ছেলে-মেয়ে একসাথে পড়াশোনা করে এমন পরিবেশে নিজেকে রক্ষা করব কিভাবে?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

জিজ্ঞাসা১৪৪ : আসসালামু আলাইকুম। আজকাল আধুনিক শিক্ষার কারণে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে পড়ালেখা করছে। ফলে তারা অবাধে মেলামেশা, আড্ডা দেয়া, ঘোরঘুরি করা, গ্রুপ-স্টাডি করা, প্রাইভেট টাইম পাস করা, ফেসবুকে চ্যাট করাসহ আরো কত কিছু করছে…তারা এইসবের নাম দিয়েছে ফ্রেন্ডশিপ। ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো জায়েয না এগুলোও ব্যাভিচার? অনুগ্রহপূর্বক একটু বুঝিয়ে বলবেন।–adnan jawad: ajreturnz007@gmail.com

জবাবওয়ালাইকুমুস্সালাম।

এক. মাশাআল্লাহ, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন। আসলে ইসলামকে উপেক্ষা করে পাশ্চাত্যের অন্ধঅনুকরণে এরকম কমবাইন্ড-শিক্ষাব্যবস্থা প্রকৃতিগতভাবে যুবসমাজকে অপরাধের দিকে উস্কে দেয়ার এক আগ্নেয়াস্ত্র হিসাবে যে ব্যবহৃত হচ্ছে তা সচেতনমহলের অজানা নয়। এই শিক্ষাব্যবস্থার ফলে সচ্চরিত্রতা, সততা ও নৈতিকতার ব্যাপারে যুবসমাজ আজ প্রচণ্ড রকমের বিপদে রয়েছে-এটাই হচ্ছে দুঃখজনক বিশেষ বাস্তবতা।

দুই. উক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রীদের সাথে ছাত্রদের এবং শিক্ষিকাদের সাথে শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে যে সহাবস্থান হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহ হারাম হচ্ছে। সুতরাং এটাকে ফ্রেন্ডশিপ নাম দেয়া নিতান্ত হাস্যকর ব্যাপার। ফিতনা, যৌনতাড়না ও অশ্লীলতায় থৈ থৈ করা বিজাতীয়-সংস্কৃতি চর্চার নাম যদি ফ্রেন্ডশিপদেয়া হয় তাহলে শালীনতা ও সভ্যতার ঐতিহ্য চর্চাকারী মুসলিমজাতির জন্য এরচে’ লজ্জাজনক বিষয় আর কী হতে পারে!

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, সুতরাং প্রশ্নেল্লিখত কর্মকান্ডগুলো মূলতঃ ফ্রেন্ডশিপ নয়; বরং ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো একপ্রকার ব্যভিচার। প্রবাদ আছে, পৃথিবীর সবচে দীর্ঘতম সফর এক পা ওঠালেই শুরু হয়ে যায়। অনুরূপভাবে উক্ত কর্মকান্ডগুলোর মাধ্যমে শুরু হয় মূল ব্যভিচারের প্রতি সফর। ঈমানদারের কর্তব্য হল সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা ফেলা থেকে বিরত থাকা। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

اَلْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالْاُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُمَا الْككَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهُمَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهُمَا الخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه

‘‘দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, যবানের ব্যভিচার হল অশোভন উক্তি, হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।’’ (মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)

তিন. অতএব, যে ঈমানদার ব্যক্তি নিজের মুক্তি চায় তার প্রতি আমার পরামর্শ হল-

প্রথমত, সে যেন এরূপ পরিবেশে দৃষ্টিকে অবনমিত রাখার এবং নারীদের নিকটবর্তী না হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ  أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّه خَبِيرٌبِمَايَصْنَعُونَ

‘‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।’’ (সূরা আন-নূর ৩০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- غُضُّوْا اَبْصَارَكمُ وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ ‘‘তোমরা দৃষ্টি অবনত রাখো এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত কর।’’ (আলজাওয়াবুলকাফী, পৃষ্ঠা : ২০৪)

অন্যত্র তিনি বলেন-

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَنْظُرُ اِلى مَحَاسِنِ الْمَرْأَةِ اَوَّلَ مَرَّةٍ ثُمَّ يَغُضُّ بَصَرَه اِلَّا اَحْدَثَ اللهُ لَهُ عِبَادَةً يَجِدُ حَلَاوَتَهَا

‘‘কোনো মুসলিমব্যক্তি কোনো নারীর সৌন্দর্য্যের দিকে তাকাল, এরপর সে তার দৃষ্টি নামিয়ে নিল, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে ইবাদতের এমন স্বাদ দান করবেন, যা সে অনুভব করবে।’’ (মুসনাদে আহমাদ ২২২৭৮) 

দ্বিতীয়ত: আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। তাদের মজলিসে আসা যাওয়া করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ ‘‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।’’ (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

আল্লাহ আমাদের সকলকে পবিত্র জীবন দান করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment