ছোটদের ঘুম পাড়ানোর গল্প, ইসলামী গল্প বাচ্চাদের জন্য

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রথম গল্প- আগুন হল জান্নাতের বাগান

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম একজন সম্মানিত নবি ও রাসুল ছিলেন। তাঁকে আল্লাহ্ তাআলা এমন সময় দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন যখন মানুষ ব্যাপকভাবে মূর্তিপূজা করত। নিজের হাতে মাটি, পাথর ইত্যাদি বস্তু দিয়ে মূর্তি বানিয়ে তার উপাসনা করত। তারা মূর্তিকেই তাদের ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ, ইজ্জত বেইজ্জত, কল্যাণ-অকল্যাণ এসবের মালিক মনে করত। কিন্তু হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তা মানতে পারতেন না। তিনি ছিলেন খুবই চিন্তাশীল।

সবকিছু নিয়ে তিনি বেশ ভাবতেন। তিনি ভাবতেন যাকে নিজের হাত দিয়ে বানানো হল সে কিভাবে রব হতে পারে, সে কিভাবে ইবাদতের উপযুক্ত হতে পারে। তিনি লোকদের মূর্তিপূজাকে একদম মানতে পারতেন না। এই ঘৃণিত কাজ থেকে সবাইকে ফেরানোর জন্য তিনি খুব করে বুঝাতেন। কিন্তু কেউই তাঁর কথায় কান দিতো না। তাঁকে পাত্তা দিতো না। তিনি চিন্তা করতেন কিভাবে এদেরকে মূর্তিপূজার মত এরকম একটি নোংরা কাজ থেকে বাঁচানো যায়।

একবার এক মেলার সময় সবাই যখন মেলায় যাবে, তখন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম অসুস্থতার কথা বলে তাদের সাথে গেলেন না। সবাই চলে যাওয়ার পর, তিনি একটি বড় মুগুর নিয়ে চুপিচুপি মূর্তির ঘরে প্রবেশ করলেন। একে একে সবগুলো মূর্তি ভেঙ্গে লণ্ডভণ্ড করে দিলেন। কিন্তু বুদ্ধি করে সবচেয়ে বড় মূর্তিটাকে ভাঙলেন না। তাকে অক্ষত রেখে দিলেন। এরপর বড় মুগুরটা মূর্তিটির কাঁধে ঝুলিয়ে রাখলেন।

মেলা শেষে সবাই এসে তাদের মাবুদদের ভয়াবহ অবস্থা দেখতে লাগলো। সবাই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে এদিক সেদিক পড়ে আছে। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে ডেকে আনা হল। তাকে জিজ্ঞসা করা হল, তাদের মাবুদগুলিকে কে ভেঙ্গেছে? তিনি বড় মূর্তিটির দিকে ইশারা করলেন। তারা বলল, এই মূর্তি কিভাবে সবগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করতে পারে, নিশ্চয় এটা তোমারই কাজ।

সবাই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে ধরে নমরুদের দরবারে নিয়ে গেল এবং তার শাস্তি দাবী করল। নমরুদ ছিল। সারা পৃথিবীর বাদশাহ। নমরুদ সিদ্ধান্ত নিল যে, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে। আগুন জ্বালানোর জন্য ছয়মাস ধরে লাঠি-লাকড়ি সংগ্রহ করা হল। এরপর বিশাল এক অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত করা হল। প্রচণ্ড তার তাপ-উত্তাপ।

এত তাপ যে উপর দিয়ে পাখি উড়ে গেলে তা পুড়ে ছাই হয়ে যেত। এবার সেই আগুনের কুণ্ডলীতে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে নিক্ষেপ করা হবে। এই দৃশ্য দেখে পানির ফেরেশতা, বাতাসের ফেরেশতাসহ হযরত জিবরীল আলাইহিমুস সালাম এসে উপস্থিত হলেন। বাতাসের ফেরেশতা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সাহায্য করার জন্য বলল, আপনি বললে বাতাস দিয়ে আগুনকে উড়িয়ে দিই। পানির ফেরেশতা বলল, আপনি চাইলে আগুনকে পানি দিয়ে নিভিয়ে দিই।

কিন্তু হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম একমাত্র আল্লাহ্ তাআ’লার উপর ভরসা রাখলেন। তিনি বললেন, আমার জন্য এক আল্লাহ্ তাআ’লাই যথেষ্ট। সাথে সাথে আল্লাহ্ তাআ’লা আগুনকে হুকুম দিলেন, “হে আগুন তুমি আমার ইব্রাহিমের জন্য শান্তিদায়ক ঠান্ডা হয়ে যাও”। সাথে সাথেই আগুন হয়ে গেল জান্নাতের বাগান, অপার এক শান্তির জায়গা। বাহির থেকে আগুনের চেহারা আগুনের মতই দেখালো, কিন্তু হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের একটি পশমও পুড়াতে পারলো না।

এভাবে চল্লিশ দিন তিনি আগুনের ভিতরে ছিলেন। পরবর্তীতে যখন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করা হল, দুনিয়াতে আপনি সবচেয়ে বেশি শান্তি কোথায় পেয়েছেন? তিনি বলেছিলেন, যে চল্লিশ দিন আমি আগুনের ভিতরে ছিলাম সেই দিনগুলোতেই আমি সবচেয়ে বেশি শান্তিতে ছিলাম। এভাবেই মানুষ যখন আল্লাহ্ তাআ’লার উপর ভরসা করে তাঁর হুকুম পালন করতে থাকে, তখন অভাব-অনটন, দারিদ্রতা, দুঃখ-কষ্ট, পেরেশানি ইত্যাদির ভিতরেও তিনি তাঁকে জান্নাতের শান্তিতে রাখেন।

দ্বিতীয় গল্প- আদম (আ) ও হাওয়া (আ) -এর জন্ম

স্মরণ করো, যখন রব ফেরেশতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমি মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করবো।সূরা সোয়াদ আয়াত : ৭।

আল্লাহ বললেন, ‘হও’। আর সাথে সাথেই সব সৃষ্টি হয়ে গেল। আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। আকাশ, চাঁদ, সুরুজ, তারকা, গ্রহ, প্রাণিকুল সৃষ্টি করা হলো। সাগর, পর্বত এবং নদী সৃষ্টি হলো। আল্লাহ ফেরেশতা ও জিন জাতিকেও সৃষ্টি করলেন। এভাবে সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টি হয়ে গেল।

আর তিনি বরকতময়, যার কর্তৃত্বে রয়েছে আসমানসমূহ, জমিন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সবকিছু। আর কিয়ামতের জ্ঞান কেবল তারই আছে এবং তারই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। -সূরা যুখরুফ, আয়াত : ৮৫

এরপর আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলেন। আল্লাহ সব ধরনের মাটি সংগ্রহ করলেন। এগুলো মিশিয়ে কুম্ভকারের কাদা তৈরি করলেন। তিনি এটিকে মানুষের আকৃতি দান করলেন। পরিশেষে তার মধ্যে রূহ সঞ্চার করলেন।

এভাবে সৃষ্টি করলেন মানুষ। প্রথম মানুষের নাম রাখলেন ‘আদম। তারপর আল্লাহ প্রথম নারী সৃষ্টি করলেন। তাঁর নাম ‘হাওয়া।’ তিনি হজরত আদম (আ)-এর স্ত্রী।

আল্লাহ আদম ও হাওয়া (আ)-কে খুব পছন্দ করতেন। আদম (আ) ও হাওয়াকে আল্লাহ তাঁর অসীম কুদরতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর ক্ষমতা অসীম। তিনি যে কোনো জিনিস সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন।

তৃতীয় গল্প- বেহেশতের জীবন

আর আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং তা থেকে আহার করো স্বাচ্ছন্দ্যে, তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না। তাহলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। সূরা আল-বাকারা আ : ৩৫

আল্লাহ আদম ও হাওয়া (আ)-কে বেহেশতে বসবাস করার আদেশ দিলেন। আল্লাহ বললেন, হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো। আর তোমরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করো। আর যা তোমাদের ইচ্ছা হয়, তা খাও।

আদম ও হাওয়া (আ) বেহেশতে বসবাস করতে লাগলেন। বেহেশতে ছিল নানা জাতের ফলের গাছ। এসব গাছের ফল তাঁরা ইচ্ছা মতো খেতেন। বেহেশতের জীবনযাপন ছিল সুখ ও শান্তির। তাঁরা ছিলেন আল্লাহর খুব প্রিয়। আদম ও হাওয়া (আ) বেহেশতে যা চাইতেন তা-ই হাতের কাছে পেতেন।

https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?npa=1&gdpr=1&us_privacy=1—&gdpr_consent=CPziCYAPziCYAEsACBENDaCoAP_AAEPAAAIYINJB7D7FbSFCwH57aLsAMAhXRsCAQqQAAASBAmABQAKQIAQCkkAYFESgBAACAAAAICZBIQIMCAgACUABQAAAAAEEAAAABAAIIAAAgAEAAAAIAAACAIAAEAAIAAAAEAAAmQhAAIIACAAAhAAAIAAAAAAAAAAAAgCAAAAAAAAAAAAAAAAAAQQaQD2F2K2kKFgPi2QWYAQBCijYEAhUAAAAkCBIAAgAUgQAgFIIAwAIFAAAAAAAAAQEgCQAAQABAAAIACgAAAAAAIAAAAAAAQQAAAAAIAAAAAAAAEAQAAAAAQAAAAIAABEhCAAQQAEAAAAAAAQAAAAAAAAAAABAAAAAAAAAAAAAAAAAAAAgAA&addtl_consent=1~2072.70.89.93.108.122.149.196.2253.2299.259.2357.311.317.323.2373.338.358.2415.415.2506.2526.482.486.494.495.2568.2571.2575.540.574.2624.609.2677.2779.827.864.981.1048.1051.1095.1097.1201.1205.1276.1301.1365.1415.1449.1570.1577.1651.1716.1735.1753.1765.1834.1870.1878.1889.1958&client=ca-pub-1426523110009009&output=html&h=182&slotname=6325634926&adk=3884429140&adf=1882856457&pi=t.ma~as.6325634926&w=728&fwrn=4&lmt=1697061769&rafmt=11&format=728×182&url=https%3A%2F%2Fwww.loveislife1.com%2F2022%2F11%2Fblog-post_93.html&host=ca-host-pub-1556223355139109&wgl=1&uach=WyJXaW5kb3dzIiwiMTUuMC4wIiwieDg2IiwiIiwiMTE3LjAuNTkzOC4xNTAiLFtdLDAsbnVsbCwiNjQiLFtbIkdvb2dsZSBDaHJvbWUiLCIxMTcuMC41OTM4LjE1MCJdLFsiTm90O0E9QnJhbmQiLCI4LjAuMC4wIl0sWyJDaHJvbWl1bSIsIjExNy4wLjU5MzguMTUwIl1dLDBd&dt=1697115380611&bpp=12&bdt=180&idt=100&shv=r20231004&mjsv=m202310090101&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3D1ee942d30082ee50-222d393765e0001f%3AT%3D1697114959%3ART%3D1697115149%3AS%3DALNI_MaBmSdtUY4R7_qtrDo_VbhJptGxnw&gpic=UID%3D00000cba06040dec%3AT%3D1697114959%3ART%3D1697115323%3AS%3DALNI_MYtHDQUHhtIZrRaF0Q4BOp_u_vmnA&prev_fmts=0x0%2C1073x280%2C728x280%2C728x182%2C728x182&nras=1&correlator=6886704591770&frm=20&pv=1&ga_vid=896729878.1697114958&ga_sid=1697115381&ga_hid=1787591171&ga_fc=1&rplot=4&u_tz=60&u_his=4&u_h=1080&u_w=1920&u_ah=1032&u_aw=1920&u_cd=24&u_sd=1&dmc=8&adx=415&ady=3426&biw=1903&bih=955&scr_x=0&scr_y=0&eid=44759876%2C44759927%2C44804783%2C44805099%2C31078680%2C31078663%2C31078665%2C31078668%2C31078670&oid=2&pvsid=217421139256684&tmod=1653731380&uas=0&nvt=1&ref=https%3A%2F%2Fwww.loveislife1.com%2F2023%2F05%2Fblog-post_45.html&fc=1920&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C1920%2C0%2C1920%2C1032%2C1920%2C955&vis=1&rsz=%7C%7CoeEbr%7C&abl=CS&pfx=0&fu=128&bc=31&td=1&nt=1&ifi=6&uci=a!6&btvi=3&fsb=1&xpc=kEfCVE0XtC&p=https%3A//www.loveislife1.com&dtd=331হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন। এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু। -সূরা হাশর, আয়াত: ১০

বেহেশতে ছিল একটি আলাদা প্রকারের গাছ। এই গাছের ফল ছিল ক্ষতিকর। তাই এই গাছের ফল খেতে আদম ও হাওয়াকে আল্লাহ নিষেধ করেছিলেন। বেহেশত সুখের জায়গা। অফুরন্ত শান্তি ও আরামের জায়গা। তাই আদম ও হাওয়া (আ) বেশ আনন্দে সেখানে বসবাস করতে লাগলেন। এ জন্য তাঁরা আল্লাহর প্রশংসা করতেন।

চতুর্থ গল্প- ইবলিসের ঔদ্ধত্য

সে বললো, আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নি থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। সূরা সোয়াদ আ : ৭৬

আল্লাহ তাঁর প্রিয়বান্দা আদম (আ)-কে সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের এসব জিনিসের নাম শেখাননি। তাই ফেরেশতারা তার কিছুই জানতো না, যা আদম (আ) জানতেন। তারপর আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন, ‘তোমরা আদমকে সেজদা করো।’

সকল ফেরেশতা আদমকে সেজদা করলো। সেখানে ইবলিস নামে এক জিন ছিল। সে আদমকে সেজদা করলো না। ইবলিস আল্লাহর আদেশের অমান্য করলো। আল্লাহ তখন বললেন, ‘কী জিনিস তোমাকে আমার আদেশ পালনে বাধা দিলো?’

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সারা জাহানের রব। পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথের হেদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের ওপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়। -সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত : ১-৭

ইবলিস বললো, ‘আমি আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর আপনি আদমকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে। আল্লাহ ইবলিসের কথায় রুষ্ট হলেন। তিনি বললেন, ‘এখান থেকে বের হয়ে যাও। আর নিশ্চয় বিচার দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার লা’নত বলবৎ থাকবে। ইবলিস তখন প্রার্থনা করলো, ‘হে আমাদের রব! আমাকে বিচার দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। সে বললো, ‘আমি আদম সম্প্রদায়কে বিপথগামী করে ছাড়বো। আল্লাহ বললেন, ‘নিশ্চয়, আমার খাটি বান্দাদের বিপথে পরিচালিত করার কোনো ক্ষমতা তোর নেই। জেনে রাখিস, একমাত্র বিপথগামী লোকেরা তোর অনুসরণ করবে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment