প্রশ্ন: ছেলে সন্তান মায়ের বুকের দুধ কতদিন পান করতে পারবেন ? এ মাসআলা বিস্তারিত বর্ণনা করার নিবেদন রইলো।
ছেলে সন্তান মায়ের বুকের দুধ কতদিন পান করতে পারবেন ?
উত্তর: শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ-এর বিকল্প নাই। কারণ মায়ের বুকের দুধে রয়েছে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ ও উপাদানযুক্ত আল্লাহ প্রদত্ত এমন উপযোগী তৈরি খাবার, যা শিশু সহজেই হজম করতে পারে এবং সহজেই শিশুর দেহ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘স্তন্যদানকারী ও গর্ভবর্তী মহিলা থেকে রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
[আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও মিশকাত]
অর্থাৎ শিশুকে স্বীয় বুকের দুধ পান করার কারণে বা গর্ভীতা হওয়ার কারণে ইচ্ছা করলে মহিলাগণ রমযানের ফরয রোযা ভঙ্গ করলে বা রাখতে না পারলে গুনাগার হবে না। অবশ্য তা পরবর্তীতে কাযা আদায় করবে একটির বিনিময়ে একটি। বর্তমান সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান শিশুকে মাতৃদুগ্ধ দানের ব্যাপারে যে গুরুত্বের কথা বলে, সে গুরুত্বের কথা প্রিয় নবীজি আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বেই ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নবজাতক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা ও বিধান ঘোষণা করেছেন।
ছেলে সন্তান মায়ের বুকের দুধ কতদিন পান করতে পারবেন
আল্লাহ তাআলা সুরা লোকমানের ১৪নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
অর্থাৎ, আমি (আল্লাহ্) মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদাচরণের তাকিদ দিয়েছি। তার মাতা তাকে- দুর্বলতার উপর দুর্বলতা তথা তাকে অনেক কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করে। এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।’ সন্তানকে দুধ পান করানোর সময় সীমা হল জন্মের পর দু’ বছর। আমি আরো তাকিদ করেছি যে, আমার এবং তোমার মাতা-পিতার শুকর (কৃতজ্ঞতা) আদায় কর। এটাও জেনে রাখ আমার নিকট ফিরে আসতে হবে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
‘মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে। যদি দুধ পান করানোর পরিপূর্ণ সময় দুধ পান করানোর ইচ্ছা করেন।
[সুরা বাক্বারা : আয়াত ২৩৩]
ছেলে সন্তান মায়ের বুকের দুধ কতদিন পান করতে পারবেন
কুরআন ও হাদিসের আলোচনা থেকে বুঝা যায়- শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর সময়সীমা হল, জন্মের পর থেকে পূর্ণ দুই বছর। এটাই হানাফী মাযহাবের অভিমত।
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন,
অর্থাৎ -আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি, তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার ‘স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।
[সুরা আহকাফ : আয়াত ১৫]
ছেলে সন্তান মায়ের বুকের দুধ কতদিন পান করতে পারবেন
তাই ক্ষেত্র বিশেষ শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত রাখার কথাও বলা হয়েছে ইসলামে। সর্বোপরি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করালে শিশু ও মায়ের মধ্যে এমন একটি আন্তরিক বন্ধন তৈরি হয়, যা স্থায়ী। মুসলিম উম্মাহর সব শিশুর মায়ের জন্য কুরআনের হুকুম অনুযায়ী তাঁর সন্তান কে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করানো উত্তম। পূর্ণ দু’বছর দুধ পান না করিয়ে তার পূর্বেও দুধ ছাড়াতে পারে যদি মাতা-পিতা ভাল মনে করে। তবে জন্মের দু’ বছর পর দুধ পান করাতে পারে না।
[নুরুল ইরফান-কৃত. মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রহ.) সূরা বাক্বারা, পৃ.৯৪]
আল্লাহ তাআলা সব মাকে কুরআন ও হাদিসের বিধান অনুযায়ী শিশুদেরকে নিজেদের বুকের দুধ পান করিয়ে আল্লাহর হুকুম পালন করার ও শিশুর যথাযথ যত্ন নেয়ার তাওফিক দান করুন।
আমিন।