খোদার প্রেম

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

পৃথিবীর যতকিছু এবং পৃথিবীতে যা কিছু, সবকিছুই ধ্বংসশীল। এই নশ্বর পৃথিবীর খাতিরে যা করা হয়, তা পৃথিবীর মতই নশ্বর। যেমন ধরুন, আমি মানুষকে দেখানোর জন্য নামায আদায় করতে করতে কপাল দাগ করে ফেললাম। মানুষের মুখে ‘নামাযি’ ট্যাগেও ভূষিত হলাম। কিন্তু দিন শেষে, এই দাগ বা এই নামায আমার কোন কাজেই আসবেনা। যেহেতু, আমি নামাযটা আদায় করেছিলাম, মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষ দেখেছে, সুনামও করেছে। মানুষ শেষ নামাযও শেষ। এই পৃথিবীতে সুখ-শান্তি অর্জনের খাতিরে যা কিছু করা হয়, সবকিছুই পৃথিবীর সাথে শেষ হয়ে যায়। ভালবাসাটাও ঠিক এমনই। 

পার্থিব ভালবাসাগুলো ঠিক বাকি সবকিছুর মতই ধ্বংসশীল, ভঙ্গুর, অনেক ক্ষেত্রে পঁচনশীলও। কিন্তু, কিছু ভালবাসা আছে, যেগুলো পৃথিবীতেই করা হয়, তবে উদ্দেশ্যে থাকে সেই অবিনশ্বর সত্তা, মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি। আর ঠিক এই ভালবাসাগুলোই হয়ে যায় অবিনশ্বর। সহজ কথায়, সৃষ্টির জন্য ভালবাসাগুলো সৃষ্টির মতই নশ্বর,ভঙ্গুর। এবং আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের জন্য যে ভালবাসা, সেটা তাঁরই মত অবিনশ্বর, অভঙ্গুর। এই ভালবাসা মানুষকে নিয়ে যায় চিরস্থায়ী স্বর্গের পথে। তাই, একমাত্র এই প্রেমই চিরস্থায়ী। এই প্রেমই স্বর্গীয়।

আবার, এই স্বর্গীয় প্রেমও সবার ভাগ্যে থাকেনা। এই প্রেম আছে একমাত্র ইমানদারদের হৃদয়ে। কেননা, “ইমানদারদের হৃদয়ে অন্যকারো জন্য আল্লাহ’র ন্যায় ভালবাসা নেই”।

(সুরা বাকারাঃ১৬৫) 

অর্থাৎ, ইমানদারগণ আল্লাহ তায়ালা’কেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। আর এইকারণেই, ইমানদার মধ্যে সৎকর্পরায়ন, ন্যায় বিচারক, খোদাভীরুদেরকেও আল্লাহ তায়ালা ভালবাসেন (৮৯-৯,০২-১৯৫, ০৩-৭৬)। এইসব ইমানদারগণ পৃথিবীর সবকিছুকে আল্লাহ তায়ালার খাতিরে ভালবাসে বলেই, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়া’লা তাদেরকে আহ্বান করে বলবেন, “আমার মহত্বের জন্য(মহিমার খাতিরা) একে অপরকে মহব্বতকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে ছায়া দান করব, যখন আমি ব্যতীত আর কেউ ছায়া দিবেনা।

(মুসলিম শরিফঃ ২৫৬৬)। 

এতটুকু পর্যন্ত সবই ঠিক আছে। ঝামেলাটা বাঁধে যখন ‘ভালবাসা’ শব্দটির অর্থের দিকে চোখ যায়। এর অর্থ হল- কোন প্রিয় বস্তু/ব্যক্তিকে পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে যাওয়া, সর্বশ্য ত্যাগ করে হলেও প্রেমাষ্পদকে নিজের করে নেওয়া। অতএব, ভালবাসা শব্দের অর্থ যদি এই হয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা কাউকে ভালবাসেন এই কথাটা বলা যাবে কি? ভেবে দেখা প্রয়োজন। সর্বশ্য ত্যাগ করে কাউকে অর্জন করার কোন প্রয়োজনতো আল্লাহ সুবাহানুহু ওয়াতাআলার নেই। কারণ, আমরা সবাইতো তারই দাস।  আবার, বান্দা হিশেবে আল্লাহ তায়ালা’কে ভালবাসার দাবি করা যাবে কিনা, এটা নিয়ে শায়েখ ফুজায়েল ইবনে ইয়াজ রাহিমাহুমুল্লাহ’র একটি উক্তি আমার কাছে চমৎকার লাগে। তিনি বলেন- কেউ যদি তোমাকে জিজ্ঞাস করে, তুমি আল্লাহ তায়ালাকে ভালবাসো কিনা? তখন তুমি চুপ হয়ে যাবে। কেননা, যদি তুমি উত্তরে ‘না’ বলে ফেলো, তখন এটা কুফরি হয়ে যাবে। আর যদি ‘হ্যাঁ’ বলে ফেলো তাহলে এটা মিথ্যা হয়ে যাবে। কেননা, তুমি জানো তোমার মধ্যে ভালবাসার(শব্দের অর্থের দিক থেকে) কোন গুণাবলীই বিদ্যমান নেই। বাস, চুপ থাকার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো। 

(মুকাশিফাতুল ক্বুলুব, অধ্যায় ১১, ইমাম আল-গাজ্জালি রাহিমাহুমুল্লাহ)

ইমাম আল-গাজ্জালি রাহিমাহুমুল্লাহ’র মতে, আল্লাহর তায়ালা’র জন্য  ভালবাসা শব্দটা ব্যক্তি বিশেষে পরিবর্তন হয়। তিনি বলেন- আল্লাহ তায়ালা তাঁর সকল সৃষ্টিকেই ভালবাসেন বললে, আল্লাহ তায়ালা তাদের দয়া করেন। ইমানদারদের জন্য ভালবাসা শব্দ আসলে হবে, স্নেহ করেন, পছন্দ করেন। আর যখন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্য ভালবাসা শব্দটা আসবে, তখন এর অর্থ হবে, সবচেয়ে বেশি নিকট রাখেন।

আল্লাহ সুবাহানু ওয়া তায়ালা’কে ভালবাসার দাবি না হয় নাই করলাম। তাঁকে ভালবাসতে তো কোন বাঁধা নাই। বরং আল্লাহ তায়ালা নিজেই একটা বিশেষ পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান আল বাসরী রহিমাহুমুল্লাহ ইরশাদ করেন- একবার, কিছু লোক রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সামনে এসে উপস্থিত হল। এবং বলল, হে মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), আল্লাহ্‌র কসম, আমরা আপনার প্রিতপালককে মুহাব্বত করি। তাদের এই দাবির ভিত্তিতে আল্লাহ তায়ালা একটি আয়াত নাযিল করল। যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, “হে মাহবুব, আপনি বলে দিন,  হে মানুবকুল যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাকো, তবে আমার অনুসারী হয়ে যাও, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন। 

(সুরা আলে ইমরানঃ৩১, তাফসিরে তাবারি, মুহাম্মদ বিন জারি আত তাবারি ৮৩৮-৯২৩)

হয়তো এই তাফসিরের অংশকেই পঙক্তিতে সাজিয়ে বিখ্যাত জাওয়াবে শেকওয়ার ইতি টেনে আল্লামা ইকবাল  বলেছেন-

“কি মুহাম্মদ সে ওয়াফা তুনে তো হাম তেরে হে

ইয়ে জাহাঁ চিয হে কেয়া লওহ কালাম তেরে হে।”

আর এই কথাটাইতো বাংলা ভাষায় নজরুল আমাদের বলেছেন-

“আল্লাহকে যে পাইতে চায়, হযরতকে ভালবেসে

আরশ কুর্সী লাওহে কলম না চাইতেই পেয়েছে সে।”

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment