তারাবীহ নামায সম্পর্কিত আহলুস্ সুন্নাহ’র ফতোওয়া ▆
পবিত্র রমযান মাসে তারাবীহ’র নামায কতো রাকআত পড়তে হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। মুসলমানদের ভাল করে জানা আবশ্যক যে বিগত ১৪’শ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহ ন্যূনতম ২০ রাকআত তারাবীহ নামায পড়ে আসছেন (এর অন্তর্ভুক্ত হারামাইন শরীফাইন-ও)। রাসূলুল্লাহ (দ:), সাহাবা-এ-কেরাম (রা:), তাবেঈন ও পূর্ববর্তী উলামা (রহ:)-এর যুগ থেকে এটি চলে আসছিল; হেজাযে একটি নতুন ফেরকাহ’র উৎপত্তি-ই মুসলমানদের এতদসংক্রান্ত ঐক্যকে বিনষ্ট করেছে। ওই ফেরকাহ’র সম্বল একটিমাত্র হাদীস যা ‘তাহাজ্জুদ’ নামায-সম্পর্কিত; এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তারা তারাবীহ’র প্রতি আরোপ করে থাকে এবং মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে।
তারাবীহ’র নামায যে ২০ রাকআত, তা অজস্র দলিলের আলোকে আমরা এক্ষণে দেখবো।
তারাবীহ নামাযের ২০ রাকআতের পক্ষে একচেটিয়া দলিল প্রদর্শনের আগে আমরা দেখাবো যে ইসলামী শরীয়তে ‘সুন্নাহ’ শব্দটির ব্যাখ্যা একটি সহীহ হাদীসে কীভাবে এসেছে। বিভ্রান্ত ফেরকাহ’র কিছু লোক তারাবীহ নামাযের ব্যাপারটিতে নিজেদের অপযুক্তি খণ্ডন হতে দেখে আর কোনো উপায় না পেয়ে বলে, হযরত উমর (রা:) ও অন্যান্য সাহাবা (রা:)-বৃন্দের ধর্ম অনুশীলন এক কথা, আর মহানবী (দ:)-এঁর ধর্মচর্চা একদম আলাদা বিষয়। আরেক কথায়, তারা সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-কে মহানবী (দ:)-এঁর সাথে ভিন্নমত পোষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। (নাউযুবিল্লাহ)
কিন্তু এই অভিযোগকারীদের অবাক করে হযরত নবী করীম (দ:) এরশাদ ফরমান:
“তোমরা আমার সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরো এবং আমার সঠিক পথের অনুসারী খলীফাবৃন্দের সুন্নাহকেও।” [সুনানে আবি দাউদ, ২য় খণ্ড, ৬৩৫ পৃষ্ঠা, সুনানে তিরমিযী, ২য় খণ্ড, ১০৮ পৃষ্ঠা, সুনানে দারিমী, ১ম খণ্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ ও অন্যান্য]
দলিল-১
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻃﺎﻫﺮ ﺍﻟﻔﻘﻴﺔ، ﻗﺎﻝ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺍﻟﺒﺼﺮﻱ، ﻗﺎﻝ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺃﺣﻤﺪ : ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻮﻫﺎﺏ، ﻗﺎﻝ : ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺧﺎﻟﺪ ﺑﻦ ﻣﺨﻠﺪ، ﻗﺎﻝ : ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺟﻌﻔﺮ، ﻗﺎﻝ : ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺧﺼﻴﻔﺔ، ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ، ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺎ ﻧﻘﻮﻡ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ .
অর্থাৎ : হযরত সাঈব ইবনে এয়াযীদ (রা:) বলেন, “খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:)-এর আমলে (রমযান মাসে) মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায এবং বিতরের নামাযও পড়তেন।”
[সূত্রঃ ইমাম বায়হাকী প্রণীত ‘মা’রেফত-উস-সুনান ওয়াল্ আসার’, ৪র্থ খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৫৪০৯]
ইমাম বায়হাকী (রহ:) অপর এক সনদে অনুরূপ একখানি রওয়ায়াত লিপিবদ্ধ করেছেন।
ﻭﻗﺪ ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺑﻦ ﻓﻨﺠﻮﻳﻪ ﺍﻟﺪﻳﻨﻮﺭﻱ ﺑﺎﻟﺪﺍﻣﻐﺎﻥ ﺛﻨﺎ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﺍﻟﺴﻨﻲ ﺃﻧﺒﺄ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺍﻟﺒﻐﻮﻱ ﺛﻨﺎ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺍﻟﺠﻌﺪ ﺃﻧﺒﺄ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺫﺋﺐ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺧﺼﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻓﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻗﺎﻝ ﻭﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﺮﺅﻭﻥ ﺑﺎﻟﻤﺌﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺘﻮﻛﺆﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﺼﻴﻬﻢ ﻓﻲ ﻋﻬﺪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻋﻔﺎﻥ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻣﻦ ﺷﺪﻩ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ
অর্থাৎ : হযরত সাঈব ইবনে এয়াযীদ (রা:) বলেন, “খলীফা হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রা:)-এর শাসনামলে রমযান মাসে মুসলমানগণ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন।” তিনি আরও বলেন, “তাঁরা মি’ঈন পাঠ করতেন এবং খলীফা হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা:)-এর শাসনামলে (নামাযে) দণ্ডায়মান থাকার অসুবিধা থেকে স্বস্তির জন্যে তাঁরা নিজেদের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।”
[সূত্রঃ ইমাম বায়হাকী রচিত ‘সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৮-৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬১৭]
ইমাম নববী (রহ:) বলেন, “এটির এসনাদ সহীহ ( ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ )।”
[সূত্রঃ ‘আল-খুলাসাতুল আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১]
ইমাম বদরুদ্দীন আয়নী (রহ:) বলেন,
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﻲ، ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﻤﺮ ، ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ، ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ، ﻭﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﻲ، ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ، ﻣﺜﻠﻪ
অর্থাৎ : “ইমাম বায়হাকী (রহ:) সহীহ সনদে সাহাবী হযরত সাঈব ইবনে এয়াযীদ (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন যে খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:)-এর শাসনামলে মুসলমান সমাজ ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন এবং তা খলীফা হযরত উসমান (রা:)-এর শাসনামলেও প্রচলিত ছিল।”
[সূত্রঃ ’উমদাতুল ক্কারী শরহে সহীহ আল-বোখারী’, ৫ম খণ্ড, ২৬৪ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন হতে প্রকাশিত]
’সালাফী’ আলেম আল-মোবারকপুরীও এই হাদীসটির সনদকে ’সহীহ’ বলেছে এবং এর পক্ষে ইমাম নববী (রহ:)-এর সমর্থনের কথা উদ্ধৃত করেছে।
[সূত্রঃ ’তোহফাতুল আহওয়াযী’, ৩য় খণ্ড, ৪৫৩ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন থেকে প্রকাশিত]
ইমাম নববী (রহ:) বলেন,
ﺭﺟﺎﻝ ﻫﺬﺍ ﺍﻻﺳﻨﺎﺩ ﻛﻠﻬﻢ ﺛﻘﺎﺕ
অর্থাৎ : “এই এসনাদে সকল রাবী তথা বর্ণনাকারী ’সিকা’ বা নির্ভরযোগ্য।”
[‘আসার আল-সুনান’, ২:৫৪]
দলিল-২
ﻭ ﺣﺪﺛﻨﻲ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺭﻭﻣﺎﻥ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﺜﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
অর্থাৎ : এয়াহইয়া আমার (ইমাম মালেক) কাছে মালেক হতে বর্ণনা করেন যে এয়াযীদ ইবনে রুমান বলেছেন, “খলীফা হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রা:)-এর শাসনামলে মুসলমানবৃন্দ রমযান মাসের (প্রতি) রাতে ২৩ রাকআত (তারাবীহ ২০ ও বিতর ৩) নামায পড়তেন।”
[সূত্রঃ ইমাম মালেক প্রণীত ‘মুওয়াত্তা’, সালাত অধ্যায়, মা জা’আ ফী কায়ামে রমযান, ১ম খণ্ড, ১৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৮০]
ইমাম তিরমিযী (রহ:)-এঁর অভিমতঃ
ﻭﺃَﻛْﺜَﺮُ ﺃﻫْﻞِ ﺍﻟﻌِﻠﻢِ ﻋﻠﻰ ﻣﺎ ﺭُﻭِﻱَ ﻋﻦ ﻋﻠﻲٍّ ﻭﻋُﻤﺮ ﻭﻏَﻴْﺮِﻫِﻤَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺻﺤﺎﺏِ ﺍﻟﻨﺒﻲِّ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً . ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱِّ ﻭﺍﺑﻦِ ﺍﻟﻤُﺒَﺎﺭَﻙِ ﻭﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌﻲِّ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ . ﻭﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌﻲُّ : ﻭﻫَﻜَﺬَﺍ ﺃﺩْﺭَﻛْﺖُ ﺑِﺒَﻠَﺪِﻧَﺎ ﺑِﻤَﻜَّﺔَ، ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
অর্থাৎ : ”ইসলামী জ্ঞান বিশারদদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ একমত হয়েছেন যে (তারাবীহ) নামায ২০ রাকআত, যা হযরত উমর ফারূক (রা:), হযরত আলী (ক:) এবং রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর অন্যান্য সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে। হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ:) এবং ইমাম শাফেঈ (রহ:)-ও অনুরূপ মত পোষণ করেছেন। ইমাম শাফেঈ (রহ:) বলেন তিনি মক্কার অধিবাসীদেরকে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তে দেখেছেন।”
[সূত্রঃ ‘সুনানে জামেঈ আল-তিরমিযী’, রোযা সংক্রান্ত বই, রমযানের নামায অধ্যায়, ৩য় খণ্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৮০৬]
দলিল-৩
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣُﻤَﻴْﺪُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ، ﻋَﻦْ ﺣَﺴَﻦٍ ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰِ ﺑْﻦِ ﺭُﻓَﻴْﻊٍ ، ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺃُﺑَﻲّ ﺑْﻦُ ﻛَﻌْﺐٍ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﺎﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﻳُﻮﺗِﺮُ ﺑِﺜَﻼَﺙٍ .
অর্থাৎ : হযরত আবদুল আযীয বিন রাফি’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) মদীনা মোনাওয়ারায় রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযের জামা’তে ইমামতি করতেন।”
[সূত্রঃ মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, ৭৭৬৬ নং হাদীস]
দলিল-৪
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﺍﻟﻔﻀﻞ ﺍﻟﻘﻄﺎﻥ ﺑﺒﻐﺪﺍﺩ ﺃﻧﺒﺄ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﻴﺴﻰ ﺑﻦ ﻋﺒﺪﻙ ﺍﻟﺮﺍﺯﻱ ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﻋﺎﻣﺮ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺗﻤﻴﻢ ﺛﻨﺎ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻳﻮﻧﺲ ﺛﻨﺎ ﺣﻤﺎﺩ ﺑﻦ ﺷﻌﻴﺐ ﻋﻦ ﻋﻄﺎﺀ ﺑﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴﻠﻤﻲ ﻋﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺩﻋﺎ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺄﻣﺮ ﻣﻨﻬﻢ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻗﺎﻝ ﻭﻛﺎﻥ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﻬﻢ ﻭﺭﻭﻯ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﻭﺟﻪ ﺁﺧﺮ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ
অর্থাৎ : আবদুর রহমান সুলামী বর্ণনা করেন যে হয়রত আলী (ক:) রমযান মাসে কুরআন মজীদ তেলাওয়াতকারী (হাফেয)-দের ডেকে তাদের মধ্যে একজনকে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়াতে বলেছিলেন এবং নিজে বিতরের নামাযে ইমামতি করতেন।
[সূত্রঃ ইমাম বায়হাকী কৃত ’সুনান আল-কুবরা’, ২য় খণ্ড, ৬৯৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৪৬২০]
দলিল-৫
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﺃَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦَ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ ﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﻓِﻲ ﻗِﻴَﺎﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢْ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
অর্থাৎ : হযরত হাসান বসরী (রহ:) বলেন: “খলীফা উমর ফারূক (রা:) রমযান মাসের (তারাবীহ) নামাযে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:)-এর ইমামতিতে মানুষদেরকে জামা’তে কাতারবদ্ধ করেন এবং তিনি (ইবনে কাআব) ২০ রাকআত নামায পড়ান।”
[সূত্রঃ ‘সিয়ার আল-আ’লম ওয়াল নুবালাহ’, ১ম খণ্ড, ৪০০-১ পৃষ্ঠা, হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:)-এর জীবনী]
ইমাম নববী (রহ:) ওপরের বর্ণনা সম্পর্কে বলেন:
ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ
অর্থাৎ : “এর সনদ সহীহ।”
[সূত্রঃ ‘আল-খুলাসাত আল-আহকাম’, হাদীস নং ১৯৬১]
দলিল-৬
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ ، ﻋَﻦْ ﺣَﺴَﻦِ ﺑْﻦِ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ، ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﻗَﻴْﺲٍ ، ﻋَﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﺤَﺴْﻨَﺎﺀِ ﺃَﻥَّ ﻋَﻠِﻴًّﺎ ﺃَﻣَﺮَ ﺭَﺟُﻼً ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢْ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً
অর্থাৎ : হযরত আবূল হাসনা বর্ণনা করেন যে হযরত আলী (ক:) জনৈক ব্যক্তিকে রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে ইমামতি করার নির্দেশ দেন।”
[সূত্রঃ ’মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা’, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৩]
দলিল-৭
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ ، ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ، ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻠَﻴْﻜَﺔَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً، ﻭَﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔِ ﻓِﻲ ﺭَﻛْﻌَﺔٍ
অর্থাৎ : হযরত নাফে’ ইবনে উমর (রা:) থেকে ওয়াকী’ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “হযরত ইবনে আবি মুলাইকা (রা:) রমযান মাসে আমাদের জামা’তের ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে ইমামতি করতেন।”
[সূত্রঃ মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৫]
দলিল-৮, ৯ ও ১০ এবং ভ্রান্তদের হাদীস অপপ্রয়োগের বিস্তারিত খণ্ডন
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﻲ ﻏﻴﺮ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
অর্থাৎ : হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:) রমযান মাসে (প্রতি রাতে) নিজে নিজে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকআত বেতরের নামাযও পড়তেন।
[সূত্রঃ ‘সুনান আল-বায়হাকী, হাদীস নং ১২১০২]
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
অর্থাৎ : হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) রওয়ায়াত করেন যে রাসূলে পাক (দ:) রমযান মাসে ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকআত বেতরের নামাযও আদায় করতেন।
[সূত্রঃ ’মোসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা’, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৭৬৯২]
ﺣﺪﻳﺚ ﺃﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺻﻠﻰ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻟﻴﻠﺘﻴﻦ ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﺜﺎﻟﺜﺔ ﺍﺟﺘﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻠﻢ ﻳﺨﺮﺝ ﺇﻟﻴﻬﻢ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺍﻟﻐﺪ ﺧﺸﻴﺖ ﺃﻥ ﺗﻔﺮﺽ ﻋﻠﻴﻜﻢ
অর্থাৎ : হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবী (দ:) দুই রাতে ২০ রাকআত নামায মানুষের সাথে আদায় করেন; কিন্তু তিনি তৃতীয় রাতে আর বের হননি। তিনি বলেন, আমি আশংকা করি যে এটি তোমাদের (সাহাবা-এ-কেরামের) প্রতি আবার বাধ্যতামূলক না হয়ে যায়।
[সূত্রঃ ইবনে ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) কৃত ‘আল-তালখীস আল-হাবীর’, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ৫৪০]
বি:দ্র: ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এই হাদীস উদ্ধৃত করার পরে বলেন,
ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻰ ﺻﺤﺘﻪ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺩﻭﻥ ﻋﺪﺩ ﺍﻟﺮﻛﻌﺎﺕ
অর্থাৎ : “সকল মোহাদ্দেসীন (হাদীসের বিশারদ) হযরত আয়েশা (রা:) হতে এই বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন, তবে রাকআতের সংখ্যার ক্ষেত্রে নয়।
আহলুল বেদআহ (বেদআতী গোষ্ঠী) আনন্দে আটখানা হয়ে বলে, দেখো, ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) এই হাদীসটিকে সহীহ হিসেবে গ্রহণ করেছেন, কিন্তু রাকআতের সংখ্যার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। অতএব, তারাবীহ’র নামাযের রাকআতের সংখ্যা কতো তা প্রতিষ্ঠিত নয়।
জবাব: প্রথমতঃ ইমাম ইবনে হাজর (রহ:)-এঁর এই কথা আমাদের বিরুদ্ধে নয়, বরং বেদআতীদের বিরুদ্ধে যায়। কেননা, তারাবীহ নামায ২০ রাকআত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে আমাদের কাছে একচেটিয়া দালিলিক প্রমাণ আছে। অথচ তারা দুটো দলিলকে বিকৃত করে কপটতার সাথে দাবি করে যে তারাবীহ’র নামায মাত্র ৮ রাকআত।
তারাবীহ নামায সম্পর্কে বেদআতীদের প্রদর্শিত মূল দলিল হচ্ছে বোখারী শরীফের একখানা হাদীস, যা’তে বিবৃত হয়েছেঃ
সহীহ বোখারী, তাহাজ্জুদ-বিষয়ক বই, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৪৮
হযরত আবূ সালমা বিন আবদির রহমান (রা:) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমি মা আয়েশা (রা:)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এঁর নামায কেমন ছিল? তিনি জবাবে বলেন, “আল্লাহর রাসূল (দ:) রমযান, বা অন্যান্য মাসে কখনোই এগারো রাকআতের বেশি নামায পড়েন নি; তিনি চার রাকআত পড়তেন, সেগুলোর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করো না; অতঃপর চার রাকআত পড়তেন, সেগুলোর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কেও আমাকে প্রশ্ন করো না; এবং এরপর তিনি তিন রাকআত নামায পড়তেন।” মা আয়েশা (রা:) আরও বলেন, “আমি বল্লাম, এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! বেতরের নামায পড়ার আগে কি আপনি ঘুমোন? তিনি উত্তরে বলেন, ’ওহে আয়েশা! আমার চোখ ঘুমোয়, কিন্তু আমার অন্তর (কলব্) জাগ্রত থাকে’।”
সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কেউই এখানে স্পষ্ট দেখতে পাবেন যে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। কেননা, তিনি বলেন, “বা অন্যান্য মাসে”; অথচ সালাতুত্ তারাবীহ হলো শুধু রমযান মাসের জন্যেই নির্ধারিত নামায। যদিও আমরা এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে পারি এবং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পারি যে উপরোক্ত হাদীস শরীফ সুনির্দিষ্টভাবে তাহাজ্জুদ নামাযকে উদ্দেশ্য করেছে এবং তারাবীহ নামাযকে করেনি, তথাপি আমরা আরেকটি বিষয়ের দিকে এক্ষণে মনোযোগ দিতে আগ্রহী। এই হাদীসটি ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:)-এঁর ওপরে উদ্ধৃত সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে, অর্থাৎ, “সকল মোহাদ্দেসীন (হাদীসের বিশারদ) হযরত আয়েশা (রা:) হতে এই বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন, তবে রাকআতের সংখ্যার ক্ষেত্রে নয়।”
এবার আমরা সহিহাইন (বোখারী ও মুসলিম) হতে দালিলিক প্রমাণগুলো যাচাই করবো।
সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৬১
হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) রাতের নামাযে তেরো (১৩) রাকআত পড়তেন এবং ফজরের নামাযের আযান শোনার পর তিনি দুই রাকআত (হাল্কা, দীর্ঘ নয়) নামায আদায় করতেন।
এই হাদীস প্রমাণ করে তাহাজ্জুদ (বেতর ছাড়াই) অন্ততপক্ষে ১০-১২ রাকআত-বিশিষ্ট নামায। অথচ এই বেদআতীরা ৮ রাকআতকে মহানবী (দ:)-এর সুন্নাহ হিসেবে মনে করে। এই কারণেই ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) হযরত আয়েশা (রা:) থেকে উপরোক্ত ২০ রাকআতের বর্ণনাসম্বলিত হাদীসটিকে ’সহীহ’ বলেছেন, কিন্তু রাকআতের সংখ্যার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেন নি।
সহীহ বোখারী, ২য় খণ্ড, ২১তম বই, হাদীস নং ২৪০
মাসরুখ (রা:) বর্ণনা করেন, আমি মা আয়েশা (রা:)-কে মহানবী (দ:)-এঁর রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “ফজরের দুই রাকআত (অর্থাৎ সুন্নাহ) ছাড়াও ওই নামায ছিল সাত, নয় বা এগারো রাকআত-বিশিষ্ট।”
এটিও হযরত আয়েশা (রা:)-এঁর হাদীসে ‘এদতেরাব’ প্রমাণ করে (মানে সাত, নয়, নাকি এগারো তা স্থিরকৃত নয়); আর তারাবীহ কখনোই ৮ রাকআত বলে বিবেচনা করা যায় না, কারণ এর ২০ রাকআত হবার ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।
সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬১১
হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, রাতে রাসূলে খোদা (দ:)-এঁর আদায়কৃত নামাযে রাকআত সংখ্যা ছিল দশ। তিনি বিতরের নামায এবং ফজরের দুই রাকআত (সুন্নাত) নামাযও আদায় করতেন। আর এর যোগফল হচ্ছে তেরো (১৩) রাকআত।
সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬৮৬
আবূ জামরা (রা:) বর্ণনা করেন: আমি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-কে বলতে শুনেছি যে মহানবী (দ:) রাতে তেরো (১৩) রাকআত নামায পড়তেন।
সহীহ মুসলিম, ৪র্থ বই, হাদীস নং ১৬৮৭
হযরত যায়দ বিন খালেদ আল-জুহানী (রহ:) বলেন: ”নিশ্চয় আমি মহানবী (দ:) কর্তৃক আদায়কৃত রাতের নামায প্রত্যক্ষ করতাম। তিনি প্রথমে সংক্ষিপ্ত দুই রাকআত নামায পড়তেন; অতঃপর দীর্ঘ, অতি দীর্ঘ দুই রাকআত পড়তেন; এর পরের দুই রাকআত পূর্ববর্তী দুই রাকআতের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিল; পরবর্তী যে দুই রাকআত পড়তেন, তা আরও সংক্ষিপ্ত; তৎপরবর্তী দুই রাকআত আরও সংক্ষিপ্ত; এর পরে আরও দুই রাকআত পড়তেন যা আরও সংক্ষিপ্ত ছিল। অতঃপর তিনি একটি রাকআত (বিতর) পড়তেন, যা সর্বসাকুল্যে তেরো রাকআত নামায হতো।”
ওপরে প্রদর্শিত আমাদের ৮ এবং ৯ নং দলিল, যার মধ্যে রয়েছে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক সরাসরি রাসূলুল্লাহ (দ:) হতে প্রদত্ত ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের বর্ণনা, উভয় বর্ণনাতেই অবশ্য আবূ শায়বাহ (মহান মুহাদ্দীস ইবনে আবি শায়বাহ’র বাবা) নামে একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আছেন যাঁর নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ মুহাদ্দেসীন তাঁকে ‘দুর্বল’ বিবেচনা করেছেন। এমতাবস্থায় এই সকল বেদআতী লোকেরা আবারও আনন্দে লাফ দিয়ে বলে ওঠে যে আবূ শায়বাহ দুর্বল; তাই ২০ রাকআত তারাবীহ হুযূর পাক (দ:) থেকে প্রমাণিত নয়। তাদের কথার সমর্থনে তারা নিম্নের হাদীসটি প্রদর্শন করে:
হযরত জাবের ইবনে আব্দিল্লাহ (রা:) বর্ণনা করেন, “নবী করীম (দ:) রমযান মাসে (এক রাতে) আট রাকআত ও বেতরের নামাযে ইমামতি করেন। পরবর্তী রাতে আমরা মসজিদে সমবেত হই এই আশায় যে তিনি আবারও ইমামতি করার জন্যে বেরিয়ে আসবেন। আমরা সেখানে সকাল পর্যন্ত অবস্থান করি। অতঃপর আমরা মসজিদের মাঝখানে এসে আরয করি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমরা গত রাতে মসজিদে অবস্থান করেছি এই আশায় যে আপনি নামাযে ইমামতি করবেন।’ প্রত্যুত্তরে মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান, ‘নিশ্চয় আমি আশংকা করেছি এটি তোমাদের প্রতি অবশ্য পালনীয় না হয়ে যায়’।”
[সূত্রঃ ইবনে খুযাইমাহ (২:১৩৮, হাদীস # ১০৭০), ইমাম তাবারানী কৃত মু’আজম আস্ সাগীর (১:১৯০) এবং অন্যান্যরা]
এই বেদআতীরা নিজেদের হীন স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে যে কোনো হাদীসকে যয়ীফ (দুর্বল) ঘোষণা করতে মোটেও দেরি করে না।
এখন আমরা হযরত জাবের ইবনে আব্দিল্লাহ (রা:) হতে জাল হাদীস বর্ণনাকারী সম্পর্কে আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল-বৃন্দ কী বলেছেন তা দেখবো।
এই হাদীসটির ‘একমাত্র’ বর্ণনাকারী ঈসা ইবনে জারিয়াহ; মহান মোহাদ্দেসীনবৃন্দ ও আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল-মণ্ডলীর অভিমত নিচে পেশ করা হলো:
হযরত এয়াহইয়া বিন মঈন (রহ:) বলেন:
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺃﺑـﻲ ﺧﻴﺜﻤﺔ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﻌﻴﻦ : ﻟﻴﺲ ﺑﺬﺍﻙ ، ﻻ ﺃﻋﻠﻢ ﺃﺣﺪﺍً ﺭﻭﻯ ﻋﻨﻪ ﻏﻴﺮ ﻳﻌﻘﻮﺏ
অর্থাৎ : এই লোক ‘কেউই নয়’ এবং সে যার কাছ থেকে হাদীস নিয়েছে এমন বর্ণনাকারীদের মধ্যে এয়াকুব (শিয়াপন্থী) ছাড়া আর কাউকে আমি জানি না।
[সূত্রঃ তাহযিবুত্ তাহযিব, ৪:৫১৮]
ইমাম আল-মিযযী (রহ:) প্রণীত ‘তাহযিবুল কামাল’ গ্রন্থে ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এঁর বাণীও বিধৃত হয়েছে, যেখানে তিনি ঈসাকে মুনকার আল-হাদীস ঘোষণা করেন।
ﻭﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﻋُﺒـﻴﺪ ﺍﻵﺟُﺮﻱ ، ﻋﻦ ﺃﺑـﻲ ﺩﺍﻭﺩ : ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
অর্থাৎ : যথা, আবূ উবায়দ আল-আজরী ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এঁর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন যে ঈসা বিন জারিয়াহ ‘মুনকার আল-হাদীস’।
[সূত্রঃ তাহযিব আল-কামাল, ১৪তম খণ্ড, ৫৩৩ পৃষ্ঠা]
ইমাম নাসাঈ (রহ:) নিজ ‘দু’আফা ওয়াল মাতরুকীন’ গ্রন্থে বলেন,
ﻋﻴﺴﻰ ﺍﺑﻦ ﺟﺎﺭﻳﺔ : ﻳﺮﻭﻱ ﻋﻨﻪ ﻳﻌﻘﻮﺏ ﺍﻟﻘُﻤِّﻲ، ﻣﻨﻜﺮ
অর্থাৎ : “ঈসা বিন জারিয়াহ হাদীস গ্রহণ করেছে (শিয়া বর্ণনাকারী) এয়াকুব আল-কুম্মী হতে; আর সে (ঈসা) হচ্ছে ‘মুনকার’।”
[সূত্রঃ ইমাম নাসাঈ কৃত ‘দু’আফা ওয়াল মাতরুকীন, ২:২১৫]
অতএব, ছয়টি বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থের মধ্যে দু’টির রচয়িতা (ইমাম আবূ দাউদ ও ইমাম নাসাঈ) ওই বর্ণনাকারীকে ‘মুনকারুল হাদীস’ ঘোষণা করেছেন বলে সপ্রমাণিত হলো।
ঈসা বিন জারিয়াহ সম্পর্কে অন্যান্য উলামা-এ-কেরাম যা বলেছেন, তা নিম্নরূপ:
ﻗﻠﺖ : ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﺴﺎﺟﻲ، ﻭﺍﻟﻌﻘﻴﻠﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻀﻌﻔﺎﺀ . ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺪﻱ : ﺃﺣﺎﺩﻳﺜﻪ ﻏﻴﺮ ﻣﺤﻔﻮﻇﺔ
অর্থাৎ : ইমাম আল-সা’যী (রহ:) ও ইমাম আল-উকাইলী (রহ:) ’দু’আফা’ (দুর্বল/অ-নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী)-এর তালিকায় ঈসাকে উল্লেখ করেন।
ইমাম ইবনে আদী (রহ:) বলেন, তার বর্ণিত আহাদীস ‘মাহফূয নয়’।
[সূত্রঃ তাহযিবুত্ তাহযিব, ৪:৫১৮]
ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) স্বয়ং বলেন, ঈসা বিন জারিয়াহ ‘লাঈন’ (দুর্বলতাপ্রবণ, অর্থাৎ, অ-নির্ভরযোগ্য)।
[সূত্রঃ তাকরিবুত্ তাহযিব, ১:৭৬৮]
এমন কি আলবানী ও হুসাইন সালীম আসাদের মতো শীর্ষস্থানীয় ‘সালাফী’-রাও ঈসা বিন জারিয়াহ বর্ণিত এই হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছে।
হুসাইন সালীম আসাদ ‘মুসনাদে আবি এয়ালা’ গ্রন্থের নিজস্ব ব্যাখ্যামূলক ’তাহকীক’ পুস্তকে বলে,
ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺿﻌﻴﻒ
অর্থাৎ : এর সনদ ’দুর্বল’।
[সূত্রঃ তাহকীক, ৩:৩৩৬, দারুল মা’মূন, দামেশক থেকে প্রকাশিত]
সুতরাং পরিদৃষ্ট হচ্ছে যে আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল তথা হযরত এয়াহইয়া বিন মঈন (রহ:), ইমাম নাসাঈ (রহ:) ও ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এঁর মতো কর্তৃত্বসম্পন্ন মহান উলামাবৃন্দ ঈসাকে দা’য়ীফ-ই শুধু নয়, বরং মুনকারুল হাদীস-ও বলেছ্নে। এমতাবস্থায় ‘সালাফী’দের প্রদর্শিত এই বর্ণনাটি ‘মওযু’ বা জাল বলেই সাব্যস্ত হয়!
উপমহাদেশে পরিচিত ‘সালাফী’ আলেম মওলানা আবদুর রহমান মোবারকপুরী (মৃত্যু: ১৩৫৩ হিজরী) লিখেছে, যে বর্ণনাকারী (রাবী) মুনকারুল হাদীস বলে জ্ঞাত, তার বর্ণিত সমস্ত আহাদীস-ই প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
[সূত্রঃ এবকারুল মতন, ১৯১ পৃষ্ঠা]
অতএব, হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) ও হযরত জাবের (রা:) বর্ণিত উভয় হাদীসই বড় জোর দুর্বল (শেষোক্ত জনের বর্ণনাটি বানোয়াট বলে প্রমাণিত); অধিকন্তু, ইমাম আবূ দাউদ (রহ:)-এর প্রদত্ত নিম্নের উসূলে হাদীসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-এর বর্ণিত হাদীসটি মকবূল বা গৃহীত বলে সাব্যস্ত হয়।
ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) একখানি হাদীস বর্ণনার পরে বলেন,
ﺍﺫﺍ ﺗﻨﺎﺯﻉ ﺍﻟﺨﺒﺮﺍﻥ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻨﻈﺮ ﺑﻤﺎ ﺍﺧﺬ ﺑﻪ ﺍﺻﺤﺎﺑﻪ
অর্থাৎ : যদি মহানবী (দ:) হতে বর্ণিত দু’টি হাদীসের মধ্যে ’পরস্পরবিরোধিতা’ দেখা যায়, তাহলে আমরা সেই রীতি গ্রহণ করি যেটি সাহাবা-এ-কেরাম কর্তৃক সমর্থিত
[সূত্রঃ সুনানে আবি দাউদ, হাদীস নং ১৫৭৭-এর অধীন]
এমতাবস্থায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণিত হাদীসটি সমর্থিত হয়েছে, কেননা তা হযরত উমর (রা:), হযরত উবাই বিন কাআব (রা:) ও অন্যান্য আরও অনেকের বর্নিত হাদীসের সাথে মিলে যায়।
ওহাবীরা অবশ্য ইমাম মালেক (রহ:)-এর ‘মুওয়াত্তা’ হতে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে আরেকটি রওয়ায়াত প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু এই বর্ণনাটি হযরত উবাই বিন কাআব (রা:)-এর ২০ রাকআত তারাবীহ নামায পড়ানোর রীতি সম্পর্কে বর্ণিত একচেটিয়া আহাদীসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
মুওয়াত্তা-এ-ইমাম মালেক, ৬ষ্ঠ বই, নম্বর ৬.২.৪
এয়াহইয়া আমার (ইমাম মালেক স্বয়ং) কাছে বর্ণনা করেন মালেক হতে, তিনি মোহাম্মদ ইবনে ইউসূফ হতে, এই মর্মে যে, হযরত সা’ইব ইবনে এয়াযীদ (রা:) বলেন: “খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:) হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) ও হযরত তামীম আদ্ দারী (রা:)-কে নির্দেশ দেন যেন তাঁরা রাতের এগারো রাকআত নামাযের জামাআতে ইমামতি করেন। কুরআন তেলাওয়াতকারী (ইমাম) মি’ঈন (মধ্যম আকৃতির সূরার সমষ্টি) পাঠ করতেন যতোক্ষণ না আমরা দীর্ঘ সময় নামাযে দণ্ডায়মান হওয়ার দরুন নিজেদের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতাম। ভোর না হওয়া পর্যন্ত আমরা (মসজিদ) ত্যাগ করতাম না।”
এটি-ই ‘সালাফী’দের কাছে দ্বিতীয় বড় দলিল।
পরিতাপের বিষয় এই যে, আল-জারহ ওয়াত্ তা’দীল এবং আসমাউর রেজাল জ্ঞানের শাস্ত্রগুলো সম্পর্কে অনবধান নিরীহ মুসলমান সর্বসাধারণকেই কেবল ‘সালাফী’রা ধোকা দিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারে, কিন্তু আহলে সুন্নাতের জ্ঞান বিশারদগণ তাদেরকে এই জ্ঞানে সমুচিত শিক্ষা দেবেন।
’মুওয়াত্তা’ গ্রন্থে লক্ষণীয় যে এর এসনাদ হিসেবে বলা হয়েছে,
ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﺃﻣﺮ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ
অর্থাৎ : ‘মোহাম্মদ বিন ইউসূফ ‘আ’ন সাইব ইবনে এয়াযীদ’ (সাইব বিন এয়াযীদ হতে মোহাম্মদ বিন ইউসূফ বর্ণিত)।
লক্ষ্যনীয় হচ্ছে “মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আন সাইব ইবনে ইয়াজিদ”
‘মোসান্নাফ-এ-আবদির রাযযাক’ গ্রন্থে ওই একই বর্ণনা একই এসনাদ-সহ লিপিবদ্ধ আছে, কিন্তু তাতে বিবৃত হয়েছে:
ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺃﻥ ﻋﻤﺮ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻭﻋﻠﻰ ﺗﻤﻴﻢ ﺍﻟﺪﺍﺭﻱ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
অর্থাৎ : হযরত সাইব বিন এয়াযীদ (রা:) হতে মোহাম্মদ বিন ইউসূফ বর্ণনা করেন যে, খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:) রমযান মাসে মানুষদেরকে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) ও হযরত তামীম দারী (রা:)-এর ইমামতিতে একুশ রাকআত নামায জামাতে আদায়ের নির্দেশ দেন।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে আবদির রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৩০]
অতএব, ‘মুওয়াত্তা’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ বর্ণনা থেকেও ৮ রাকআত প্রমাণিত হয় না, বরং ওপরের রওয়ায়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে ২০ রাকআত তারাবীহ’র নামায-ই প্রমাণিত হয়। এক্ষণে ‘সালাফী’দের কাছে খুলাফায়ে রাশেদীনের আর কোনো বর্ণনা নেই যা দ্বারা ৮ রাকআত তারাবীহ সাব্যস্ত করা যায়। কাজেই ’মুওয়াত্তা’ গ্রন্থে বর্ণিত রওয়ায়াতটি ‘মুদতারেব’ হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং তাই এটি প্রামাণিক দলিল বলে গ্রহণের অযোগ্য। অনুগ্রহ করে ওপরে পেশকৃত বিভিন্ন রওয়ায়াতের একচেটিয়া দলিলগুলো দেখুন, যা’তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) ২০ রাকআত তারাবীহ আদায় করেছেন।
এমন কি ’সালাফী’গুরু (তাদের ‘শায়খুল ইসলাম’) ইবনে তাইমিয়াহ আল-মুজাসমী-ও এ সম্পর্কে বলে:
ﺛﺒﺖ ﺃﻥ ﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻓﻲ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ، ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ . ﻓﺮﺃﻱ ﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺃﻥ ﺫﻟﻚ ﻫﻮ ﺍﻟﺴﻨﺔ؛ ﻷﻧﻪ ﺃﻗﺎﻣﻪ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻤﻬﺎﺟﺮﻳﻦ ﻭﺍﻷﻧﺼﺎﺭ، ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻜﺮﻩ ﻣﻨﻜﺮ
অর্থাৎ : “এটি সপ্রমাণিত যে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) রমযান মাসে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-দের জামাআতে ২০ রাকআত তারাবীহ ও ৩ রাকআত বেতরের নামাযে ইমামতি করতেন। অতএব, অধিকাংশ উলামা-এ-কেরামের মাসলাক (রীতি-নীতি) এই যে, এটি-ই সুন্নাহ। কেননা, হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:) এই ২০ রাকআতের ইমামতি করার সময় ওখানে উপস্থিত ছিলেন মোহাজির (হিজরতকারী) ও আনসার (সাহায্যকারী) সাহাবীবৃন্দ, কিন্তু তাঁদের একজনও এর বিরোধিতা করেন নি!”
[সূত্রঃ ইবনে তাইমিয়াহ কৃত মজমুয়া-এ-ফাতাওয়া, ১:১৯১]
দলিল-১১
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ، ﻋَﻦْ ﺣَﺠَّﺎﺝٍ ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺆُﻡُّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺑِﻌِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﻳُﻮﺗِﺮُ ﺑِﺜَﻼَﺙٍ ﻭَﻳَﻘْﻨُﺖُ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ
অর্থাৎ : আল-হারিস (রা:) বর্ণনা করেন যে তিনি রমযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ নামায আদায় করতেন, আর ৩ রাকআত বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন এবং রুকূর আগে কুনুত পড়তেন।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৭]
দলিল-১২ এবং তারাবীহ’র সংজ্ঞা
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻏُﻨْﺪَﺭٌ ، ﻋَﻦْ ﺷُﻌْﺒَﺔَ ، ﻋَﻦْ ﺧَﻠَﻒٍ ، ﻋَﻦْ ﺭَﺑِﻴﻊٍ ﻭَﺃَﺛْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺧَﻴْﺮًﺍ ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟْﺒَﺨْﺘَﺮِﻱِّ ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺧَﻤْﺲَ ﺗَﺮْﻭِﻳﺤَﺎﺕٍ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﻳُﻮﺗِﺮُ ﺑِﺜَﻼَﺙٍ
অর্থাৎ : হযরত আবূ আল-বখতারী (রা:) থেকে বর্ণিত যে তিনি রমযান মাসে জামাআতে ‘৫ তারভিয়াত’ (অর্থাৎ, ২০ রাকআত তারাবীহ) নামাযের এবং ৩ রাকাত বেতরের নামাযের ইমামতি করতেন।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬৮]
বি:দ্র: তারাবীহ নামাযে প্রতি ৪ রাকআতে এক ‘তারভিহ’ (বিশ্রামের সময়)। পাঁচ ’তারভিহাত’ হলো ৫ × ৪ = ২০ রাকআত।
দলিল-১৩
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﻧُﻤَﻴْﺮٍ ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ ، ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀٍ ، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺩْﺭَﻛْﺖ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻭَﻫُﻢْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﺛَﻼَﺛًﺎ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﺑِﺎﻟْﻮِﺗْﺮِ
অর্থাৎ : হযরত আতা’ ইবনে রুবাহ (রা:) বলেন: আমি সব সময়-ই মানুষদেরকে ২৩ রাকআত (তারাবীহ) পড়তে দেখেছি, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ছিল বেতরের নামায।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৭০]
দলিল-১৪
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ ، ﻋَﻦْ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥَ ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻗَﻴْﺲٍ ، ﻋَﻦْ ﺷُﺘَﻴْﺮِ ﺑْﻦِ ﺷَﻜَﻞٍ ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻭَﺍﻟْﻮِﺗْﺮَ
অর্থাৎ : হযরত শায়তার ইবনে শাকী হতে প্রমাণিত যে তিনি রমযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের জামাআতে এবং বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ৫ম খণ্ড, ২২২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৬২]
দলিল-১৫
ﺍﻟﻔﻀﻞ ﺑﻦ ﺩﻛﻴﻦ ﻋﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﻴﺪ ﺍﻥ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺭﺑﻴﻌﺔ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻬﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺛﻼﺙ .
অর্থাৎ : হযরত সাঈদ বিন উবাইদ বর্ণনা করেন যে হযরত আলী বিন রাবিয়াহ (রা:) তাঁদেরকে ৫ তারভিহাত (২০ রাকআত তারাবীহ) নামাযে এবং ৩ রাকআত বেতরের নামাযেও ইমামতি করতেন।
[সূত্রঃ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৭৭২]
দলিল-১৬
ﻭَﺍﻟْﻤُﺨْﺘَﺎﺭُ ﻋِﻨْﺪَ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺭَﺣِﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ، ﻓِﻴﻬَﺎ ﻋِﺸْﺮُﻭﻥَ ﺭَﻛْﻌَﺔً . ﻭَﺑِﻬَﺬَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱُّ ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺣَﻨِﻴﻔَﺔَ ، ﻭَﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ . ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻣَﺎﻟِﻚٌ : ﺳِﺘَّﺔٌ ﻭَﺛَﻠَﺎﺛُﻮﻥَ . ﻭَﺯَﻋَﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮُ ﺍﻟْﻘَﺪِﻳﻢُ ، ﻭَﺗَﻌَﻠَّﻖَ ﺑِﻔِﻌْﻞِ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ ، ﻓَﺈِﻥَّ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻣَﻮْﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻮْﺃَﻣَﺔِ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺩْﺭَﻛْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﺑِﺈِﺣْﺪَﻯ ﻭَﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ، ﻳُﻮﺗِﺮُﻭﻥَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺑِﺨَﻤْﺲٍ . ﻭَﻟَﻨَﺎ ، ﺃَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ،ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻟَﻤَّﺎ ﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻟَﻬُﻢْ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ، ﻭَﻗَﺪْ ﺭَﻭَﻯ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﺃَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﺟَﻤَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﺑَﻲِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻟَﻬُﻢْ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﻟَﻴْﻠَﺔً ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻘْﻨُﺖُ ﺑِﻬِﻢْ ﺇﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﺍﻟﺜَّﺎﻧِﻲ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮُ ﺍﻟْﺄَﻭَﺍﺧِﺮُ ﺗَﺨَﻠَّﻒَ ﺃُﺑَﻲٌّ ، ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺘِﻪِ ، ﻓَﻜَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ : ﺃَﺑَﻖَ ﺃُﺑَﻲٌّ ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺃَﺑُﻮ ﺩَﺍﻭُﺩ ، ﻭَﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﺐُ ﺑْﻦُ ﻳَﺰِﻳﺪَ ، ﻭَﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻨْﻪُ ﻣِﻦْ ﻃُﺮُﻕٍ . ﻭَﺭَﻭَﻯ ﻣَﺎﻟِﻚٌ ، ﻋَﻦْ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺑْﻦِ ﺭُﻭﻣَﺎﻥَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺯَﻣَﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺑِﺜَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً . ﻭَﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢْ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً . ﻭَﻫَﺬَﺍ ﻛَﺎﻟْﺈِﺟْﻤَﺎﻉِ .
ﻓﺎﻣﺎ ﻣﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﺻﺎﻟﺢ ، ﻓﺎﻥ ﺻﺎﻟﺤﺎ ﺿﻌﻴﻒ ، ﺛﻢ ﻻ ﻧﺪﺭﻯ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻟﺰﻳﻦ ﺃﺧﺒﺮ ﻋﻨﻬﻢ ؟ ﻓﻠﻌﻠﻪ ﻗﺪ ﺃﺩﺭﻙ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﺯﻟﻚ ، ﻭﻟﻴﺲ ﺯﻟﻚ ﺑﺤﺠﺔ ، ﺛﻢ ﻟﻮ ﺛﺒﺖ ﺃﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻛﻠﻬﻢ ﻓﻌﻠﻮﻩ ﻟﻜﺎﻥ ﻣﺎ ﻓﻌﻠﻪ ﻋﻤﺮ ، ﻭﺃﺟﻤﻊ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻓﻰ ﻋﺼﺮﻩ ، ﺃﻭﻟﻰ ﺑﺎﻻﺗﺒﺎﻉ ، ﻗﺎﻝ ﺑﻌﺾ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ : ﺇﻧﻤﺎ ﻓﻌﻞ ﻫﺰﺍ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻻﻧﻬﻢ ﺃﺭﺍﺩﻭﺍ ﻣﺴﺎﻭﺍﺓ ﺃﻫﻞ ﻣﻜﺔ ، ﻓﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﻣﻜﺔ ﻳﻄﻮﻓﻮﻥ ﺳﺒﻌﺎ ﺑﻴﻦ ﻛﻞ ﺗﺮﻭﻳﺤﺘﻴﻦ ، ﻓﺠﻌﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻣﻜﺎﻥ ﻛﻞ ﺳﺒﻊ ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻛﻌﺎﺕ ، ﻭﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻭﻟﻰ ﻭﺍﺣﻖ ﺃﻥ ﻳﺘﺒﻊ .
অর্থাৎ : ইবনে কুদামাহ (রহ:) ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের পক্ষে যে ‘এজমা’ হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে লিখেন:
আবূ আবদিল্লাহ (ইমাম আহমদ হাম্বল)-এর দৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠিত দলিল হলো ২০ রাকআত (তারাবীহ); এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করেন সর্ব-হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:), ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) ও ইমাম শাফেঈ (রহ:)। ইমাম মালেক (রহ:)-এর মতে এটি ৩৬ রাকআত। তিনি মদীনাবাসীর রীতি অনুসরণ করেন। কেননা, সালেহ বলেন তিনি সেখানকার মানুষকে দেখেছিলেন ৪১ রাকআত কেয়ামুল্ লাইল (তারাবীহ) পালন করতে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৫ রাকআত বেতরের নামায। কিন্তু আমাদের প্রামাণ্য দলিল হচ্ছে খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:) মানুষদেরকে সমবেত করে হযরত ইবনে কাআব (রা:)-এর ইমামতিতে ২০ রাকআত তারাবীহ’র নামায জামাআতে আদায় করিয়েছেন। হযরত হাসসান (রা:)-এর সূত্রে এও বর্ণিত হয়েছে যে খলীফা হযরত উমর (রা:) এভাবে ২০ রাত হযরত উবাই ইবনে কাআব (রা:)-এর ইমামতিতে মানুষদেরকে জামাঅাতে নামায আদায় করিয়েছিলেন; আর তিনি (হযরত কাআব) রমযানের নিসফে (ওই সময়) শেষ দশ দিন তারাবীহ নিজের ঘরে পড়তেন। এই বর্ণনা ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) ও হযরত সাইব ইবনে এয়াযীদ (রা:)-এর প্রদত্ত। ইমাম মালেক (রহ:) এয়াযীদ ইবনে রুমান থেকে এও বর্ণনা করেছেন যে, খলীফা হযরত উমর (রা:)-এর শাসনামলে মানুষেরা ২৩ রাকআত তারাবীহ আদায় করতেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৩ রাকআত বিতর।
ইবনে কুদামাহ আরও লিখেন:
হযরত আলী (ক:) হতে এও বর্ণিত হয়েছে যে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে ২০ রাকআত তারাবীহ’র জামাআতে ইমামতি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতএব, ২০ রাকআত তারাবীহ’র ব্যাপারে এজমা’ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। অধিকন্তু, সালেহ যে মদীনাবাসীদেরকে ৪১ রাকআত নামায পড়তে দেখেছিলেন, সে সম্পর্কে বলবো, সালেহ দুর্বল এবং আমরা জানি না ৪১ রাকআতের এই বর্ণনা কে দিয়েছিলেন। হতে পারে যে সালেহ কিছু মানুষকে ৪১ রাকআত পড়তে দেখেছিলেন, কিন্তু এটি তো হুজ্জাত (প্রামাণ্য দলিল) হতে পারে না। আমরা যদি ধরেও নেই যে মদীনাবাসী ৪১ রাকআত তারাবীহ (বেতরের ৫ রাকআত-সহ) পড়তেন, তবুও হযরত উমর (রা:)-এর নির্দেশ, যা তাঁর সময়কার সকল সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) অনুসরণ করেছিলেন, তা-ই অধিকতর অনুসরণযোগ্য। কয়েকজন উলেমা বলেন যে মদীনাবাসী মুসলমানগণ ৩৬ রাকআত তারাবীহ পড়তেন যাতে মক্কাবাসী মুসলমানদের সাথে তা মিলে যায়; কেননা, মক্কাবাসীরা প্রতি ৪ রাকআত পড়ার পর তাওয়াফ করতেন এবং এভাবে তাঁরা ৭ বার তাওয়াফ করতেন। মদীনাবাসী মুসলমানগণ ওই সময়ের মধ্যে (অর্থাৎ, একেক তওয়াফে) ৪ রাকআত আদায় করে নিতেন (নওয়াফিল)। কিন্তু আমরা যেহেতু জানি যে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ২০ রাকআত তারাবীহ পড়েছেন, সেহেতু আমাদের তা-ই মান্য করা আবশ্যক।
[সূত্রঃ ইবনে কুদামাহ প্রণীত আল-মুগনী, ২য় খণ্ড, ৬০৪ পৃষ্ঠা]
দলিল-১৭
অর্থাৎ : আল-গুনিয়াতুত্ তালেবীন গ্রন্থে লেখা আছে: তারাবীহ নামাযের অন্তর্ভুক্ত ২০ রাকআত। প্রতি দুই রাকআতে প্রত্যেকের উচিত বৈঠকে সালাম ফেরানো; ফলে এ নামায ৫ তারউইহাত-বিশিষ্ট, যার প্রতি ৪ রাকআতে একটি তারভি (অর্থাৎ, ৫ বার চার রাকআত =২০)।
[সূত্রঃ আল-গুনিয়াতুত্ তালেবীন, ২য় খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা]
দলিল-১৮
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺍﻟﺨﺼﻴﺐ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﺳﻮﻳﺪ ﺑﻦ ﻏﻔﻠﺔ ﻳﺆﻣﻨﺎ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
অর্থাৎ : ইমাম বোখারী (রহ:) তাঁর ‘আল-কুনা’ পুস্তকে রওয়ায়াত করেন: হযরত আবূ আল-খুসাইব (রা:) বর্ণনা করেন যে হযরত সুওয়াইদ বিন গাফালাহ (রা:) সব সময়-ই রমযান মাসে আমাদেরকে নিয়ে জামাআতে বিশ রাকআত তারাবীহ নামাযে ইমামতি করতেন।
[সূত্রঃ আল-কুনা, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ২৩৪]
চার মযহাবের ঐকমত্য / ইজমাঃ
১/ – হানাফী মযহাব
ইমাম বদরুদ্দীন আঈনী (রহ:) বলেন,
ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﻲ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻣﺜﻠﻪ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﻤﻐﻨﻲ ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﺃﻧﻪ ﺃﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻬﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻗﺎﻝ ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺎﻹﺟﻤﺎﻉ
অর্থাৎ : ইমাম বায়হাকী (রহ:) সহীহ সনদে সাহাবী হযরত সাইব ইবনে এয়াযীদ (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: ”আমি খলীফা উমর ফারূক (রা:)-এর শাসনামলে (মানুষদেরকে) ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামাযে দাঁড়াতে দেখেছি; এটি খলীফা হযরত উসমান (রা:) এবং খলীফা হযরত আলী (ক:)-এর আমলেও দেখেছি।” আল-মুগনী (হাম্বলী ফেকাহ’র প্রসিদ্ধ কেতাব) গ্রন্থে হযরত আলী (ক:) থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে রমযান মাসে ২০ রাকআত তারাবীহ নামাযের জামাআতে ইমামতি করার হুকুম দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে সামগ্রিক এজমা’ (ঐকমত্য) রয়েছে।
[সূত্রঃ উমদাতুল কারী, ৭ম খণ্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা]
ইমাম ইবনে হুমাম বলেন, হযরত উমর ফারূক (রা:)-এঁর খেলাফত আমলে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাবেঈনবৃন্দ যে ২০ রাকআত তারাবীহ পড়তেন তা শক্তিশালী প্রামাণিক দলিল দ্বারা সমর্থিত। হযরত এয়াযীদ ইবনে রুমান (রা:) হতে সহীহ রওয়ায়াত আছে যে খলীফা হযরত উমর (রা:)-এর শাসনামলে মুসলমানগণ ২০ রাকআত তারাবীহ নামায পড়তেন। ইমাম নববী (রহ:)-ও এই বর্ণনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
[সূত্রঃ আল-ফাতহুল ক্কাদীর, ১ম খণ্ড, ৪৭০ পৃষ্ঠা]
মোল্লা আলী কারী (রহ:) বলেন,
ﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ
অর্থাৎ : তারাবীহ যে ২০ রাকআত, সে ব্যাপারে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর এজমা’ আছে।
[সূত্রঃ মিরকাত শরহে মিশকাত, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃষ্ঠা, মাকতাবা আল-মিশকাত প্রকাশিত]
২/ – হাম্বলী মযহাব
ইমাম ইবনে কুদামাহ (রহ:) লিখেন,
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻓﻲ ﺯﻣﻦ ﻋﻤﺮ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﺜﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻋﻦ ﻋﻠﻲ , ﺃﻧﻪ ﺃﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻬﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺎﻹﺟﻤﺎﻉ
অর্থাৎ : খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:)-এর শাসনামলে মানুষেরা ২৩ রাকআত (তারাবীহ) নামায পড়তেন (৩ রাকআত বেতর-সহ)। আর হযরত আলী (ক:) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে ২০ রাকআত তারাবীহ পড়াবার নির্দেশ দিয়েছিলেন; আর এ ব্যাপারে এজমা’ প্রতিষ্ঠিত ( ﻭﻫﺬﺍ ﻛﺎﻹﺟﻤﺎﻉ ) ।
[সূত্রঃ ইবনে কুদামাহ আল-হাম্বলী কৃত আল-মুগনী পুস্তক, ১ম খণ্ড, ৮০২ পৃষ্ঠা, তারাবীহ নামাযে রাকআত অধ্যায়]
বড় পীর শায়খ আবদুল কাদের জিলানী আল-হাম্বলী (রহ:) লিখেন, তারাবীহ নামাযের অন্তর্ভুক্ত ২০ রাকআত। প্রতি দুই রাকআতে প্রত্যেকের উচিত বৈঠকে সালাম ফেরানো; ফলে এ নামায ৫ তারউইহাত-বিশিষ্ট, যার প্রতি ৪ রাকআতে একটি তারভি (অর্থাৎ, ৫ বার চার রাকআত =২০)।
[সূত্রঃ আল-গুনিয়াতুত্ তালেবীন, ২য় খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা]
৩/ – শাফেঈ মযহাব
ইমাম তিরমিযী (রহ:) লিখেন,
ﻭ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻭﻫﻜﺬﺍ ﺃﺩﺭﻛﺖ ﺑﺒﻠﺪﻧﺎ ﺑﻤﻜﺔ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
অর্থাৎ : ইমাম শাফেঈ (রহ:) বলেছেন: আমি মক্কাবাসীদের দেখেছি ২০ রাকআত (তারাবীহ) নামায আদায় করতে।
[সূত্রঃ সুনান-এ-তিরমিযী]
ইমাম গাযযালী (রহ:) বলেন,
ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻫﻲ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔﻭﻛﻴﻔﻴﺘﻬﺎ ﻣﺸﻬﻮﺭﺓ ﻭﻫﻲ ﺳﻨﺔ ﻣﺆﻛﺪﺓ
অর্থাৎ : তারাবীহ নামাযে অন্তর্ভুক্ত ২০ রাকআত। এর পদ্ধতি সর্বজনবিদিত এবং এটি সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ।
[সূত্রঃ এয়াহইয়া-এ-উলূম আল-দ্বীন, ১ম খণ্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা]
৪/ – মালেকী মযহাব
ইমাম ইবনে রুশদ্ আল-কুরতুবী (রহ:) বলেন, ইমাম মালেক (রহ:)-এর একটি কওল (বাণী) এবং ইমাম আবূ হানিফা (রহ:), ইমাম শাফেঈ (রহ:), ইমাম আহমদ হাম্বল (রহ:) ও দাউদ আল-দাহিরীর কথা প্রমাণ করে যে তারাবীহ ২০ রাকআত। ইমাম মালেক (রহ:) হযরত এয়াযীদ ইবনে রূমান (রা:) থেকে এও বর্ণনা করেছেন যে খলীফা হযরত উমর ফারূক (রা:)-এর শাসনামলে মুসলমানগণ ২০ রাকআত (তারাবীহ) পড়তেন।
[সূত্রঃ ইবনে রুশদ্ প্রণীত আল-বেদায়াতুল মুজতাহিদ, ১ম খণ্ড, ১৫২ পৃষ্ঠা]
কিছু মানুষ যে ৩৬ রাকআত-সম্পর্কিত বর্ণনাটির অপব্যবহার করে, তা-ও ২০ রাকআত তারাবীহকে সপ্রমাণ করে। কেননা, ইমাম মালেক (রহ:) প্রতি তারভিহ (৪ রাকআতের মাঝে বিশ্রামের সময়কাল)-তে ‘অতিরিক্ত ৪ রাকআত’ পড়ার জন্যে মানুষকে পরামর্শ দিতেন। তাই এটি তারাবীহ’র অংশ নয়। অতএব, তারাবীহ ২০ রাকআত হওয়ার ব্যাপারে সামগ্রিক এজমা’ হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ ৩৬ রাকআত তারাবীহ খুলাফা-এ-রাশেদীনের কারো কাছ থেকে প্রমাণিত নয়। সর্বোপরি, ইমাম মালেক (রহ:)-এর মুওয়াত্তা গ্রন্থ হতে উদ্ধৃত উপরোক্ত দু’টি রওয়ায়াত (বর্ণনা) প্রমাণ করে তারাবীহ’র নামায ২০ রাকআত।
= সমাপ্ত =
[Bengali translation of www.ahlus-sunna.com ‘s fatwa on Tarawih prayers during the holy month of Ramadan; translated by Kazi Saifuddin Hossain]
মূল: ডব্লিউ,ডব্লিউ,ডব্লিউ-ডট-আহলুস্ সুন্নাহ-ডট-কম
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
[অনুবাদকের উৎসর্গ: পীর ও মোর্শেদ আউলিয়াকুল শিরোমনি হযরত মওলানা শাহ সূফী আলহাজ্জ্ব সৈয়দ এ, জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ আল-কাদেরী আল-চিশ্তী রহমতুল্লাহে আলাইহের পুণ্যস্মৃতিতে…]