তাকওয়া ও আভিজাত্য- ১

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হযরত উমর রাযিআল্লাহু আনহু। ইসলাম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা। প্রতি রাতে তিনি মদীনা শরীফের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতেন। দেখতেন প্রজারা কোনো সমস্যায় আছে কি না। সমস্যায় দেখলে তিনি সাহায্য করতেন। এটা ছিল ওনার বিশেষ একটি অভ্যাস।

হযরত আসলাম রাযিআল্লাহু আনহু বলেন— এক রাতে আমিও ছিলাম উমর রাযিআল্লাহু আনহুর সাথে। হঠাৎ তিনি এক ঘরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। ভেতর থেকে এক নারীর কথোপকথন শোনা যাচ্ছিল। ‘মা! এই দুধে পানি মিশিয়ে দাও!’— মা তার মেয়েকে বলছিলেন। মেয়ে জবাবে বলল— ‘না মা! এ কিভাবে সম্ভব? আপনি জানেন না, সায়্যিদুনা উমর রাযিআল্লাহু আনহু ফরমান জারি করেছেন এ ব্যপারে যে, দুধে পানি মেশানো যাবে না?’

মা বলল— উমর রাযিআল্লাহু আনহু কি আর এখন দেখছেন? মেয়ে উত্তর দিল— ‘ওয়াল্লাহি! মা আমি এমন নই যে তাঁর সামনে তাঁর আনুগত্য করব আর অবর্তমানে তাঁর হুকুম অমান্য করব। নিশ্চয়ই, আমার রব আমাকে দেখেছেন।’ উমর রাযিআল্লাহু আনহু বললেন আসলাম! ঘরটিকে ভালো করে চিনে রাখুন।

পরদিন ফজরের পর তিনি আসলাম রাযিআল্লাহু আনহুকে পাঠালেন। বললেন— ওই ঘরে খোঁজ নিয়ে আসুন কারা কারা থাকে ওখানে? মেয়ে কি কুমারী নাকি বিবাহিত? আসলাম রাযিআল্লাহু আনহু খোঁজ নিয়ে আসলেন। জানালেন— এক বিধবা মহিলা রয়েছে আর তার মেয়ে। মেয়েও কুমারী। তখন উমর রাযিআল্লাহু আনহু তাঁর সাহেবজাদা’দের ডেকে পাঠালেন। এবং কথা-বার্তার পর আছেম রাযিআল্লাহু আনহু ওই মেয়েকে বিয়ে করতে রাজী হলেন। উমর রাযিআল্লাহু আনহু মেয়ের ঘরে প্রস্তাব পাঠালে তারা আনন্দচিত্তে তা গ্রহণ করল। কেনই বা করবে না? তা যে তাদের কল্পনাতীত। এই দরিদ্র ঘরের মেয়েকে বিয়ে করবে খলিফার শাহজাদা!

অতঃপর বিয়ে হলো। তাদের ঘর থেকে এক মহীয়সী কন্যা জন্ম নিলো। যিনি ইসলামের পঞ্চম খলিফা ওমর বিন আব্দুল আযীয রাযিআল্লাহু আনহুর মা হওয়ার সৌভাগ্য পেলেন। আল্লাহু আকবার।

.

দুধ বিক্রির ঘটনা থেকে বুঝা যায় মেয়ের পরিবার ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। তাদেরকে কেউ চিনতো না। কিন্তু তাকওয়ার সম্পদ ছিল এই মেয়ের কাছে। সেই তাকওয়া তাকে এক অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করলো। দরিদ্রতাকে আভিজাত্যে বদলে দিলো। যাদেরকে কেউ চিনত না, আজ সেই মেয়ের তাকওয়ার স্মরণ পৃথিবীর কোণায় কোণায় হচ্ছে। যার বংশ থেকে জন্ম নিলো ইসলাম জাহানের এক খলিফা। তাঁর তাকওয়া তাঁর আখিরাতকে তো অবশ্যই সুন্দর করেছে। পাশাপাশি তাঁর দুনিয়াকেও সুন্দর করে দিয়েছে। মাথা উঁচু করে সম্মানের সহিত বাঁচার সৌভাগ্য দিয়েছে।

আজও আমরা যদি চাই, আমাদের দরিদ্রতা দূর হোক, সম্মান বেড়ে যাক, মাথা উঁচু করে বাঁচি, আমাদের চিন্তাগ্রস্থতা প্রশান্তিতে রুপ নিক, তাহলে আমাদের উচিত তাকওয়ার পোশাক পরিধান করে নেওয়া। ইনশাআল্লাহ এই পোশাক শুধু বাহ্যিক আভিজাত্য নয়। বরং অন্তরকেও অভিজাত করে দিবে। আপনাকে দান করা হবে হায়াতে তায়্যিবা। যেটা দ্বারা উদ্দেশ্য— দুনিয়ায় একটি সুন্দর জীবন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন— ‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করতো।’ [সূরা নাহল, আয়াত- ৯৭]

শর্ত হচ্ছে দুটি। আপনাকে হতে হবে— মু’মিন। তারপর আমলে সালেহ বা সৎকর্ম করাতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। ইনশাআল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগৎ আপনার জন্য সুন্দর হয়ে যাবে।

‘Teri ataa ke samne Khata ka Jikr hi kiya Ya Rab, Tu ataa ke liye or bashar khata ke liya’

‘তাকওয়া ও আভিজাত্য- ১’

~স্বাধীন আহমেদ

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment