ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী
—————
সাইয়্যিদুল মুরসালিন রাহমাতুল্লিল আলামীন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জীবনের সবচেয়ে বহুল আলোচিত ঘটনা এবং সর্ববৃহৎ মোজেজা হলো পবিত্র মেরাজ। এই মেরাজ কখন হয়েছিল এ নিয়ে কিছু ঐতিহাসিক কয়েকটি মতামত তুলে ধরলেও সমস্ত মোহাদ্দেসীন ও মোহাক্কেকীন ওলামায়ে কেরাম ও ইমামগণের সুপ্রসিদ্ধ প্রণিধানযোগ্য, গ্রহণযোগ্য মতে রাসূল (ﷺ)এর মি’রাজ হলো আরবি রজবমাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত ২৭ রজব রাত। এ ব্যাপারে ওলামায়ে উম্মতের ইজমা রয়েছে। তাই এর তারিখেই সমগ্র মুসলিমবিশ্ব মেরাজুন্নবী (দ.) পালিত হয়। সুতরাং উম্মতের ইজমা ও অধিকাংশ গ্রহণযোগ্য ঐতিহাসিকের মতামতের বিপরীতে কিছু অজ্ঞাত ঐতিহাসিকের মতামত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই মিরাজের তারিখ নিয়ে এখন আর বিভ্রান্তির আর সুযোগ নেই।
ইমাম ইবনে জাওযী (ওফাত. ৫৯৭ হি.) লিখেন-
كان ليلة سبع وعشرين من رجب
-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর মিরাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।’’
(ইবনে জাওযী, আল-মুনতাযিম ফি তারিখুল উমুম ওয়াল মুলক, ৩/২৬ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
ইমাম কাস্তালানী রঃ উল্লেখ করেন-
كان ليلة السابع والعشرين من رجب، واختاره الحافظ عبد الغني بن سرور المقدسي.
-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল। ইমাম হাফেযুল হাদিস আব্দুল গণী বিন সরুর মাকদেসী (رحمة الله) এ মতকে অধিম গ্রহণযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন।’’
(কাস্তালানী, মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৬২পৃ. দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন)।
আল্লামা ইমাম বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী রঃ বলেন-
كَانَ الْإِسْرَاء لَيْلَة السَّابِع وَالْعِشْرين من رَجَب
-‘‘রাসূল (ﷺ)‘র ইসরা ভ্রমণ বা মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।’’
বিশ্বের মুসলিম সমাজের সর্বত্র এ মতই সমধিক সুপ্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত।
(আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৪/৩৯পৃ. ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন)।
বিখ্যাত ঐতিতহাসিক আল্লামা ইবনে কাসির রঃ তাঁর একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
أَنَّ الْإِسْرَاءَ كَانَ لَيْلَةَ السَّابِعِ وَالْعِشْرِينَ مِنْ رَجَبٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
-‘‘অবশ্যই মি‘রাজ সংগঠিত হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ। মহান রব আল্লাহ তা‘য়ালাই ভাল জানেন।’’
(ইবনে কাসির, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১৩৫পৃ. দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বৈরুত, লেবানন, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২/৯৩ পৃ)
ইমাম জুরকানী রঃ অনুরূপ মতামত পেশ করেছেন।
(জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ২/৭১পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, লেবানন)।
ইমাম কাস্তালানী (র.) এ মতের ব্যাখ্যা করে লিখেন-
كان ليلة السابع والعشرين من رجب وعليه عمل الناس، قال بعضهم: وهو الأقوى،
-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল। আর এর উপরেই মুসলমানগণের আমল অব্যাহত। অনেক উলামাগণ বলেছেন যে, এটিই শক্তিশালী অভিমত।’’
(জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ২/৭১পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, লেবানন)।
শায়খ মুহাম্মদ বিন তৈয়্যব নাজ্জার লিখেন-
وفي الليلة السابعة والعشرين من شهر رجب كما هو المشهور
-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর মিরাজ হয়ে ছিল রযব মাসের ২৭ তারিখ, আর এটিই সুপ্রসিদ্ধ অভিমত।’
(কওলুল মুবীন ফি সীরাতে সায়্যিদিল মুরসালীন, ১/১৫৩ পৃ.)
লামাযহাবিরে প্রিয় সফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখেন-
كان ليلة السابع والعشرين من شهر رجب سنة ١٠ من النبوة، واختاره العلامة المنصور فوري.
-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর মি‘রাজ হয়েছিল নবুয়তের দশম বছর রযব মাসের ২৭ তারিখ, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা মানসূর ফূরী (رحمة الله) এ মতকে অধিক পছন্দনীয় বলেছেন।’’
(আর-রাহিকুল মাখতুম, ১/১২৪ পৃ.)
দেওবন্দি ও সালাফিদের নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী লিখেন-
والمشهور أن الإسراء كان في الليلة السابعة والعشرين من شهر رجب، وقد اختاره الحافظ ابن سرور المقدسي
-‘‘প্রসিদ্ধ হচ্ছে নিশ্চয় রাসূল (ﷺ)-এর মি‘রাজ হয়ে ছিল রযব মাসের ২৭ তারিখ, প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা হাফেয ইবনে সুরুর মাকদেসী (رحمة الله) এ মতকে অধিক পছন্দনীয় বা গ্রহণযোগ্য বলেছেন।’’
(নদভী, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২১৭ পৃ., দারু ইবনে কাসির, দামেস্ক, সিরিয়া, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৪২৫ হি.।)
অতএব, উপরিউক্ত আলোচনা এবং বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ইমামদের অভিমত দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূল (ﷺ)এর মি’রাজ হলো ২৭ই রজব বা ২৬ই রজব দিবাগত রাত।
আল্লাহু তা’য়ালা আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন বেহুরমতে সাইয়্যিদুল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম।