জিজ্ঞাসা–৫১৪: আসসালামুআলাইকুম, আমি দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে হারাম প্রেমে জড়িয়ে পড়ি, এই অবস্থায় আল্লাহর রহমতে হেদায়েত পাবার পর সেই ব্যাক্তিকে বুঝিয়ে এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ্ এবং বলি, বিয়ের মাধ্যমে যদি হালাল সম্পর্ক করতে পারেন তাহলে বাড়িতে প্রস্তাব দিবেন। সে কথাটি মেনে নেয় এবং বাসায় প্রস্তাব দেয়। এখন আমাদের দুই ফ্যামেলি রাজি। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে, তারা সময় চাচ্ছে কিন্তু ফ্যামেলি রাজি হবার পর কেনো জানি ফিতনা থেকে বাঁচা আরো কষ্টকর হয়ে গেছে আমাদের। তাদের কিছুটা বুঝিয়ে বলার পরো তারা অবস্থাটা বুঝতে পারছেন না। এক্ষেত্রে যদি আমরা ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য গোপনে নিজেরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি তাহলে কি তা জায়েয হবে?– শাহরিমা জাহান।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক: প্রিয় বোন, আপনি কি আমাদের কাছে এজন্য মেইল করেছেন যে, আমরা আপনাকে গোপনে বিয়ে করার অনুমতি দিব?! অথচ অভিভাবকশূন্য এমন অসামাজিক ও অমানবিক বিয়ের অনুমতি দেয়ার অধিকার তো আমাদের নেই। কেননা, ইসলামের নির্দেশনা হলো,أعلنوا النكاح(মুসনাদে আহমাদ ৪/৫) ‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে।’ দেখুন, আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: وأَنْكِحوا الأيامى منكم‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও।’ (সূরা নুর ৩২)
নাকি আপনি চাচ্ছেন যে, আমরা আপনাকে বিবাহ-বহির্ভূত প্রেম বৈধ বলে ফতোয়া দিব?! কোন মুসলমানের পক্ষে এ ফতোয়া দেয়া সম্ভব নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এটাকে যেনা বা ব্যভিচার বলেছেন-
اَلْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالْاُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُمَا الْككَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهُمَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهُمَا الخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه
‘দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, জিহবার ব্যভিচার হল, [পরনারীর সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।” (সহীহ মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)
দুই: প্রিয় বোন, আপনি হয়ত ভাবছেন, গোপনে বিয়ে করার মাধ্যমে আপনি/আপনারা প্রশান্তি পাবেন?! আল্লাহ আপনাকে এমন ভাবনা থেকে দূরে রাখুন ও পবিত্র রাখুন। যদি আপনি এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে মহা ভুলের মধ্যে আছেন। বরং‘অভিভাবকশূন্য বিয়ে’ মানে পারিবারিক মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান, চরিত্রের পবিত্রতা, নারীত্বের আমানতদারিতা, আপনাদের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ সর্বোপরি আপনার দ্বীনদারির উপর কালো ও অতি বিশ্রি দাগ স্থায়ীভাবে বসে যাওয়া এবং এমন কিছু পরিণামের দুয়ার খোলা, যা পরবর্তীতে আপনাদের বৈবাহিক-জীবনে অশান্তির বড় কারণ হবে।
সুতরাং আপনি কিভাবে প্রত্যাশা করেন যে, আমরা আপনাকে ইজ্জত কলঙ্কিত করার অনুমতি দিব এবং বলব, ঠিক আছে গোপনে বিয়ে করে ফেলুন; অসুবিধা নেই!!
তিন: প্রিয় বোন, আপনাকে কষ্ট দেয়া কিংবা আপনাদেরকে ফেতনায় ফেলে রাখা আমাদের উদ্দেশ্যে নয়; আমরা শুধু এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি যে, আপনি/আপনারা যা করছেন এবং করতে চাচ্ছেন সেটা কত বড় জঘন্য! আপনি হয়তো ভুলে গেছেন যে, ইসলামে ধৈর্য বা সবর নামক এক মহান ইবাদত আছে; যার বিনিময়ে রয়েছে রবের সন্তুষ্টি এবং রয়েছে জান্নাত। এজন্য দেরীতে বিয়ের যে পরীক্ষার মধ্যে আপনারা আছেন এ অবস্থায় আমরা আপনাদেরকে ধৈর্য রাখার উপদেশ দিচ্ছি। আপনাদের এ ভালবাসা যদি আপনাদেরকে আল্লাহর ভালবাসা থেকে বিমুখ না করে এবং কোন প্রকার হারাম কথা ও কাজের দিকে নিয়ে না যায় তাহলে নিশ্চিত থাকুন, আল্লাহ আপনাদেরকে এমনভাবে পুষিয়ে দিবেন; যার কল্পনাও বান্দা করতে সক্ষম নয়। إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ যারা সবরকারী, তারাই নিজেদের পুরস্কার পায় অগণিত। (সূরা যুমার ১০)
চার: পরিশেষে আমরা আপনাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং পারিবারিকভাবে তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার জোর প্রচেষ্টা ও দোয়া হেকমত, বুদ্ধিমত্তা ও শালীনতার সাথে চালাবার পরামর্শ দিচ্ছি। গুনাহ ত্যাগ, নেক আমলের মাধ্যমে আপনার রবের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন ঈমানকে আপনার কাছে প্রিয় করে দেন, সুশোভিত করে দেন। আপনাকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন এবং আপনাদের অভিবাককে অতি দ্রুত সুমতি দান করুন।
আমরা আশা করব, রবের সন্তুষ্টির জন্য আপনারা ফিতনার গলিপথ চিহ্নিত করে সেটা বন্ধ করে দিবেন। শয়তানের রাস্তা বন্ধ করে দিবেন। অবৈধ সম্পর্ক ও অবৈধ যোগাযোগ অটুট রাখা থেকে বিরত থেকে আমাদের পরামর্শ ও উপদেশগুলো মেনে চলবেন।
প্রিয় বোন, আমরা আপনার ব্যাপারে সুধারণা রাখব যে, আপনি আপনার পাত্রের ব্যাপারে এ হাদিসটির প্রতিপাদ্য হবেন না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ‘আমার পরবর্তীতে পুরুষের জন্য নারীর ফিতনার চেয়ে কঠিন কোন ফিতনা আমি রেখে যায় নি।’ (সহীহ বোখারী ৪৮০৮ ও সহীহ মুসলিম ৬৮৮১)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী