জলচর প্রাণীদিগকে দীক্ষা দান – হযরত বড় পীর জিলানী
জলচর প্রাণীদিগকে দীক্ষা দান হযরত শেখ আহমাদ মাগরিবী (রঃ) বলিয়াছেন—এক সময়ে হযরত বড় পীর সাহেব কতিপয় মুরীদসহ কোথাও গমন করিতেছিলেন। সম্মুখে একটা প্রকাগু নদী দেখিয়া তিনি পানির উপর দিয়া হাঁটিয়া নদীর মধ্যস্থলে উপনীত হইলেন। তখন অসংখ্য বৃহৎ মৎস্য, হাঙ্গর, কুমীর প্রভৃতি অসংখ্য জলজপ্রাণী আসিয়া তাহার চতুর্দিকে সমবেত হইল। অপরদিকে হযরত বড় পীর সাহেবের মুরীদগণ পানির উপর দিয়া হাঁটিয়া যাইতে সাহস না পাইয়া নদীর তীরেই দাঁড়াইয়া রহিলেন।
মুরীদগণ নদীর তীরে দাঁড়াইয়া লক্ষ্য করিতে লাগিলেন যে, হযরত বড় পীর সাহেবের চতুর্দিকে ভাসমান অগণিত জল জন্তু একযােগে হযরত বড় পীর সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে “লা ইলাহা ইলাল্লাহ যিকির করিতে আরম্ভ করিয়াছে সেই সঙ্গে নদীর তরঙ্গসমূহ হইতেও যেন আল্লাহর যিকিরের শব্দ উথিত হইতেছে।
হযরত বড় পীর সাহেব এইভাবে অনেকক্ষণ পর্যন্ত জলচর প্রাণীদিগকে যিকিরের তালীম দিতে দিতে নামাযের সময় হইয়া গেল। একজন ফেরেস্তা আসিয়া পানির উপরেসবুজ রঙের একখানা জায়নামায বিছাইয়া দিলেন। হযরত বড় পীর সাহেব নামাজের ইমামতি করার উদ্দেশ্যে সেই জায়নামাযের উপরে দণ্ডায়মান হইলেন, আর অসংখ্য ফেরেস্তা তাঁহার পিছনে মুক্তাদী হইয়া শ্রেণীবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হইল।
জলচর প্রাণীদিগকে দীক্ষা দান – হযরত বড় পীর জিলানী
তিনি নদীর তীরে দণ্ডায়মান তাঁহার মুরীদদিগকে নামাযের জামাতে শামিল হওয়ার জন্য ইঙ্গিতে আহবান করিলেন। এইভাবে মুরীদগণের মনে সাহসের সঞ্চার হইল। তাঁহারা সকলেই পানির উপর দিয়া হাঁটিয়া যাইয়াই নামাযে যােগদান করিলেন। হযরত বড় পীর সাহেব নামাযের নিয়ত করা মাত্রই আর একজন জোতির্ময় মহাপুরুষ আসিয়া কাতারের সর্ব দক্ষিণ দিকে দাঁড়াইয়া জামাআতে শামিল হইলেন।
বলাবাহুল্য যে, তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। হযরত বড় পীর সাহেব নামায অন্তে মুনাজাত করিলেন—হে পরমদাতা ও অতিশয় দয়ালু আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে প্রার্থনা করিতেছি যে, আপনার পিয়ারা হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উসীলায় দুনিয়ার যাবতীয় মুসলমান নর-নারী, বিশেষতঃ আমার মুরীদ এবং মুরীদগণের মুরীদ এবং তাহাদের যাবতীয় বংশধরদিগকে ক্ষমা করুন। তাহাদের সকলকে দুনিয়া ও আখেরাতে সর্ব প্রকার সুখ-শান্তি প্রদান রুন এবং সর্ব প্রকার বিপদাপদ হইতে রক্ষা করুন।
আমীন ছুম্মা আমীন। মুনাজাত সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহর তরফ হইতে বাণী আসিল—হে আমার হাবীবের হাবিব! আপনার প্রার্থনা আমি কবুল করিলাম। যখন আপনাকে আমি দোস্তরূপে গ্রহণ করিয়াছি, তখন আপনার কোন প্রার্থনাই অপূর্ণ থাকিবে না, বিশেষতঃ যে মুনাজাতে আমার পিয়ারা হাবীব হস্ত উত্তোলন করিয়া শামিল হইয়াছেন, তাহা আমি কবুল না করিয়া পারি না।