আল্লপাকের মহব্বতে যাহারা নিজেকে বিসর্জন দিয়াছেন তাহারাই এই চির সুখময় বেহেশতের অধিকারী হইবে । যাহারা আল্লাহপাকের মহব্বতে আপন শির কোরবান করিয়াছেন, তাহারাই বেহেশতের ফল খাইবার অধিকারী হইবে । যাহারা সবসময় আল্লাহপাকের জেকেরে লিপ্ত আছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানে রোজা রাখে, রাত্রিকালে নির্জনে, নিরালায় আল্লাহপাকের ভয়ে অথবা আল্লাহপাকের মহব্বতে রোদন করে, আপন গোনাহর জন্য অনুতপ্ত হইয়া ক্রন্দন করে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহারাই চির সুখময় বেহেশতের অধিকারী হইবে ।
আল্লাহপাক বেহেশতীদিগকে উন্নতমানের পোষাক পরিধান করাইবেণ প্রত্যেক পোষাকের ভিন্ন ভিন্ন রঙ হইবে । বেহেশতবাসীদের দশ আঙ্গুলে দশটি আংটি থাকিবে, উহার প্রত্যেকটিতে বিভিন্ন লেখা অংকিত থাকিবে।
- প্রথম আংটিতে লেখা থাকিবে, “তোমাদের উপর ছালাম ।
- দ্বিতীয়টিতে লেখা থাকিবে, “তোমরা বেহেশতে সবসময় আল্লাহপাকের দিদার লাভ করিবে ।
- তৃতীয়টিতে লেখা থকিবে, “যাহারা আল্লাহর ইবাদত করিয়াছে তাহারা অনন্তকাল বেহেশতে বাস করিবে ।
- চুতুর্থটিতে লেখা থকিবে, “আল্লাহপাক তোমাদের উপর সন্তুষ্ট ।
- পঞ্চমটিতে লেখা থকিবে, “হুরগণ সবসময় তোমাদের খিদমতে নিয়োজিত থাকবে ।
- সপ্তমটিতে লেখা থকিবে, “তোমাদের ইচ্ছামত হুরগণ, নবী অলি ও সিদ্দিকগণের সহিত বসবাস করিতে থাক ।
- নবমটিতে লেখা থকিবে, “তোমাদের যৌবন কখন লোপ পাইবে না ।
- দশটিতে লেখা থাকিবে, “পরশীগণ তোমাদিগকে কষ্ট দিবে না ।
হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলিয়াছেন, আল্লাহপাক বলিয়াছেন যে আমার নেক বান্দাদিগের জন্য এমন নেয়ামত তৈরী করিয়া রাখিয়াছি, যাহা কোন চুখ দেখে নাই, কোন কর্ণ তাহা শুনে নাই, কোন মানব তাহা কল্পনাও করে নাই ।
বেহেশতের দালানসমূহের একখানা সোনার ইটের সহিত মেসক দ্বারা আর একখানা রূপার ইটের সহিত জোরা দেওয়া হইয়াছে । উহার কঙ্কর সমূহ মতি ও ইয়াকুতের তৈরী । যাহারা বেহেশতে যাইবে তাহাদের আর কোন দঃখ-কষ্টই থকিবে না । তাহাদের পায়খানা-প্রস্রাবের প্রয়োজন হইবে না, তাহাদের পোষাক-পরিচ্ছদ ময়লা হইবে না, কোন রোগ-শোক, ভাবনা-চিন্তা তাহাদিগকে স্পর্শ করিবে না । হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলিয়াছেন, বেহেশতের মধ্যে দুইটি বাগান হইবে, যাহার আসবাব-পত্র স্বর্ণের হইবে ।
বেহেশতের দালানগুলির একশতটি করিয়া তলা হইবে । যাহার একতলা হইতে অপর তলার দূরত্ব আসমান ও জমীনের দুরত্বের সমান হইবে । বেহেশতের মধ্যে সর্বাপো বড় বেহেশত হইতেছে “জান্নাতুল ফেরদাউস ।” জান্নাতুল ফেরদাউস হইতে চারটি ঝরণা প্রবাহিত হইতেছে । উহার একটি দুধের, একটি মধুর, একটি পবিত্র শরাবের এবং আর একটি স্বচ্ছ পানির । হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলিয়াছেন যে, তোমরা যদি আল্লাহ-পাকের নিকট বেহেশত চাও-তবে জান্নাতুল ফেরদাউস চাহিও ।
হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলিয়াছেন যে, যাহারা প্রথম বেহেশতে যাইবে তাহাদের চেহারা পূর্ণিমার চন্দ্রের ন্যায় উজ্জল হইবে । তাহার পরে যাহারা যাইবে, তাহাদের উজ্জলতা একটু কম হইবে । এইরূপ উজ্জলতা ক্রমশঃকম হইতে থাকিবে । বেহেশতীদের ঘর্ম ও থুথু হইতে মেসক ও জাফরানের সুগন্ধি নির্গত হইবে ।
বেহেশতের সুখ-সম্পদ ও সৌন্দর্য্যের পূর্ণ বর্ণনা করিবার ক্ষমতা মানুষের নাই, ইহা বেহেশতের অতি সামান্য পরিচয় মাত্র ।
বেহেশত আটটি । যথাঃ
- জান্নাতুল খোলদ ।
- দারুস সালাম ।
- দারুল কারার ।
- জান্নাতুল আদন ।
- জান্নাতুল মাওয়া ।
- জান্নাতুন্নায়ীম ।
- জান্নাতুল ইলু্যয়্যি ।
- জান্নাতুল ফেরদাউস ।
জান্নাত সম্পর্কিত কিছু হাদিস শরীফ
১নং- হযরত যায়দ ইবেন আরক্বাম (রাঃ) বলেন যে, জনৈক আহলে কিতাব হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে এসে বলতে লাগলো, আপনার মতে কি জান্নাতে খানা-পিনার ব্যবস্থা আছে? তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন, হাঁ জান্নাতে এক ব্যাক্তিকে পনাহার ও সহবাসের ক্ষেত্রে এক শত ব্যক্তর শক্তি দেওয়া হবে।
সে বলতে লাগলো, পানাহারের পর তো পেশাব পায়খানা অবশ্যই হয়ে থাকে, তাহলে জান্নাতের মত পবিত্র স্থানে এমন নোংরা কাজ কিভাবে হবে?
তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেন জান্নাতে পেশাব-পায়খানার প্রয়োজনই হবেনা, বরং মেশকের সুগন্ধি যুক্ত ঘাম বেরুবে মাত্র, এতেই খানা হজম হয়ে যাবে।
২নং- হযরত সোহাইব (রাঃ) বলেন যে, হুজুর আকরাম (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেনঃ যখন জান্নাতীরা জান্নাতে এবং দোজখীরা দোজখে চলে যাবে, তখন এক জন ঘোষক ডাক দিয়ে বলবেন হে জান্নাতীগণ! আল্লাহ্ পাক তোমাদের কাছে (যে) ওয়াদা করেছিলেন, সে ওয়াদা এখন পুরন করতে চান। জান্নাতীগণ বলবেন, সেটা আবার কি? আল্লাহ্ কি আমাদের মীজান ভারী করে দেন নি? আমাদের চেহারা কি উজ্জ্বল করেন নি? আমাদেরকে কি জান্নাতে প্রবেশ করান নি? এবং দোজখ থেকে কি মুক্তি দেন নি? (তাহলে আবার কি ওয়াদা বাকী রইল)।
আল্লাহ্ রাসূল (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এরশাদ করেন, এ অবস্থায় তখন পর্দা উঠিয়ে দেয়া হবে, ফলে জান্নাতীগণ আল্লাহর দীদারে সৌভাগ্যবান হবেন। আল্লাহর কসম! জান্নাতীগণের জন্যে এর চেয়ে অধিক প্রিয় এবং উত্তম নেয়াতম কোনটাই হবেনা।
৩নং- হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন : জান্নাতে এক হুর আছে, যার নাম লু’বা। তাঁকে চারটি জিনিস দিয়ে বানানো হয়েছে মেশক, আস্বর, কাফুর ও জাফরান। আবার এমন জিনিসকে “মায়ে হায়ওয়ান” (এক প্রকার বিশেষ পানি) দ্বারা মিশানো হয়েছে। জান্নাতের সমস্ত হুর তার উপর আশেক। যদি সে সমূদ্রে থুথু ফেলে, তাহলে সমস্ত পানি মিষ্টি হয়ে যাবে। তার কপালে লেখা আছেঃ “যে আমাকে চায়, সে যেন তার পরওয়ার দেগারের অনুগত্য করে”।
৪নং- হযরত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেনঃ বেহেশতে একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় জান্নাতীরা শত বছর চললেও শেষ হবে না। জান্নাতে এমন নেয়ামত আছে, যা কোন চুক্ষ কোন দিন দেখেনি, কোন কান কোন দিন শূনে নি, কোন হ্রদয় কোনদিন কল্পনাও করত পারেনি।
যেমন এরশাদ হয়েছে –
فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا اُخْفِىَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّ ةِ اَعْيُنِ
“কেউ জানেনা যে, সেখানে চোখের শীতলতা কি পরিমানে লুকায়িত আছে” জান্নাতে এক চাবুক পরিমান স্থান দুনিয়া ও দুনিয়াস্থিত সমস্ত জিনিস অপেক্ষা শ্রেয়।
৪নং- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে জানতে চেয়েছিলাম যে, জান্নাত কী জিনিস থেকে বানোনো হয়েছে ?
এরশাদ করলেন, পানি থেকে। আমরা আরজ করলাম আমাদের উদ্দেশ্য, জান্নাতের ইমারত সম্পর্কে জানা। এরশাদ করলেন, একটি ইট স্বর্ণের, আরেকটি রৌপ্যের, আর গাঁথুনীর মসল্লা মেশকের। মাটি জাফরানের, কাংকর মূতি ও ইয়াকূতের।
যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে কোন প্রকার নেয়াতম থেকেই নিরাশ ও বঞ্চিত হবে না। সে সব সময় স্থায়ী ভাবে জান্নাতে থাকবে কখনো মৃত্যু আসবে না, তার কাপড় কখনো পুরান হবে না, যৌবন কখনো শেষ হবে না
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেন : তিন ব্যক্তির দোয়া প্রত্যাখান হয় না, ১) ন্যয় পরায়ন বাদশাহ বা বিচারকের দোয়া ২) রোযাদারের ইফতারকালীন দোয়া ৩) মজলুমের দোয়া।
সুত্র: তাম্বীহুল গাফেলীন