জিজ্ঞাসা–২৩১:আমার বয়স ২৮ এবং বউয়ের বয়স ২৩। দুই জনের কুফুও একই। চাকরি না থাকায় আমরা গোপনে বিয়ে করে আলাদাভাবে বসবাস করছি ঢাকায়। সেও অনার্সে পড়ে। কিন্তু গ্রামে কোন প্রমাণ ছাড়াই কেউ কেউ রটিয়ে দেয় যে, আমরা বিয়ে করে ফেলেছি। এতে আমার পরিবার মেয়েকে কোনভাবেই মেনে নিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তাদের এই অবস্থায় কোনভাবে রাজি করানোও যাবে না। আর বিপদ আরও বাড়ার আশঙ্কায় আমিও বিয়ের কথা অস্বীকার করেছি। এমতাবস্থায় মাবাপকে খুশি করার জন্য তাদের কথায় বউকে তালাক দেওয়া শরিয়তে জায়েয আছে কিনা? আমরা কেউ কাউকে ছাড়তে চাই না। ছাড়া সম্ভবও না। দুই জনেই শরিয়াঅনুযায়ী জীবন যাপনের চেষ্টা করছি।–Muhammad:imrulkdu@gmail.com
জবাব:
এক. প্রশ্নকারী ভাই, প্রকৃতপক্ষে গোপন বিয়ে অসামাজিক, অমানবিক, অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ, লজ্জাপূর্ণ কাজ। এজন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না। এই যে আপনাদের এতো বিপত্তির পেছনে রয়েছে গোপন বিয়ে! ইসলামের নির্দেশনা হলো,أعلنوا النكاح(মুসনাদে আহমাদ ৪/৫) ‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে।’ আর তা না হলে এরকম বিপত্তি বাঁধবে।
হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক সাহাবীর বিয়ের খবর শুনে নির্দেশ দেন, أعلنوا هذا النكاح واجعلوه في المساجد واضربوا عليه بالدفوف বিয়ের ঘোষণা প্রদান কর এবং মসজিদে তা সম্পাদন কর। আর এ জন্যে দফ পেটাও। (তিরমযী ১০৮৯)
দুই. নিন্দনীয় হলেও বিয়ে যেহেতু গোপনে করেই ফেলেছেন, এখন এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। মনে রাখবেন, এটি কোনো ছেলেখেলা নয় বরং এটি হলো, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারাজীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন। ইসলামে তালাকের সুযোগ রাখা হয়েছে খুবই অপছন্দনীয়ভাবে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে চলে যায় এবং সমাধানের কোনো পথ থাকে না তখনই তালাক দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও ইসলামে তালাক একটি জঘন্যতম বৈধ কাজ। রাসূলুল্লাহ ﷺ তা চরমভাবে ঘৃণা করতেন।হাদীসে এসেছে,أبغض الحلال عند الله الطلاق ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল–তালাক।’ (আবু দাউদ ২১৭৭)
এজন্য অতীব প্রয়োজন (যা শরীয়তে ওজর বলে গণ্য) ছাড়া স্বামীর জন্য তালাক দেওয়া জায়েয নয়, স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া দুরস্ত নয়। যেহেতু তালাক স্বামীর অধিকার, তাই বিশেষত স্বামী এক্ষেত্রে নিছক মা-বাবার চাপ বা বলপ্রয়োগের কারণেও তা প্রয়োগ করতে পারবে না। কারণ, সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল ﷺ বলেন, فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَঅর্থাৎ অসৎকাজে আনুগত্য নয়; আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে’’। (সহীহ বুখারী ৭১৪৫)
তিন. সুতরাং আপনি এখন যা করবেন তাহল,
ক) অস্বীকার করে অন্যায়ের পর অন্যায় আর নয়; বরং মাবাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন। আপনি তাদের সঙ্গে অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করেছেন, তা তাদের কাছে স্বীকার করে নিন। পাশাপাশি এটাও বুঝিয়ে বলুন যে, আপনি তাদের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ করেছেন, এর শাস্তি আপনি পেতে পারেন; আপনার স্ত্রী নয়। এর প্রতিকার হিসাবে তালাকের মত দূর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।
খ) এরপরেও যদি তারা তালাকের কথা বলে, তাহলে দেখুন, তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত কিনা? যদি তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত হয় এবং সে কারণে তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক প্রদান করার দ্বারা আপনার জিনায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে পিতা মাতার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে।
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَتْ لِي امْرَأَةٌ كُنْتُ أُحِبُّهَا، وَكَانَ أَبِي يَكْرَهُهَا، فَقَالَ لِي: طَلِّقْهَا، فَأَبَيْتُ، فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: «طَلِّقْهَا» فَطَلَّقْتُهَا
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একজন স্ত্রী ছিল। যাকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা [হযরত উমর বিন খাত্তাব রাযি. যৌক্তিক কারণে] তাকে পসন্দ করতো না। তিনি আমাকে বললেন, তাকে তালাক দিতে। কিন্তু আমি তালাক প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন আমার পিতা রাসূল ﷺ এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে রাসূল ﷺ বললেন, তাকে তালাক দিয়ে দিতে। ফলে আমি আমার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করি। (মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিসী ১৯৩১, মুসনাদে আহমাদ ৪৭১২, সুনানে আবু দাউদ ৫১৩৮)
পক্ষান্তরে কারণ যদি সঠিক না হয়, কেবল বউয়ের প্রতি ঈর্ষাবশতঃ হয়, তাহলে তালাক দেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না।
গ) পরিশষে আপনাকে ধৈর্য্য ধরার এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই অসদাচারণ না করার পরামর্শ দিচ্ছি। আপনার স্ত্রীকে তাদের সাথে এমন ভালো ব্যবহার দেখাতে বলুন, যাতে মন নরম হয়। আর অবশ্যই আল্লাহর কাছে দোয়া অব্যাহত রাখুন। তিনিই প্রকৃত সমাধানদাতা।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী