তারাবীহ নামায সম্পর্কিত আহলুস্ সুন্নাহ’র ফতোওয়া

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

পবিত্র রমযান মাসে তারাবীহ’র নামায কতো রাকআত পড়তে হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। মুসলমানদের ভাল করে জানা আবশ্যক যে বিগত ১৪’শ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহ ন্যূনতম ২০ রাকআত তারাবীহ নামায পড়ে আসছেন (এর অন্তর্ভুক্ত হারামাইন শরীফাইন-ও)। রাসূলুল্লাহ (দ:), সাহাবা-এ-কেরাম (রা:), তাবেঈন ও পূর্ববর্তী উলামা (রহ:)-এর যুগ থেকে এটি চলে আসছিল; হেজাযে একটি নতুন ফেরকাহ’র উৎপত্তি-ই মুসলমানদের এতদসংক্রান্ত ঐক্যকে বিনষ্ট করেছে। ওই ফেরকাহ’র সম্বল একটিমাত্র হাদীস যা ‘তাহাজ্জুদ’ নামায-সম্পর্কিত; এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তারা তারাবীহ’র প্রতি আরোপ করে থাকে এবং মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে। তারাবীহ’র নামায যে ২০ রাকআত, তা অজস্র দলিলের আলোকে আমরা এক্ষণে দেখবো।

তারাবীহ নামাযের ২০ রাকআতের পক্ষে একচেটিয়া দলিল প্রদর্শনের আগে আমরা দেখাবো যে ইসলামী শরীয়তে ‘সুন্নাহ’ শব্দটির ব্যাখ্যা একটি সহীহ হাদীসে কীভাবে এসেছে। বিভ্রান্ত ফেরকাহ’র কিছু লোক তারাবীহ নামাযের ব্যাপারটিতে নিজেদের অপযুক্তি খণ্ডন হতে দেখে আর কোনো উপায় না পেয়ে বলে, হযরত উমর (রা:) ও অন্যান্য সাহাবা (রা:)-বৃন্দের ধর্ম অনুশীলন এক কথা, আর মহানবী (দ:)-এর ধর্মচর্চা একদম আলাদা বিষয়। আরেক কথায়, তারা সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-কে মহানবী (দ:)-এর সাথে ভিন্নমত পোষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। (নাউযুবিল্লাহ)

কিন্তু এই অভিযোগকারীদের অবাক করে হযরত নবী করীম (দ:) এরশাদ ফরমান: “তোমরা আমার সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরো এবং আমার সঠিক পথের অনুসারী খলীফাবৃন্দের সুন্নাহকেও।” [সুনানে আবি দাউদ, ২য় খণ্ড, ৬৩৫ পৃষ্ঠা, সুনানে তিরমিযী, ২য় খণ্ড, ১০৮ পৃষ্ঠা, সুনানে দারিমী, ১ম খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ ও অন্যান্য]

দলিল-১    

হযরত সাঈব ইবনে এয়াযীদ (রা:) বলেন, “খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:)-এর আমলে (রমযান মাসে) মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায এবং বিতরের নামাযও পড়তেন।” [ইমাম বায়হাকী প্রণীত ‘মা’রেফত-উস-সুনান ওয়াল্ আসার’, ৪র্থ খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৫৪০৯]

ইমাম বায়হাকী (রহ:) অপর এক সনদে অনুরূপ একখানি রওয়ায়াত লিপিবদ্ধ করেছেন। হযরত সাঈব ইবনে এয়াযীদ (রা:) বলেন, “খলীফা হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রা:)-এর শাসনামলে রমযান মাসে মুসলমানগণ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন।” তিনি আরও বলেন, “তাঁরা মি’ঈন পাঠ করতেন এবং খলীফা হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা:)-এর শাসনামলে (নামাযে) দণ্ডায়মান থাকার অসুবিধা থেকে স্বস্তির জন্যে তাঁরা নিজেদের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।” [ইমাম বায়হাকী রচিত ‘সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৮-৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬১৭]

ইমাম নববী (রহ:) বলেন, “এটির এসনাদ সহীহ।”  [‘আল-খুলাসাতুল আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১]

ইমাম বদরুদ্দীন আয়নী (রহ:) বলেন, “ইমাম বায়হাকী (রহ:) সহীহ সনদে সাহাবী হযরত সাঈব ইবনে এয়াযীদ (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন যে খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:)-এর শাসনামলে মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন এবং তা খলীফা হযরত উসমান (রা:)-এর শাসনামলেও প্রচলিত ছিল।” [’উমদাতুল ক্কারী শরহে সহীহ আল-বোখারী’, ৫ম খণ্ড, ২৬৪ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]

’সালাফী’ আলেম আল-মোবারকপুরীও এই হাদীসটির সনদকে ’সহীহ’ বলেছে এবং এর পক্ষে ইমাম নববী (রহ:)-এর সমর্থনের কথা উদ্ধৃত করেছে।  [’তোহফাতুল আহওয়াযী’, ৩য় খণ্ড, ৪৫৩ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন থেকে প্রকাশিত]

ইমাম নববী (রহ:) বলেন, “এই এসনাদে সকল রাবী তথা বর্ণনাকারী ’সিকা’ বা নির্ভরযোগ্য।” [‘আসার আল-সুনান’, ২:৫৪]

দলিল-২ 

এয়াহইয়া আমার (ইমাম মালেক) কাছে মালেক হতে বর্ণনা করেন যে এয়াযীদ ইবনে রুমান বলেছেন, “খলীফা হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রা:)-এর শাসনামলে মুসলমানবৃন্দ রমযান মাসের (প্রতি) রাতে ২৩ রাকআত (তারাবীহ ২০ ও বিতর ৩) নামায পড়তেন।” [ইমাম মালেক প্রণীত ‘মুওয়াত্তা’, সালাত অধ্যায়, মা জা’আ ফী কায়ামে রমযান, ১ম খণ্ড, ১৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৮০]

ইমাম তিরমিযী (রহ:)-এর অভিমত 

”ইসলামী জ্ঞান বিশারদদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একমত হয়েছেন যে (তারাবীহ) নামায ২০ রাকআত, যা হযরত উমর ফারূক (রা:), হযরত আলী (ক:) এবং রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর অন্যান্য সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে। হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ:) এবং ইমাম শাফেঈ (রহ:)-ও অনুরূপ মত পোষণ করেছেন। ইমাম শাফেঈ (রহ:) বলেন তিনি মক্কার অধিবাসীদেরকে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তে দেখেছেন।” [‘সুনানে জামেঈ আল-তিরমিযী’, রোযা সংক্রান্ত বই, রমযানের নামায অধ্যায়, ৩য় খণ্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৮০৬]

দলিল-৩  

হযরত আবদুল আযীয বিন রাফি’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) মদীনা মোনাওয়ারায় রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযের জামা’তে ইমামতি করতেন।” [মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, ৭৭৬৬ নং হাদীস]

দলিল-৪

আবদুর রহমান সুলামী বর্ণনা করেন যে হয়রত আলী (ক:) রমযান মাসে কুরআন মজীদ তেলাওয়াতকারী (হাফেয)-দের ডেকে তাদের মধ্যে একজনকে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়াতে বলেছিলেন এবং নিজে বিতরের নামাযে ইমামতি করতেন। [ইমাম বায়হাকী কৃত ’সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬২০]

দলিল-৫

হযরত হাসান বসরী (রহ:) বলেন: “খলীফা উমর ফারূক (রা:) রমযান মাসের (তারাবীহ) নামাযে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:)-এর ইমামতিতে মানুষদেরকে জামা’তে কাতারবদ্ধ করেন এবং তিনি (ইবনে কাআব) ২০ রাকআত নামায পড়ান।” [‘সিয়ার আল-আ’লম ওয়াল নুবালাহ’, ১ম খণ্ড, ৪০০-১ পৃষ্ঠা, হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:)-এর জীবনী]

ইমাম নববী (রহ:) ওপরের বর্ণনা সম্পর্কে বলেন: “এর সনদ সহীহ।” [‘আল-খুলাসাত আল-আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১]

দলিল-৬

হযরত আবূল হাসনা বর্ণনা করেন যে হযরত আলী (ক:) জনৈক ব্যক্তিকে রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে ইমামতি করার নির্দেশ দেন।” [’মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা’, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৩]

দলিল-৭ 

হযরত নাফে’ ইবনে উমর (রা:) থেকে ওয়াকী’ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “হযরত ইবনে আবি মুলাইকা (রা:) রমযান মাসে আমাদের জামা’তের ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে ইমামতি করতেন।” [মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৫]

দলিল-৮, ৯ ও ১০ এবং ভ্রান্তদের হাদীস অপপ্রয়োগের বিস্তারিত খণ্ডন 

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:)  রমযান মাসে (প্রতি রাতে) নিজে নিজে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকআত বেতরের নামাযও পড়তেন।  [‘সুনান আল-বায়হাকী, হাদীস নং ১২১০২]

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) রওয়ায়াত করেন যে রাসূলে পাক (দ:) রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকআত বেতরের নামাযও আদায় করতেন। [’মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা’, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৭৬৯২]

হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী (দ:) দুই রাতে ২০ রাকআত নামায মানুষের সাথে আদায় করেন; কিন্তু তিনি তৃতীয় রাতে আর বের হননি। তিনি বলেন, আমি আশংকা করি যে এটি তোমাদের (সাহাবা-এ-কেরামের) প্রতি আবার বাধ্যতামূলক না হয়ে যায়। [ইবনে ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) কৃত ‘আল-তালখীস আল-হাবীর’, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৫৪০]

বি:দ্র: ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এই হাদীস উদ্ধৃত করার পরে বলেন, “সকল মোহাদ্দেসীন (হাদীসের বিশারদ) হযরত আয়েশা (রা:) হতে এই বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন, তবে রাকআতের সংখ্যার ক্ষেত্রে নয়।

আহলুল বেদআহ (বেদআতী গোষ্ঠী) আনন্দে আটখানা হয়ে বলে, দেখো, ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এই হাদীসটিকে সহীহ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, কিন্তু রাকআতের সংখ্যার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। অতএব, তারাবীহ’র নামাযের রাকআতের সংখ্যা কতো তা প্রতিষ্ঠিত নয়।

জবাব: প্রথমতঃ ইমাম ইবনে হাজর (রহ:)-এর এই কথা আমাদের বিরুদ্ধে নয়, বরং বেদআতীদের বিরুদ্ধে যায়। কেননা, তারাবীহ নামায ২০ রাকআত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে আমাদের কাছে একচেটিয়া দালিলিক প্রমাণ আছে। অথচ তারা দুটো দলিলকে বিকৃত করে কপটতার সাথে দাবি করে যে তারাবীহ’র নামায মাত্র ৮ রাকআত।

তারাবীহ নামায সম্পর্কে বেদআতীদের প্রদর্শিত মূল দলিল হচ্ছে বোখারী শরীফের একখানা হাদীস, যা’তে বিবৃত হয়েছে:

সহীহ বোখারী, তাহাজ্জুদ-বিষয়ক বই, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৪৮  

হযরত আবূ সালমা বিন আবদির রহমান (রা:) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমি মা আয়েশা (রা:)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর নামায কেমন ছিল? তিনি জবাবে বলেন, “আল্লাহর রাসূল (দ:) রমযান, বা অন্যান্য মাসে কখনোই এগারো রাকআতের বেশি নামায পড়েন নি; তিনি চার রাকআত পড়তেন, সেগুলোর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করো না; অতঃপর চার রাকআত পড়তেন, সেগুলোর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কেও আমাকে প্রশ্ন করো না; এবং এরপর তিনি তিন রাকআত নামায পড়তেন।” মা আয়েশা (রা:) আরও বলেন, “আমি বল্লাম, এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! বেতরের নামায পড়ার আগে কি আপনি ঘুমোন? তিনি উত্তরে বলেন, ’ওহে আয়েশা! আমার চোখ ঘুমোয়, কিন্তু আমার অন্তর (কলব্) জাগ্রত থাকে’।”

সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কেউই এখানে স্পষ্ট দেখতে পাবেন যে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। কেননা, তিনি বলেন, “বা অন্যান্য মাসে”; অথচ সালাতুত্ তারাবীহ হলো শুধু রমযান মাসের জন্যেই নির্ধারিত নামায। যদিও আমরা এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে পারি এবং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পারি যে উপরোক্ত হাদীস শরীফ সুনির্দিষ্টভাবে তাহাজ্জুদ নামাযকে উদ্দেশ্য করেছে এবং তারাবীহ নামাযকে করেনি, তথাপি আমরা আরেকটি বিষয়ের দিকে এক্ষণে মনোযোগ দিতে আগ্রহী। এই হাদীসটি ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:)-এর ওপরে উদ্ধৃত সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে, অর্থাৎ, “সকল মোহাদ্দেসীন (হাদীসের বিশারদ) হযরত আয়েশা (রা:) হতে এই বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন, তবে রাকআতের সংখ্যার ক্ষেত্রে নয়।”

এবার আমরা সহিহাইন (বোখারী ও মুসলিম) হতে দালিলিক প্রমাণগুলো যাচাই করবো।

সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৬১ 

হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) রাতের নামাযে তেরো রাকআত পড়তেন এবং ফজরের নামাযের আযান শোনার পর তিনি দুই রাকআত (হাল্কা, দীর্ঘ নয়)) নামায আদায় করতেন।

এই হাদীস প্রমাণ করে তাহাজ্জুদ (বেতর ছাড়াই) অন্ততপক্ষে ১০-১২ রাকআত-বিশিষ্ট নামায। অথচ এই বেদআতীরা ৮ রাকআতকে মহানবী (দ:)-এর সুন্নাহ হিসেবে মনে করে। এই কারণেই ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) হযরত আয়েশা (রা:) থেকে উপরোক্ত ২০ রাকআতের বর্ণনাসম্বলিত হাদীসটিকে ’সহীহ’ বলেছেন, কিন্তু রাকআতের সংখ্যার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেন নি।

সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৪০ 

মাসরুখ (রা:) বর্ণনা করেন, আমি মা আয়েশা (রা:)-কে মহানবী (দ:)-এর রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “ফজরের দুই রাকআত (অর্থাৎ সুন্নাহ) ছাড়াও ওই নামায ছিল সাত, নয় বা এগারো রাকআত-বিশিষ্ট।”

এটিও হযরত আয়েশা (রা:)-এর হাদীসে ‘এদতেরাব’ প্রমাণ করে (মানে সাত, নয়, নাকি এগারো তা স্থিরকৃত নয়); আর তারাবীহ কখনোই ৮ রাকআত বলে বিবেচনা করা যায় না, কারণ এর ২০ রাকআত হবার ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।

সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬১১

হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রাতে রাসূলে খোদা (দ:)-এর আদায়কৃত নামাযে রাকআত সংখ্যা ছিল দশ। তিনি বিতরের নামায এবং ফজরের দুই রাকআত (সুন্নাত) নামাযও আদায় করতেন। আর এর যোগফল হচ্ছে তেরো রাকআত।

সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬৮৬

আবূ জামরা (রা:) বর্ণনা করেন: আমি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-কে বলতে শুনেছি যে মহানবী (দ:) রাতে তেরো রাকআত নামায পড়তেন।

সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬৮৭ 

হযরত যায়দ বিন খালেদ আল-জুহানী (রহ:) বলেন: ”নিশ্চয় আমি মহানবী (দ:) কর্তৃক আদায়কৃত রাতের নামায প্রত্যক্ষ করতাম। তিনি প্রথমে সংক্ষিপ্ত দুই রাকআত নামায পড়তেন; অতঃপর দীর্ঘ, অতি দীর্ঘ দুই রাকআত পড়তেন; এর পরের দুই রাকআত পূর্ববর্তী দুই রাকআতের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিল; পরবর্তী যে দুই রাকআত পড়তেন, তা আরও সংক্ষিপ্ত; তৎপরবর্তী দুই রাকআত আরও সংক্ষিপ্ত; এর পরে আরও দুই রাকআত পড়তেন যা আরও সংক্ষিপ্ত ছিল।অতঃপর তিনি একটি রাকআত (বিতর) পড়তেন, যা সর্বসাকুল্যে তেরো রাকআত নামায হতো।”

ওপরে প্রদর্শিত আমাদের ৮ এবং ৯ নং দলিল, যার মধ্যে রয়েছে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক সরাসরি রাসূলুল্লাহ (দ:) হতে প্রদত্ত ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের বর্ণনা, উভয় বর্ণনাতেই অবশ্য আবূ শায়বাহ (মহান মুহাদ্দীস ইবনে আবি শায়বাহ’র বাবা) নামে একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আছেন যাঁর নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ মুহাদ্দেসীন তাঁকে ‘দুর্বল’ বিবেচনা করেছেন। এমতাবস্থায় এই সকল বেদআতী লোকেরা আবারও আনন্দে লাফ দিয়ে বলে ওঠে যে আবূ শায়বাহ দুর্বল; তাই ২০ রাকআত তারাবীহ হুযূর পাক (দ:) থেকে প্রমাণিত নয়। তাদের কথার সমর্থনে তারা নিম্নের হাদীসটি প্রদর্শন করে:

হযরত জাবের ইবনে আব্দিল্লাহ (রা:) বর্ণনা করেন, “নবী করীম (দ:) রমযান মাসে (এক রাতে) আট রাকআত ও বেতরের নামাযে ইমামতি করেন। পরবর্তী রাতে আমরা মসজিদে সমবেত হই এই আশায় যে তিনি আবারও ইমামতি করার জন্যে বেরিয়ে আসবেন। আমরা সেখানে সকাল পর্যন্ত অবস্থান করি। অতঃপর আমরা মসজিদের মাঝখানে এসে আরয করি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমরা গত রাতে মসজিদে অবস্থান করেছি এই আশায় যে আপনি নামাযে ইমামতি করবেন।’ প্রত্যুত্তরে মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান, ‘নিশ্চয় আমি আশংকা করেছি এটি তোমাদের প্রতি অবশ্য পালনীয় না হয়ে যায়’।” [ইবনে খুযাইমাহ (২:১৩৮, হাদীস # ১০৭০), ইমাম তাবারানী কৃত মু’আজম আস্ সাগীর (১:১৯০) এবং অন্যান্যরা]

এই বেদআতীরা নিজেদের হীন স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে যে কোনো হাদীসকে যয়ীফ (দুর্বল) ঘোষণা করতে মোটেও দেরি করে না। এখন আমরা হযরত জাবের ইবনে আব্দিল্লাহ (রা:) হতে জাল হাদীস বর্ণনাকারী সম্পর্কে আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল-বৃন্দ কী বলেছেন তা দেখবো।

এই হাদীসটির ‘একমাত্র’ বর্ণনাকারী ঈসা ইবনে জারিয়াহ; মহান মোহাদ্দেসীনবৃন্দ ও আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল-মণ্ডলীর অভিমত নিচে পেশ করা হলো:

হযরত এয়াহইয়া বিন মঈন (রহ:) বলেন: এই লোক ‘কেউই নয়’ এবং সে যার কাছ থেকে হাদীস নিয়েছে এমন বর্ণনাকারীদের মধ্যে এয়াকুব (শিয়াপন্থী) ছাড়া আর কাউকে আমি জানি না। [তাহযিবুত্ তাহযিব, ৪:৫১৮]

ইমাম আল-মিযযী (রহ:) প্রণীত ‘তাহযিবুল কামাল’ গ্রন্থে ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর বাণীও বিধৃত হয়েছে, যেখানে তিনি ঈসাকে মুনকার আল-হাদীস ঘোষণা করেন। যথা, আবূ উবায়দ আল-আজরী ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন যে ঈসা বিন জারিয়াহ ‘মুনকার আল-হাদীস’। [তাহযিব আল-কামাল, ১৪তম খণ্ড, ৫৩৩ পৃষ্ঠা]

ইমাম নাসাঈ (রহ:) নিজ ‘দু’আফা ওয়াল মাতরুকীন’ গ্রন্থে বলেন, “ঈসা বিন জারিয়াহ হাদীস গ্রহণ করেছে (শিয়া বর্ণনাকারী) এয়াকুব আল-কুম্মী হতে; আর সে (ঈসা) হচ্ছে ‘মুনকার’।” [ইমাম নাসাঈ কৃত ‘দু’আফা ওয়াল মাতরুকীন, ২:২১৫]

অতএব, ছয়টি বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থের মধ্যে দু’টির রচয়িতা (ইমাম আবূ দাউদ ও ইমাম নাসাঈ) ওই বর্ণনাকারীকে ‘মুনকারুল হাদীস’ ঘোষণা করেছেন বলে সপ্রমাণিত হলো।

ঈসা বিন জারিয়াহ সম্পর্কে অন্যান্য উলামা-এ-কেরাম যা বলেছেন, তা নিম্নরূপ:

ইমাম আল-সা’যী (রহ:) ও ইমাম আল-উকাইলী (রহ:) ’দু’আফা’ (দুর্বল/অ-নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী)-এর তালিকায় ঈসাকে উল্লেখ করেন।

ইমাম ইবনে আদী (রহ:) বলেন, তার বর্ণিত আহাদীস ‘মাহফূয নয়’। [তাহযিবুত্ তাহযিব, ৪:৫১৮]

ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) স্বয়ং বলেন, ঈসা বিন জারিয়াহ ‘লাঈন’ (দুর্বলতাপ্রবণ, অর্থাৎ, অ-নির্ভরযোগ্য)। [তাকরিবুত্ তাহযিব, ১:৭৬৮]

এমন কি আলবানী ও হুসাইন সালীম আসাদের মতো শীর্ষস্থানীয় ‘সালাফী’-রাও ঈসা বিন জারিয়াহ বর্ণিত এই হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছে।

হুসাইন সালীম আসাদ ‘মুসনাদে আবি এয়ালা’ গ্রন্থের নিজস্ব ব্যাখ্যামূলক ’তাহকীক’ পুস্তকে বলে, এর সনদ ’দুর্বল’। [তাহকীক, ৩:৩৩৬, দারুল মা’মূন, দামেশক থেকে প্রকাশিত]

সুতরাং পরিদৃষ্ট হচ্ছে যে আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল তথা হযরত এয়াহইয়া বিন মঈন (রহ:), ইমাম নাসাঈ (রহ:) ও ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর মতো কর্তৃত্বসম্পন্ন মহান উলামাবৃন্দ ঈসাকে দা’য়ীফ-ই শুধু নয়, বরং মুনকারুল হাদীস-ও বলেছ্নে। এমতাবস্থায় ‘সালাফী’দের প্রদর্শিত এই বর্ণনাটি ‘মওযু’ বা জাল বলেই সাব্যস্ত হয়!

উপমহাদেশে পরিচিত ‘সালাফী’ আলেম মওলানা আবদুর রহমান মোবারকপুরী (মৃত্যু: ১৩৫৩ হিজরী) লিখেছে, যে বর্ণনাকারী (রাবী) মুনকারুল হাদীস বলে জ্ঞাত, তার বর্ণিত সমস্ত আহাদীস-ই প্রত্যাখ্যানযোগ্য। [এবকারুল মতন, ১৯১ পৃষ্ঠা]

অতএব, হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) ও হযরত জাবের (রা:) বর্ণিত উভয় হাদীসই বড় জোর দুর্বল (শেষোক্ত জনের বর্ণনাটি বানোয়াট বলে প্রমাণিত); অধিকন্তু, ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর প্রদত্ত নিম্নের উসূলে হাদীসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-এর বর্ণিত হাদীসটি মকবূল বা গৃহীত বলে সাব্যস্ত হয়। ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) একখানি হাদীস বর্ণনার পরে বলেন, যদি মহানবী (দ:) হতে বর্ণিত দু’টি হাদীসের মধ্যে ’পরস্পরবিরোধিতা’ দেখা যায়, তাহলে আমরা সেই রীতি গ্রহণ করি যেটি সাহাবা-এ-কেরাম কর্তৃক সমর্থিত [সুনানে আবি দাউদ, হাদীস নং ১৫৭৭-এর অধীন]

এমতাবস্থায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণিত হাদীসটি সমর্থিত হয়েছে, কেননা তা হযরত উমর (রা:), হযরত উবাই বিন কাআব (রা:) ও অন্যান্য আরও অনেকের বর্নিত হাদীসের সাথে মিলে যায়। ওহাবীরা অবশ্য ইমাম মালেক (রহ:)-এর ‘মুওয়াত্তা’ হতে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে আরেকটি রওয়ায়াত প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু এই বর্ণনাটি হযরত উবাই বিন কাআব (রা:)-এর ২০ রাকআত তারাবীহ নামায পড়ানোর রীতি সম্পর্কে বর্ণিত একচেটিয়া আহাদীসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

মুওয়াত্তা-এ-ইমাম মালেক, ৬ষ্ঠ বই, নম্বর ৬.২.৪

এয়াহইয়া আমার (ইমাম মালেক স্বয়ং) কাছে বর্ণনা করেন মালেক হতে, তিনি মোহাম্মদ ইবনে ইউসূফ হতে, এই মর্মে যে, হযরত সা’ইব ইবনে এয়াযীদ (রা:) বলেন: “খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:) হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) ও হযরত তামীম আদ্ দারী (রা:)-কে নির্দেশ দেন যেন তাঁরা রাতের এগারো রাকআত নামাযের জামাআতে ইমামতি করেন। কুরআন তেলাওয়াতকারী (ইমাম) মি’ঈন (মধ্যম আকৃতির সূরার সমষ্টি) পাঠ করতেন যতোক্ষণ না আমরা দীর্ঘ সময় নামাযে দণ্ডায়মান হওয়ার দরুন নিজেদের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতাম। ভোর না হওয়া পর্যন্ত আমরা (মসজিদ) ত্যাগ করতাম না।”

এটি-ই ‘সালাফী’দের কাছে দ্বিতীয় বড় দলিল। পরিতাপের বিষয় এই যে, আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল এবং আসমাউর রেজাল জ্ঞানের শাস্ত্রগুলো সম্পর্কে অনবধান নিরীহ মুসলমান সর্বসাধারণকেই কেবল ‘সালাফী’রা ধোকা দিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারে, কিন্তু আহলে সুন্নাতের জ্ঞান বিশারদগণ তাদেরকে এই জ্ঞানে সমুচিত শিক্ষা দেবেন।

’মুওয়াত্তা’ গ্রন্থে লক্ষণীয় যে এর এসনাদ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘মোহাম্মদ বিন ইউসূফ ‘আ’ন সাইব ইবনে এয়াযীদ’ (সাইব বিন এয়াযীদ হতে মোহাম্মদ বিন ইউসূফ বর্ণিত)।

‘মোসান্নাফ-এ-আবদির রাযযাক’ গ্রন্থে ওই একই বর্ণনা একই এসনাদ-সহ লিপিবদ্ধ আছে, কিন্তু তাতে বিবৃত হয়েছে: হযরত সাইব বিন এয়াযীদ (রা:) হতে মোহাম্মদ বিন ইউসূফ বর্ণনা করেন যে, খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:) রমযান মাসে মানুষদেরকে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) ও হযরত তামীম দারী (রা:)-এর ইমামতিতেএকুশ রাকআত নামায জামাতে আদায়ের নির্দেশ দেন। [মুসান্নাফে আবদির রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৩০]

অতএব, ‘মুওয়াত্তা’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ বর্ণনা থেকেও ৮ রাকআত প্রমাণিত হয় না, বরং ওপরের রওয়ায়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে ২০ রাকআত তারাবীহ’র নামায-ই প্রমাণিত হয়। এক্ষণে ‘সালাফী’দের কাছে খুলাফায়ে রাশেদীনের আর কোনো বর্ণনা নেই যা দ্বারা ৮ রাকআত তারাবীহ সাব্যস্ত করা যায়। কাজেই ’মুওয়াত্তা’ গ্রন্থে বর্ণিত রওয়ায়াতটি ‘মুদতারেব’ হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং তাই এটি প্রামাণিক দলিল বলে গ্রহণের অযোগ্য। অনুগ্রহ করে ওপরে পেশকৃত বিভিন্ন রওয়ায়াতের একচেটিয়া দলিলগুলো দেখুন, যা’তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) ২০ রাকআত তারাবীহ আদায় করেছেন। এমন কি ’সালাফী’গুরু (তাদের ‘শায়খুল ইসলাম’) ইবনে তাইমিয়াহ আল-মুজাসমী-ও এ সম্পর্কে বলে: “এটি সপ্রমাণিত যে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) রমযান মাসে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-দের জামাআতে ২০ রাকআত তারাবীহ ও ৩ রাকআত বেতরের নামাযে ইমামতি করতেন। অতএব, অধিকাংশ উলামা-এ-কেরামের মাসলাক (রীতি-নীতি) এই যে, এটি-ই সুন্নাহ। কেননা, হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) এই ২০ রাকআতের ইমামতি করার সময় ওখানে উপস্থিত ছিলেন মোহাজির (হিজরতকারী) ও আনসার (সাহায্যকারী) সাহাবীবৃন্দ, কিন্তু তাঁদের একজনও এর বিরোধিতা করেন নি!” [ইবনে তাইমিয়াহ কৃত মজমুয়া-এ-ফাতাওয়া, ১:১৯১] 

দলিল-১১  

আল-হারিস (রা:) বর্ণনা করেন যে তিনি রমযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতেন, আর ৩ রাকআত বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন এবং রুকূর আগে কুনুত পড়তেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৭]

দলিল-১২ এবং তারাবীহ’র সংজ্ঞা

হযরত আবূ আল-বখতারী (রা:) থেকে বর্ণিত যে তিনি রমযান মাসে জামাআতে ‘৫ তারভিয়াত’ (অর্থাৎ, ২০ রাকআত তারাবীহ) নামাযের এবং ৩ রাকাত বেতরের নামাযের ইমামতি করতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৮]

বি:দ্র: তারাবীহ নামাযে প্রতি ৪ রাকআতে এক ‘তারভিহ’ (বিশ্রামের সময়)। পাঁচ ’তারভিহাত’ হলো ৫*৪=২০ রাকআত।

দলিল-১৩  

হযরত আতা’ ইবনে রুবাহ (রা:) বলেন: আমি সব সময়-ই মানুষদেরকে ২৩ রাকআত (তারাবীহ) পড়তে দেখেছি, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ছিল বেতরের নামায। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৭০] 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment