পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্মতি, নিয়াত ও দোয়াঃ============================
পবিত্র হাদীছ শরীফের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كَتَبَ الْاَحْسَانَ عَلٰى كُلِّ شِيٍّء فَاِذَا قَتَلْتُمْ فَاحْسِنُوْا الْقَتْلَةَ وَاِذَا ذَبَـحْتُمْ فَاحْسِنُوْا الذَّبْحَ وَلِيُحِدَّ اَحَدُكُمْ شَفَرْتَهُ وَلِيُرِحَّ ذَبِيْحَتَهُ.
অর্থ : “হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সমস্ত কিছুর উপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব যখন আপনারা কতল করবেন তখন উত্তম পদ্ধতিতে কতল করবেন, যখন যবেহ করবেন তখন উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ করবেন। প্রত্যেকে ছুরিতে শান দিবেন এবং পশুকে শান্তি দিবেন।” (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
পবিত্র কুরবানী উনার পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কণ্ঠনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়।
আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবে না। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
যবেহ করার পর তাড়াতাড়ি জান বের হয়ে যাওয়ার জন্য পশুর সিনাতে খোঁচা মারা কিংবা পায়ের রগ কেটে দেয়া কুরবানী মাকরূহ হওয়ার কারণ। এছাড়াও যারা কুরবানীর পশু যবেহকালীন সময় ছবি তোলে বা ভিডিও করে তাদের কুরবানী মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুল হয়না। তাই কুরবানী করার সময় এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ ذَبَحَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الذَّبْحِ كَبْشَيْنِ اَقْرَنَيْـنِ اَمْلَحَيْنِ مَوْجِوَئَيْنِ فَلَمَّا وَجَّهَهُمَا قَالَ اِنِّى وَجَّهْتُ وَ جْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّمَوٰتِ وَ الْاَرْضَ عَلٰى مِلَّةِ اَبْرَاهِيْمَ حَنِيْفًا وَّ مَا اَنَا مِنَ الْـمُشْرِكِيْنَ اِنَّ صَلٰوتِىْ وَ نُسُكِىْ وَ مَـحْيَاىَ وَ مَـمَاتِىْ لِلّٰهِ رَبّ الْعَالَـمِيْنَ لَاشَرِيْكَ لَهُ وَ بِذَلِكَ اُمِرْتُ وَ اَنَا مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ اَللّٰهُمَ مِنْكَ وَ لَكَ عَنْ سَيّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَ اُمَّتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسْمِ اللهِ وَ اللهُ اَكْبَرُ ثُـمَّ ذَبَحَ.
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কুরবানী উনার দিন দু’টি সাদা-কালো, বড় শিং বিশিষ্ট, খাসিকৃত দুম্বা যবেহ করলেন। যখন তিনি দুম্বা দুটি ক্বিবলামুখী করলেন, তখন (উম্মত কিভাবে কুরবানী করবে তা তা’লীম দেয়ার জন্য) বললেন, মিল্লাতে ইবরাহীম অর্থাৎ দ্বীনে হানীফ অনুযায়ী আমি আমার পবিত্রতম চেহারা মুবারক ঐ পবিত্রতম সত্ত্বা উনার দিকে ফিরালাম যিনি আসমান ও যমীনসমূহকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই অর্থাৎ আমি পবিত্র থেকে পবিত্রতম তাদের থেকে, যারা দেব-দেবীদের নামে যবাই করে থাকে। উপরন্তু আমার পবিত্র নামায, আমার পবিত্র কুরবানী, আমার পবিত্রতম হায়াত মুবারক ও আমার পবিত্রতম বিছাল শরীফ মুবারক সবই খালিক, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে যিনি সমস্ত আলমের রব তা’য়ালা। ঐ পবিত্রতম ইলাহ উনার কোন শরীক নেই। আমি এ জন্যই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পনকারী উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
আয় আল্লাহ পাক! আপনার পবিত্রতম পক্ষ হতেই প্রাপ্ত এবং আপনারই জন্য এই পবিত্রতম কুরবানী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম পক্ষ হতে এবং উনার উম্মতগণের পক্ষ হতে। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার’ বলে যবাই মুবারক করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
কুরবানী উনার নিয়ত (যবেহ করার পূর্বে) :
اِنّـىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلّذِى فَطَرَ السَّمَوَتِ وَالاَرْضَ حَنِيْفَا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْن اِنَّ صَلاتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَـحْيَاىَ وَمَـمَاتِىْ للهِ رَبّ الْعَالَمِيْن لَا شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ. اَللّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ.
উচ্চারণ : ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
অর্থ : “আমি আমার পবিত্রতম চেহারা মুবারক একনিষ্ঠভাবে রুজু করলাম ঐ পবিত্রতম সত্ত্বা উনার দিকে যিনি আসমান ও যমীনসমূহকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই অর্থাৎ আমি পবিত্র থেকে পবিত্রতম তাদের থেকে, যারা দেব-দেবীদের নামে যবাই করে থাকে। উপরন্তু আমার পবিত্র নামায, আমার পবিত্র কুরবানী, আমার পবিত্রতম হায়াত মুবারক ও আমার পবিত্রতম বিছাল শরীফ মুবারক সবই খালিক, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে যিনি সমস্ত আলমের রব তা’য়ালা। তিনি পবিত্রতম উনার কোন শরীক নেই। আমি এ জন্যই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পনকারী উনাদের অন্তর্ভুক্ত। আয় আল্লাহ পাক! আপনার পবিত্রতম পক্ষ হতেই প্রাপ্ত এবং আপনারই জন্য এই পবিত্রতম কুরবানী।”
এ দোয়া পড়ে بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرْ ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।
যবেহ করার পর পঠিতব্য দোয়া-
اَللّٰهُمَّ تَقَبَّلْهُ مِنّى كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ سَيّدِنَا حَبِيْبِنَا نَبِيّنَا شٰفِعِنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْلِكَ سَيّدِنَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَ ذَبِيْحُكَ سَيّدِنَا حَضْرَتْ اِسْـمَاعِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা হাবীবীনা নাবিয়্যিনা শাফিয়ি’না রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খালীলিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম ও যাবিহিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম।
অর্থ : আয় আল্লাহ পাক! এই পবিত্রতম কুরবানী আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে এবং ‘আপনার খলীল’ সাইয়িদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও ‘আপনার যবীহ’ সাইয়িদুনা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম উনাদের পক্ষ থেকে যেমনিভাবে কবুল করেছেন তেমনিভাবে আমার পক্ষ থেকেও কবুল করুন।
যদি নিজের কুরবানী হয় তবে مِنِّىِ (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয় তবে مِنِّىِ (মিন্নী) শব্দের পরিবর্তে مِنْ (মিন) বলে যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি যবেহকারী অন্যের সাথে শরীক হয় তাহলে مِنِّىِ (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর وَمِنْ (ওয়া মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু بِسْمِ اللهِ اللهُ اَكْبَرْ ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমীযী শরীফ, দারিমী শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ, মিশকাত, মিরকাত, মুযাহেরে হক্ব, লুমায়াত, ত্বীবী, তালিকুছ ছবীহ, আশয়াতুল লুমায়াত, আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল হিদায়া ও বাহর)