�� চল্লিশ (৪০) দিবসের সূক্ষ্ম তত্ত্ব :
যেহেতু চল্লিশ সংখ্যাটি আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উন্নতির প্রতীক, সেহেতু ৪০ তম দিবসের ফাতিহা অর্থাৎ চেহলাম করার কথা বিবেচিত হয়েছে।
অত:পর এর অর্ধাংশে বিশতম (২০তম) দিনের ফাতিহা এবং এর অর্ধাংশে দশম (১০ম) দিনের ফাতিহা করার কথা বলা হয়েছে।
‘চল্লিশ (৪০)’ সংখ্যার বৈশিষ্ঠ্য কি, তা এখন পড়ুন।
০১.
হাযরাত আদম আ. এর খামীর চল্লিশ বছর পর্যন্ত একই অবস্থায় ছিল।
অত:পর চল্লিশ বছরে এটি শুকিয়ে ছিল।
০২.
মায়ের পেটে শিশু
প্রথম চল্লিশ দিবসে বীর্য রক্ত পিণ্ডে পরিণত হয়; অত:পর
দ্বিতীয় চল্লিশ দিবসে জমাট বাঁধা রক্ত মাংসপিণ্ড ও হাড্ডিতে পরিণত হয়; অত:পর
তৃতীয় চল্লিশ দিবসে মাংসপিণ্ড দ্বারা গঠিত দেহে রুহের আগমন ঘটে।
মিশকাত শরীফের “আল ইমান বিল কাদর” অধ্যায়ে রয়েছে,
জন্ম হওয়ার পর চল্লিশ দিবস যাবৎ মায়ের নিফাস (রক্তক্ষরণ) থাকে। চল্লিশ বছর বয়সে জ্ঞান পরিপূর্ণ হয়।
এই জন্য অধিকাংশ আম্বিয়া ক্বিরামকে চল্লিশ বছর বয়সে নূবুয়্যাত প্রদান করা হয়েছে।
০৩.
সূফীয়ানে ক্বিরাম ওয়াযিফা সমূহের ক্ষেত্রে চিল্লা অর্থাৎ চল্লিশ দিবসের সাধনা করে থাকেন, এতে তাঁদের রুহানি উন্নতি হয়।
হাযরাত মূসা আ.’কেও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, ”ত্বুর’ পর্বতে গিয়ে চল্লিশ দিবস ইতিক্বাফ করুন’, অত:পর তাওরাত কিতাব প্রদান করা হয়েছিল। দেখুন, ক্বুরআ’নুল কারিমের আয়াত, “ওয়া ইয ওয়াদানা মূসা আরবায়িনা লাইলা”-যখন মূসা আ. চল্লিশ রাত অবস্থান করে ওয়াদা পূর্ণ করলেন।
০৪.
হাযরাত ইউনুস আ. চল্লিশ দিবস মাছের পেটে থেকে মি’রাজ লাভ করেন।
আমাদের প্রিয় নাবী সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম চল্লিশ বছর বয়স কালে নূবুয়্যাতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
০৫.
“আনোয়ারে সাতেয়া” কিতাবে চেহলাম শীর্ষক আলোচনায় বায়হাকী শরীফের বরাত দিয়ে হাযরাত আনাস রা. থেকে বর্নিত হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
“ইমাম যুরকানী র. শারহে মাওয়াহিব গ্রন্থে উক্ত হাদিসের অর্থ এভাবে করেছেন-আম্বিয়ায়ে ক্বিরামের রুহ্ মুবারাকের সম্পর্ক তাঁদের কবরস্থ শরীরের সাথে চল্লিশ দিন পর্যন্ত খুবই বেশী থাকে। অত:পর ঐ সকল রুহ্ আল্লাহ্’র সান্নিধ্যে ইবাদাতে নিয়োজিত হয় এবং শরীরি আকার ধারন করে যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়ায়। সাধারণ্যে এ বিশ্বাস রয়েছে যে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত ঘরের সাথে মৃত ব্যক্তির আত্মার সম্পর্ক থাকে। এর থেকে বুঝা যায়, চল্লিশ দিন পর রদবদল ও পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং চল্লিশ দিনের দিন ফাতিহা করা বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই”।
০৬.
শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলাভী র.-এর ওফাতের তৃতীয় দিবসে এতলোকের সমাবেশ হয়েছিল যে, ক্বুরআ’নুল কারিমের খতম ৮১ বার এবং কালিমা তৈয়িবা শরীফের খতম ছিল অগণিত।
দেখুন,
[সূত্রঃ মালফুজাতে শাহ্ আব্দুল আজীজ রহ.।]
০৭.
তাফসীর এ সাভীতে সূরাহ্ বাক্বারাহ্’র ৫১ নং আয়াতের ব্যখ্যায় চল্লিশা সম্পর্কে একখানা হাদিস উদ্ধৃত করা হয়েছে,
অর্থাৎ “রাবিতা (খানকাহ)’র নীরব সাধনার পূর্ণ মুদ্দত হল চল্লিশ দিন”।
০৮.
ওফাত প্রাপ্ত ব্যক্তি তাঁর বারযাকের যিন্দগীতে বসবাসে গমণ করে।
মেয়ের শশুরালয়ে গমনের সময়ে যেভাবে মা-বাপ বা অভিভাবক মেয়ের সাথে কিছু সামগ্রী দিয়ে দেন তদ্রুপ মৃত ব্যক্তির শেষ বিদায় কালেও তাঁকে কিছু সাওয়াবের সামগ্রী সাথে দেয়ার উদ্দেশ্যে পূণ্যময় আ’মালের সমষ্টি চল্লিশা করা হয়ে থাকে।
[সূত্রঃ ফতোয়ায়ে ছালাছীন; হাফিজ মুহাম্মাদ আব্দুল জালীল র.।]