটপালোট করতেন।ইবনে হিব্বান এবং ইবনে শাহীন তাদের স্বীয় ‘ছিকাহ’ গ্রন্থে বিশ্বস্ত রাবীদের মধ্যে আসেম কে রেখেছেন।

[কাওকাব আন-নাইয়্যারাত,ইবনুল কাইয়্যাল

আল মুখতালিতিন,আল্লামা সালাহউদ্দীন আলা’য়ী]

সবচাইতে মজার বিষয় হলো ইমাম বুখারীর মতো মানুষ তার কাছ থেকে অন্য সনদের সাথে মিলিয়ে

যির→আসেম→সুফিয়ান এর সনদে হাদীস নিয়েছেন:—

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا عَبْدَةُ بْنُ أَبِيْ لُبَابَةَ عَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ ح وَحَدَّثَنَا عَاصِمٌ عَنْ زِرٍّ قَالَ سَأَلْتُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ قُلْتُ يَا أَبَا الْمُنْذِرِ إِنَّ أَخَاكَ ابْنَ مَسْعُوْدٍ يَقُوْلُ

………..

[বুখারী,কিতাবুত তাফসির এর শেষ হাদীস]

এখানে সুফিয়ান বিন উয়াইনা ‘হাদ্দাছানা’ শব্দে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

➤➤পরিশেষে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।যেমনটা ইমাম যাহাবী বলেন—

قلت: هو حسن الحديث

—আমি(যাহাবী) বলছি: তিনি হাদীস বর্ণনায় ‘হাসান’/মধ্যম পর্যায়ের রাবী।

[মিযানুল ইতেদাল,২/৩৫৭,ইমাম যাহাবী]

আমাদেরও দাবি এটাই।আমরা বলছি না হাদীসটি সহিহ পর্যায়ে উন্নীত।তবে যেক্ষেত্রে ফযিলতের জন্য দ্বইফ হাদীস যথেষ্ট,সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ত্বরিকায় বর্ণিত হওয়া ‘হাসান’ পর্যায়ের হাদীস কেনো দলিলের যোগ্যতা রাখবেনা?

নাসিরুদ্দিন আলবানী ‘জামে তিরমিযীর’ তাহকিকে এই সনদকে সহিহ বলেছেন।

আর আল্লামা শায়খ শোয়াইব আরনাউত্ব ‘তিরমিযী’র তাহক্বিক এবং ‘মুসনাদ’ আহমদের তাহকিকে একে ‘হাসান’ বলেছেন। 

অন্যান্য সনদ পর্যালোচনা:

➤➤হাদীস নং ১:

সহিহ ইবনে হিব্বান এর সনদ

আসেম বিন নাজুদ→হাম্মাদ বিন যায়দ এর সূত্র

أخبرنا أحمد بن علي بن المثنى، حدثنا خلف بن هشام البزار، حدثنا حماد بن زيد، عن عاصم بن أبي النّجود، عن زر بن حبيش قال : أتيث حذيفة،……..(الى اخر الحديث)

[كتاب: الإسراء.ذكر ركوب المصطفی ﷺ البراق وإتيانه عليه بيت المقدس من مكة في بعض الليل. 45#]

➤হাদীস নং ২:

মুসনাদ আহমদ এর হাদীস

আসেম→শায়বান এর বর্ণনা

حدثنا أبو النضر، حدثنا شيبان، عن عاصم، عن زر بن حبيش قال………….(الى اخر الحديث)

(38/322—23285)

হাদীসটি ইমাম বায্যার ২৯১৫নং হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

শায়খ শু’আইব আরনাউত্ব এর তাহক্বিকে বলেন —

إسناده حسن من أجل عاصم ـ وهو ابن بهدلة ـ وباقي رجاله ثقات رجال الشيخين. 

হাদীসটির সনদ হাসান,আসেম বিন বুহদালাহর কারণে।বাকি সবাই বুখারী-মুসলিমের রাবী।

➤➤হাদীস নং ৩:

মুসনাদের ২৩৩৩২নং হাদীসের ব্যাখ্যা স্বরূপ পরবর্তী হাদীসটি (২৩৩৩৩) দলিল।এখানে বুরাকে করে জান্নাত জাহান্নাম ভ্রমণের কথা,আসমানে উঠার কথা উল্লেখ আছে।

আসেম →হাম্মাদ বিন সালামাহর সূত্র

۲۳۳۳۳- 

حدثنا حسن موسى، حدثنا حماد بن عاصم بن بهدلة، عن زر بن حبيش عن حذيفة بن اليمان أنّ رسول اللہ ﷺ قال: «أتيت بالبراق» فذكر معناه، وقال حسن في حديثه ـ يعني لهذا الحديث ـ: ورأيا الجنة والنار. وقال عفان: وفتحت لهما أبواب السماء، ورأى الجنة والنار…….

হাদীসটি উল্লেখ করে আল্লামা শায়খ শো’আইব আরনাউত্ব বলেন—

إسناده حسن من أجل عاصم بن بهدلة، وباقي رجاله ثقات رجال الصحيح

হাদীসটির সনদ হাসান,আসেম বিন বুহদালাহর কারণে।বাকি সবাই সহিহ হাদীসের রাবী।

➤➤হাদীস নং ৪:

মুসনাদ আহমদ,২৩৩৪৩ নং হাদীস।

আসেম→হাম্মাদ বিন সালামাহ→আফফান সূত্রে সমার্থক হাদীস।

حدثنا عفان حدثنا حمّاد بن سلمة اخبرنا عاصم بن بهدلة عن زر بن حبيش………

হাদীসটি উল্লেখ করে আল্লামা শায়খ শো’আইব আরনাউত্ব বলেন—

إسناده حسن من أجل عاصم بن بهدلة، وباقي رجاله ثقات رجال الصحيح.

—হাদীসটির সনদ হাসান,আসেম বিন বুহদালাহর কারণে।বাকি সবাই সিকাহ এবং সহিহ হাদীসের রাবী।

➤➤হাদীস নং ৫:

মুসনাদু আবি দাউদ তায়লিসী(৫৫পৃ)

আসেম→হাম্মাদ বিন সালামাহ→আবি দাউদ তায়লিসী

حدثنا ابو داود قال حدثنا حماد بن سلمة عن عاصم بن بهدلة عن زر بن حبيش عن حذيفة ان النبي ﷺ قال………. 

➤➤হাদীস নং ৬:

‘মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন’— ২/৩৫৯

আসেম→আবি বাকর আইয়্যাশ এর সূত্র

أخبرنا جعفر بن محمد بن نصير الخواص، ثنا علي بن عبد العزيز البغوي ، ثنا عمرو بن عون، ثنا أبو بكر بن عياش، عن عاصم بن أبي النجود، عن زر بن حبيش قال : كنت في مجلس فيه حذيفة بن اليمان فقلت : إن رسول اللہ ﷺ

……………….

হাদীসটি বর্ণনা করে ইমাম হাকেম নিশাপুরী বলেন—

هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه

—বা হাদীসটির সনদ বিশুদ্ধ,তবে শায়খাইনরা স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেননি।

আমরা এটা দেখে কিছুটা অভিভূত হই।কেননা হাকেমের বিশুদ্ধ বলাতে ইমাম যাহাবী ‘তালখিস’ এ সমর্থন করেছেন।দারুল মা’আরিফার ছাপায় মুস্তাদরাক ও তালখীস একত্রে প্রকাশ করা হয়েছে।সেটা দেখানে হলো।

উসুলে হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো:

➤দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, বিখ্যাত উসূলে হাদিসবিদ (যিনি উসূলে হাদিসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ নুখবাতুল ফিকরের শরাহ করেছেন), হানাফী বিখ্যাত ফকিহ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী লিখেন-

وَتَعَدُّدُ الطُّرُقِ يُبْلِغُ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ إِلَى حَدِّ الْحَسَنِ

-‘‘দ্বঈফ হাদিসও একাধিক সনদে বর্ণিত হলে “হাসান” হাদিস এর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।’’  

[মিরকাত : ৩/৭৭ পৃ. হা/১০০৮]

➤শায়খুল ইসলাম আল্লামা কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম হানাফী বলেন-

وَلَوْ تَمَّ تَضْعِيفُ كُلِّهَا كَانَتْ حَسَنَةً لِتَعَدُّدِ الطُّرُقِ وَكَثْرَتِهَا

-‘‘হাদিসের সমস্ত রাবী দুর্বল প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন তরিকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে তা ‘হাসানে’ পরিণত হয়ে যায়।’’  

 [ফতহুল কাদির শরহে হেদায়া : ১/৩০৬ পৃ.]

➤মুজাদ্দিদ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি বলেন-

المتروك أو المنكر إذا تعددت طرقه ارتقى إلى درجة الضعيف الغريب بل ربما ارتقى الى الحسن-

-‘‘মাতরুক ও মুনকার হাদিস বিভিন্ন তরিকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে দ্বঈফ হাদিসের মর্যাদায় উপনীত হয়। বরং কখনো হাদিসে “হাসানের” মর্যাদায় উপনীত হয়ে থাকে।’’

[তাআকিবাত আলা মওদ্বুআত:৭৫ পৃ.:কিতাবুল মানাকিব]

➤মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান মোবারকপুরী বলেন-

وَتَعَدُّدُ الطُّرُقِ يُبَلِّغُ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ إِلَى حَدِّ الْحَسَنِ

-‘‘যঈফ হাদিস যখন একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয় তা ‘হাসান’ স্তরে উন্নিত হয়।’’ 

-(তুহফাতুল আহওয়াজি,২/৩৭২ পৃ.)

➤ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী লিখেন-

لأن كثرة الطرق تقوِّي

-‘‘হাদিস যখন অধিক পদ্ধতিতে বর্ণিত হয় তা শক্তিশালী হয়।’’ (নুখবাতুল ফিকর, ৮০ পৃ.)

আর এই হাদীসের বেলায় আমরা প্রমাণ করেছি,আসেম হতে সুফিয়ান এর সনদ এককভাবে ভাবে।তথাপি,আসেম হতে একই রকম হাদীস

১।হাম্মাদ বিন যায়দ

২।হাম্মাদ বিন সালামাহ

৩।আবু বকর আইয়্যাশ

৪।শায়বান

মোট চারজন সহিহ-সিকাহ রাবী বর্ণনা করেছেন।তথাপি আমরা হাদীসটিকে ইমামদের সিদ্ধান্তকে টপকিয়ে ‘সহিহ’ বলছিনা।এটা ‘হাসান’ পর্যায়ের হাদীস,আমরা ‘হাসান’ই দাবি করছি।

অতএব,প্রমাণিত হল,তিরমিযীর সূত্রের আরোপিত আপত্তি খন্ডনের এটা প্রমাণিত হয়,তিরমিজীর সনদ টি হাসান,সামগ্রিকভাবে সমগ্র হাদীসটি ‘হাসান’।ওয়াসসালাম।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment