খুতবাতু গাদীরে খুম (৪)

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

খুতবাতু গাদীরে খুম (৪)

(خطبة غدير خم)

মূল: মাহাজ্জাহ-ডট-কম

অনুবাদক: নাঈম আল-জা’ফরী

(মিথ্যাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তদ্রুপ সত্যকে লুকিয়ে রাখা যায় কিন্তু বিলুপ্ত করা যায় না।)

সহিহাইনের হাদিসটি হলোঃ

حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سُوَيْدِ بْنِ مَنْجُوفٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا إِلَى خَالِدٍ لِيَقْبِضَ الْخُمُسَ وَكُنْتُ أُبْغِضُ عَلِيًّا، وَقَدِ اغْتَسَلَ، فَقُلْتُ لِخَالِدٍ أَلاَ تَرَى إِلَى هَذَا فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ ‏”‏ يَا بُرَيْدَةُ أَتُبْغِضُ عَلِيًّا ‏”‏‏.‏ فَقُلْتُ نَعَمْ‏.‏ قَالَ ‏”‏ لاَ تُبْغِضْهُ فَإِنَّ لَهُ فِي الْخُمُسِ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ ‏”‏‏.

অর্থ: প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’কে (গনীমতের) খুমুস্ (তথা রাষ্ট্রীয় অংশ) আনতে হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’র কাছে প্রেরণ করেন, আর আমি তাঁর প্রতি বৈরিতা রাখতাম। (ওই সময়) তিনি গোসল করেছিলেন (খুমুস হতে গৃহীত জারিয়া দাসীর সাথে সহবাস করার পর)। আমি হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)’কে বলি: ‘আপনি কি এটা (মানে হযরত আলী কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহুর কাজটি) দেখতে পাচ্ছেন না?’ আমরা যখন হুজূর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’এর সামনে হাজির হই, তখন বিষয়টি তাঁর কাছে পেশ করি। তিনি উত্তরে বলেন, “হে বোরায়দা, তুমি কি আলীর প্রতি শত্রুতাভাব পোষণ করো?” আমি উত্তরে বলি: ‘জি।’ তিনি বলেন: “বৈরিতা রেখো না, কেননা সে খুমস্ হতে অধিকতর পাওয়ার হক্কদার।”

এটাই হলো সহিহাইনে (বুখারী ও মুসলিম হাদীসগ্রন্থ দুটোয়) বর্ণিত গাদীরে খুমের হাদীস। এতে ‘মওলা’ শব্দটির কোনো উল্লেখ-ই নেই।

সংক্ষেপে, হজ্জের পূর্বে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ কে ইয়েমেনে সামরিক অভিযানের পর গনীমতের মাল বন্টন করার জন্য নবী করিম (সাঃ), হযরত আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু)-এর নিকট পাঠান। সেখানে কিছু লোক আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু)-এর প্রতি পূর্ব থেকে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং নবী (সাঃ)-এর কাছে তাঁর (আলী) সম্পর্কে অভিযোগ করেছিল। তাহারা মনে করেছিল যে আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু) এর বন্টন সম্পূর্ণরূপে ন্যায়সঙ্গত ছিলেন না এবং তাদের সাথে কঠোর আচরণ করেছেন। নবী (সঃ) বুঝতে পারলেন যে এখানে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে এবং যারা তাঁর (আলী) সম্পর্কে অভিযোগ করেছিল তাদের কাছ আলী (কাররামাল্লাহু তা’আলা ওয়াজহাহু) এর প্রতি কিছুটা তিক্ততা ছিল। বিষয়টি উপলব্ধি করার পর এবং বিষয়টি সমাধানের উপযুক্ত সুযোগ পেয়ে মহানবী (সাঃ) সমগ্র সমাবেশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যে আমাকে তার মাওলা মনে করে, আলীও তার মাওলা।”

২. মাওলার অর্থ

আমরা ব্যাখ্যা করার জন্য উপরের ‘মাওলা’ শব্দের অনুবাদ করিনি কারণ হলো এই শব্দটি একাধিক অর্থে রয়েছে এবং কোন প্রাসঙ্গিক বিবেচনা ছাড়াই যেকোন একটি অর্থ প্রয়োগ করা বিভ্রান্তিকর হবে। আসুন দেখে নেওয়া যাক ‘মাওলা’ শব্দটি আভিধানিকভাবে কি বোঝায়, সেই সাথে কুরআন ও অন্যান্য হাদীসে এর ব্যবহার কিভাবে হয়েছে। একবার হলেও শব্দটি সম্প‍র্কে আমাদের ব্যাপক ভাবে বোঝার প্রয়োজন আছে, তারপর এটি অনুবাদ করা উপযুক্ত হবে।

আল-রাযী মুখতার তাঁর আল-সাইহাহ গ্রন্থে বলেছেন: মাওলা অ‍‍র্থ হলো

মুতিক (যে ব্যক্তি একজন দাসকে মুক্ত করে), এবং মুতাক (মুক্ত করা দাস), এবং ইবনুল-আম (চাচাতো ভাই), এবং নাসির (সহায়ক), এবং জার (প্রতিবেশী), এবং হালিফ (মিত্র)…

মুওয়ালাত (বন্ধুত্ব) এর বিপরীত হলো মু’আদাত (শত্রুতা)…

আর কাসরাহ সহ উইলায়াহ (অভিভাবকত্ব) এর অ‍র্থ হলো সুলতান (ক্ষমতা/কর্তৃত্ব)

এবং উইলায়াহ বা ওয়ালায়াহ কাসরাহ সহ বা ফাতহা অ‍র্থ হলো নুসরাহ (সহায়তা)। (মুখতার আল-সাইহাহ, পৃষ্ঠা ৩০৬-৩০৭)

আল-ফায়রুজাবাদী বলেছেন:

ওয়ালী অর্থ কুরবত (ঘনিষ্ঠতা)। ওয়ালী (অভিভাবক) এর থেকে বিশেষ্য উদ্ভূত হয় এবং এর অর্থ হল:

মুহিব (যে ভালোবাসে), সাদিক (বন্ধু), নাশির (সহায়ক)।

(এটি নিম্নলিখিত উপায়েও ব্যবহৃত হয়ে থাকে) ওয়ালিয়া আল-শায়ের অর্থ তিনি জিনিসটির দায়িত্ব নিয়েছেন। আলেয়াহ আল-উইলায়াহ বা ওয়ালায়াহ (এটি তার দায়িত্ব) কাসরাহ সহ এর অর্থ হল:

খিটাহ (একটি পরিকল্পনা), ইমারাহ (নেতৃত্ব), সুলতান (কর্তৃপক্ষ)।

(মাওলা শব্দ) অর্থ:

মালিক (মালিক), এবং আবদ (দাস), এবং মুতিক,

এবং মু’তাক, এবং সাহিব (সাহাবী), এবং ইবনে (ছেলে),

এবং আম্মা (চাচা), এবং নাজিল (অতিথী), এবং শরীক (অংশীদার),

এবং ইবনে আল-উখত (বোনের ছেলে), এবং ওয়ালী, এবং প্রভু (মালিক), এবং নাসির (সহায়ক), এবং মুনিম (উদার), এবং মুনআম’আলাইহ(অনুগ্রহপ্রাপ্ত), এবং মুহিব,

এবং তাবিয়ী (অনুসরণকারী), এবং শিহর (শ্বশুর)।

(আল-কামুস আল-মুহীত, পৃষ্ঠা ১৭৩২)

আমরা জানতে পারলাম যে মাওলা শব্দের অর্থের একটি বর্ণীল রূপ রয়েছে, যার অন্যান্য অর্থের মধ্যে ‘সহায়ক’ অ‍র্থটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখানে যদি এর অর্থ সুলতান (কর্তৃপক্ষ) ধরা হয়, ​​​​​​​​তা হবে অকুণ্ঠচিত্তে​​ অস্পষ্টতা স্বীকার করা,​​ যা হবে বস্তুত শব্দের অন্তর্নিহিত অ‍র্থকে উপেক্ষা করার সামিল। শব্দের বাইরে একটি নির্দিষ্ট অর্থ সনাক্ত করার জন্য অতিরিক্ত প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। অধিকন্তু, মাওলা শব্দটির অ‍র্থ ওয়ালী (গভর্নর) বোঝাতে হলে মাওলা শব্দটির আরো অতিরঁজিত করতে হবে।

চলবে

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment