সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’য়ালার জন্য যিনি প্রিয় হাবীবের ‘মিলাদ’ তথা শুভাগমনের মাধ্যমে নবুয়তের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। অসংখ্য দুরূদ ও সালাম সেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লামমের উপর যার পবিত্র মিলাদ এর বার্তাবাহক ছিলেন হযরত বাবা আদম আলাইহিস সালাম থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল নবী-রাসূল।
মানবতার কান্ডারী, মুক্তির দিশারী রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১২ই রবিউল আওয়াল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে সোমবার সোবহে সাদিকের সময় দুনিয়ায় শুভ আগমন করেন।
সত্যের মাপকাঠি সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিশুদ্ধরূপে বর্ণিত হয়েছে যে, ১২ই রবিউল আওয়াল শরীফ প্রিয় নবী হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর পবিত্র শুভ আগমনের দিন। যেমন, হাফেজ আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ্ (ওফাত ২৩৫ হিজরী) সহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন,
عن جابر وابن عباس انهما قالا ولد رسول الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول-
অর্থ: হযরত জাবের ও হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম Ñএর বেলাদত শরীফ ঐতিহাসিক ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের’ (যে বছর আবরাহা তার হস্তিবাহিনী নিয়ে কা’বা শরীফ ধ্বংস করতে এসে নিজে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল)। [১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার হয়েছিল লুগুল আমান ফী শরহি ফাতহির রব্বানী, খ- ২, পৃষ্ঠা-১৮৯, বৈরুত; আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া, খ- ২, পৃষ্ঠা ১৮৯, বৈরুত]
যুগে যুগে সারা বিশ্বের ঈমানদার মুসলমানগণ শরীয়ত সম্মত উপায়ে মিলাদুন্নবী দিবসে জশ্নে জুলূস ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করে আসছে। এই জুলূস ঈমানদারদের ঈমানী খোরাক। কোরআন ও হাদীসের আলোকে এর দলিল ও ফজিলত আলোকপাত করা হলো।
জশ্নে জুলূস অর্থ ঃ
আরবীতে ‘জশন’ শব্দের অর্থ খুশি বা আনন্দ (লুগাতে কিশওয়ারী) ‘জুলূস’ শব্দটি ‘জলসা’ শব্দের বহুবচন এর অর্থ হলো বসা বা উপবেশন। আর ফার্সিতেÑ ‘জশন’ শব্দের অর্থ উৎসব, রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং ‘জুলূস’ শব্দের অর্থ হল আড়ম্বর, মিছিল করা। (ফরহাঙ্গ-ই-রাব্বানী)
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থ ঃ
প্রচলিত অর্থে ঈদ মানে খুশি। মিলাদ (ميلاد) অর্থ জন্মকাল বা জন্মের সময়। মাওলিদ (مولد) শব্দটিও অভিন্ন অর্থ বুঝায়। সেই হিসেবে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী অর্থ নবীর জন্মকালের খুশি, পৃথিবীতে তাঁর শুভাগমনকে উপলক্ষ করে বৈধ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করা।
জশ্নে জুলুস ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লাম উদ্যাপন করা একটি বৈধ ও পূণ্যময় আমল ঃ
হাদিস শরীফে আছে, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلامِ سُنَّةً حَسَنَةً ، فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ ، وَمَنْ سَنَّ فِي الإِسْلامِ سُنَّةً سَيِّئَةً فَلَهُ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْ
অর্থ: যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে ভাল তরিকা প্রচলন করল সে নিজের নেকী, তৎপরে যারা তদানুযায়ী আমল করল তাদের নেকী সে প্রাপ্ত হবে। তাদের নেকী হতে কিছু পরিমাণ কম করা হবে না। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত- ৩৩, বায়হাকী ১/৩৮৪)
মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি‘র ১৪৪ পৃষ্ঠায় একটি মারফু হাদিস উদ্ধৃত আছে :
لقد روى عن النبى صلى الله عليه وسلم ما راه المؤمنون حسنا فهو عند الله حسن وما رواه المؤمنون قببيحا فهو عند الله قبيح-
অর্থ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করা হয়েছে। (তিনি বলেছেন) মুমিনগণ যে কাজকে ভাল বিবেচনা করে তা আল্লাহর নিকট ভাল আর মুমিনগণ যে কাজকে মন্দ বিবেচনা করে, তা আল্লাহর নিকট মন্দ। (বুখারী ১/২৬৯ পৃষ্ঠার হাশিয়া-৬)
পবিত্র কুরআনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঃ
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ (৫৮)
(১) হে হাবিব! আপনি বলুন, আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দিয়া, এবংসেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিৎ। যা তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়(সূরাঃইউনুস, আয়াতঃ৫৮)।
(২) عن ابن عباس رضي الله عنهما في الآية قال : فضل الله العلم
،ورحمته النبي صلى الله عليه وآله وسلم ، وفي الدر المنثور للحافظ السيوطي (৪/৩৬৭)
অত্র আয়াতের তাফসীর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ)দ্বারা“ইলম বা কোরআন” আর তাঁর দয়া (রাহমাতিহী) দ্বারা “হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে”বুঝানো হয়েছে। (সূরাঃআম্বিয়া, আয়াতঃ ১০৭, তাফসীরে আদ্-দুররুল মানসুর, ৪র্থ খ-, পৃঃ ৩৬৭, তাফসীরে নাঈমী-১১তম খ- পৃ-৩৬৮, তাফসীরে নূরুল ইরফান পৃঃ ৫৬১, তাফসীরে রূহুল মা’আনী ১০ম খ-, পৃঃ ১৪১, তাফসীরে কবীর ১৭ তম খ-, পৃঃ ১৩২)
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ (১০৭)
অর্থ: আর আমি আপনাকে (হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জগতসমূহের প্রতি কেবল রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি। (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াত-১০৭, ২১নং সুরা, ১৭ পারা)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا (১৭)
অর্থ: হে মানবকুল! নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর নিকট থেকে সুস্পষ্টপ্রমাণ (রাসূল) এসেছে এবং আমি তোমাদের প্রতি উজ্জল আলো অবতীর্ণ করেছি। (সূরাঃ নিসা, আয়াত-১৭৫, ৪নং সুরা ৫নং পারা)
(৪) { قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ } رسول يعني محمداً { وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
অর্থ: (নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা ‘নূর’ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং স্পষ্ট কিতাব (কুরআন) এসেছে, নূর দ্বারা “হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ”বুঝানো হয়েছে। (সূরাঃ মায়িদা, আয়াত-১৫, ৫নং সুরা, ৬ পারা, তাফসীরে জালালাইন-পৃ:৯৭, তাফসীরে কবীর-খ-:৩য়, পৃ-৩৮৬, তাফসীরে খাজেন, খ–১ম, পৃ-৪৪৪, তাফসীরে মাদারিক খ- ১ম, পৃ-৪১, তাফসীরে রুহুল মা’আনী-খ- ৪র্থ, পৃ-৫৭, তাফসীরে বায়দ্বাবী খ–৩য়, পৃ-৩৯৮, তাফসীরে কুরতুবী খ–৩য়, পৃ-৪৮৫, তাফসীরে রুহুল বায়ান খ–৩য়, পৃ-২৭০)
(৫)هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ (৩৩)
তিনিই হন, যিনি আপন রাসূলকে পথ-নির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেন। (সূরাঃ তাওবা, আয়াত-৩৩, ৯নং সুরা, ১০ পারা)
عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ (১২৮))لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا
অর্থনিশ্চয় তোমাদের নিকট তাশরীফ আনয়ন করেছেন তোমাদের মধ্যেথেকে ঐ রাসূল, যাঁর নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক, তোমাদের কল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুসলমানদের উপর পূর্ণ দয়ার্দ্র, দয়াময়। (সূরা-তাওবা, আয়াত-১২৮, ৯নং সুরা, ১১ পারা)
(৭) وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُبِينٌ (৬
এবং স্মরণ করুন ! যখন মারিয়াম-তনয় ঈসা বললো, ‘হে বনী ইস্রাঈল! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহরই রাসূল;আমার পূর্বেকার কিতাব সত্যায়নকারী এবং সম্মানীত রাসূলের সুসংবাদদাতা হয়ে, যিনি আমার পরে তাশরীফ আনবেন, তাঁর নাম হবে ‘আহমদ’। (সূরাঃ সাফ্ফ, আয়াত-৬, ৬১নং সুরা ২৮ পারা)
(৮) لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ (১৬৪)
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদেরই মধ্যে থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং তাদেরকে পবিত্র করেন। এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন এবং তারা নিশ্চয় এর পূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল (সূরাঃ আল্ ইমরান, আয়াত-১৬৪, ৩নং সুরা ৪ পারা)।
সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে কারীমাতে কোনটিতে প্রত্যক্ষভাবে আবার কোনটিতে পরোক্ষভাবে নবীজির মিলাদের কথা বলা হয়েছে।
পবিত্র হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঃ
– أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ الْفَضْلِ الْقَطَّانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ، وَالْحَجَّاجُ، قَالَا: حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا غَيْلَانُ بْنُ جَرِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ صَوْمُ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ ؟ قَالَ: ” فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ الْقُرْآنُ ” أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ
অর্থ: হযরত আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসুলুসাল্লামহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সোমবারে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিঁনি ইরশাদ করেন-সোমবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং সোমবারই আমার প্রতি ওহী নাজিল করা হয়েছে। (মুসলিম শরীফ ১ম খ-, পৃঃ৩৬৮হাদীছ নং১৯৭৭, মুসনাদে ইমাম আহমদ, খ–৫ম, পৃ-২৮৭ হা.নং২১৫০৮, মিশকাত পৃঃ১৭৯, বায়হাকী শরীফ, খ- ১ম, পৃ-৭২, মেরকাত শরহে মিশকাত, খ–৪র্থ, পৃ-২৯১, সুনালুল কোবরা, খ–৪র্থ, পৃ-২৯৩)।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শুভ বেলাদতের বর্ণনা দিতে গিয়ে আরো বলেন- অর্থ
৩৫৫৭ – حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ عَمْرٍو عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِي آدَمَ قَرْنًا فَقَرْنًا حَتَّى كُنْتُ مِنْ الْقَرْنِ الَّذِي كُنْتُ فِيهِ
নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামÑএর আওলাদ হতে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নির্বাচন করেছেন এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম হতে কেনানাহকে নির্বাচন করেছেন এবং কেনানার বংশ হতে কুরাইশ, কুরাইশের বংশ হতে হাশেমকে নির্বাচন করেছেন আর আমাকে হাশেমের আওলাদ হতে নির্বাচন করেছেন। (মুসলিম শরীফ ১ম খ-, পৃষ্ঠা ২৪৫; তিরমিযি শরীফ ২য় খ- ২০১ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৩৬০৫; মসনদে আহমদ, হাদীস নং ১৭০২৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ১১/৪৭৮, হদীস নং ৩২৩৮৯, মেশকাত শরীফ ৫১১ পৃষ্ঠা)
এছাড়া হযরত ইমাম তিরমিযি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত জামে তিরমিযি শরীফের ২য় খ-, ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম দিয়েছেন :
بَابُ مَا جَاءَ فى مْيلَادُ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ
তিরমিজী শরীফে ২য় খ- ২০৪ পৃষ্ঠা মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরতমুত্তালিব বিন আব্দুসাল্লামহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন-এতদসত্ত্বেও কি প্রমাণিত হয়নি যে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং করেছেন এবং তা করতে উম্মতদেরকে নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন যা হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
পবিত্র রবিউল আউওয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার সুবহে সাদিকের সময় সৃষ্টির মূল তথা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুনিয়াতে শুভাগমন করেছেন। প্রিয় নবীজির শুভাগমনের আলোচনা তিঁনি নিজেই সাহবায়ে কিরামের সাথে বর্ণনা করতেন। বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী খ–২য়, পৃ-২০২, মিশকাত শরীফ পৃ-৫১৩ সহ অসংখ্য বিশুদ্ব হাদিস গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।
খোলাফায়ে রাশেদীনের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঃ
১। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন
হাফেজ ইবনে হাজর আল হাইতুমী রহমাতুসাল্লামহি আলাইহি (৯৭৪ হিজরী) তাঁর বিখ্যাত কিতাব আল নে‘মাতুল কুবরা আলাল আলামীন’ শরীফের ৭-৮ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন-
قَالَ اَبُوْ َبكَرِ الْصِدِّيْقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ رَفِيْقِى فَىْ الْجَنَّةِ-
অর্থ: ইসলামের প্রথম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম খলিফা সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপনে একটি দেরহামও ব্যয় করবে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (জাওয়াহিরুল বিহার- ৩/৩৫০ পৃষ্ঠা)
২। হযরত ওমর ফারুকে আযম রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু কর্তৃক মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
قََالَ عُمَرَابْنِ الْخِطَّابٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَحْىِ اَلْاِسْلِامَ-
অর্থ: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে উদযাপন করল, সে যেন ইসলামকে পুনঃর্জীবিত করল।
৩। হযরত উসমান গণি রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন-
قال عثمان رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَنْ اَنْفَقَ ِدْرهَمًا عَلَى قََرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَاَلِهِ وَسَلَّمَ فَكَاَنَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرِ وَحُنَيْنٍ-
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি দেরহামও ব্যয় করবে, সে যেন বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করল।
৪। হযরত শে‘রে খোদা আলী রাদিয়াল্লাহুতা’য়ালা আনহু‘র মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাল-
مَنْ عَظَمَ مَوْلِدِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ سَبِبًا لِقِرْاَتِهِ لَايَخْرُجُ مِنْ الدُّيْنَا اِلَّا بِالْاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةِ بِغَيْرِ حِسَابِ –
অর্থ: যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে, সে যেন উহা উদযাপনের মাধ্যম হল, সে পৃথিবী হতে ঈমানের সাথে প্রস্থান করবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।