লেখক: অধ্যক্ষ মওলানা মুহাম্মদ আবদুল করীম নঈমী
সম্পাদনা: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
২/ – কবীরী ৪৭৯ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ রয়েছে:
বিদ’আতী (বদ মাযহাব অবলম্বনকারী)-কে ইমাম বানানো মাকরূহ, কেননা সে এ’তেকাদের (আকীদা-বিশ্বাসের) দিক দিয়ে ফাসেক। – আমলী তথা ধর্মানুশীলনের ফিসকের চেয়ে এ’তেকাদী ফিসক্ অধিকতর মন্দ। কেননা যে ব্যক্তি আমলের দিক দিয়ে ফাসেক, সে নিজেকে ফাসেক বলে ধারণা করে, ভয় করে এবং তওবা-এস্তেগফার করে। কিন্তু বিদ’আতী এ’তেকাদসম্পন্ন (বদ মাযহাবী) ব্যক্তির অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রশ্ন হলো বিদ’আতী কে? বিদ’আতী ওই ব্যক্তিই, যে কেবল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা-বিশ্বাসের খেলাফ বা পরিপন্থী কোনো আকীদা পোষণ করে। বিদ’আতী আকীদা-বিশ্বাসধারীর ইমামতিতে ওই সময় নামায পড়া মাকরূহ (তাহরীম) হবে, যখন উক্ত বিদ’আতীর এ’তেকাদের দরুন তার উপর কুফরের হুকুম না বর্তে। আর যদি উক্ত বিদ’আতীর এ’তেকাদের দরুন তার উপর কুফরের হুকুম বর্তে, তাহলে তার ইমামতিতে এক্তেদা করা একদম জায়েয হবে না।
৩/ – তাহতাবী, মিনহাতুল খালেক ও কবীরী কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে:
ফাসেক ও বিদ’আতী/বদ-মাযহাবী গংয়ের ইমামতিতে নামায পড়া যে মাকরূহ, এই মাকরূহের অর্থ মাকরূহে তাহরীম।
৪/ – বাহারে শরীয়ত, ৩য় খণ্ড, ১১০ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ রয়েছে:
*মাস’আলা:
সে-ই বিদ’আতী/বদ-মাযহাবী ব্যক্তি, যার বদ-মাযহাবী কুফরীর সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। যেমন – রাফেযী, যদিও তারা হযরতে আবূ বকর সিদ্দীকে আকবর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফত ও তাঁর সাহাবী হওয়াকে অস্বীকার করে থাকে, অথবা সর্ব-হযরত সিদ্দীকে আকবর ও উমর ফারূকে আযম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর শানে দোষারোপ ও অভিশাপ বর্ষণ করে; কাদারীয়া, জাহমীয়া ও মুশাব্বেহার ফেরকা অবলম্বনকারীবর্গ, আর যারা কুর’আনকে সৃষ্ট বস্তু বলে অভিহিত করে, আর যারা শাফা’আত/সুপারিশ বা আল্লাহর দিদার, অথবা কবরের শাস্তি, বা কিরামান কাতেবীন ফেরেশতা দু জনকে ইনকার করে, এই সব বাতিলপন্থী লোকের ইমামতিতে নামায হতে পারে না [ফতোয়া আলমগীরী, গুনিয়া]। এর চেয়েও কঠিন ফতোয়া বর্তায় হাল-জমানার ওহাবীচক্রের প্রতি, যারা আল্লাহ ও রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে অসম্মান ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করে, অথবা অবজ্ঞা প্রদর্শনকারীদেরকে নিজেদের অগ্রনায়ক বা কমপক্ষে মুসলমান বলে জ্ঞান করে।
*মাস’আলা:
যে বদ-মাযহাবধারীর বদ-মাযহাবী কুফরীর সীমায় পৌঁছে নি, তাদের ইমামতিতে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমা। যেমন – তাফজীলিয়া ফিরকাহ। [ফতোয়া আলমগীরী]
এমন কী যে সুন্নী ব্যক্তি বাতিল ফিরকা অবলম্বনকারী লোকদের সাথে মেলামেশা করে, তাদের ওখানে খানাপিনা করে, তার ইমামতিতে নামায পড়াও দুরস্ত নয়। যেমন – হযরতুল আল্লামা শাহ ইমাম আহমদ রেজা খাঁন সাহেব বেরেলভী (রহমতুল্লাহি আলাইহ)-এর ফতোয়ায় প্রকাশ পেয়েছে নিম্নে:
*প্রশ্ন:
এই ব্যাপারে পবিত্র শরীয়তের নির্দেশ কী যে, জায়েদ (যদু/মধু) বদ-মাযহাবী লোকদের ওখানে প্রকাশ্যে খানাপিনা করে, তাদের সাথে মেলামেশা করে অথচ নিজে সুন্নী; এমতাবস্থায় তার ইমামতিতে নামায পড়া ও তার তারাবীহ শ্রবণ করার হুকুম কী?
*উত্তর:
এই অবস্থায় জায়েদ প্রকাশ্য ফাসেক, সে ইমামতের উপযোগী নয়। আল্লাহ মহা জ্ঞানী। [আহকামে শরীয়ত]
নিম্নে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের কতিপয় আকায়েদ সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো। – লেখক।