মূল: হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহ.)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
[ইংরেজি অনুবাদক মুহাম্মদ আবূল ক্বা’সেম কর্তৃক লিখিত ভূমিকা ও টীকা-টিপ্পনীসহ]
সূরাহ রূম হতে পাঁচটি আয়াত (ومن سورة الرُّوم خمسُ آيات):
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন:
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفاً فِطْرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ ٱللَّهِ ذَلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ، مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَٱتَّقُوهُ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلاَةَ وَلاَ تَكُونُواْ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ.
অর্থ: সুতরাং আপন মুখমণ্ডল সোজা করুন আল্লাহর ইবাদতের জন্যে একমাত্র তাঁরই হয়ে। আল্লাহর স্থাপিত বুনিয়াদ, যার উপর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর বানানো বস্তুকে বিকৃত করো না; এটাই সরল দ্বীন; কিন্তু বহু লোক জানে না, তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী হয়ে। আর তাঁকেই ভয় করো ও নামায কায়েম রাখো এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। [কুর’আন, ৩০/৩০-৩১; নূরুল ইরফান]
আল্লাহ পাক ফরমান:
وَإِذَآ أَذَقْنَا ٱلنَّاسَ رَحْمَةً فَرِحُواْ بِهَا وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ إِذَا هُمْ يَقْنَطُونَ، أَوَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَبْسُطُ ٱلرِّزْقَ لِمَن يَشَآءُ وَيَقْدِرُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ، فَآتِ ذَا ٱلْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَٱلْمِسْكِينَ وَٱبْنَ ٱلسَّبِيلِ ذَلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يُرِيدُونَ وَجْهَ ٱللَّهِ وَأُوْلَـٰئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ.
অর্থ: এবং যখন আমি মানুষকে রহমতের স্বাদ প্রদান করি তখন তারা সেটার উপর খুশি হয়ে যায় এবং যখন তাদের নিকট কোনো দুর্দশা পৌঁছে ওই কাজের বদলা হিসেবে, যা তাদের হাত অগ্রে প্রেরণ করেছে, তখনই তারা হতাশ হয়ে পড়ে। এবং তারা কি দেখে নি যে, আল্লাহ রিযক্ব প্রশস্ত করেন যার জন্যে চান, এবং সংকুচিত করেন যার জন্যে চান। নিশ্চয় তাতে নিদর্শনসমূহ রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে। সুতরাং আত্মীয়কে তার প্রাপ্য দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও। এটা উত্তম তাদের জন্যে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম। [কুর’আন, ৩০/৩৬-৩৮; নূরুল ইরফান]
সূরাহ লোকমান হতে নয়টি আয়াত (ومن سورة لُقْمَان تسعُ آيات):
আল্লাহ বিবৃত করেন:
يٰبُنَيَّ إِنَّهَآ إِن تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُنْ فِي صَخْرَةٍ أَوْ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ أَوْ فِي ٱلأَرْضِ يَأْتِ بِهَا ٱللَّهُ إِنَّ ٱللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ، يٰبُنَيَّ أَقِمِ ٱلصَّلاَةَ وَأْمُرْ بِٱلْمَعْرُوفِ وَٱنْهَ عَنِ ٱلْمُنْكَرِ وَٱصْبِرْ عَلَىٰ مَآ أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ ٱلأُمُورِ، وَلاَ تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلاَ تَمْشِ فِي ٱلأَرْضِ مَرَحاً إِنَّ ٱللَّهَ لاَ يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ، وَٱقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَٱغْضُضْ مِن صَوْتِكَ إِنَّ أَنكَرَ ٱلأَصْوَاتِ لَصَوْتُ ٱلْحَمِيرِ.
অর্থ: (লুকমান আলাইহিস্ সালাম আপন পুত্রকে বলেন), ‘হে আমার পুত্র, মন্দকাজ যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, অতঃপর তা কঙ্করময় ভূমিতে কিংবা আসমানগুলোতে অথবা জমিনের মধ্যে – যেখানেই থাকুক না কেন, আল্লাহ সেটা উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক সূক্ষ্ম বিষয়ের জ্ঞাতা, অবহিত। হে আমার পুত্র, নামায কায়েম রাখো এবং সৎকাজের নির্দেশ দাও আর অসৎকর্মে নিষেধ করো এবং যে বিপদাপদ তোমার উপর আপতিত হয় সেটার প্রতি ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয় এগুলো সাহসিকতার কাজ। অন্য কারো সাথে কথা বলার মধ্যে আপন মুখমণ্ডল বক্র কোরো না এবং পৃথিবীতে অহঙ্কার করে বিচরণ কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না কোনো উদ্ধত, অহঙ্কারীকে। এবং মধ্যম চলনে বিচরণ করো আর আপন কণ্ঠস্বর নিচু করো। নিশ্চয় সমস্ত স্বরের মধ্যে অপ্রীতিকর স্বর হচ্ছে গর্দভের।‘ [কুর’আন, ৩১/১৬-১৯; নূরুল ইরফান]
আল্লাহতায়ালা ব্যক্ত করেন:
وَمَن يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ ٱسْتَمْسَكَ بِٱلْعُرْوَةِ ٱلْوُثْقَىٰ وَإِلَىٰ ٱللَّهِ عَاقِبَةُ ٱلأَمُورِ.
অর্থ: এবং যে কেউ আপন মুখমণ্ডলকে আল্লাহর দিকে অবনত করে দেয় এবং হয় সৎকর্মপরায়ণ, তবে সে নিশ্চয় এক মজবুৎ গ্রন্থি দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছে এবং আল্লাহরই দিকে হচ্ছে সব কাজের শেষ পরিণতি। [কুর’আন, ৩১/২২; নূরুল ইরফান]
রাব্বুল আলামীনের বাণী:
يٰأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمْ وَٱخْشَوْاْ يَوْماً لاَّ يَجْزِي وَالِدٌ عَن وَلَدِهِ وَلاَ مَوْلُودٌ هُوَ جَازٍ عَن وَالِدِهِ شَيْئاً إِنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّ فَلاَ تَغُرَّنَّكُمُ ٱلْحَيَاةُ ٱلدُّنْيَا وَلاَ يَغُرَّنَّكُم بِٱللَّهِ ٱلْغَرُورُ، إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي ٱلأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَداً وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَيمٌ خَبِيرٌ.
অর্থ: হে মানুষেরা, আপন রবকে ভয় করো এবং ওই দিনকে ভয় করো, যেদিন কোনো পিতা আপন সন্তানের উপকারে আসবে না এবং না কোনো উপযুক্ত সন্তান তার পিতার কোনো উপকারে আসবে। নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। সুতরাং তোমাদেরকে যেনো কিছুতেই প্রতারিত না করে পার্থিব জীবন। এবং কিছুতেই যেনো তোমাদেরকে আল্লাহর সহনশীলতার সুবাদে প্রবঞ্চিত না করে ওই বড় প্রবঞ্চক। নিশ্চয় আল্লাহর নিকট রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান এবং বর্ষণ করেন বৃষ্টি এবং জানেন যা কিছু মায়েদের গর্ভে রয়েছে, আর কেউ জানে না কাল কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ ভূ-খণ্ডে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা, সব বিষয়ে খবরদাতা। [কুর’আন, ৩১/৩৪-৩৫; নূরুল ইরফান] {হাকিমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন রহমতুল্লাহি আলাইহি – ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান এবং বর্ষণ করেন বৃষ্টি এবং জানেন যা কিছু মায়েদের গর্ভে রয়েছে, আর কেউ জানে না কাল কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ ভূ-খণ্ডে মৃত্যুবরণ করবে’ (إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي ٱلأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَداً وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ) – মর্মে আয়াতটির ব্যাখ্যায় লিখেছেন, “…এগুলো হচ্ছে এমনই পাঁচটি গায়ব/অদৃশ্য জ্ঞান, যেগুলো বিবেকের হিসেব দ্বারা এবং আন্দাজ-অনুমান দ্বারা জানা যায় না; শুধু আল্লাহর ওহী দ্বারাই জানা যেতে পারে। আর যেহেতু এ ধরনের ওহী প্রচার করার অনুমতি নেই, সেহেতু সর্বসাধারণকে এসব কথা বলা যায় না। সুতরাং এটা আয়াতের শানে নুযূলের একেবারে অনুরূপ, কোনো রূপ বিরোধ-বৈপরিত্য নেই” (টীকা-৭৭)। “কোন্ ভূ-খণ্ডে মৃত্যুবরণ করবে – এ বিষয়টিও বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা জানা যায় না। মৃত্যুদূত ফিরিশতা (মালাকুল মওত) প্রত্যেকের মৃত্যুর জায়গা সম্পর্কে জানেন। সর্ব-হযরত সারা ও মরিয়মকে হযরত জিবরাঈল সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছেন। হযরত যাকারিয়া (আলাইহিস্ সালাম)-কে হযরত ইয়াহইয়া (আলাইহিস্ সালাম)-এর সুসংবাদ দিয়েছেন। এসবই মহান রবের শিক্ষার ফসল ছিলো; অনুমান, ধারণা-কল্পনার ফল নয়। মোটকথা, এ আয়াত থেকে একথা অনিবার্য হয় না যে, আল্লাহতায়ালা কোনো বান্দাকে এসব জ্ঞান দেন নি। মহান রব ফরমান – عَٰلِمُ ٱلْغَيْبِ فَلاَ يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَداً إِلاَّ مَنِ ٱرْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ – অর্থ: সুতরাং তিনি তাঁর গায়বের বিষয়াদি প্রকাশ করেন না, কিন্তু (প্রকাশ করেন) তাঁরই মনোনীত রাসূলের নিকট (৭২/২৬-২৭)” (টীকা-৭৮)। “হুজূর (ﷺ) বদরের যুদ্ধের একদিন পূর্বে প্রত্যেক কাফিরের নিহত হবার স্থান বলে দিয়েছেন। অথবা জান্নাত থেকে হুরের আহ্বান – ‘তাঁর সাথে ঝগড়া কোরো না; তিনি আমাদের নিকট আগমনকারী।’ অথবা তাকদীর (অদৃষ্ট) লেখক ফিরিশতা মায়ের পেটের মধ্যে সব কিছু লিখে যাওয়া – এসবই আল্লাহতায়ালার বলে দেয়ার ফল। সুতরাং তা এ আয়াত শরীফের বিরোধী নয়” (টীকা-৭৯)।}
(চলমান)