চুপ থাকা অনেক বড় অলঙ্কার
=====
হযরত সাইয়্যদুনা আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) যেখানে কথা বলা দরকার নেই সেখানে চুপ করে থাকে মানুষের জন্য অনেক বড় অলঙ্কার। (২) সত্য কথা বলা আমার নিকট কসম খাওয়ার চেয়ে বেশি ভালো। (৩) আর ইজ্জত ও মাহাত্ম মানুষের এমন একটি নিদর্শন যা তার কপালে চমকাতে থাকে।
এক কবি বলেনঃ মুত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তি নিজের জবানের হেফাযত করার জন্য কথা বলা থেকে বেঁচে থাকে যদিও সে সঠিক কথা বলতে পারে।
“নিশ্চুপ” ও “কথা বলা” ব্যক্তির ঘটনা
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু হাতেম رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ দুই ব্যক্তি ইলম অর্জন করা শুরু করে। যখন আলেম হয়ে যায় তখন একজন “চুপ থাকা” অবলম্বন করে আরেকজন ”কথা বলায় অভ্যস্ত” হয়ে যায়। সে নিশ্চুপ ব্যক্তিকে একটি কবিতা লিখে পাঠায় যে, “আমি জীবনযাপনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি পেয়েছি জবানকে।” নিশ্চুপ ব্যক্তি জবাব দিলেনঃ ”আমি পরিপূর্ণতায় পৌছানোর জন্য জবানকে কাবু রাখার চেয়ে বড় (উপকারী) কিছু পাই নি।
জবানকে নিয়ন্ত্রনকারী-ই নিরাপদে থাকে
====
হযরত সাইয়্যিদুনা সুফিয়ান ইবনে ’উওয়াইনা رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) কুপথে যাওয়া এবং মহব্বত থেকে নিজের মনকে খালি করে দাও আর সালাম দিয়ে এগুলোর পাশ দিয়ে চলে যাও। (২) চুপ থাকার রোগে মৃত্যুবরণ করা তোমার জন্য কথা বলার রোগে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে ভালো। (৩) নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তি নিরাপদে থাকে যে তার মুখকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে।
মর্যাদাবান ব্যক্তির পরিচয়
====
হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম বিন হারমাহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) আমি মানুষকে এক কঠিন অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। এইজন্য তুমি একটি কিনারা (কর্নার) আকড়ে থাক যতক্ষন না অবস্থা শেষ সীমা পর্যন্ত পৌছে না যায়। (২) কারণ, চলে যাওয়া ব্যক্তিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় না। যখন জবান পিছলে যায় তখন কথা মুখ থেকে আলাদা হয়ে যায়। (৩) তুমি প্রত্যেক মর্যাদাবান ব্যক্তিকে ”চুপ থাকতে” দেখবে। আর অন্যকে দেখবে তারা কথা বলে নিজের সম্মান নষ্ট করছে।
বিতর্কে পড়ার চাইতে উত্তম
=====
আরেকজন কবি বলেনঃ (১) মানুষের সাথে ক্ষমাশীল আচরণ কর আর তার জন্য নিজের সম্মান ওয়াকফ করে দাও। (২) নিন্দা বেশি হতে থাকে তখন নিজের কান বন্ধ করে নাও। আর যখন অনর্থক কাজকর্ম হওয়ার আশংকা হয় তখন চুপ থাকা আবশ্যক করে নাও। (৪) কারণ, বিতর্কে পড়ার চেয়ে তোমার জন্য চুপ থাকা বেশি ভালো।
সফল কে?
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু ‘আতাহিয়াহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) অনেক বেশী চুপ থাকা ব্যক্তিই সফল আর কথাবার্তার হেফাযতকারীর জন্য কথা বলা জিহাদ স্বরুপ। (২) সব কথার জবাব হয় না আর অপছন্দনীয় কথার জবাব তো চুপ থাকা। হযরত সাইয়্যিদুনা আবু ‘আতাহিয়াহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ আরও বলেনঃ (১) যখন তুমি কথাবার্তার আসল উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌছে যাও তখন তার চেয়ে বেশি কথা বলার মধ্যে কোন উপকার নেই। (২) আর অকারণ কথা বলার চেয়ে চুপ থাকা মানুষের জন্য ভালো।
নেকীর কথা বল অথবা চুপ থাক
=====
এক কবি বলেনঃ (১) নেকীর কথা বল আর অনর্থক, সন্দেহপূর্ণ কথা, অশ্লীল কথা এবং অন্যের দোষ-ত্রুটি ধরা বন্ধ কর। (২) নিশ্চুপ, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, মনোযোগী হয়ে যাও। যদি কথা বলো তাহলে কম কথা বলো আর (৩) না বুঝে যে প্রশ্ন করে তার প্রশ্নের উত্তর দিও না আর যে ব্যপারে তোমাকে জিজ্ঞাসা করা না হয় সে ব্যপারে কথা বলো না।
চুপ থাকাই ভালো
====
উহাইনাহ বিন জুলাহ বলেনঃ (১) যতক্ষন চুপ থাকা কোন দোষ হয়ে না যায় যুবকদের জন্য ততক্ষন চুপ থাকাই ভালো। (২) আর যার কাছে উপকারী আকল না থাকে তার কথা আহাম্মকতাই হবে।
ঠোঁট বন্ধ রাখাতেই নিরাপত্তা রয়েছে
====
এক কবি বলেনঃ (১) যতক্ষন তুমি তোমার ঠোঁট বন্ধ রাখবে ততক্ষন নিরাপদে থাকবে। আর যদি ঠোঁট খুলতেই হয় তাহলে ভালো কথা বলো। (২) দীর্ঘ সময় চুপ হয়ে থাকা আয়ত্বকারী ব্যক্তির উদ্দেশ্য হলো নিন্দা এবং ভালো মন্দ বলা থেকে বেঁচে থাকা। (৩) এই জন্য তুমিও ভালো কথা বলো অথবা এত বেশি কথা বলো না যাতে তোমাকে ভালো মন্দ বলা হয়।
আগে পরিমাপ করো তারপর কথা বলো
====
আবদুল্লাহ ইবনে মু’য়াবিয়া ইবনে জা’ফর বলেনঃ (১) হে মানুষ! কখনো কোন কথা বলো না। কারণ, তুমি জানো না কোন কথা দ্বারা তোমাকে দোষী করা হবে। (২) চুপ থাকার খুঁটি শক্ত করে আঁকড়ে ধর। কারণ, চুপ থাকাতে অনেক হিকমত আছে আর যদি কথা বলতেই হয় তাহলে প্রথমে পরিমাপ কর তারপর কথা বলো। (৩) যখন মানুষ এমন বিতর্কে পড়ে যায় যার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই তখন সেখান থেকে তুমি চলে যাও।
কথা বলে বার বার পস্তাতে হয়
====
হযরত সাইয়্যিদুনা আবু আতাহিয়াহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) যদি চুপ থাকা তোমার পছন্দ হয় তাহলে (জেনে রাখ) তোমার আগে নেককার লোকদেরও তা পছন্দ ছিল। (২) আর যদি চুপ থেকে তোমাকে একবার অপমানিত হতে হয় তাহলে বিশ্বাস করো কথা বলে তোমাকে অনেকবার অপমানিত হতে হবে। (৩) নিশ্চয়ই চুপ থাকা হলো নিরাপদে থাকা আর কথা বলে অনেক সময় দুশমনী ও ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। (৪) যখন এক অপদার্থ অন্য অপদার্থের কাছে থাকে তখন ক্ষতি ও অনর্থক কাজই বেশী হয়।
জবানের ব্যপারে কৃপণতা করাই ভালো
====
হযরত সাইয়্যিদুনা ইবরাহীম ইবনে আবু আবলাহ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ বলেনঃ (১) যতক্ষন তোমরা জবানের ব্যাপারে “কৃপণতা” করতে থাকবে তক্ষন তা সুরক্ষিত থাকবে। এই জন্য তাকে লাগামহীন ছেড়ে দিও না। (২) চুপ থেকে রহস্যগুলো অন্তরে এমনভাবে গোপন রাখ যেমন ‘যবরজদ (সবুজ রঙের এক প্রকার মূল্যবান পান্না)’ এবং মূল্যবান পাথরকে লুকিয়ে রাখা হয়। (৩) কারণ, যে কথা তুমি ভরা মজলিসে বলে ফেলেছ কিয়ামত পর্যন্ত তা আর ফিরিয়ে নেয়া যাবে না। (৪) যেমনিভাবে পানকৃত পানি ফিরে আসবে না আর বাচ্চা গর্ভে ফিরে যেতে পারবে না।
বুদ্ধিমান ও মূর্খ
====
এক কবি বলেনঃ (১) যে চুপ থাকা আয়ত্ব করল সে ভয়ের কাপড় পড়ে নিল যা মানুষের কাছে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে। (২) বুদ্ধিমানের জবান তার অন্তরে আর মূর্খের অন্তর তার মুখে থাকে।
মানুষের চুপ থাকার উদ্দেশ্য
====
এক কবি বলেনঃ হে সালিমাহ! (১) নিজের অভ্যাস ত্যাগ কর আর নিন্দা না কর অথবা তার নিন্দা কর যাকে দুনিয়ার দুর্ঘটনা এমনভাবে ফেলে দিয়েছে যে, এখন আর উঠতে পারে না। (২) আমার ভাগ্য আমাকে সকল প্রকার সম্মান থেকে বাধা দিচ্ছে কিন্তু আমার সাহস সম্মান পর্যন্ত পৌছাতে কোন অবহেলা করতে দেয় না। (৩) যতক্ষন অবস্থা এমন থাকবে ততক্ষন আমি চুপ থাকব আর আজীবন কথা বলার জন্য আমার মুখ খুলব না। (৪) যদি চুপ থাকাতে কোন নিন্দাকারী আমার নিন্দা করে তাহলে আমি তাকে বলবঃ মানুষ অপমান ও এবং লজ্জিত হওয়া থেকে বাঁচার জন্যই চুপ থাকে।
সকল প্রশংসা আল্লাহ عز وجل এঁর জন্য যার তওফীকে কিতাব ”হুস্নুস্ সাম্ত ফিস ছাম্ত” সম্পূর্ণ হলো। অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আমাদের সরদার হযরত মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কিরামের ওপর।