তাওবার ওপর অটল কিভাবে থাকা যায়? তার আগে এটা বলে রাখা দরকার আপনার যদি গুণাহ করার পর তওবার সৌভাগ্য নসিব হয় তার মানে আপনি ক্ষমাও পাবেন। এটা আপনার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
গুণাহ হওয়ার পর কি করবেন? তিক্ত কিছু খাওয়ার পর যখন আপনার জিহ্বাতে তিক্ততা অনুভব হয় তখন আপনি তাড়াতাড়ি মুখে চিনি বা মিঠা জাতীয় কোনো খাবার খেয়ে নেন। এতে করে আপনার মুখের তিক্ততা দূর হয়ে যায়।
ঠিক তদ্রূপ গুণাহ হওয়ার পর পর নেকীর কাজ করা শুরু করুন। এই নেকীর কাজগুলো আপনার গুনাহকে মিটিয়ে দিবে। আপনার অন্তরে মিষ্টতা তৈরী করে দিবে। এজন্য দূরুদ ও সালাম, কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াত বা সালাত আদায় করা হতে পারে উত্তম আমল।
মানুষের দ্বারা গুণাহ হয়ে যায় এটা স্বাভাবিক। আল্লাহ তায়ালা বলেন,- ‘মানুষের অন্তর মন্দ কাজ প্রবণ।’ [১] তবে গুনাহ হয়ে যাওয়ার চেয়েও মন্দ কাজ হলো গুনাহর পর তওবা না করা।
আমার রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,-‘প্রত্যেক আদম সন্তান গুণাহগার। তবে তাদের মধ্যে তারা উত্তম যারা তওবা করে।’ [২]
কোনো ব্যক্তির ধবধবে সাদা কাপড়ে যখন ছোট্ট একটা দাগ পরে যায় তখন সে হতাশ হয়ে যায়। চেষ্টা চালায় দাগ ওঠানোর। কিন্তু কোনো ব্যক্তির ময়লা চাদরে যদি আরো কিছু দাগ লেগে যায় তাহলে সে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। বিষয়টাকে ইগনোর করে।
ঠিক এর উদাহরণ মুমিন ও মুনাফিক এর। মুমিনের দ্বারা যখন কোনো গুণাহ হয়ে যায় তখন সে হতাশ হয়ে যায়। যেন ওহুদ পাহাড় তার ওপর এসে পরেছে। কেন সে তার রব কে নারাজ করে ফেলল? কিভাবে ক্ষমা হবে? এসব নিয়ে হতাশ হয়ে যায়। জায়নামাজ বিছিয়ে রব তায়ালার দরবারে কাঁদতে থাকে। আর রব তায়ালা তার চোখের পানিকে কবুল করে নেন। তাকে শুধু ক্ষমাই করেন না! বরং তার গুণাহগুলোকে নেকিতে রুপান্তরিত করে দেন।
আর মুনাফিক এর উদাহরণ সেই ময়লা চাদরের মতো। গুনাহের কারণে তার অন্তর এতটাই কলুষিত হয়ে যায় যে নতুন কোনো গুণাহ সংঘটিত হলে তার এ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা থাকে না। তাই বলেছি তওবার সৌভাগ্য নসিব হওয়াটাও অনেক বড় ব্যপার। গুণাহ থেকে তওবাকারী এমন যেন সে কোনো গুণাহই করে নি।
তবে তওবার শর্ত আছে। শুধু মুখে তওবা তওবা করে উঠলেন আর আগামীকাল একই গুণাহ করার খেয়াল অন্তরে রয়ে গেছে, তাহলে এটা আল্লাহর সাথে মজা বৈ কি? আর যারা আল্লাহর সাথে মজা করে তার ধ্বংস অনিবার্য।
তাই তওবার সময় অন্তরে এই ইরাদা পোক্ত করতে হবে যে কোনোদিন আর গুণাহ করব না। আমরা আশা রাখি রাহমানুর রাহিম, গাফুরুর রাহিম রব আমাদেরকে মাফ করে দিবেন।
‘তেরি আতা সামনে খাতা কি জিকরহি কিয়া! তু আতা কে লিয়ে অর বাশার খাতা কে লিয়ে’
রেফারেন্স:
[১] সূরা ইউসুফ আয়াত ৫৩।
[২] সুনানে তিরমিযী।
২টি পর্বে এই বিষয়টির আলোচনা শেষ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
‘তওবার ওপর অটলতা-০১’