জনৈক ব্যক্তির দরবেশী লাভ – হযরত বড় পীর
জনৈক ব্যক্তির দরবেশী লাভ – হযরত বড় পীর – হযরত শেখ আবুল হােসেন ইবনে আহমদ (রঃ) হইতে বর্ণিত আছে শেখ আবদুর রহমান বাগদাদী (রঃ) মৃত্যু শয্যায় শায়িত অবস্থায় তাঁহার পুত্রকে নিকটে ডাকিয়া বলিলেন, আমার মৃত্যুর পরে তুমি হযরত বড় পীর সাহেবের নিকট যাইয়া তাঁহার আশ্রয়ে অবস্থান করিয়া জাহেরী ও বাতেনী ইলম শিক্ষা লাভ করিয়া স্বীয় জীবনকে
সার্থক করিয়া তুমিও যাহাতে দুনিয়ায় ও আখেরাতে শান্তি লাভ করিতে পার। শেখ আবদুর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁহার পুত্র পিতার উপদেশ অনুযায়ী হযরত বড় পীর সাহেবের খিদমতে যাইয়া আশ্রয় গ্রহণ করিল। একদা সে অত্যন্ত মূল্যবান পােশাকে ভূষিত হইয়া যখন হযরত বড় পীর সাহেবের মাদ্রাসায় পড়াশুনা করিতেছিল, এমন সময় জনৈক অপরিচিত সাধু পুরুষ আগমন করিয়া তাহাকে বলিলেন– বৎস! তােমার পরিধানে যে পােশাক রহিয়াছে, উহা রাজপুত্রের উপযুক্ত, তােমার জন্য ইহা শােভনীয় নহে। কারণ, তােমার পিতা তােমাকে হযরত বড় পীর সাহেবের সাহচর্যে থাকিয়া ফকিরী দরবেশী লাভ করিতে উপদেশ দিয়া গিয়াছেন।
এইরুপ পােশাক পরিচ্ছদ তােমার ফকিরী লাভের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করিবে এবং এই বিলাসিতা তােমাকে দুনিয়াদারীর পথে টানিয়া লইবে। সাধু পুরুষ এই কথা বলিয়াই অদৃশ্য হইয়া গেলেন। আগন্তুক দরবেশের উপদেশ বালকের অন্তরে ভীষণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করিল। সে তৎক্ষণাৎ তাহার দেহের মূল্যবান পােশাক খুলিয়া ফেলিয়া দিয়া একখানা ছিন্ন মলিন বস্ত্র পরিধান করিয়া উম্মাদের ন্যায় ছুটিয়া যাইয়া এক গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করিল। এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া বালকের আত্নীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীগণ তাহার খোঁজ করিতে লাগিল, কিন্তু কোথাও তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া গেল না। অবশেষে তাহারা হযরত বড় পীর সাহেবের নিকট আসিয়া সেই কথা জানাইল। তিনি আধ্যাত্মিক শক্তি বলে সবইঅবগত ছিলেন, সুতরাং তাহাদিগকে সান্ত্বনা প্রদান করিয়া বলিলেন—
হযরত বড় পীর
তােমরা ব্যস্ত বা চিন্তিত হইও না। বালকটি আল্লাহর প্রেমে উন্মাদ হইয়া গভীর জঙ্গলে বসিয়া আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন আছে। ঠিক আঠাইশ দিন পরে তাহার ধ্যানভঙ্গ হইবে এবং সে জঙ্গল হইতে বাহির হইয়া আসিবে। সেইদিন তােমরা জঙ্গলের পাশ্ববর্তী “আইয়াদান” নদীর কিনারে অবস্থান করিলেই তাহার সাক্ষাৎ পাইবে। হযরত বড় পীর সাহেবের কথায় সকলে আশ্বস্ত হইয়া চলিয়া গেল।
নির্ধারিত দিনে তাহারা সকলে জঙ্গলের ধারে নদীর তীরে বসিয়া অপেক্ষা করিতে লাগিল। ইতিমধ্যে, তাহাৱা দেথিতে, পাইল স. সুত্যই বালকট জীর্ণশীর্ণ বস্ত্রপরিহিত ও কঙ্কার অবস্থায় আল্লাহ, আল্লাহু যিকিরে দিগন্ত গ্রুপিত করিয় নদীর তীরের দিকে ছুটিয়া চলিয়াছে। সে তখন অহর প্রেমে এমনই উম্মম ছিল যে, নিজের অজ্ঞাতসারে নদীর পানির উপর দিয়া- অতি অবিকজরে নদী পার হইয়া গেল, কিন্তু সে নিজেই যেন তাহা বুঝিতে পারি না। অতঃপর বালকটি নদীর পারে তাহার আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীদিগকে দেখিয়া নিজেই বলিল—আমি বুঝিতে পারিয়াছি যে, তােমরা আমাকে লইয়া যাইতে আসিয়াছ—হযরত বড় পীর সাহেবই তােমাদিগকে আমার সন্ধান বলিয়া দিয়াছেন। চল, আমি তােমাদের সহিত হযরত বড় পীর সাহেবের খিদমতেই গমন করিতেছি। অতঃপর সে সকলের সহিত বেশ স্বাভাবিক অবস্থায় যাইয়া হযরত বড় পীরসাহেবের খিদমতে হাজির হইল।
হযরত বড় পীর সাহেব তাহাকে স্নেহ সম্ভাষণ করিয়া নিকটে বসাইয়া তাহার শরীর হইতে ছিন ও মলিন পােশাক খুলিয়া ফেলিয়া স্বহস্তে তাহাকে দরবেশী পােশাক পরাইয়া দিলেন। সেইদিন হইতেই সে ইলমে মারেফাতে পূর্ণজ্ঞান লাভ করিয়া কামেল ওলী হইয়া গেল।