জান্নাতুল বাকি ও জান্নাতুল মুয়াল্লা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মদিনার বিখ্যাত কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’ (Jannat al-Baqi) এবং মক্কার ‘জান্নাতুল মুয়াল্লা’ (Jannat al-Mualla)-এর ধ্বংসপূর্ব চিত্র। ১৯২৫-১৯২৬ সালে তৎকালীন সৌদি শাসক ইবনে সৌদ এবং তাদের সমর্থক ওহাবী মতাদর্শীরা এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলেন।

ওহাবী বা সালাফি মতাদর্শের অনুসারীরা ১৮০৬ সালে প্রথমবার মদিনা দখল করে জান্নাতুল বাকির অনেক গম্বুজ ও মাজার ভেঙে ফেলে। তাদের যুক্তি ছিল, কবরের ওপর পাকা স্থাপনা তৈরি করা বা সেখানে প্রার্থনা করা ‘শিরক’ (আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করা) এবং ‘বিদআত’ (ধর্মের নামে নতুন প্রথা)।

পরবর্তীতে অটোমান (উসমানীয়) সাম্রাজ্য আবার হেজাজ অঞ্চলের (মক্কা-মদিনা) নিয়ন্ত্রণ নিলে ১৯শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তারা এই মাজার ও গম্বুজগুলো সুন্দর করে পুনর্নির্মাণ করে।

১৯২৪-২৫ সালে সৌদি রাজবংশ পুনরায় হেজাজ দখল করে। এরপর ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল (৮ই শাওয়াল), সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদের নির্দেশে বুলডোজার দিয়ে জান্নাতুল বাকির সমস্ত গম্বুজ ও মাজার মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এই দিনটিকে অনেকে ‘ইয়াউমুল হদম’ (ধ্বংসের দিন) হিসেবে পালন করেন।

কী কী ধ্বংস করা হয়েছিল?

এই অভিযানে ইসলামের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের কবরের ওপর থাকা স্থাপনা ধ্বংস করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:

১. আহলে বাইত-এর সদস্যদের কবর: নবীজির (সা.) কন্যা হযরত ফাতেমা (রা.), ইমাম হাসান (রা.), ইমাম জয়নুল আবেদিন (রা.), ইমাম বাকির (রা.) এবং ইমাম জাফর সাদিক (রা.)-এর মাজার।

২. নবীজির পরিবার ও সাহাবীগণ: নবীজির চাচা হযরত আব্বাস (রা.), নবীজির স্ত্রীগণ (উম্মাহাতুল মুমিনিন), এবং নবীজির দুগ্ধমাতা হযরত হালিমা সাদিয়া (রা.)-এর কবর।

৩. জান্নাতুল মুয়াল্লা (মক্কা): এখানে নবীজির প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা.), নবীজির দাদা আব্দুল মোত্তালিব এবং চাচা আবু তালিবের মাজার ধ্বংস করা হয়।

‘ষড়যন্ত্র’ বা সমালোচনার দিকটি:

ছবির লেখায় যে ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা দিয়ে মূলত ওহাবী মতবাদের কট্টরপন্থাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে:

এটি কেবল ধর্মীয় সংস্কার ছিল না, বরং ইসলামের হাজার বছরের ইতিহাস ও স্মৃতি মুছে ফেলার একটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রচেষ্টা ছিল।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা (সুন্নি ও শিয়া উভয়ই) মনে করেন, এই স্থাপনাগুলো রক্ষা করা উচিত ছিল কারণ এগুলো ইসলামের ঐতিহ্য।

অনেক সমালোচক বলেন, সাহাবীদের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামের মূল ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

ছবিটি সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয় যখন মক্কা ও মদিনার কবরস্থানগুলোতে বড় বড় গম্বুজ ও স্থাপত্য ছিল, যা বর্তমানে কেবল সাধারণ মাটির কবরে পরিণত হয়েছে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment