লেখক: অধ্যক্ষ মওলানা মুহাম্মদ আবদুল করীম নঈমী
সম্পাদনা: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
পাঠকমণ্ডলী, আরেকটি বিষয়ের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বাতিল ফির্কা ও বদ-মাযহাবী আলেমবর্গের ওয়াজের মজলিসে যোগদান করা এবং তাদের ওয়াজ-নসীহত শোনা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয কি-না, এ ব্যাপারে প্রখ্যাত মুফতী হযরতে মুনাযেরে ইসলাম আল্লামা নিজামউদ্দীন মুলতানী রহমতুল্লাহি আলাইহির একটি মূল্যবান ফতোয়া এখানে পেশ করছি। [والله الموفق وهو المعين – আল্লাহই সাফল্যদাতা এবং তিনি সাহায্যকারী]
*প্রশ্ন*
ওহাবী, মির্জায়ী, শীয়া ও চকড়ালভী (মুনকিরীনে হাদীস)-বর্গের ওয়াজ শোনা জায়েয কি-না? অনুগ্রহ করে কুর’আন মজীদ, হাদীস শরীফ এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর বাণীসমূহের আলোকে উত্তর দেবেন।
*উত্তর*
নিঃসন্দেহে ওহাবী ফির্কা, শীয়া, চকড়ালভী ও প্রবৃত্তিবাদী ইত্যাদি বাতিল মাযহাবের ওয়াজ শোনা এবং তাদেরকে আহলুল্লাহ তথা আল্লাহওয়ালা-বৃন্দের মসনদে বসানো হক-মাযহাব তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। এ তো দিবালোকের চেয়েও বেশি স্পষ্ট যে, হিদায়াত করা সে ব্যক্তিরই কাজ, যিনি স্বয়ং হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং হাদীস পাক কর্তৃক অনুমোদিত। কিন্তু এমন ব্যক্তি হাদী বা হিদায়াতকারী হবার যোগ্য নয়, যে গোমরাহী ও বিভ্রান্তির মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে হয়রান/পেরেশান। পবিত্র কালামে মজীদ, হাদীসে পাক ও সাহাবা (রা.)-বৃন্দের বাণী দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জালেম, ফাসেক, বিদ’আতী ও প্রবৃত্তিপ্রিয়দের সাথে বসা, বন্ধুত্ব রাখা, পানাহার করা নিষিদ্ধ। যেমন – আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন:
فَلاَ تَقْعُدْ بَعْدَ ٱلذِّكْرَىٰ مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّٰلِمِينَ.
অর্থ: অতঃপর (শয়তানের ভোলানো অবস্থা থেকে) স্মরণে আসতেই জালিমদের সাথে বোসো না। [কুর’আন, ৬/৬৮; নূরুল ইরফান]
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে আহমদী পুস্তকে বলা হয়েছে:
إن القوم الظالمين هم المبتدع والفاسق والكافر والقعود مع كلهم.
অর্থ: “জালেম গোষ্ঠী হলো (বদ-মাযহাবধারী) বিদ’আতী ও ফাসিক এবং কাফির, আর তারাও, যারা ওদের সাথে বসে।”
কুর’আনের অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে:
وَلاَ تَرْكَنُوۤاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ.
অর্থ: (ওহে মুসলমান) এবং জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না। পড়লে তোমাদেরকে (জাহান্নামের) আগুন স্পর্শ করবে। [কুর’আন, ১১/১১৩; নূরুল ইরফান]
এছাড়া কুর’আন মজীদের এই আদেশও প্রণিধানযোগ্য যে, কোনো ফাসেক লোক তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে এলে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত না তা ভালোভাবে যাচাই/পরীক্ষা করছো। যেমন আল্লাহ ফরমান:
يٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ آمَنُوۤاْ إِن جَآءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوۤاْ.
অর্থ: হে ঈমানদার সকল, যদি কোনো ফাসিক তোমাদের নিকট কোনো সংবাদ আনে, তবে তা যাচাই করে নাও। [কুর’আন, ৪৮/৬; নূরুল ইরফান]
অর্থাৎ শুধু ফাসেকের কথার উপর আস্থাবান হয়ো না, যতোক্ষণ না ওই সংবাদের সত্যতা যাচাই/পরখ করো। [তাফসীরে খাযেন ও তাফসীরে কবীর]
’ত্ববরানী’ ও ‘গুনিয়াতুত্তালেবীন’ গ্রন্থ দুটোতে সর্ব-হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল ও আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত হাদীসে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
وأنه يجيء في آخر الزمان قوم ينقصونهم لا تجالسوهم ولا تشاربوهم ولا تواكلوهم ولا تناكحوهم ولا تصلوا عليهم معهم.
অর্থ: “শেষ জমানায় আগমনকারী প্রবৃত্তিপূজারী বিদ’আতীদের সাথে বসবে না, পানাহার করবে না, বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবে না, নামায (ও জানাযা) পড়বে না!”