*জান্নাতী দল তথা সুন্নী জামা’আত কারা?* [পোষ্ট-২৫]

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

লেখক: অধ্যক্ষ মওলানা মুহাম্মদ আবদুল করীম নঈমী

সম্পাদনা: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

*সিরাতুল মুস্তাকীম কী?*

[হযরত হাফেজে মিল্লাত আল্লামা শাহ আবদুল আজীজ সাহেব কেবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি, শাইখুল হাদীস, আল-জামা’আতুল আশরাফীয়্যা, মুবারকপুর, ভারত]

সত্য ধর্ম – সিরাতুল মুস্তাকীমই হলো সত্য সরল-সোজা পথ যার উপর সদাসর্বদা কায়েম থাকার জন্যে প্রত্যেক মুসলমান দোয়া করে থাকেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত রব তায়ালার দরবারে করজোড়ে আরজ করে বারংবার বিনীত নিবেদন করতে থাকেন এ মর্মে যে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করুন। সিরাতুল মুস্তাকীম এতো বড় গুরুত্বপূর্ণ ও ইপ্সিত/বাঞ্ছিত ‍বিষয় যে, নামাজের মতো অতীব মহিমান্বিত ইবাদতেও ওর দরখাস্ত করা হয়, তাও আবার কতো চেষ্টা ও যত্ন সহ কেবলামুখী হয়ে হাতের উপর হাত বেঁধে মুসলমান দাঁড়িয়ে আছেন; আদব ও ইখলাসের মূর্তমান প্রতীক হয়ে মহীয়ান ও গরীয়ান খোদার তসবীহ-গুণকীর্তন সুসম্পন্ন করে আপন উৎসর্গকৃত ভক্তিশ্রদ্ধার নজরানা পেশ করছেন। এই সমস্ত মানজিল ও স্তরগুলো অতিক্রম করার পর পূর্ণ বিনয় ও নম্রতা এবং ইখলাস ও পূর্ণ একাগ্রতা সহকারে তিনি আবেদন পেশ করছেন:

إِهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ.

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে সরল-সোজা পথে পরিচালিত করুন। [কুর’আন, ১/৬; লেখকের অনুবাদ]

আল্লাহু আকবর! কতো নিষ্ঠা, প্রচেষ্টা ও তৎপরতা এতে জড়িত যে বান্দা মাখলুক/সৃষ্টিকুল হতে অমুখাপেক্ষী হয়ে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার দিকে মনোনিবিষ্ট হয়ে পরিপূর্ণ রূহানীয়াত/আধ্যাত্মিকতা সহকারে মাহবূবে হাকীকী তথা প্রকৃত বন্ধুর দরবারে আজ উপস্থিত। খোদার বান্দাগত (عبوديت) পূর্ণ আবেগ-উদ্যম নিয়ে সর্বাঙ্গীণ মনোযোগ সহকারে তিনি আরজ করছেন:

إِهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ.

এ দ্বারা সিরাতুল মুস্তাকীম-এর শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধি করা যেতে পারে। এতে প্রতিপন্ন হয় যে এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য, অত্যন্ত জরুরি বিষয়। এ জন্যেই তো এর দরখাস্ত-আবেদনে এতো তৎপরতা প্রদর্শিত হয়েছে। এ রকম কেন হবে না, এটা তো আম্বিয়া (আলাইহিমুস্ সালাম), সিদ্দীকীন, শুহাদা ও সালেহীন (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-বৃন্দেরই পথ; রব তায়ালার রেজামন্দি/সন্তুষ্টিরই রাস্তা! হাকীকী মা’বূদ/প্রকৃত প্রভু পর্যন্ত পৌঁছুনোর এটাই একক অবলম্বন; আল্লাহর নৈকট্য ও বেছালি রাব্বানী তথা রবের সাথে মিলিত হবার পথ। এই পথ থেকে বিচ্যুত হলে জাহান্নামে পৌঁছে যাবে, চিরতরে দোযখের অধিবাস নসীব হবে।

এ কারণেই সাইয়্যেদে আলম মাহবূবে রব্বে আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অতীব যত্ন ও তৎপরতা সহ তা’লীম দিয়েছেন সিরাতুল মুস্তাকীমের এবং পুরোপুরি বোধগম্য হওয়ার জন্যে এই শিক্ষার মান ও গুরুত্ব এমন পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, তাতে (তিনি) আকলী তথা বুদ্ধিগত বিষয়/বস্তুকে অনুভব করে সেটার যথাযথ স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছেন, এবং কেবলমাত্র এটাকেই (মানে সিরাতুল মুস্তাকীমকেই) আল্লাহর রাস্তা হিসেবে স্থির করেছেন, আর এটাও বলে দিয়েছেন যে এই সিরাতুল মুস্তাকীম তথা সরল-সোজা পথের চারদিকে আরো বহু রাস্তা, ভ্রষ্ট হওয়ার পথ বিরাজমান।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত:

خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا خَطًّا ثُمَّ قَالَ هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ هَذِهِ سُبُلٌ عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ ثُمَّ تَلَا ( وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ.

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) {আমাদের উপমা দিয়ে বোঝানোর জন্যে} মাটিতে একটি (সরল) রেখা টানলেন এবং বল্লেন, “এটা আল্লাহর রাস্তা।” অতঃপর তার ডানে-বামে আরো কতোগুলো বাঁকা রেখা টানলেন এবং বল্লেন, “এগুলোও রাস্তা, তবে প্রতিটির উপর একটি করে শয়তান দাঁড়িয়ে আছে। সে লোকদেরকে নিজের দিকে আহ্বান করছে (যাতে তাদেরকে পথভ্রষ্ট করা যায়)।”

এরপর তিনি কুর’আনের আয়াত পাঠ করলেন – وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ – ‘নিশ্চয় এটা আমার সিরাতুল মুস্তাকীম তথা সরল-সঠিক পথ; তোমরা এরই অনুসরণ করবে এবং অন্যান্য পথের অনুসরণ করবে না। (কারণ) সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর (আল্লাহর) পথ থেকে পৃথক/গোমরাহ করে দেবে’ {সূরা আন’আম, ১৫৩ আয়াত}। [সর্ব-ইমাম আহমদ হাম্বল ১/৪৬১; নাসাঈ, দারেমী, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস-১৬৬ (আন্তর্জাতিক); মুস্তাদরাকুল হাকিম, ২/৩১৮]

এই হাদীসে পাকের আলোকে জানা গেলো যে, সিরাতুম্ মুস্তাকীম একই রাস্তা, এটা খোদা পর্যন্ত পৌঁছুবার রাস্তা। এই রাস্তার উপর চলেই মানুষ মানজিলে মাকসূদে (অভীষ্ট লক্ষ্যে) গিয়ে পৌঁছুতে পারে। এর চারপাশে আরো অনেক পথ রয়েছে, কিন্তু সেগুলো গোমরাহীর পথ, শয়তানের পথ; জাহান্নামে প্রবেশের পথ। এসব পথের পথিকবর্গ জাহান্নামী। এটাও জানা গেলো যে, ওই সব শয়তানী পথের উপরও আহ্বানকারী বিদ্যমান এবং তারা আহ্বান করছে এ কথা বলে, “আসো, আসো! এটাই সরল-সোজা পথ। এসব পথে পরিচালিত হলেই তোমাদের বাসনা পূর্ণ হবে। এই রাস্তাগুলো তোমাদেরকে খোদা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে! খোদার নৈকট্য হাসিল করার রাস্তা শুধু এই একটাই” – প্রত্যেক শয়তানী পথের আহ্বানকারীর এটাই একমাত্র দাবি, এটাই তার কাম্য।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment